সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বাঙালি নারী


বাঙালি নারীর আদি-অন্ত

কেউ নারী হয়ে জন্ম নেয় না, বরং হয়ে ওঠে নারী’- নারী সম্পর্কিত বহুল আলোচিত, গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয় এ মন্তব্যটি করেছিলেন খ্যাতনামা ফরাসি ঔপন্যাসিক, দার্শনিক ও প্রাবন্ধিক সিমোন দ্য বোভোয়ার।

‘কেউ নারী হয়ে জন্ম নেয় না, বরং হয়ে ওঠে নারী’- নারী সম্পর্কিত বহুল আলোচিত, গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয় এ মন্তব্যটি করেছিলেন খ্যাতনামা ফরাসি ঔপন্যাসিক, দার্শনিক ও প্রাবন্ধিক সিমোন দ্য বোভোয়ার। যা বিধৃত রয়েছে তাঁর লেখা নারীবাদের বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থ ‘ল্য দ্যজিয়েম সেক্স’ ইংরেজিতে ‘দি সেকেন্ড সেক্স’ বাংলায় ‘দ্বিতীয় লিঙ্গ’–এ। তাঁর ঐ মন্তব্যের মূল অর্থ হল আমাদের পশ্চাদগামী পারিপার্শ্বিক পরিবেশ অর্থাৎ পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থাই নারীকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে সম্মান না দিয়ে  অবলা, অর্ধাঙ্গিনী রূপে গড়ে তুলছে।

বাংলা সমার্থ শব্দকোষ অনুযায়ী ‘নারী’ শব্দের সমার্থক শব্দগুলো এমন- স্ত্রী, মেয়ে, মেয়েলোক, মহিলা, রমণী, ললনা, অবলা, মানবী, অর্ধাঙ্গী, অঙ্গনা, নিতম্বিনী ইত্যাদি। আর পুরুষ শব্দের সমার্থ শব্দ- পুরুষ মানুষ, ছেলে, ছেলেমানুষ, মরদ, মানুষ, মানব, মনুষ্য, নর, আদম ইত্যাদি।

লক্ষণীয় বিষয় এই যে, পুরুষকে ‘মানুষ’ শব্দটির সমার্থক হিসেবে স্বীকার করে নিলেও চিরাচরিত প্রথায় আবদ্ধ এই সমাজ ব্যবস্থায় নারীর ক্ষেত্রে তা প্রচলিত নয় । ঐতিহ্য রক্ষার্থে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের পূজারী পূর্বের ও বর্তমানের বেশিরভাগ ভাষাবিদ ও আভিধানিকগণ নারী ও পুরুষের সমার্থ শব্দ নির্বাচন করতেও নারী ও পুরুষের মাঝে তুলে দিয়েছেন বিভেদের দেয়াল, দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রয়াস পেয়েছে লৈঙ্গিক রাজনীতি ও সামাজিক বৈষম্যের। জীববিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞান অনুসারে জন্মসূত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে যে পার্থক্য দৃশ্যমান তা হল একটি ক্রোমোজোম (নারীর ক্ষেত্রে XX আর পুরুষের XY)। কিন্তু, নারী ও পুরুষ অর্থাৎ মানুষের জৈবিক চাহিদা মেটাতে ও বংশগতিকে ধরে রাখতে অবশ্যই একজন অপরের পরিপূরক। ধর্মীয় অনুশাসনের অনুগামী পুরুষ শাসিত এই সমাজে পুরুষ পেশীশক্তির বলে নিজেকে অধিষ্ঠিত করেছে সমাজপতি বা সমাজের প্রভুর আসনে আর নারীকে হাতে-পায়ে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে সমাহিত করেছে নিজেদের সম্ভোগের সামগ্রী হিসেবে সেবাদাসী বা পরিচারিকা রূপে।

বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাঙালি নারীর প্রাপ্য অধিকার ও স্বাধীনতা কতটুকু? নারী কি সত্যিই পেয়েছে মানুষের মতো বেঁচে থাকার নুন্যতম অধিকার? নাকি পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র নারীকে পরাধীনচেতা ও দুর্বলচেতা রূপে বেঁধে রেখেছে শক্ত রশি দিয়ে! বিশেষভাবে মুসলিম দেশগুলো ও বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশের রাজনৈতিক-সামাজিক ব্যবস্থার দিকে তাকালেই নারীর অবস্থান, অধিকার, স্বাধীনতা–এর পরিমাপ করা সম্ভব। পুরুষতান্ত্রিক প্রথাবদ্ধ এই সমাজ ব্যবস্থায় নারী প্রতিনিয়ত ব্যবহৃত হচ্ছে ইলেকট্রিক যন্ত্রের মতো। অন্যদিকে নারী হয়ে উঠেছে পুরুষের বিলাসিতার ভোগ্যপণ্য এবং চিত্তবিনোদনের একমাত্র উৎকর্ষ। নারীর স্বাধীনতা ও পুরুষের সমান অধিকার এখনো আবদ্ধ হয়ে রয়েছে প্লাস্টিকের বাক্সে, ইট-কংক্রিটের গড়া চার দেয়ালের মধ্যে! নারীকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকতে দেখা গেলেও প্রকৃতপক্ষে সে তো যান্ত্রিক শক্তি রূপে ব্যবহৃত হচ্ছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কল্যাণে; পুরুষের সমান নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় নয়!

বাংলাদেশে প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় যেখানে গণমানুষেরই মৌলিক অধিকার পরিপূর্ণরূপে অর্জিত নয়, সেখানে নারী মুক্তি একরকম অবাস্তব কল্পনা ছাড়া আর কী! মার্ক্সীয় দর্শন অনুযায়ী নারী মুক্তি আন্দোলন তথা শিক্ষা-দীক্ষায়, জ্ঞানে-মেধা-মননে নারীর নিজের শক্ত অবস্থানের ভিত নির্মাণ করা সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সমাজে মানবাধিকার ও সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার পেছনে অনেক পর্যায়ক্রমিক কারণ রয়েছে, নারীবাদ তথা নারী-পুরুষের অভিন্ন অধিকার প্রতিষ্ঠা ঐ কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম। সমাজপতিদের অনবরত শোষণে এই সমাজ ব্যবস্থায় নারীর মতোই শোষিত, নিষ্পেষিত কৃষক ও শ্রমিক। সমাজপতি রূপে চালকের আসনে বসে কল-কাঠি নাড়াচ্ছে বলবান, বিত্তবান, ক্ষমতালোভী পুরুষ। পুঁজিবাদ ব্যক্তি পুরুষকে যেমন করে তুলেছে ক্ষমতাশালী তেমনি নারীর উপর শোষণের পরিমান করেছে বহুগুণে বৃদ্ধি। জগৎ বিখ্যাত দার্শনিক কার্ল মার্ক্স –এর মতে “পুঁজিবাদ আর পুরুষাধিপত্য অবিচ্ছেদ্য, একটি শক্তিশালী করে আরেকটিকে”। গণতন্ত্র বলতে প্রকৃত অর্থে যা বোঝায় তার উল্টো বাস্তবতা আমাদের চোখের সামনে পরিলক্ষিত করছি। সাম্রাজ্যবাদ একে করে তুলেছে ক্ষমতার অধিপতি কেন্দ্রিক, মানবাধিকার অর্জনের দিকে কখনোই নয়।

তাই, বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানের বিজয়যাত্রা পেরিয়ে একুশ শতকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের অভাবনীয় সাফল্যে বিচরণ করলেও আমাদের এই সমাজ ব্যবস্থায় অধিকাংশ নারীকে জড়াব্যস্থায় পড়ে থাকতে হয়েছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সৃষ্ট বিভিন্ন ঘৃণ্যতর প্রথাকে বুকে লালন-পালন করে। একটি মেয়ে বয়সন্ধিকালে পা রাখলে তার পরিবার তাকে আলাদা করে দেয় বাল্যকালের ছেলে বন্ধুদের সাথে মেলামেশা করতে। কিশোর বয়সে যখন তার জ্ঞান-বুদ্ধির সঠিক বিকাশধারা সামনে প্রসারিত হবার কথা তখনই পরিবার তাকে আবদ্ধ করে ধর্মীয় প্রথা ও কুসংস্কারে। এর ফলে সৃষ্ট মানসিক দুর্বলতায় নারীকে তিলে তিলে ক্ষয়ে অসহায় করে তোলে শারীরিকভাবে। বেশিরভাগ নারীই বিশেষভাবে সুশিক্ষা বঞ্চিত পরিবারে বেড়ে উঠে একরকম বোঝার মতো, বিয়ের পর ‘স্বামী’ (উক্ত শব্দের প্রকৃত অর্থ- নারীর পতি, প্রভু, মনিব ও অধিপতি) –এর ঘরেও তাকে থাকতে হয় চরণদাসী সেজে। সেক্ষেত্রে ‘স্বামী’ শব্দের যথার্থ অর্থই ফুটে ওঠে চমৎকারভাবে। ধর্মীয় বাণী-বিধি-বিধানের অন্ধ অনুসারী হয়ে তা সাদরে গ্রহণ করে নারী তার বেহেশত বা স্বর্গ খুঁজে স্বামীর জৈবিক চাহিদা মিটিয়ে পদযুগল সেবা করে। নিজের পরিবার কিংবা স্বামীর পরিবারেও স্বাধীন নয় নারী! জ্ঞানের আলোর স্পর্শ পেয়ে কিংবা না পেয়েও নতজানু হয়ে নারী নিজেই নিজেকে ভোগ্য সামগ্রী ও খেলার পুতুল করে তুলেছে পুরুষের কাছে।

নারী পাশবিক ধর্ষণের স্বীকার হলে ধর্মান্ধ ক্ষমতাশালী সমাজপতিরা তাকে অযাচিত দোররা’র আঘাতে করে তোলে ক্ষত-বিক্ষত, বিচার হয় না ধর্ষকের। বর্তমান সমাজে ইভ-টিজিং বা যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ, ফতোয়া, নারী নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপ, শারীরিক ব্যাধি ক্যান্সারের মতো সমাজকে কুঁড়ে কুঁড়ে গ্রাস করছে। ফলে, দ্বিধাহীনভাবে স্পষ্ট ভাষায় বলা যায় ঊনবিংশ শতাব্দীতে মহান সংস্কারক রাজা রামমোহন রায় –এর প্রস্তাবিত ‘সহমরণ বিষয় প্রবর্ত্তক ও নিবর্ত্তকের সম্বাদ’ এর মাধ্যমে হিন্দু সমাজের বিভৎস ‘সতীদাহ প্রথা’ চিরতরে রদ হলেও এই একবিংশ শতাব্দীতেও বিভিন্ন অমানবিক প্রথা বন্দি করে রেখেছে বাঙালি নারীকে। রামমোহন রায় সেকালে নারীর শরীরে প্রবেশ করিয়েছিলেন প্রাণ, পরবর্তীকালে যা মহাপণ্ডিত ও মহৎ শিক্ষা এবং সমাজ সংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর –এর অবিনাশী অবদানে বিধবা বিবাহ প্রচলন; বাল্যবিবাহ বন্ধের মাধ্যমে ‘নারী’ ফিরে পেয়েছিল তার নতুন জীবন।

পুরুষের উপর নারীর নির্ভরশীলতা কখনোই মুক্তি দিতে পারবে না নারীকে। প্রকৃত শিক্ষার আলো প্রবেশ করাতে হবে নারীর সুকোমল মানসলোকে যাতে নারী আর্থ-সামাজিকভাবে হয়ে উঠতে পারে স্বাবলম্বী। পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে প্রাপ্ত দুর্বল মানসিকতা দুমড়ে মুচড়ে নারীকে হয়ে উঠতে হবে স্বাধীনচেতা। পুরুষতন্ত্রের দেয়া ধিক্কারকে প্রতিহত করে ‘নারী’ শব্দের সমার্থককে তোয়াক্কা করে আর্থ-সামাজিক মুক্তি ও অধিকার অর্জনের লক্ষ্যে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে নারীকে। ক্ষমতালিপ্সু পুরুষের কর্তৃত্ব-পেশীশক্তিকে জ্ঞান-প্রজ্ঞা-বুদ্ধি দিয়ে পরাজিত করে নৈতিক ও মানবিক দর্শনের পথ ধরে রচিত করতে হবে মানুষের অধিকার।

পশ্চিমের পোশাকের ফ্যাশন গায়ে ধারণ করে নয়, চিন্তায় প্রগতিশীলতা ও পাশ্চাত্যের আধুনিক দর্শন-বিজ্ঞান এর চিন্তাধারা ধারণ করতে হবে যাতে পুরুষের সাথেও তাল মিলিয়ে সামনে চলা যায়।

