সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জাতীয়তাবাদ আরেকটি ধর্ম বই

বাংলাদেশীরা ধর্মভীরু।
ইসলাম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ও জাতীয়তাবাদ নামক ধর্মগুলোর প্রতি বাঙ্গালীর দুর্বলতা নতুন কিছু নয়। আমরা যারা মুক্ত-চেতনাকে প্রয়োজনীয় মনে করি, যুক্তিকে ধর্মের ওপরে স্থান দেই তাদের অনেকেই ধর্মের মতই সামনে আসা অন্যান্য প্রতিটি ধারনা ও প্রস্তাবনাকেই যুক্তি দিয়ে বুঝতে চাই, খতিয়ে দেখতে চাই।
বা দদূএকটি রূপ আধ্যাত্মিকতা ও ধর্ম হিসাবে মানুষের দলবদ্ধ সমাজব্যবস্থার দ্বিতীয় বড় চালক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। প্রস্তরযুগে আরো একটি ঘটনা ঘটতে শুরু করেছিল।
বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদ

মানুষেরা নিজেদের গ্রাম বা নগরকে কেন্দ্র করে একটি সামষ্টিক পরিচিতি অনুভব করে শুরু করেছিল। বোধ করি তখন থেকেই মানুষের দলবদ্ধতার তৃতীয় চালক জাতীয়তাবাদের প্রাথমিক যাত্রা শুরু। বর্তমানে সারা দুনিয়ায় জাতীয়তাবাদ নানান চেহারায় দলবদ্ধতার সবচাইতে শক্তিশালী চালক হিসাবে বিদ্যমান।

একটি নৃগোষ্ঠী যখন পুঁজিবাদী হতে শুরু করে, যখন সে একটি কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্র গঠন করে তখনই সে একটি জাতিতে পরিণত হয়।
ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ আমাদের দেশের রাজনীতিতে কাছাকাছি আছে ইতিহাসের শুরু থেকে। মহাভারত থেকে আজকের খালেদা-হাসিনার রাজনীতিতে ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ একে অন্যের হাত ধরে আছে।

 

জাতীয়তাবাদ যেভাবে এগোয়, তার সাথে কিন্তু ধর্মের অনেকগুলো মিল রয়েছে। ধর্মের মতই কিছু কল্পিত ‘ঐতিহ্য’কে ভিত্তি করে জাতিসত্তা গড়ে ওঠে। ফ্যাসিস্ট আর নাৎসিদের কথা ভাবুন। পাকিস্তানের কথা ভাবুন। যখন আমরা জাতীয়তাবাদকে কাছ থেকে দেখি, তখন লক্ষ করি, ধর্মীয় লিরিকঃ (নবীর দন্ত মোবারক!), মসজিদ, ইমাম, ধর্মযোদ্ধারা স্মৃতিসৌধ, সংসদ, পল্লী-বন্ধু, ও দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারী নামে জাতীয়তাবাদে বর্তমান।

ধর্মগোষ্ঠির মত জাতীরও একটি সীমানা থাকে। এই সীমানার ওপারে থাকে অন্য জাতি, অন্য সম্প্রদায়। ছাপানো বক্তব্য যত সহজে সম্প্রসারিত হতে থাকে, জাতীয়তাবাদ ততই গভীর হতে থাকে। ঠিক যেমন আসমানি কিতাবগুলো ছাপানো হয়েছিল বলেই অনেকগুলো ধর্ম এখনো বেঁচে আছে। নতুন মিডিয়া জাতীয়তাবাদের এই গতিকে আরো উস্কে দিয়েছে। নৃতত্ব, অভিন্ন প্রতিপক্ষ বা ভাষা ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে জাতি গড়ে ওঠার কথা থাকলেও আজকের বাস্তবতায় রাজনৈতিক একক বলতে জাতি-রাষ্ট্র ছাড়া আমাদের সামনে বেছে নেবার অনেক বেশী কিছু নেই।

ইতিহাসে যেমন মানুষ শিয়া-বাহাই বা ক্ষত্রিয়-জৈন বা ক্যাথলিক-জেন্টাইল হিসাবে জন্মাত, এখন আমরা জন্মাই একটি দেশের নাগরিক হয়ে। আমাদের কারো নাগরিক না হয়ে গত্যন্তর নেই, ঠিক যেমন ইতিহাসে কোথাও শূদ্রের ঘরে জন্মে বেদপাঠের অধিকার চাওয়া একটি অপরাধ ছিল। আজকে একটি দেশের পতাকা বা স্মৃতিসৌধ অতীতের ক্রুশ বা মহামানবের চুল-নখের মতই শক্তিশালী প্রতীক। ধর্মের মত কল্পিত একটি ধারনার নামের শহীদদের জায়গা দখল করে নিয়েছে জাতি নামক আরেকটি কল্পিত ধারনার জন্য জীবন দেয়া শহীদেরা।

আগেই বলেছি, জাতীয়তাবাদের কেন্দ্রীয় ধারণা মানে ‘জাতি’ একটি কল্পিত সম্প্রদায়। একটি দল কল্পনা করে তারা একটি রাজনৈতিক বা সামাজিক একক। জতির সদস্যরা মনের ভেতরে তাদের ঘনিষ্ঠতার স্বরূপ কল্পনা করে নেয়। আমি কখনো বগুড়া যাইনি। কিন্তু বগুড়ার একজন মানুষ বাংলাদেশের পতাকার প্রতি যে টান অনুভব করে, আমিও তাই করি। আমাদের সরাসরি যোগাযোগ ছাড়াই, আমরা একটি জাতির অন্তর্গত।
বাংলাদেশের পতাকা


