এই ব্লগটি সন্ধান করুন

নাস্তিকের তন্ত্রলাপ

কেন
সার্বজনীন কালী সাধনার এই সময়ে কিঞ্চিৎ তন্ত্র বিষয়ক আলাপ অথবা নাস্তিকের তন্ত্রালাপ :
আগের কালিপুজোর সময়ে লেখা,তবে আজো একই ভাবে প্রাসঙ্গিক


গতবার কালিভক্ত কিছু অর্বাচিনের অতি-ভক্তির কারণে একটু এই নিয়ে একটু কৌতুহলী হয়েছিলাম,তার প্রেক্ষিতে একটা লেখা লেখা,এইবারেও দেখলাম কোনো পরিবর্তন হয় নি।এক কালিকাশ্রিত ভাম গতকাল মদ্যপান বেশি করে আজ ছুটি নিয়ে আমার যাতনা অতীব বাড়িয়েছিল।গর্দভ,একদিকে রাত বারোটার কিছু আগে মায়ের শরীর খারাপ,হাসপাতালে নিতে হবে বলে,সাড়ে বারোটার সময়ে ডিপার্টমেন্ট এর হোয়াটস আপ এ দাঁত বের করে রসিকতা করেছে।যাইহোক,যত ভক্ত দেখছি ততই নিজের অবস্থান পোক্ত হচ্ছে।না,এইসব বলা ঠিক না তাই মূল প্রসঙ্গে আসি!

প্রতিবছরের মতোই এই বছরেও নিজের কর্মস্থলে কয়েকজন কালীসাধক এর দাপাদাপির কারণে বড় বিরক্ত হয়েছি। এদের বাড়িতে কালীপুজো হবে। ভালো কথা, যা ইচ্ছা কর কিন্তু কাজ ফেলে সারাদিন এই বিজ্ঞান আর ধর্মের মিশ্রণ করে কি করে কয়েকটা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পাওয়া মানুষ এই রকম অর্বাচীন আর ছাগল হয় ওটা ভেবে বড় মন খারাপ হচ্ছে। এরা তন্ত্রমন্ত্র ইত্যাদি নিয়ে লাফায় অথচ বিষয়টা ও ভালো করে জানে না বা জানতে চায় না। প্রশ্ন করলে আড়ালে আমাকে নাস্তিক বলে,সঙ্গে আরো কিছু বলে, কিন্তু নিজেকে জিজ্ঞাসা করে না। এর ফলে ওই বকেয়া কাজ শিকেয় তুলে এক একটি মাতৃভক্ত আমার অবস্থা আরো খারাপ করেছে ! গতবারের মতো এইবারেও করেছে!

যাই হোক সব কিছুর একটা ভালো দিক থাকে,বিষয়টা নিয়ে আরো একটু খবর নিলাম কালকে। ভাবলাম,একা জ্বলি কেন ? তাই আপনাদের জ্বালাতনের সূত্রপাত।


এই লেখাটা কোনো শ্লেষ বা ব্যঙ্গ করার জন্য না অথবা প্রশস্তির জন্য না। আমি যা পড়ি তাই লিখি। এই বিষয়টি কিঞ্চিৎ নড়বড়ে তাই ভুল হতেই পারে। সে ক্ষেত্রে ক্ষমাশীল চোখে দেখবেন এবং ভুল করলে ধরিয়ে দেবেন। কোনো অনুভূতি ইত্যাদির কারণে গালাগাল দিলে একদম শাক্ত মতে পাল্টা গালাগাল দেবো কোনো বৈষ্ণবীয় বা সুফী বিনয় আশা করবেন না !

তন্ত্র এবং তান্ত্রিক আমাদের সবার মানে এই ভারতের পূর্বভাগের এমনকি অন্য প্রদেশের কাছে এক অতীব কৌতুহল ,ভয় ,সম্ভ্রম ,ঘৃনা,ভক্তি সবকিছুর এক মিশ্রন। বঙ্কিম এর কপালকুণ্ডলা থেকে ত্রৈলোক্যনাথের ব্যঙ্গ বা রাজশেখর বসুর রম্য থেকে শরদিন্দুর ব্যোমকেশ রহস্য উপন্যাস,সব কিছুতেই তন্ত্র আর তান্ত্রিক এসেছে। আমাদের আগ্রহ বাড়িয়েছে। ইদানিং এটি রোজগারের একটি বড় হাতিয়ার ও হয়েছে যদিও এর মাধ্যমে করা আয় ইনকাম ট্যাক্স এ দেওয়া যায় না তবু অনেকের প্রগতির সাথী হয়েছে। যাক সে কথা ! আসুন একটু এর উপর কিঞ্চিৎ আলোচনা করি।


