সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

যৌনতা এবং আমাদের মানসিকতা

যৌনতা-জীবকুলের মধ্যে একমাত্র মানুষ ও ডলফিন যৌনতা কে fun হিসেবে উপভোগ করে।
অথচ সেটা স্বীকার করতে মানুষ সংকোচ অনুভব করে।
এই দ্বিচারিতা আমাদের সমাজে রয়েছে।
 যখনই উপভোগ ব্যাপার টা আসছে তখন সেক্স হয়ে উঠছে উপভোগের বস্তু বা সামগ্রী। আর বস্তু বা সামগ্রী কেনা বেচা হয়।
এগুলো ভাবলে বাঙালী মূল্যবোধ আঘাত প্রাপ্ত হয়।
কিন্তু বাস্তব তো বাস্তবই।আমাদের ভাল না লাগলেও সেটা কে না মেনে নিয়ে উপাই নেই।

আমরা জানি যৌনতা বংশ বৃদ্ধি করে।আবার যৌনতা ভালবাসা জানানোর প্রকাশ।
 যৌনতাহীণ ভালবাসা বলে কিছু  হয় না।সেটাও স্বীকার করতে আমাদের সংকোচ।
সংকোচ ,সংস্কার আমাদের কে আস্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে।
এক লেখক বলেছিলেন ,'ভালবাসা হীন যৌনতা পশুর তুল্য।'
 বাস্তব কিন্তু অন্য কথা বলছে।মিডিয়া,নেটের দৌলতে প্রচুর ভালবাসা হীন যৌনতার সংবাদ পাচ্ছি।যা আগের ধারণাগুলোকে ভেঙেচুরে তছনচ করে দিচ্ছে।
অথচ আমাদের স্বীকার করতে সংকোচ বোধ হচ্ছে যৌনতাকে স্রেফ মজা বা ফান হিসেবে দেখাটাও আসলে স্বাভাবিক।কোন বিকৃতি নেই।
যৌনতার একটা লক্ষ  বংশ বৃদ্ধি করা ।আবার এটাও সত্য আমরা ভাল বাসি না বাসি,বংশ বৃদ্ধি করি না করি তার উপর যৌনতা নির্ভর করবে না।

যৌনতা পুরোপুরি মন ও মস্তিষ্কের একটা সক্রিয় অবস্থা।
অথচ এই কথাটা আমাদের কাছে পৌঁছাবার আগে অজস্র জটিলতায় মন পরিপূর্ণ হয়ে যায়।

সমাজে সেক্স কে Taboo হিসেবে দেখা হয়।যৌনতা অশ্লীল এই ধারণা সমাজে গভীর ভাবে প্রোথিত।এই সমাজে একটি অপরিচিত ছেলে কোন মেয়েকে কথা বললে তাকে চরিত্রহীণ ভাবা হয়,অপমান করা হয়।আবার সেই মেয়ে একজন অপরিচিত পুরুষ কে গলায় মালা দিয়ে ফুলসজ্জার রাতে শারীরিক সম্পর্ক করে।এটা একটা সামাজিক হিপোক্রাসি।'সঙ্কোচ'এর জন্মদাতা সমাজই।

সামাজিক রীতিনীতি যা প্রাচীন ধ্যানধারণার বিপরীত (ইলোরা ভাস্কর্য,কামসূত্রের শিক্ষা)।
এই ভিক্টোরিয়ান মূল্যবোধ বা পিউরিটান মূল্যবোধ
সত্য থেকে দূর ঠেলে দিয়েছে।
যা ক্রমশঃ ধীরে ধীরে বিকৃতির আকার নিয়েছে।

আমাদের সমাজে সেক্স কে চূড়ান্ত ইম্পর্ট্যান্স দেয়।
যার ফলে আমরা শুদ্ধতা কে বড় বেশি মূল্য দিই।মানুষের তুল্য মূল্য বিচার করি শুদ্ধতাকে সামনে রেখে।
আমি উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা কর