পাশ্চাত্যের নারীবাদের কাণ্ডারী মেরি ওলস্টোনক্র্যাফট এবং প্রাচ্যের নারীবাদের মহীয়সী আদর্শ বেগম রোকেয়া -এর মতো বর্তমান সময়ের বাঙালি নারীকেও প্রজ্বলিত হতে হবে প্রগতির পথ ধরে হেঁটে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোকে মুক্তচিন্তার প্রসার ঘটিয়ে।

নারীর জাগরণ ও মুক্তির জন্যে কবি ফরহাদ মজহার-এর ‘কর্তৃত্ব গ্রহণ কর, নারী’ কবিতাটির কয়েকটি চরণ উল্লেখ করে লেখার ইতি টানছি--

“তুমি প্রজননযন্ত্র তাই তোমার নাম জননী
তুমি রমণযোগ্য তাই তোমার নাম রমণী
ঘোড়াশালে ঘোড়া হাতিশালে হাতির মতো মহলে মহলে থাকো
তাই তোমার নাম মহিলা
গৃহে গৃহে আসবাবপত্রের মত শোভা পাও
তাই তোমার নাম গৃহিণী
আমি পুরুষ শব্দের সমান অর্থবহ উচ্চারণে
তোমার নামকরণ করতে চাই, নারী
কিন্তু পারি না
অক্ষম লজ্জায় আমি তোমার সামনে
অপরাধীর মত দাঁড়িয়ে আছি
আমি পুরুষ
আমাকে ক্ষমা কর”।

কেউ নারী হয়ে জন্ম নেয় না, বরং হয়ে ওঠে নারী’- নারী সম্পর্কিত বহুল আলোচিত, গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয় এ মন্তব্যটি করেছিলেন খ্যাতনামা ফরাসি ঔপন্যাসিক, দার্শনিক ও প্রাবন্ধিক সিমোন দ্য বোভোয়ার।

‘কেউ নারী হয়ে জন্ম নেয় না, বরং হয়ে ওঠে নারী’- নারী সম্পর্কিত বহুল আলোচিত, গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয় এ মন্তব্যটি করেছিলেন খ্যাতনামা ফরাসি ঔপন্যাসিক, দার্শনিক ও প্রাবন্ধিক সিমোন দ্য বোভোয়ার। যা বিধৃত রয়েছে তাঁর লেখা নারীবাদের বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থ ‘ল্য দ্যজিয়েম সেক্স’ ইংরেজিতে ‘দি সেকেন্ড সেক্স’ বাংলায় ‘দ্বিতীয় লিঙ্গ’–এ। তাঁর ঐ মন্তব্যের মূল অর্থ হল আমাদের পশ্চাদগামী পারিপার্শ্বিক পরিবেশ অর্থাৎ পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থাই নারীকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে সম্মান না দিয়ে  অবলা, অর্ধাঙ্গিনী রূপে গড়ে তুলছে।

বাংলা সমার্থ শব্দকোষ অনুযায়ী ‘নারী’ শব্দের সমার্থক শব্দগুলো এমন- স্ত্রী, মেয়ে, মেয়েলোক, মহিলা, রমণী, ললনা, অবলা, মানবী, অর্ধাঙ্গী, অঙ্গনা, নিতম্বিনী ইত্যাদি। আর পুরুষ শব্দের সমার্থ শব্দ- পুরুষ মানুষ, ছেলে, ছেলেমানুষ, মরদ, মানুষ, মানব, মনুষ্য, নর, আদম ইত্যাদি।

লক্ষণীয় বিষয় এই যে, পুরুষকে ‘মানুষ’ শব্দটির সমার্থক হিসেবে স্বীকার করে নিলেও চিরাচরিত প্রথায় আবদ্ধ এই সমাজ ব্যবস্থায় নারীর ক্ষেত্রে তা প্রচলিত নয় । ঐতিহ্য রক্ষার্থে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের পূজারী পূর্বের ও বর্তমানের বেশিরভাগ ভাষাবিদ ও আভিধানিকগণ নারী ও পুরুষের সমার্থ শব্দ নির্বাচন করতেও নারী ও পুরুষের মাঝে তুলে দিয়েছেন বিভেদের দেয়াল, দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রয়াস পেয়েছে লৈঙ্গিক রাজনীতি ও সামাজিক বৈষম্যের। জীববিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞান অনুসারে জন্মসূত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে যে পার্থক্য দৃশ্যমান তা হল একটি ক্রোমোজোম (নারীর ক্ষেত্রে XX আর পুরুষের XY)। কিন্তু, নারী ও পুরুষ অর্থাৎ মানুষের জৈবিক চাহিদা মেটাতে ও বংশগতিকে ধরে রাখতে অবশ্যই একজন অপরের পরিপূরক। ধর্মীয় অনুশাসনের অনুগামী পুরুষ শাসিত এই সমাজে পুরুষ পেশীশক্তির বলে নিজেকে অধিষ্ঠিত করেছে সমাজপতি বা সমাজের প্রভুর আসনে আর নারীকে হাতে-পায়ে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে সমাহিত করেছে নিজেদের সম্ভোগের সামগ্রী হিসেবে সেবাদাসী বা পরিচারিকা রূপে।

বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাঙালি নারীর প্রাপ্য অধিকার ও স্বাধীনতা কতটুকু? নারী কি সত্যিই পেয়েছে মানুষের মতো বেঁচে থাকার নুন্যতম অধিকার? নাকি পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র নারীকে পরাধীনচেতা ও দুর্বলচেতা রূপে বেঁধে রেখেছে শক্ত রশি দিয়ে! বিশেষভাবে মুসলিম দেশগুলো ও বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশের রাজনৈতিক-সামাজিক ব্যবস্থার দিকে তাকালেই নারীর অবস্থান, অধিকার, স্বাধীনতা–এর পরিমাপ করা সম্ভব। পুরুষতান্ত্রিক প্রথাবদ্ধ এই সমাজ ব্যবস্থায় নারী প্রতিনিয়ত ব্যবহৃত হচ্ছে ইলেকট্রিক যন্ত্রের মতো। অন্যদিকে নারী হয়ে উঠেছে পুরুষের বিলাসিতার ভোগ্যপণ্য এবং চিত্তবিনোদনের একমাত্র উৎকর্ষ। নারীর স্বাধীনতা ও পুরুষের সমান অধিকার এখনো আবদ্ধ হয়ে রয়েছে প্লাস্টিকের বাক্সে, ইট-কংক্রিটের গড়া চার দেয়ালের মধ্যে! নারীকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকতে দেখা গেলেও প্রকৃতপক্ষে সে তো যান্ত্রিক শক্তি রূপে ব্যবহৃত হচ্ছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কল্যাণে; পুরুষের সমান নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় নয়!

বাংলাদেশে প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় যেখানে গণমানুষেরই মৌলিক অধিকার পরিপূর্ণরূপে অর্জিত নয়, সেখানে নারী মুক্তি একরকম অবাস্তব কল্পনা ছাড়া আর কী! মার্ক্সীয় দর্শন অনুযায়ী নারী মুক্তি আন্দোলন তথা শিক্ষা-দীক্ষায়, জ্ঞানে-মেধা-মননে নারীর নিজের শক্ত অবস্থানের ভিত নির্মাণ করা সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সমাজে মানবাধিকার ও সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার পেছনে অনেক পর্যায়ক্রমিক কারণ রয়েছে, নারীবাদ তথা নারী-পুরুষের অভিন্ন অধিকার প্রতিষ্ঠা ঐ কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম। সমাজপতিদের অনবরত শোষণে এই সমাজ ব্যবস্থায় নারীর মতোই শোষিত, নিষ্পেষিত কৃষক ও শ্রমিক। সমাজপতি রূপে চালকের আসনে বসে কল-কাঠি নাড়াচ্ছে বলবান, বিত্তবান, ক্ষমতালোভী পুরুষ। পুঁজিবাদ ব্যক্তি পুরুষকে যেমন করে তুলেছে ক্ষমতাশালী তেমনি নারীর উপর শোষণের পরিমান করেছে বহুগুণে বৃদ্ধি। জগৎ বিখ্যাত দার্শনিক কার্ল মার্ক্স –এর মতে “পুঁজিবাদ আর পুরুষাধিপত্য অবিচ্ছেদ্য, একটি শক্তিশালী করে আরেকটিকে”। গণতন্ত্র বলতে প্রকৃত অর্থে যা বোঝায় তার উল্টো বাস্তবতা আমাদের চোখের সামনে পরিলক্ষিত করছি। সাম্রাজ্যবাদ একে করে তুলেছে ক্ষমতার অধিপতি কেন্দ্রিক, মানবাধিকার অর্জনের দিকে কখনোই নয়।