এই উপমহাদেশে বিশেষতঃ বাংলার (পূর্ব ভাগ মানে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বর্তমান অবস্থা আমি জানি না ) ,আসাম বা উড়িষ্যা এমনকি বিহার এর কিছু অঞ্চলে যে শাক্ত মতে মাতৃ সাধনা বা স্ত্রী শক্তির আরাধনা রয়ে গেছে তাকে আমরা বলি তন্ত্র সাধনা আর এর উপাসকদের বলি তান্ত্রিক। এদের পরিচয় বহুল ভাবে দেখি বিবিধ পত্র পত্রিকার ,বৈদ্যুতিন মাধ্যম ইত্যাদিতে সুপারম্যান হিসেবে নানান সমাধান করার অঙ্গীকারের বিজ্ঞাপন দিতে দেখি। এক কথায় এদের অধিকাংশ শঠ,লম্পট এবং সন্দেহজনক লোক। আমার দেখা কোনো সহি তান্ত্রিক নেই তবে আজ কোনো ব্যক্তির উপর না এই প্রাচীন চর্চার উপর আলোচনা করবো।

সেই প্রাচীন যুগ থেকেই পৃথিবীর নানান দেশে মাতৃশক্তির আরাধনা চলেছে এবং এখনো অনেক জায়গায় চলছে। মজার বিষয় হলো এই শক্তি পুজোর উল্লেখ খুব বেশি পাই না। মূল যে বইটি কে উপজীব্য করেছি ওটা হলো নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের :হিস্ট্রি অফ তান্ত্রিক রিলিজিয়ন। এছাড়া অঘোর পন্থীদের উপর একটি আত্বজীবনী মূলক লেখার মূল বিষয়গুলো নিয়েছি অঘোর এট লেফট হ্যান্ড অফ গড বইটি থেকে। এছাড়া ইন্টারনেটে গুতো মেরে যা পেয়েছি তার তথ্যসূত্র শেষে দিয়েছি। ছবি সব ইন্টারনেটের সৌজন্যে।


শ্রী ভট্টাচার্যের লেখনীতে বলছেন এই শাক্ত পন্থা মূলত নিজের জায়গা তৈরী করেছে শৈব ধর্মের উপর ভিত্তি করে। শৈব মূলত পুরুষ আর শাক্ত হলো স্ত্রী শক্তির প্রাধান্য। তার তথ্য থেকে দেখতে পাই মূলত গুপ্তযুগে এই শাক্ত মতের উদ্ভব হয়। ঋগ্বেদ ইত্যাদির অথবা বৌদ্ধ ধর্মের উপর এই মাতৃপূজার প্রভাব দেখা গেলেও এর উপর বইগুলো সব মধ্যযুগের লিখিত। আরো দেখা যাচ্ছে,বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত সেই সময়ের মানুষগুলো এই তন্ত্র বা শাক্ত পথ কে ত্যাগ করতে পারে নি। এর ফলে তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মের একটি শাখার সৃষ্টি হয়। এই বইটি আরো একটি মজার বিষয় তুলে ধরেছে তা হলো,বৈষ্ণবরা ও এর প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছিল।লক্ষ্মীতন্ত্র বলে একটি বই এর উল্লেখ পাই তার থেকে (নবম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে কোনো এক সময়ে লেখা ) দেখা যায় যে লক্ষী বিষ্ণুর চেয়ে ও বড়। তার দ্বারাই এই জগৎ সংসার সৃষ্টি হয়েছে। এই লক্ষীতন্ত্রে লক্ষীর আরাধনার পন্থা আর তান্ত্রিক মত (অঘোর পন্থী ইত্যাদি যার কথা পরে বলছি ) একই অর্থাৎ পঞ্চ 'ম ' এর সমাহার। মানে পাঁচটি ম অক্ষর দিয়ে শুরু বস্তু -মদ্য, মাংস্য, মৎস্য, মুদ্রা ও মৈথুন এর সমাহারে। এর উপর বিস্তারিত বলছি পরে।