....মৃণাল সেনের 'একদিন প্রতিদিন'য়ে মমতাশঙ্কর এক চাকুরিরতা মেয়ে।সে একদিন মধ্যরাত হয়ে গেল তবুও বাড়ি ফেরে না।
তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পাওয়া যায় না তাকে।পরের দিন সকাল বেলা যখন বাড়ি ফিরছে তখন সকলের মুখ গম্ভীর।কেউ কথা বলছে না।
অথচ সবার খুশি হওয়ার কথা ছিল।
আবার দেখুন রামায়ণে -সীতা কে রাবণ হরণ করে নিয়ে গেছে।শ্রী শ্রীরাম ভয়ানক যুদ্ধ করে রাবণের হাত থেকে উদ্ধার করেন সীতাকে।
সীতা কে মুক্ত করার পর সকলের খুশী হওয়ার কথা ছিল।অথচ শ্রীশ্রী রামচন্দ্রের মনে হল সীতা কত টা শুদ্ধ আছেন তার জন্য একটা অগ্নিপরীক্ষার প্রয়োজন।
এই পরম্পরা কিন্তু 'সমানে চলিতেছে।'রুচিরা বলে ধরুন আপনার একটি মেয়ে রয়েছে ।ধরা যাক সে হারিয়ে গেল।কেউ খুঁজে পাচ্ছে না।বাড়িতে পাড়াতে শোকের আবহ। রুচিরা  সাত দিন পর পাওয়া গেল।
মানুষের মনে প্রথমেই এই প্রশ্ন আসবে ,'সে অত দিন কোথায় কি করছিল?সে শুদ্ধ আছে তো?'

যৌনতা সম্পর্কে মানুষের সংস্কার এমন গভীরে  রয়েছে যে মানুষের সাধারণ বিবেক বুদ্ধি লোপ পেয়ে যায়।রুচিরা  সম্পর্কে এই প্রশ্ন টা মাথায় আসছে না সে সুস্থ আছে তো?ফিরে এসেছে এই ঢের।
তার বদলে ফিসফাস গুঞ্জন শুরু হয়ে যাবে।রুচিরা যখন রাস্তা দিয়ে যাবে তখন ট্যারা চোখে তাকানো হবে।টিটকারি টন্ট কাটা শুরু হয়ে যেতে পারে।
এর ফলে রুচিরা মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।
 একা থাকেন রিনি ইসলাম।মধ্যবয়স্কা।
একাকীত্বে ভুগেন।মাঝে মাঝে   পুরুষ সঙ্গীর অভাব অনুভব করেন।তাঁরও যৌনতা,ভালবাসা প্রয়োজন এটা কেউ বোঝে না।
তাঁর মনে পড়ে তাঁর ফুপু(পিসি)র কথা।সেই ফুপু একবার মুখ ফুটে বলেছিলেন ,তিনি বিয়ে করবেন।অমনি তাঁকে নিয়ে টিটকিরি আরম্ভ হয়ে গেছিল।
সম্পর্কে নাতি সেই ফুপুকে ধরে মেরেছিল।
কি মর্মান্তিক ব্যাপার।
নানা কারণে অনেক মানুষের বিয়ে করা হয়ে ওঠেনা।কিন্তু সমাজ তাদের যৌনতাবিহীন জীবন কাটাতে বাধ্য করে।
তাদের জীবন হাহাকারে শেষ হয়।সমাজ সেটা অনুভব করতে  চায়না।

লিখেছেন-নীলাঞ্জন সৈয়দ।
ভারতীয় লেখক।
next post
perv post

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

জাতীয়তাবাদ আরেকটি ধর্ম বই

বাংলাদেশীরা ধর্মভীরু। ইসলাম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ও জাতীয়তাবাদ নামক ধর্মগুলোর প্রতি বাঙ্গালীর দুর্বলতা নতুন কিছু নয়। আমরা যারা মুক্ত-চেতনাকে প্রয়োজনীয় মনে করি, যুক্তিকে ধর্মের ওপরে স্থান দেই তাদের অনেকেই ধর্মের মতই সামনে আসা অন্যান্য প্রতিটি ধারনা ও প্রস্তাবনাকেই যুক্তি দিয়ে বুঝতে চাই, খতিয়ে দেখতে চাই। বা দদূএকটি রূপ আধ্যাত্মিকতা ও ধর্ম হিসাবে মানুষের দলবদ্ধ সমাজব্যবস্থার দ্বিতীয় বড় চালক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। প্রস্তরযুগে আরো একটি ঘটনা ঘটতে শুরু করেছিল। মানুষেরা নিজেদের গ্রাম বা নগরকে কেন্দ্র করে একটি সামষ্টিক পরিচিতি অনুভব করে শুরু করেছিল। বোধ করি তখন থেকেই মানুষের দলবদ্ধতার তৃতীয় চালক জাতীয়তাবাদের প্রাথমিক যাত্রা শুরু। বর্তমানে সারা দুনিয়ায় জাতীয়তাবাদ নানান চেহারায় দলবদ্ধতার সবচাইতে শক্তিশালী চালক হিসাবে বিদ্যমান। একটি নৃগোষ্ঠী যখন পুঁজিবাদী হতে শুরু করে, যখন সে একটি কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্র গঠন করে তখনই সে একটি জাতিতে পরিণত হয়। ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ আমাদের দেশের রাজনীতিতে কাছাকাছি আছে ইতিহাসের শুরু থেকে। মহাভারত থেকে আজকের খালেদা-হাসিনার রাজনীতিতে ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ একে অন্যের হাত...