তাই, বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানের বিজয়যাত্রা পেরিয়ে একুশ শতকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের অভাবনীয় সাফল্যে বিচরণ করলেও আমাদের এই সমাজ ব্যবস্থায় অধিকাংশ নারীকে জড়াব্যস্থায় পড়ে থাকতে হয়েছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সৃষ্ট বিভিন্ন ঘৃণ্যতর প্রথাকে বুকে লালন-পালন করে। একটি মেয়ে বয়সন্ধিকালে পা রাখলে তার পরিবার তাকে আলাদা করে দেয় বাল্যকালের ছেলে বন্ধুদের সাথে মেলামেশা করতে। কিশোর বয়সে যখন তার জ্ঞান-বুদ্ধির সঠিক বিকাশধারা সামনে প্রসারিত হবার কথা তখনই পরিবার তাকে আবদ্ধ করে ধর্মীয় প্রথা ও কুসংস্কারে। এর ফলে সৃষ্ট মানসিক দুর্বলতায় নারীকে তিলে তিলে ক্ষয়ে অসহায় করে তোলে শারীরিকভাবে। বেশিরভাগ নারীই বিশেষভাবে সুশিক্ষা বঞ্চিত পরিবারে বেড়ে উঠে একরকম বোঝার মতো, বিয়ের পর ‘স্বামী’ (উক্ত শব্দের প্রকৃত অর্থ- নারীর পতি, প্রভু, মনিব ও অধিপতি) –এর ঘরেও তাকে থাকতে হয় চরণদাসী সেজে। সেক্ষেত্রে ‘স্বামী’ শব্দের যথার্থ অর্থই ফুটে ওঠে চমৎকারভাবে। ধর্মীয় বাণী-বিধি-বিধানের অন্ধ অনুসারী হয়ে তা সাদরে গ্রহণ করে নারী তার বেহেশত বা স্বর্গ খুঁজে স্বামীর জৈবিক চাহিদা মিটিয়ে পদযুগল সেবা করে। নিজের পরিবার কিংবা স্বামীর পরিবারেও স্বাধীন নয় নারী! জ্ঞানের আলোর স্পর্শ পেয়ে কিংবা না পেয়েও নতজানু হয়ে নারী নিজেই নিজেকে ভোগ্য সামগ্রী ও খেলার পুতুল করে তুলেছে পুরুষের কাছে।

নারী পাশবিক ধর্ষণের স্বীকার হলে ধর্মান্ধ ক্ষমতাশালী সমাজপতিরা তাকে অযাচিত দোররা’র আঘাতে করে তোলে ক্ষত-বিক্ষত, বিচার হয় না ধর্ষকের। বর্তমান সমাজে ইভ-টিজিং বা যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ, ফতোয়া, নারী নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপ, শারীরিক ব্যাধি ক্যান্সারের মতো সমাজকে কুঁড়ে কুঁড়ে গ্রাস করছে। ফলে, দ্বিধাহীনভাবে স্পষ্ট ভাষায় বলা যায় ঊনবিংশ শতাব্দীতে মহান সংস্কারক রাজা রামমোহন রায় –এর প্রস্তাবিত ‘সহমরণ বিষয় প্রবর্ত্তক ও নিবর্ত্তকের সম্বাদ’ এর মাধ্যমে হিন্দু সমাজের বিভৎস ‘সতীদাহ প্রথা’ চিরতরে রদ হলেও এই একবিংশ শতাব্দীতেও বিভিন্ন অমানবিক প্রথা বন্দি করে রেখেছে বাঙালি নারীকে। রামমোহন রায় সেকালে নারীর শরীরে প্রবেশ করিয়েছিলেন প্রাণ, পরবর্তীকালে যা মহাপণ্ডিত ও মহৎ শিক্ষা এবং সমাজ সংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর –এর অবিনাশী অবদানে বিধবা বিবাহ প্রচলন; বাল্যবিবাহ বন্ধের মাধ্যমে ‘নারী’ ফিরে পেয়েছিল তার নতুন জীবন।