এই শাক্ত মতে বিশেষত তন্ত্র সাধনার সবচেয়ে বড় শক্তি হলো একজন নারী। তাকে আদ্যাশক্তি (আদি শক্তি ? ) হিসেবে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর মানে শিব এর সৃষ্টিকর্তা ভাবা হয়। নরেন্দ্রনাথ এর বই বা আগের কিছু জানা থেকে বুঝতে পারি এই স্ত্রী শক্তি সেই মানুষের পথ চলার পর থেকেই ভাবনার বংশানুক্রমিক বিস্তার। নারী বংশবিস্তার এর জন্য শুধু না তাকে মা রূপে মানে রক্ষাকারী বলে ভেবেছে মানুষ। এ ছাড়া ও উৎপাদিকা শক্তির প্রতীক ভেবেছে সারা পৃথিবীর সকল প্রাচীন সভ্যতা তাই আমরা চাষের বা ফলের ক্ষেতের উৎপাদন আর স্ত্রী শক্তির উপর রূপক এর বিবিধ উদাহরণ বা রীতির প্রচলন দেখি। খরা হলে কোনো মেয়ে কে (কুমারী ) বলি দেওয়া বা অনেক ক্ষেত্রে তার বিপরীত মানে তার পুজো করা দেখতে পাই ভারত এবং অন্য দেশে। যাই হোক,আমার কাছে যা খুব আকর্ষণীয় লেগেছে তা হলো এই তন্ত্রমত বলে বিশ্বচরাচর এর সৃষ্টি বা রহস্য মানব দেহের রহস্য এক।


এই পথ হারিয়ে যায় নি কারন হলো যুগের সাথে মানিয়ে নেওয়া। শ্রী ভট্টাচার্যের মতে এই পথে কোনো জাতিভেদ ছিল না বা নেই। যার ফলে কোনো ব্রাহ্মণ এর গুরু হতে পারে কোনো চণ্ডাল। প্রমান সহকারে তিনি তা দেখিয়েছেন। একই উদাহরণ দেখি ওই অঘোর পন্থীদের নিয়ে লেখা বইটি তে ও। এছাড়া মাতৃতান্ত্রিক ভাবনা কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কোনো মহিলা তা তিনি যেই হন। এমনকি কোনো ঘৃণ্য পেশা বা সমাজের কাছে ব্রাত্য হলেও তান্ত্রিকদের কাছে শ্রদ্ধার পাত্রী হতে পারেন। এই মতে ওই মহিলা সেই আদ্যাশক্তির প্রতীক তাই পূজনীয়। পুরুষ সংসর্গ করলেও তার 'নষ্ট ' হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। কথাটা খেয়াল করে কারণ উল্টোটা আমরা স্বাভাবিক ভাবে দেখে থাকি। আরো লক্ষণীয় এই যে নারী গুরু হতে পারেন ( রামকৃষ্ণ বোধহয় এইরকম কোনো অঘোর পন্থী মহিলার কাছে তন্ত্র অভ্যাস করার সুযোগ পেয়েছিলেন। সঠিক তথ্যসূত্র এখনো হাতের কাছে নেই তাই নামটি মনে নেই), এছাড়া ও আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদানের বিষয় তুলে ধরবো। ওটা হলো, বিবিধ খাদ্যের উপর কোনো বিধিনিষেধ রাখে নি। মহামাংস বলে যা পাচ্ছি তাতে গন্ডার থেকে গরু বা শুওর সবই ভক্ষণ করার রীতি আছে এই তান্ত্রিকদের। এছাড়া 'শব -সাধনা ' র মাধ্যমে এনাটমির উপর যে সুপ্রাচীন সামাজিক বাধা ছিল তার প্রথা কে ভেঙেছিল এই মত। দাঁড়ান,দাঁড়ান ! আমি এখানে এই মতের কোনো ক্যানভাস মানে প্রচার করতে আসি নি। খালি সদর্থক জায়গা গুলো দেখাচ্ছি মাত্র !