গাজওয়াতুল হিন্দ

গাজওয়াতুল হিন্দকে বর্তমান বাংলাদেশ ভারত ও নেপাল শ্রীলংকার জিহাদীরা তাদের মনে আটকে রেখেছে। এই বিষয়ে নানা মতাভেদ থাকলেও সকল মুসলিম জিহাদীরা মনে করে বা আ শা করে যে ইসলাম সারা পৃথীবিতে এই জিহাদের মাধ্যামে প্রতিষ্টা হবে। তারা এটাকে মর্যাদার্পূণ জিহাদ বলে মনে করে। ইসলামের ভিত্তির অন্যতম হলো জিহাদ। ইসলাম প্রতিষ্ঠাকালীন প্রচুর যুদ্ধ করা এবং হত্যার পরেই মানুষ ভয়ে ইসলামকে গ্রহন করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ভায়রাস বলা হয় ইসলামকে। এই ভায়রাস আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে গাজওয়াতুল হিন্দকে কেন্দ্র করে। বর্তমানে জিহাদীরা তাদের দলে লোক বেসি করার জন্য অনলাইনে সহ নানা জাগাতে ঠিক এই ভাবে মুসলিমদের উপর প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে "গাজওয়াতুল হিন্দ বা ভারতবর্ষের যুদ্ধ সম্পর্কে কি আপনি অবগত? আপনি কি কাফের মুশরিকদের সাথে লড়াই করতে প্রস্তুত?" ইসলামীষ্ট  জিহাদীরা ঠিক এভাবে চাই যে সারা পৃথিবীতে সবচে’ বড় যে ধর্মযুদ্ধ হবে সেটা হবে হিন্দুস্তান তথা ভারতের হিন্দুদের সাথে মুসলমানদের যা সমস্থ জ্ঞানি ইসলামি স্কলার এবং আলেম উলামা জানে। মুসলমানদের জন্য এটা খুব বড়  জিহাদ এবং এই জিহাদের গুরুত্ব অপরিসীম। এই...

বাঙালি এবং লেখকের জীবন

লেখকের বেঁচে থাকার প্রথম শর্ত তার পরিবারের স্বীকৃতি।এখানে স্বীকৃতির অর্থ হচ্ছে-লেখালেখি যে একটি কাজ,অন্য মতোই একটি কাজের, এবং সেই কাজের জন্য মনোযোগ,সময় এবং শ্রম বিনিয়োগ করতে হয়-এই বোধটা তৈরী হওয়া।লেখালেখিকে মহাগুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে নাই বা ধরা হলো। কিন্তু এটি যে একটি কাজ,এই স্বীকৃতিটা পরিবার থেকে আসা খুব প্রয়োজন। আমাদের দেশের বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতি বান লেখক শেষ পর্যন্ত যে লেখক হয়ে উঠতে পারে না,লেখক জীবন যাপন করতে পারেন না,লেখালেখির জগত থেকে তাদের যে অকাল বিদায় নিতে হয়,তার সবচেয়ে বড় কারণ এটাই।লেখালেখিকে পারিবারিক ভাবে স্বীকৃতি না দেওয়া।দেশের অন্য সব মানুষদের মতোই বেশির ভাগ পরিবারে লেখালেখি একটি নেহাৎ ই শখের জিনিস।তারুণ্য বা অংকুরোদ্গমী যৌবনে যৌনতার চুলকানিরও পেয়ে বসে আমাদের দেশের মানুষদের।তখন তাদের লেখাকে বাবাহা দেয় বাড়ির ভাবীরা,কাকা-জ্যাঠারা,সহপাঠীরা,বা তার কোন প্রেমিক-প্রেমিকাও।কখনো কখনো এমনকি বাবা মাও।তারা সকলেই অবচেতনে,এবং নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানে যে,এই চুলকানি বেশিদিন থাকবে না।কিন্তু যার ক্ষেত্রে থেকে যায়,অর্থাৎ যে বুঝে যায় যে লেখক হওয়াটাই তার ভবিতব্য,সমস্যাটা তার ক্ষ...