পুরুষের উপর নারীর নির্ভরশীলতা কখনোই মুক্তি দিতে পারবে না নারীকে। প্রকৃত শিক্ষার আলো প্রবেশ করাতে হবে নারীর সুকোমল মানসলোকে যাতে নারী আর্থ-সামাজিকভাবে হয়ে উঠতে পারে স্বাবলম্বী। পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে প্রাপ্ত দুর্বল মানসিকতা দুমড়ে মুচড়ে নারীকে হয়ে উঠতে হবে স্বাধীনচেতা। পুরুষতন্ত্রের দেয়া ধিক্কারকে প্রতিহত করে ‘নারী’ শব্দের সমার্থককে তোয়াক্কা করে আর্থ-সামাজিক মুক্তি ও অধিকার অর্জনের লক্ষ্যে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে নারীকে। ক্ষমতালিপ্সু পুরুষের কর্তৃত্ব-পেশীশক্তিকে জ্ঞান-প্রজ্ঞা-বুদ্ধি দিয়ে পরাজিত করে নৈতিক ও মানবিক দর্শনের পথ ধরে রচিত করতে হবে মানুষের অধিকার।

পশ্চিমের পোশাকের ফ্যাশন গায়ে ধারণ করে নয়, চিন্তায় প্রগতিশীলতা ও পাশ্চাত্যের আধুনিক দর্শন-বিজ্ঞান এর চিন্তাধারা ধারণ করতে হবে যাতে পুরুষের সাথেও তাল মিলিয়ে সামনে চলা যায়।

পাশ্চাত্যের নারীবাদের কাণ্ডারী মেরি ওলস্টোনক্র্যাফট এবং প্রাচ্যের নারীবাদের মহীয়সী আদর্শ বেগম রোকেয়া -এর মতো বর্তমান সময়ের বাঙালি নারীকেও প্রজ্বলিত হতে হবে প্রগতির পথ ধরে হেঁটে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোকে মুক্তচিন্তার প্রসার ঘটিয়ে।

নারীর জাগরণ ও মুক্তির জন্যে কবি ফরহাদ মজহার-এর ‘কর্তৃত্ব গ্রহণ কর, নারী’ কবিতাটির কয়েকটি চরণ উল্লেখ করে লেখার ইতি টানছি--

“তুমি প্রজননযন্ত্র তাই তোমার নাম জননী
তুমি রমণযোগ্য তাই তোমার নাম রমণী
ঘোড়াশালে ঘোড়া হাতিশালে হাতির মতো মহলে মহলে থাকো
তাই তোমার নাম মহিলা
গৃহে গৃহে আসবাবপত্রের মত শোভা পাও
তাই তোমার নাম গৃহিণী
আমি পুরুষ শব্দের সমান অর্থবহ উচ্চারণে
তোমার নামকরণ করতে চাই, নারী
কিন্তু পারি না
অক্ষম লজ্জায় আমি তোমার সামনে
অপরাধীর মত দাঁড়িয়ে আছি
আমি পুরুষ
আমাকে ক্ষমা কর”।
লিখেছেনঃশহীদুজ্জামান সরকার

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

জাতীয়তাবাদ আরেকটি ধর্ম বই

বাংলাদেশীরা ধর্মভীরু। ইসলাম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ও জাতীয়তাবাদ নামক ধর্মগুলোর প্রতি বাঙ্গালীর দুর্বলতা নতুন কিছু নয়। আমরা যারা মুক্ত-চেতনাকে প্রয়োজনীয় মনে করি, যুক্তিকে ধর্মের ওপরে স্থান দেই তাদের অনেকেই ধর্মের মতই সামনে আসা অন্যান্য প্রতিটি ধারনা ও প্রস্তাবনাকেই যুক্তি দিয়ে বুঝতে চাই, খতিয়ে দেখতে চাই। বা দদূএকটি রূপ আধ্যাত্মিকতা ও ধর্ম হিসাবে মানুষের দলবদ্ধ সমাজব্যবস্থার দ্বিতীয় বড় চালক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। প্রস্তরযুগে আরো একটি ঘটনা ঘটতে শুরু করেছিল। মানুষেরা নিজেদের গ্রাম বা নগরকে কেন্দ্র করে একটি সামষ্টিক পরিচিতি অনুভব করে শুরু করেছিল। বোধ করি তখন থেকেই মানুষের দলবদ্ধতার তৃতীয় চালক জাতীয়তাবাদের প্রাথমিক যাত্রা শুরু। বর্তমানে সারা দুনিয়ায় জাতীয়তাবাদ নানান চেহারায় দলবদ্ধতার সবচাইতে শক্তিশালী চালক হিসাবে বিদ্যমান। একটি নৃগোষ্ঠী যখন পুঁজিবাদী হতে শুরু করে, যখন সে একটি কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্র গঠন করে তখনই সে একটি জাতিতে পরিণত হয়। ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ আমাদের দেশের রাজনীতিতে কাছাকাছি আছে ইতিহাসের শুরু থেকে। মহাভারত থেকে আজকের খালেদা-হাসিনার রাজনীতিতে ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ একে অন্যের হাত...

