সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মুসলিম মুসলিম ভাই ভাইয়ের প্রতিক্রিয়া


আজ থেকে দুই বছর আগে রোহিঙ্গারা যখন ঝাঁকে ঝাঁকে মায়ানমার থেকে এসে বাংলাদেশের দক্ষিণ প্রান্ত টেকনাফ জেলায় জমা হচ্ছিল, তখন আমাদের মুসলমান বাঙালীদের সেই কি মানবতা! ওবুক! মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই, রোহিঙ্গা, ওরা তো মুসলমান। আমাদেরই তো ভাই, আমাদেরই তো বুকে আগলে রাখতে হবে। তাই না? সেই সময় দেখেছি, রোহিঙ্গা মুসলমান ভাইদের জন্য প্রতিদিন দেশের নানা প্রান্ত থেকে ত্রাণ-সামগ্রীর গাড়ি নিয়ে আসত মুসলমান বাঙালীরা। এসে রোহিঙ্গাদের হাতে হাতে টাকা দিত, বস্ত্র দিত, খাবার দিত আর আশে পাশের স্থানীয় মুসলমানদের অনুরোধ করতো ভাই এদের দেখবেন, এদের থাকার জন্য একটু জায়গা দেবেন। মুসলমান তো ভাই। আমরা মুসলমান মুসলমানকে না দেখলে কে দেখবে ভাই?



হ্যাঁ টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দারা মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই এই আদর্শ মেনে রোহিঙ্গাদের থাকার জন্য তাদের আশেপাশের জায়গা দিয়েছিল। কিন্তু সেই সহানুভূতির প্রতিদান যে রোহিঙ্গারা এতো তাড়াতাড়ি দেবে তা টেকনাফের স্থানীয়দের কল্পনায়ও ছিলোনা। কারো বাগানের গাছ কেটে, কারো ধানি জমি দখল করে, কারো পাহাড়ি বন কবজায় নিয়ে, আর যেই না স্থানীয়রা বাধা দিতে এসেছে তার হাত কেটে দিয়েছে, কাউকে মেরে হাড্ডি-গুড্ডি ভেঙ্গে দিয়েছে, এমন কি কল্লাও নামিয়ে দিয়েছে। এই হল রোহিঙ্গাদের প্রতিদান। আজ স্থানীয় মুসলমানরা বুঝতে পারছে এই কাদের মানবতা দেখালো তারা? এই কোন মুসলমান?
আজ রোহিঙ্গারা এতোটা স্থায়ীভাবে গেড়ে বসেছে যে, ওখানে যার তার উপর খবরদারি করছে, স্থানীয়দের তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করছে। আজ আমাদের বুঝতে কষ্ট হয়না বার্মিজরা এদের উপর কেন খেপেছে। যাদের রক্তের মধ্যে বাস করে হত্যা ও সন্ত্রাসবাদ, তারা কি করে ভালো মানুষের মতো দিন কাটাবে? এদেশের বাঙালী মুসলমানদের রোহিঙ্গা প্রীতি দেখে শেখ হাসিনাও দায়ে পড়ে বলেছিল, ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারলে, কেন ১৫ লক্ষ রোহিঙ্গাকে নয়?




রোহিঙ্গারা বার্মা থেকে যেই না ধাওয়া খেয়ে এসেছে, অমনি কয়েক মাসের মধ্যে বলতে শুরু করেছে চট্টগ্রামের ফেনী পর্যন্ত নাকি তাদের জায়গা। রোহিঙ্গাদের এই কথাগুলোর ভিডিও সেই সময় অনেকের মোবাইলে ঘুরাঘুরি করেছিল। তারপরও আমাদের বাঙালি মুসলমানরা মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই নীতি থেকে সরে আসেনি। আমরা সেই শুরু চিৎকার করছিলাম, রোহিঙ্গারা মানুষ হিসেবে ভাল না, এদের রক্তে আছে সন্ত্রাসবাদ। এরা বাংলাদেশে আসলে সন্ত্রাবাদের চাষ করবে। কেউ কানে তুলেনি। কক্সবাজারের নজরুল ইসলাম নামে এই মানুষটিকে দেখেছি রোহিঙ্গা আবাসনের বিরুদ্ধে বিরতিহীন প্রতিবাদ করতে। কেউ শুনেনি। আজ রোহিঙ্গার ক্যাম্পগুলো এক একটা ইয়াবার কারখানা, বেশ্যালয় ও সন্ত্রাসীদের আতুর ঘর হয়ে উঠেছে। স্থানীয় মানুষগুলো আতংকিত হয়ে পড়েছে।




মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই এই আদর্শকে সামনে রেখে ১৯৪৭ সালেও তো আপনারা ভারত থেকে আলাদা হয়ে পাকিস্তানে যোগ দিয়েছিলেন। সামান্য স্বায়ত্তশাসন চাওয়ায় আপনাদের সেই পবিত্র পাকিস্তানি ভাইরা ৯ মাসের মধ্যে ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা ও কয়েক লক্ষ নারীকে ধর্ষণ, গন ধর্ষণ করে তার জবাব দিয়েছিলো। পাকিস্তানিরা আপনাদের ভাই ভাই প্রীতি ২৫ বছরও ধরে রাখেনি। এক ভয়াবহ জেনোসাইড উপহার দিয়েছিলো আপনাদের। তবুও আপনাদের শিক্ষা হয়না। আপনারা রোহিঙ্গাদের ভাই ভাই দেখাতে গিয়ে আজ রাষ্ট্রকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছেন, কিন্তু এর দায় আপনারা এড়িয়ে যাচ্ছেন। আপনাদের ঐ ধর্মান্ধ সুড়সুড়ির কাছে রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের নীতি বার বার পরাজিত হয়। আপনারা দেশে আরব ও পাকিস্তান প্রীতি ছাড়া কিছুই দিতে পারেননি। নিজের জাতিসত্তা কি, নিজের পূর্ব পুরুষের সংস্কৃতি কি, এর খোঁজ নেননি।




আরব্যকে নিজেদের বাপ ভেবেছেন, পাকিস্তানকে বড় আপুর জামাই ভেবেছেন, রোহিঙ্গাদের ভাই ভেবেছেন। কিন্তু বাঙালীত্বকে কখনো নিজেদের আত্নপরিচয় হিসেবে ভাবেননি। আপনাদেরই আশে পাশের অমুসলিমদের ভেবেছেন চিরশত্রু। যেভাবে পেরেছেন তাড়িয়েছেন তাদেরকে দেশ থেকে। আপনাদের ভোগান্তি আছে। ইসলাম ইসলাম করে যে বুক ভাসাচ্ছেন, একবার শরীয়া আইন পাস করে দেখুন না কি হাল হয়।
তিউনিসিয়া ইসলামকে ভালবেসে আরব বসন্ত শুরু করেছিল, লিবিয়া, ইরাক, সিরিয়া এই দেশগুলো বিগত কয়েক বছরে ইসলামি খিলাফত কি জিনিস ভালোভাবে টের পেয়েছে। তারা দেখেছে আইএসের ইসলামিক জিহাদী সৈনিকরা তাদের তুলে নিয়ে গেয়ে কিভাবে ইসলামে যৌন সেবার নামে ধর্ষন করেছে, কিভাবে মেয়েদের উলঙ্গ করে বাজারে বিক্রি করেছে। কিভাবে আল্লাহু আকবর বলে প্রকাশ্যে জবাই করেছে।  তিউনিসিয়া তো এখন ডাইরেক্ট বোরকা নিষিদ্ধও করে দিয়েছে। ইসলামের নামে তাদের দেশের মানব সভ্যতার উপর মধ্য যুগীয় অরাজকতার যে সুমানি বয়ে গিয়েছিল। এখন ভুলেও ইসলামকে পুষতে চায় না। তবু এগুলো দেখেও আপনাদের শিক্ষা হয়না।



হুম, মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই, থাকেন এই নীতি নিয়া। পারলে রোহিঙ্গাদের সাথে নিয়া দেশটাতে শরীয়া আইন জারি করে দেন। চারিদিকে ইসলামি খিলাফতের অরাজকতা চলুক। মেয়েরা ঘরে বাইরে ধর্ষণ হোক, অমুসলিমরা প্রকাশ্যে জবাই হোক। রক্তে রক্তে মানচিত্র লাল হয়ে যাক। আল্লাহু আকবর ধবনিতে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হোক। কয়েক বছর ধরে ইরাক সিরিয়ার ইসলামি খিলাফত প্রতিষ্ঠাকারী জিহাদীরা এটাই করে এসেছিল। এটা না হলে আপনাদের কখনো শিক্ষা হবে না যে আসলে মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই এই নীতি সব সময় সুখের হয়না, অধিকাংশ সময় মানব সভ্যতার ধ্বংসও ডেকে আনে।
লিখেছেন -অপ্রিয় কথা।




↑PREVIOUS-ধর্ম আমাদের কি শেখায়?

NEXT- কাস্মীর সমস্যার ইতিহাস:কাস্মীর এর ভবিষ্যৎ কি হবে?

