সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ধর্ম আমাদেরকে কি শেখায় ?



ধর্ম, হ্যাঁ ধর্মই আমাদের পরিবার, সমাজ, রাষ্টকে দূষিত করে চলেছে। প্রতিটি ধর্মের নিয়মগুলো আমাদের নারী সমাজকে নিগৃহীত করছে, একই সাথে পরাধীনতার শিকল পড়াচ্ছে। এই ধর্মের জন্যই আজ পৃথিবী জুড়ে সংখ্যালঘু, সংখ্যাগুরু ত্বত্ত্ব বিভৎস আকারে ফুটে উঠেছে। ভারতের কিছু কিছু জায়গায় মুসলিমরা হিন্দুদের কাছে গনপিটুনি বা কখনো কখনো গুটি কয়েক হত্যার শিকার হচ্ছেন, এর পেছনেও আছে ধর্ম ও জাতিগত সাম্প্রদায়িক ঘৃণা। একই ভাবে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সহ বাংলাদেশের অমুসলিমরা মুসলিমদের হাতে প্রতিনিয়ত ধর্মীয় সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে নির্যাতিত হচ্ছেন। আর সে পালে হাওয়া দিয়ে রাষ্ট্রচালকরা জড়িয়ে পড়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে।

এই পৃথিবীর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ধর্মজীবিরা ঠিক করে দেন, কি করলে একজন মুসলমান আল্লাহ, নবী ও ইসলামের পথে থাকবেন। তাদের কি খাওয়া হারাম, কি খাওয়া হালাল এরাই বলে দেয়। আরো ঠিক করে দেন, কি কি বিধি পালন করলে একজন হিন্দু হিন্দুধর্মের পথে থাকতে পারবেন। বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইহুদি, জৈন সহ পৃথিবীর আরো সহস্রাধিক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ধর্মজীবিরা এই একই নিয়ম পালন করে থাকেন।


ধর্ম কোথায় নেই? পুরো বিশ্ব ও বিশ্বের রাজনীতি পেক্ষাপট আজ কোনো না কোনোভাবে ধর্মের ভাইরাসে আক্রান্ত। ভারতে টানা দ্বিতীয়বার বিজেপি ক্ষমতায় এসেছেন ধর্মকে ব্যবহার করে। বাংলাদেশের অনির্বাচিত সরকার শেখ হাসিনা টিকে আছেন সংখ্যাগরিষ্ঠদের ধর্মকে পুঁজি করে। আমেরিকার ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেছেন খ্রিস্টানদের বর্নবাদ ও জাতীবাদ ব্যবহার করে। যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ দলের বরিস জনসন সদ্য প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয়তাবাদকে ব্যবহার করে।
ধর্ম আমাদের শেখায়, ও হিন্দু, ও অমুসলিম, ও কাফের, ওর সাথে বন্ধুত্ব করোনা। যদি পারো ওর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হও। ধর্ম আমাদের শেখায়, ও মুসলিম, ওর সাথে মিশলে, একসাথে খেলে তোমার জাত, ধর্ম, তোমার পবিত্রতা নষ্ট হবে। ধর্ম আমাদের শেখায় ও খ্রিস্টান, ও বৌদ্ধ, ও জৈন, ও শিখ, ও ইহুদি। ধর্ম আমাদের এটা শেখায় না যে ও একজন মানুষ। অথচ এই ধর্মগুলো মানুষের কোনো কাজেই আসে না। একজন নারীর গর্ব প্রসবের জন্য যখন রক্তের প্রয়োজন হয়, তখন সারা পৃথিবীর ৪ হাজারেরও বেশি বিদ্যমান ধর্মগুলোর একটাও রক্ত দিতে পারেনা।
