এই ব্লগটি সন্ধান করুন

ধর্মের দৃষ্টিকোন হতে নারীর অবস্থান

                                                                 লিখেছেনঃ-


ধর্মের দৃষ্টিকোন হতে নারীর অবস্থান।
নারী নিয়ে আমার যত কথা পর্বঃ-০১
আমি এখানে সর্বাধিক প্রচলিত ধর্মের ও ধর্মগ্রন্থের আলোকে নারীর অবস্থান তুলে ধরার প্রচেষ্টা করসি মাত্র। এই পোস্টের কোন লেখাই আমার মনগড়া নয়। সম্পূর্ণ তথ্য হুবুহু মূল গ্রন্থ হতে চয়নকৃত। কারো অনুভূতিতে আঘাত লাগলে লেখক কোনোভাবেই দায়ী নয়।
'শুধু বিধাতার সৃষ্টি নহে তুমি নারী পুরুষ গড়েছে তোরে সৌন্দর্য সঞ্চারী। লজ্জা দিয়ে, সজ্জা দিয়ে, দিয়ে আবরণ,-- তোমারে দূর্লভ করি করেছে গোপন।
পড়েছে তোমার পড়ে প্রদীপ্ত বাসনা-- অর্ধেক মানবী তুমি অর্ধেক কল্পনা ' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
জন্মদাত্রী মা, সম্মানীয়/আদরণীয় ভগ্নী বা অতি প্রিয় অর্ধাঙ্গিনী যাদের একটিই পরিচয় বহন করে যার নাম হচ্ছে নারী। নারী কোন কালে কোন ধর্মে, কোন বর্ণে না পেয়েছে অধিকার না স্বাধীনতা মানব ইতিহাসের শুরু থেকেই যখন একটু একটু করে গুহাবাসী মানুষ সভ্য হতে শুরু করেছে ঠিক তখন হতেই নারীকে গৃহাভ্যন্তরে রাখার শুরু। প্রাকৃতিক ভাবেই একজন নারীর তুলনায় পুরুষেরা অধিক পেশীশক্তিশালি, একারনে সবসময় হয়তো পুরুষের গর্বের সাথে নারীকে অবজ্ঞা করতো। পুরুষেরা তৎকালীন সময়ে হিংস্র জন্তু জানোয়ারদের সাথে লড়াই করে শিকার করত। আব্রাহামক ধর্মের মতানুসারে এডাম বা আদম হচ্ছেন প্রথম পুরুষ। এবং ঐ ধর্মীয় মতানুসারে আদি মানব এডাম বা আদমের সঙ্গিনী ছিল লিলিথ। লিলিথের সাথে আদমের মনোমালিন্য হয় এজন্যই যে লিলিথ সগর্বে বলত তোমার আমার কোন পার্থক্য নাই তাহলে কেন আমাকে তোমার আদেশ নির্দেশমত চলতে হবে? তাদের দ্বন্দ্ব চূড়ান্ত আকার ধারন করলে লিলিথ স্বীয় ক্ষমতা বলে অদৃশ্য হয়ে যায়। বলা যেতে পারে লিলিথ ছিল সর্বপ্রথম নারীবাদী যে কখনো পুরুষের অধীনস্ত থাকতে চায় নি। নারীকে নিয়ে সব ধর্মের পুরুষেরা গর্বের সাথে বলে থাকে আমার ধর্মে নারীকে দিয়েছে এত উচু এত উচু স্থান! যে অন্যান্য ধর্ম তা দেয়ই নাই! :-
আসুন একটু বিস্তারিত ভাবে দেখি।
জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গদপী গড়ীয়সী।
সনাতন ধর্ম পৃথিবীর অতি প্রাচীন ধর্ম এর আরেক নাম হল হিন্দু ধর্ম। এই ধর্মের ধর্মগ্রন্থের সংখ্যা অনেক বেশী, তাই প্রত্যেকটি ধর্মগ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। জননী ও জন্মভূমি স্বর্গ অপেক্ষা অধিক উত্তম, কিন্তু কোথায় তারা নারীকে সম্মানিত করেছে আজকাল অনেক প্রগতিশীল(!) হিন্দুরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের মৌলবাদ, বহুবিবাহ, তালাক, পাথর ছুরে হত্যা নিয়ে সমালোচনা করতে খুব উৎসাহী, কিন্তু নিজেদের ধর্মের ভিতরকার নারীর অবস্থান ক্ষতিয়ে দেখে না। তারা বেদ কে বিশ্বাস করে এমন কি কেউ কোনদিন বেদ ছুয়েও দেখেনি, সেই মহাপবিত্র গ্রন্থ বেদে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, নারী, বৈশ্য, শুদ্রের বেদ ছুয়ে দেখার কোন অনুমতি নাই। হিন্দুদের জীবন বিধান মনুসংহিতায়(মনুসংহিতা নিয়ে আমার আলাদা একটি পোস্ট আছে) নারীকে এত জঘন্য, নিকৃষ্ট ভাবে তুলে ধরা হয়েছে তা শান্তিপ্রিয় হিন্দুরা জানেন বলেও মনে হয় না। তারা সমালোচনা করেন ইসলামে নারীর অবস্থান নিয়ে কিন্তু কখনো ভাবেন না 'সতীদাহ' প্রথার মতো একটি নির্মম, জঘন্য অমানবিক একটি বিষয়ে। হয়তো জানলেও চেপে যান। চলুন ধর্মগ্রন্থের আলোকে একটু দেখি:- সনাতনধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদ এজন্য এই ধর্মকে বৈদিক ধর্ম বলা হয়। শুক্ল-যজুর্বেদের অন্তর্গত শতপথ ব্রাহ্মনে নারীকে তুলনা করা হয়েছে এভাবে,
'সেই ব্যক্তি ভাগ্যবান যার পশুসংখ্যা স্ত্রীসংখ্যার অধিক' (২/৩/২/৮)
'বজ্র বা লাঠি দিয়ে নারীকে দূর্বল করা উচিত, যাতে তাদের তাদের দেহ বা সম্পতির উপর কোন অধিকার না থাকে'।(৪/৪/২/১৩)
নারীরা ধর্মোজ্ঞ নয় এরা মন্ত্রহীন, এবং মিথ্যার ন্যায় অশুভ, এই শাস্ত্রীয় নিয়ম। (মনুসংহিতা, ৯/১৮)
ভাগবত পুরান:-- নারীরা জোঁকের মত সতত পুরুষেরর রক্তপান করে থাকে মূর্খ পুরুষ তা বুঝতে পারে না। কেননা তারা অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে পড়ে। পুরুষ যাকে পত্নী মনে করে, সেই পত্নী সুখসম্ভোগ দিয়ে বীর্য এবং কুটিল প্রেমালাপে ধন, মন সবই হরণ করে (৯:১)।
মনুসংহিতা:(৯:১৪) ; যৌবনকালে নারী রুপ বিচার করে না, রূপবান বা কুরূপ পুরুষ মাত্রেই তার সঙ্গে সম্ভোগ করে।
'অধর্মাভিভাৎ কৃষ্ণ প্রদুষ্যন্তি কূলস্ত্রীয়/স্ত্রীষু দুষ্টাষু
বার্ষ্ণেয় জায়তে বর্ণসংকর'
বাংলা অর্থ - হে কৃষ্ণ অধর্মের আবির্ভাব হলে কূলস্ত্রীগণ ব্যভিচারিণী হয়, কূলস্ত্রীগণ ব্যভিচারিণী হলে বর্ণসংকর এর সৃষ্টি হয়। (শ্রী গীতা ১ঃ৪০)
'সঙ্করো নরকায়ৈব কূলঘানং কূলস্য চ/পতন্তি পিতরো হ্যেষাং লুপ্তপিন্ডদকক্রিয়া'
বাংলা অর্থ - বর্ণসংকর কূলনাশকারীদের, এবং কূলের নরকের কারন হয়। শ্রাদ্ধ তর্পণাদি ক্রিয়ার লোপ হওয়াতে ইহাদের পিতৃপুরুষ নরকে পতিত হয়।(শ্রী গীতা, ১/৪১)
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দৃষ্টিতে নারী-
'মাং হি পার্থ ব্যপাশ্রিতো য্যেহপি স্যুঃ পাপযোনয়ঃ/স্ত্রিয়ো ব শ্যস্থতা শুদ্রাস্তেপি যান্তি পরাং গতিম'
বাংলা অনুবাদ- আমাকে আশ্রয় করে স্ত্রী, বৈশ্য, শুদ্র এরূপ পাপযোনীরা পরম গতি লাভ করে থাকে।(শ্রীগীতা ৯:৩২)
মহাভারত: ১৩/৩৯ পিতামহ ভীষ্ম বলেছেন স্ত্রীগনের প্রতি কোন কার্য বা ধর্ম নাই কারন তারা বীর্যশূন্য।
বাহঃ কি অমায়িক দৃষ্টিভঙ্গি নারীকুলের প্রতি।।। রামায়নে রামচন্দ্র প্রিয়তমা স্ত্রীকে উদ্ধারের জন্য সমুদ্র পারি দিয়ে লঙ্কায় রাবনের বংশ ধ্বংস করে দিলো কিন্তু কি দেখলাম তার পত্নীপ্রেম কর্পূরের মত উবে গেলো সীতা কে দিতে হলো অগ্নিপরীক্ষা। আরও লিখলেও শেষ হবার নয়। একটু মনঃযোগ দিয়ে নিজ ধর্মগ্রন্থগুলি পরুন অসামন্জস্যতা ধরা পরবেই। (চলবে)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