গাজওয়াতুল হিন্দ

গাজওয়াতুল হিন্দকে বর্তমান বাংলাদেশ ভারত ও নেপাল শ্রীলংকার জিহাদীরা তাদের মনে আটকে রেখেছে। এই বিষয়ে নানা মতাভেদ থাকলেও সকল মুসলিম জিহাদীরা মনে করে বা আ শা করে যে ইসলাম সারা পৃথীবিতে এই জিহাদের মাধ্যামে প্রতিষ্টা হবে। তারা এটাকে মর্যাদার্পূণ জিহাদ বলে মনে করে। ইসলামের ভিত্তির অন্যতম হলো জিহাদ। ইসলাম প্রতিষ্ঠাকালীন প্রচুর যুদ্ধ করা এবং হত্যার পরেই মানুষ ভয়ে ইসলামকে গ্রহন করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ভায়রাস বলা হয় ইসলামকে। এই ভায়রাস আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে গাজওয়াতুল হিন্দকে কেন্দ্র করে। বর্তমানে জিহাদীরা তাদের দলে লোক বেসি করার জন্য অনলাইনে সহ নানা জাগাতে ঠিক এই ভাবে মুসলিমদের উপর প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে "গাজওয়াতুল হিন্দ বা ভারতবর্ষের যুদ্ধ সম্পর্কে কি আপনি অবগত? আপনি কি কাফের মুশরিকদের সাথে লড়াই করতে প্রস্তুত?" ইসলামীষ্ট  জিহাদীরা ঠিক এভাবে চাই যে সারা পৃথিবীতে সবচে’ বড় যে ধর্মযুদ্ধ হবে সেটা হবে হিন্দুস্তান তথা ভারতের হিন্দুদের সাথে মুসলমানদের যা সমস্থ জ্ঞানি ইসলামি স্কলার এবং আলেম উলামা জানে। মুসলমানদের জন্য এটা খুব বড়  জিহাদ এবং এই জিহাদের গুরুত্ব অপরিসীম। এই...

বাঙালি এবং লেখকের জীবন

লেখকের বেঁচে থাকার প্রথম শর্ত তার পরিবারের স্বীকৃতি।এখানে স্বীকৃতির অর্থ হচ্ছে-লেখালেখি যে একটি কাজ,অন্য মতোই একটি কাজের, এবং সেই কাজের জন্য মনোযোগ,সময় এবং শ্রম বিনিয়োগ করতে হয়-এই বোধটা তৈরী হওয়া।লেখালেখিকে মহাগুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে নাই বা ধরা হলো। কিন্তু এটি যে একটি কাজ,এই স্বীকৃতিটা পরিবার থেকে আসা খুব প্রয়োজন। আমাদের দেশের বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতি বান লেখক শেষ পর্যন্ত যে লেখক হয়ে উঠতে পারে না,লেখক জীবন যাপন করতে পারেন না,লেখালেখির জগত থেকে তাদের যে অকাল বিদায় নিতে হয়,তার সবচেয়ে বড় কারণ এটাই।লেখালেখিকে পারিবারিক ভাবে স্বীকৃতি না দেওয়া।দেশের অন্য সব মানুষদের মতোই বেশির ভাগ পরিবারে লেখালেখি একটি নেহাৎ ই শখের জিনিস।তারুণ্য বা অংকুরোদ্গমী যৌবনে যৌনতার চুলকানিরও পেয়ে বসে আমাদের দেশের মানুষদের।তখন তাদের লেখাকে বাবাহা দেয় বাড়ির ভাবীরা,কাকা-জ্যাঠারা,সহপাঠীরা,বা তার কোন প্রেমিক-প্রেমিকাও।কখনো কখনো এমনকি বাবা মাও।তারা সকলেই অবচেতনে,এবং নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানে যে,এই চুলকানি বেশিদিন থাকবে না।কিন্তু যার ক্ষেত্রে থেকে যায়,অর্থাৎ যে বুঝে যায় যে লেখক হওয়াটাই তার ভবিতব্য,সমস্যাটা তার ক্ষ...