এই ধর্মশাস্ত্রগুলো তখন রক্ত দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচাতে পুরোপুরিভাবে অক্ষম। তখন প্রয়োজন হয় মানুষের রক্ত। তখন কেউ দেখে না কার রক্ত কে পেয়ে জীবন বাঁচাচ্ছে। ধর্ম টিকিয়ে রেখেছে তারাই, যারা ধর্মকে উপজীব্য করে জীবন ধারণ করে। মসজিদ, মাদ্রাসা, ওয়াজ মাহফিলে উস্কে দেয়, তোমরা মুসলমান, আল্লাহর পথে চলতে গেলে, আল্লাহ ও ইসলাম পালন করতে গেলে তোমাদেরও একটা ইমানী দায়িত্ব আছে। ইসলামে মুর্তি পুজা শিরক, মন্দির শিরক, গির্জা শিরক, পেগোডা শিরক, বেপর্দা নারী হারাম। মুসলমানদের দেশে এগুলোর অস্তিত্ব রাখা যাবেনা। আল্লাহু আকবরের নামে বেড়িয়ে পড়ো, হামলা করো। জিহাদ করা প্রতিটি মুসলমানদের জন্য ফরজ করা হয়েছে। জিহাদি মুমিন মুসলমাদের জন্য আল্লাহ জান্নাত নিশ্চিত করে রেখেছেন। আর কিছু হুজুরদের দেখা যায়, অমুসলিমদের প্রতি যে যত বেশি হিংসা বিদ্ধেষ ঘৃণা উপস্থাপন করে তার জনপ্রিয়তা এদেশে তত বেশি।
আজকের মানব সভ্যতা অবক্ষয়ের পেছনে অবশ্যই পুঁথি গন্ধময় ধর্মগুলোই দায়ি। ধর্মগুলো আমাকে, আপনাকে, অন্যজনকে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান পরিচয়ে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। করে দিচ্ছে মানুষ মানুষের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ। ধর্মই মানুষ মানুষের অদৃশ্য প্রাচীর করে দিয়েছে। ধর্মের নামে দাঙ্গা ফ্যাসাদ করে দিনশেষে ক্ষতি হচ্ছে মানুষেরই, ক্ষতি হয় মানব সভ্যতার। তবুও মানুষ শ্রদ্ধাভরে ধর্মকে পুজে। মসজিদের যে ঈমামকে, যে মুয়াজ্জিনকে আপনার আমার পকেটের টাকায় বেতন দিয়ে রাখা হয়েছে, সেই তারাই আমাদের খেয়ে আমাদের পরে আবার আমাদেরই ধর্ম যুদ্ধ করার জন্য লেলিয়ে দেয়। দিনশেষে ক্ষতি সাধারন ধার্মিকদেরই হয়। কিন্তু ধর্মজীবিদের চুল পরিমাণও ক্ষতি হয়না। এই যে দেখছেন, হিন্দুদের বিভিন্ন স্বামী, গোস্বামী, গুরুদেবরা, আর মুসলিমদের পীর, আউলিয়া, দরবেশরা। কখনো দেখেছেন এরা খেটে খাওয়া মানুষের মতো পরিশ্রম করতে? এরা আপনার আমার টাকায় একেকটা মাজার-মন্দির বানিয়ে নিজেদের ঘাঢ়-গর্ধান মোটা তাজা করে আমাদেরকে মুর্খ করে রাখার জন্য ধর্মের বানী শোনায়। --যুগ যুগ ধরে মানুষ ধর্মের নামে যত প্রাণ ঝরিয়ে আসছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগেও মানুষের এতো প্রাণ ঝরেনি। ধর্ম কোনো অভুক্ত শিশুর মুখে খাবার দিতে পারে না। কোনো শীতার্ত মানুষের গায়ে কাপড় দিতে পারে না, খাদ্য উৎপাদন করতে পারেনা, বিপন্ন মানুষের দুঃখ দুর্দশা ঘুচাতে পারেনা। তাহলে সেই ধর্মকে টিকিয়ে রাখা কেন? ধর্ম আমাদের কি দেয়? এই পর্যন্ত পৃথিবীর মানুষের মধ্যে হানাহানি, মারামারি, জাতিভেদ, সাম্প্রদায়িকতা, হিংসা, বিদ্ধেষ, ঘৃণা ছাড়া আর কিই বা দিতে পেরেছে ধর্ম?