আমাদের একটি সম্পর্ক আছে। এই কল্পিত সম্পর্কটি লোকায়ত বিশ্বাসে যেমন দেশ ভিত্তিক জাতীয়তা হতে পারে, ঠিক তেমনি আধ্যাত্মিক বিশ্বাসে ইসলামিক উম্মাহ বা বিশ্ব ইজতেমার মত কিছুর মত দেখতে হয়।
জাতি ও ধর্ম দুটোই সমানভাবে কল্পিত।
ইসলাম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ধর্মের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে নতুন করে আলোচনা অবতারণা আমার লক্ষ্য নয়। এখানে আমি সচলদের আহবান করছি, জাতীয়তাবাদ ধারনা নিয়ে আলোচনা করুন। আরো নির্দিষ্ট করে জাতীয়তাবাদকে ধর্মের মত প্রশ্নাতীত মনে করার নিয়েই আলোচনা হোক।

এখানে জাতীয়তাবাদী বলতে আমি বিএনপি বা আওয়ামীলীগ বোঝাচ্ছি-না। আমি জাতীয়তাবাদী বলছি তাকে যে তার জাতীয় ধারনাকে চূড়ান্ত মনে করে; যেমন কিছু আমেরিকানের কাছে আমেরিকার ধারণা পবিত্র।
একবার ভাবুন। জাতীয়তাবাদ তো আরেকটি ধর্ম বই নয়। কোন যুক্তিতে আমি, আপনি এই ধর্ম পালন করি?


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

গাজওয়াতুল হিন্দ

গাজওয়াতুল হিন্দকে বর্তমান বাংলাদেশ ভারত ও নেপাল শ্রীলংকার জিহাদীরা তাদের মনে আটকে রেখেছে। এই বিষয়ে নানা মতাভেদ থাকলেও সকল মুসলিম জিহাদীরা মনে করে বা আ শা করে যে ইসলাম সারা পৃথীবিতে এই জিহাদের মাধ্যামে প্রতিষ্টা হবে। তারা এটাকে মর্যাদার্পূণ জিহাদ বলে মনে করে। ইসলামের ভিত্তির অন্যতম হলো জিহাদ। ইসলাম প্রতিষ্ঠাকালীন প্রচুর যুদ্ধ করা এবং হত্যার পরেই মানুষ ভয়ে ইসলামকে গ্রহন করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ভায়রাস বলা হয় ইসলামকে। এই ভায়রাস আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে গাজওয়াতুল হিন্দকে কেন্দ্র করে। বর্তমানে জিহাদীরা তাদের দলে লোক বেসি করার জন্য অনলাইনে সহ নানা জাগাতে ঠিক এই ভাবে মুসলিমদের উপর প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে "গাজওয়াতুল হিন্দ বা ভারতবর্ষের যুদ্ধ সম্পর্কে কি আপনি অবগত? আপনি কি কাফের মুশরিকদের সাথে লড়াই করতে প্রস্তুত?" ইসলামীষ্ট  জিহাদীরা ঠিক এভাবে চাই যে সারা পৃথিবীতে সবচে’ বড় যে ধর্মযুদ্ধ হবে সেটা হবে হিন্দুস্তান তথা ভারতের হিন্দুদের সাথে মুসলমানদের যা সমস্থ জ্ঞানি ইসলামি স্কলার এবং আলেম উলামা জানে। মুসলমানদের জন্য এটা খুব বড়  জিহাদ এবং এই জিহাদের গুরুত্ব অপরিসীম। এই...

বাঙালি এবং লেখকের জীবন

লেখকের বেঁচে থাকার প্রথম শর্ত তার পরিবারের স্বীকৃতি।এখানে স্বীকৃতির অর্থ হচ্ছে-লেখালেখি যে একটি কাজ,অন্য মতোই একটি কাজের, এবং সেই কাজের জন্য মনোযোগ,সময় এবং শ্রম বিনিয়োগ করতে হয়-এই বোধটা তৈরী হওয়া।লেখালেখিকে মহাগুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে নাই বা ধরা হলো। কিন্তু এটি যে একটি কাজ,এই স্বীকৃতিটা পরিবার থেকে আসা খুব প্রয়োজন। আমাদের দেশের বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতি বান লেখক শেষ পর্যন্ত যে লেখক হয়ে উঠতে পারে না,লেখক জীবন যাপন করতে পারেন না,লেখালেখির জগত থেকে তাদের যে অকাল বিদায় নিতে হয়,তার সবচেয়ে বড় কারণ এটাই।লেখালেখিকে পারিবারিক ভাবে স্বীকৃতি না দেওয়া।দেশের অন্য সব মানুষদের মতোই বেশির ভাগ পরিবারে লেখালেখি একটি নেহাৎ ই শখের জিনিস।তারুণ্য বা অংকুরোদ্গমী যৌবনে যৌনতার চুলকানিরও পেয়ে বসে আমাদের দেশের মানুষদের।তখন তাদের লেখাকে বাবাহা দেয় বাড়ির ভাবীরা,কাকা-জ্যাঠারা,সহপাঠীরা,বা তার কোন প্রেমিক-প্রেমিকাও।কখনো কখনো এমনকি বাবা মাও।তারা সকলেই অবচেতনে,এবং নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানে যে,এই চুলকানি বেশিদিন থাকবে না।কিন্তু যার ক্ষেত্রে থেকে যায়,অর্থাৎ যে বুঝে যায় যে লেখক হওয়াটাই তার ভবিতব্য,সমস্যাটা তার ক্ষ...