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

জাতীয়তাবাদ আরেকটি ধর্ম বই

বাংলাদেশীরা ধর্মভীরু। ইসলাম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ও জাতীয়তাবাদ নামক ধর্মগুলোর প্রতি বাঙ্গালীর দুর্বলতা নতুন কিছু নয়। আমরা যারা মুক্ত-চেতনাকে প্রয়োজনীয় মনে করি, যুক্তিকে ধর্মের ওপরে স্থান দেই তাদের অনেকেই ধর্মের মতই সামনে আসা অন্যান্য প্রতিটি ধারনা ও প্রস্তাবনাকেই যুক্তি দিয়ে বুঝতে চাই, খতিয়ে দেখতে চাই। বা দদূএকটি রূপ আধ্যাত্মিকতা ও ধর্ম হিসাবে মানুষের দলবদ্ধ সমাজব্যবস্থার দ্বিতীয় বড় চালক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। প্রস্তরযুগে আরো একটি ঘটনা ঘটতে শুরু করেছিল। মানুষেরা নিজেদের গ্রাম বা নগরকে কেন্দ্র করে একটি সামষ্টিক পরিচিতি অনুভব করে শুরু করেছিল। বোধ করি তখন থেকেই মানুষের দলবদ্ধতার তৃতীয় চালক জাতীয়তাবাদের প্রাথমিক যাত্রা শুরু। বর্তমানে সারা দুনিয়ায় জাতীয়তাবাদ নানান চেহারায় দলবদ্ধতার সবচাইতে শক্তিশালী চালক হিসাবে বিদ্যমান। একটি নৃগোষ্ঠী যখন পুঁজিবাদী হতে শুরু করে, যখন সে একটি কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্র গঠন করে তখনই সে একটি জাতিতে পরিণত হয়। ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ আমাদের দেশের রাজনীতিতে কাছাকাছি আছে ইতিহাসের শুরু থেকে। মহাভারত থেকে আজকের খালেদা-হাসিনার রাজনীতিতে ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ একে অন্যের হাত...

গাজওয়াতুল হিন্দ

গাজওয়াতুল হিন্দকে বর্তমান বাংলাদেশ ভারত ও নেপাল শ্রীলংকার জিহাদীরা তাদের মনে আটকে রেখেছে। এই বিষয়ে নানা মতাভেদ থাকলেও সকল মুসলিম জিহাদীরা মনে করে বা আ শা করে যে ইসলাম সারা পৃথীবিতে এই জিহাদের মাধ্যামে প্রতিষ্টা হবে। তারা এটাকে মর্যাদার্পূণ জিহাদ বলে মনে করে। ইসলামের ভিত্তির অন্যতম হলো জিহাদ। ইসলাম প্রতিষ্ঠাকালীন প্রচুর যুদ্ধ করা এবং হত্যার পরেই মানুষ ভয়ে ইসলামকে গ্রহন করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ভায়রাস বলা হয় ইসলামকে। এই ভায়রাস আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে গাজওয়াতুল হিন্দকে কেন্দ্র করে। বর্তমানে জিহাদীরা তাদের দলে লোক বেসি করার জন্য অনলাইনে সহ নানা জাগাতে ঠিক এই ভাবে মুসলিমদের উপর প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে "গাজওয়াতুল হিন্দ বা ভারতবর্ষের যুদ্ধ সম্পর্কে কি আপনি অবগত? আপনি কি কাফের মুশরিকদের সাথে লড়াই করতে প্রস্তুত?" ইসলামীষ্ট  জিহাদীরা ঠিক এভাবে চাই যে সারা পৃথিবীতে সবচে’ বড় যে ধর্মযুদ্ধ হবে সেটা হবে হিন্দুস্তান তথা ভারতের হিন্দুদের সাথে মুসলমানদের যা সমস্থ জ্ঞানি ইসলামি স্কলার এবং আলেম উলামা জানে। মুসলমানদের জন্য এটা খুব বড়  জিহাদ এবং এই জিহাদের গুরুত্ব অপরিসীম। এই...

বাঙালি এবং লেখকের জীবন

লেখকের বেঁচে থাকার প্রথম শর্ত তার পরিবারের স্বীকৃতি।এখানে স্বীকৃতির অর্থ হচ্ছে-লেখালেখি যে একটি কাজ,অন্য মতোই একটি কাজের, এবং সেই কাজের জন্য মনোযোগ,সময় এবং শ্রম বিনিয়োগ করতে হয়-এই বোধটা তৈরী হওয়া।লেখালেখিকে মহাগুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে নাই বা ধরা হলো। কিন্তু এটি যে একটি কাজ,এই স্বীকৃতিটা পরিবার থেকে আসা খুব প্রয়োজন। আমাদের দেশের বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতি বান লেখক শেষ পর্যন্ত যে লেখক হয়ে উঠতে পারে না,লেখক জীবন যাপন করতে পারেন না,লেখালেখির জগত থেকে তাদের যে অকাল বিদায় নিতে হয়,তার সবচেয়ে বড় কারণ এটাই।লেখালেখিকে পারিবারিক ভাবে স্বীকৃতি না দেওয়া।দেশের অন্য সব মানুষদের মতোই বেশির ভাগ পরিবারে লেখালেখি একটি নেহাৎ ই শখের জিনিস।তারুণ্য বা অংকুরোদ্গমী যৌবনে যৌনতার চুলকানিরও পেয়ে বসে আমাদের দেশের মানুষদের।তখন তাদের লেখাকে বাবাহা দেয় বাড়ির ভাবীরা,কাকা-জ্যাঠারা,সহপাঠীরা,বা তার কোন প্রেমিক-প্রেমিকাও।কখনো কখনো এমনকি বাবা মাও।তারা সকলেই অবচেতনে,এবং নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানে যে,এই চুলকানি বেশিদিন থাকবে না।কিন্তু যার ক্ষেত্রে থেকে যায়,অর্থাৎ যে বুঝে যায় যে লেখক হওয়াটাই তার ভবিতব্য,সমস্যাটা তার ক্ষ...