তাহলে এই ঘৃণ্য ধর্ম ব্যবস্থাকে শ্রদ্ধাভরে ম্যাথা নুইয়ে এত ভক্তি করা কেন? পালন করা কেন? আপনারা যদি সত্যিই সকল বর্ণবাদ, জাত-পাত ও সম্প্রদায়ের উর্ধে উঠে মানুষ হতে চান, একটি মানুষের পৃথিবী গড়তে চান, তাহলে এই বিশ্বের প্রতিটি মানুষের ধর্মহীন হওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। কারণ প্রতিটি ধর্মই কোনো না কোনো সম্প্রদায়ের, কোনো না কোনো জাতের প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু মানুষ ও মনুষ্যত্বের প্রতিনিধিত্ব করে না।
লিখেছেন- অপ্রিয় কথা


↑PREVIOUS-এনজিওগুলি কি স্বার্থে রোহিঙ্গা ক্যাম্প টিকিয়ে রাখতে চায়? 

NEXT-মুসলিম মুসলিম ভাই-ভাইয়ের প্রতিক্রিয়া

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

জাতীয়তাবাদ আরেকটি ধর্ম বই

বাংলাদেশীরা ধর্মভীরু। ইসলাম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ও জাতীয়তাবাদ নামক ধর্মগুলোর প্রতি বাঙ্গালীর দুর্বলতা নতুন কিছু নয়। আমরা যারা মুক্ত-চেতনাকে প্রয়োজনীয় মনে করি, যুক্তিকে ধর্মের ওপরে স্থান দেই তাদের অনেকেই ধর্মের মতই সামনে আসা অন্যান্য প্রতিটি ধারনা ও প্রস্তাবনাকেই যুক্তি দিয়ে বুঝতে চাই, খতিয়ে দেখতে চাই। বা দদূএকটি রূপ আধ্যাত্মিকতা ও ধর্ম হিসাবে মানুষের দলবদ্ধ সমাজব্যবস্থার দ্বিতীয় বড় চালক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। প্রস্তরযুগে আরো একটি ঘটনা ঘটতে শুরু করেছিল। মানুষেরা নিজেদের গ্রাম বা নগরকে কেন্দ্র করে একটি সামষ্টিক পরিচিতি অনুভব করে শুরু করেছিল। বোধ করি তখন থেকেই মানুষের দলবদ্ধতার তৃতীয় চালক জাতীয়তাবাদের প্রাথমিক যাত্রা শুরু। বর্তমানে সারা দুনিয়ায় জাতীয়তাবাদ নানান চেহারায় দলবদ্ধতার সবচাইতে শক্তিশালী চালক হিসাবে বিদ্যমান। একটি নৃগোষ্ঠী যখন পুঁজিবাদী হতে শুরু করে, যখন সে একটি কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্র গঠন করে তখনই সে একটি জাতিতে পরিণত হয়। ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ আমাদের দেশের রাজনীতিতে কাছাকাছি আছে ইতিহাসের শুরু থেকে। মহাভারত থেকে আজকের খালেদা-হাসিনার রাজনীতিতে ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ একে অন্যের হাত...

গাজওয়াতুল হিন্দ

গাজওয়াতুল হিন্দকে বর্তমান বাংলাদেশ ভারত ও নেপাল শ্রীলংকার জিহাদীরা তাদের মনে আটকে রেখেছে। এই বিষয়ে নানা মতাভেদ থাকলেও সকল মুসলিম জিহাদীরা মনে করে বা আ শা করে যে ইসলাম সারা পৃথীবিতে এই জিহাদের মাধ্যামে প্রতিষ্টা হবে। তারা এটাকে মর্যাদার্পূণ জিহাদ বলে মনে করে। ইসলামের ভিত্তির অন্যতম হলো জিহাদ। ইসলাম প্রতিষ্ঠাকালীন প্রচুর যুদ্ধ করা এবং হত্যার পরেই মানুষ ভয়ে ইসলামকে গ্রহন করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ভায়রাস বলা হয় ইসলামকে। এই ভায়রাস আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে গাজওয়াতুল হিন্দকে কেন্দ্র করে। বর্তমানে জিহাদীরা তাদের দলে লোক বেসি করার জন্য অনলাইনে সহ নানা জাগাতে ঠিক এই ভাবে মুসলিমদের উপর প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে "গাজওয়াতুল হিন্দ বা ভারতবর্ষের যুদ্ধ সম্পর্কে কি আপনি অবগত? আপনি কি কাফের মুশরিকদের সাথে লড়াই করতে প্রস্তুত?" ইসলামীষ্ট  জিহাদীরা ঠিক এভাবে চাই যে সারা পৃথিবীতে সবচে’ বড় যে ধর্মযুদ্ধ হবে সেটা হবে হিন্দুস্তান তথা ভারতের হিন্দুদের সাথে মুসলমানদের যা সমস্থ জ্ঞানি ইসলামি স্কলার এবং আলেম উলামা জানে। মুসলমানদের জন্য এটা খুব বড়  জিহাদ এবং এই জিহাদের গুরুত্ব অপরিসীম। এই...

বাঙালি এবং লেখকের জীবন

লেখকের বেঁচে থাকার প্রথম শর্ত তার পরিবারের স্বীকৃতি।এখানে স্বীকৃতির অর্থ হচ্ছে-লেখালেখি যে একটি কাজ,অন্য মতোই একটি কাজের, এবং সেই কাজের জন্য মনোযোগ,সময় এবং শ্রম বিনিয়োগ করতে হয়-এই বোধটা তৈরী হওয়া।লেখালেখিকে মহাগুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে নাই বা ধরা হলো। কিন্তু এটি যে একটি কাজ,এই স্বীকৃতিটা পরিবার থেকে আসা খুব প্রয়োজন। আমাদের দেশের বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতি বান লেখক শেষ পর্যন্ত যে লেখক হয়ে উঠতে পারে না,লেখক জীবন যাপন করতে পারেন না,লেখালেখির জগত থেকে তাদের যে অকাল বিদায় নিতে হয়,তার সবচেয়ে বড় কারণ এটাই।লেখালেখিকে পারিবারিক ভাবে স্বীকৃতি না দেওয়া।দেশের অন্য সব মানুষদের মতোই বেশির ভাগ পরিবারে লেখালেখি একটি নেহাৎ ই শখের জিনিস।তারুণ্য বা অংকুরোদ্গমী যৌবনে যৌনতার চুলকানিরও পেয়ে বসে আমাদের দেশের মানুষদের।তখন তাদের লেখাকে বাবাহা দেয় বাড়ির ভাবীরা,কাকা-জ্যাঠারা,সহপাঠীরা,বা তার কোন প্রেমিক-প্রেমিকাও।কখনো কখনো এমনকি বাবা মাও।তারা সকলেই অবচেতনে,এবং নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানে যে,এই চুলকানি বেশিদিন থাকবে না।কিন্তু যার ক্ষেত্রে থেকে যায়,অর্থাৎ যে বুঝে যায় যে লেখক হওয়াটাই তার ভবিতব্য,সমস্যাটা তার ক্ষ...