উপরে যা বলেছিলাম সেই কথার প্রতিধ্বনি করে আবার বলছি, নিজের খোঁজ থেকে দেখছি গুপ্তযুগের পর থেকে এই শক্তিপুজোর প্রচলন এর প্রমান দেখে। কালীর বিবিধ রূপ যেমন ঈশান কালী ,রক্ষা কালী ,প্রজ্ঞা কালী ইত্যাদি নাম পাওয়া যায় তৎকালীন একটি বই জয়দ্রথ-যামল থেকে। চক্রেশ্বরী ,যোগিনীচক্র ইত্যাদি নাম ও পাই ওই বইটিতে। লক্ষণীয় হলো পাল বংশের বা তার আগে পরে এই দেবী রূপের সাথে শিবের সংযুক্তি ছিল অর্থাৎ শৈব আর শাক্ত মতের একটি মিল কোথাও হয়েছিল।


বৌদ্ধ ধর্মের আগমনের পরে এই ভারতের ভুমিপুত্ররা বৌদ্ধ ধর্ম তো নিলো সঙ্গে নিজেদের পুরোনো রীতি রেওয়াজ ছাড়তে পারলো না। সম্রাট অশোকের সময়েই বৌদ্ধধর্মের বহু বিভক্তি হয়। এরপর অবশ্য দুটো প্রধান শাখাই থেকে যায়,হীনযান ও মহাযান । মহাযানীদের মধ্যে তান্ত্রিক কাজগুলোর প্রভাব পরে । এরপরে আসে তন্ত্রমতের প্রভাবে প্রভাবিত বজ্রযান । ওটা আবার আরো কতক শাখাতে ভেঙে যায় । এর মধ্যে সহজযান ও কালচক্রযান অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই বজ্রযান জনপ্রিয় হয় পূর্ব ভারতে বিশেষতঃ তৎকালীন বাংলার বিভিন্ন জায়গায়। এই মতবাদের মানুষদের চারটি পীঠস্থান এর খবর পাওয়া যায়। তার মধ্যে কামাখ্যা আর শ্রীহট্ট অতীব পরিচিত সকলের কাছে। আরো লক্ষণীয় হলো প্রত্যেকটি পীঠস্থানে একটি করে বজ্রযোগিনীর মূর্তি ছিল।

এই বজ্রযান আবার অনেকের কাছে সহজিয়া বলে পরিচিত ছিল কারণ এর ধর্মপথ ছিল কোনো ভারী জটিল মন্ত্র ইত্যাদি ছাড়া ,মূল কথা হলো সুখের পথ সন্ধান। মানুষের দেহের মধ্যেই এই মহাবিশ্বের সব রহস্য আছে তাই তাকে জানলেই সব জানা হয় এবং নির্বাণ হয়। কি বুঝলেন ? কেমন 'সহজ মিশ্রণ ' দুটো ধর্মকে এক জায়গায় নিয়ে এসেছিল ? আরো খেয়াল করুন,তন্ত্র মতের সেই দেহতত্বের চিন্তা এখানে ও আত্বস্থ হয়েছিল।


যাই হোক , এই বৌদ্ধধর্মের তন্ত্র পথ বা পরবর্তীতে নাথ পন্থীদের উদ্ভব ইত্যাদির বাইরে একদম সেই তন্ত্রপথের কথায় ফিরে যাই।মূলতঃ যা জানতে পারি তা হলো এই শাক্ত তান্ত্রিকদের সাধনার জন্য থাকে মূলমন্ত্র ( উচ্চারিত হয় না ) ,বীজমন্ত্র- যা জপ করে ,মুদ্রা , আসন, ন্যাস, দেবতার প্রতীক স্বরূপ বর্ণরেখাত্মক যন্ত্র, সাধনার সময় মৎস, মাংস্য, মদ্য, মুদ্রা ও মৈথুন এই পঞ্চ-মকারের ব্যবহার। এ ছাড়া বিবিধ ব্ল্যাক ম্যাজিক অনেকটা ও ভুডু ইত্যাদির মতো যেমন মারণ ,উচাটন ,বশিকরন ইত্যাদি যে গুলো কাগজ বা বিবিধ বিজ্ঞাপনে দেখেন। তবে সব সম্প্রদায়ের উপাসনার মধ্যেই যে এ সব বৈশিষ্ট্য আছে তা নয়। যথা, যারা বামাচারী তান্ত্রিক সাধক তারাই মৎস্য, মাংস, মদ্য, মুদ্রা ও মৈথুন এই পঞ্চ-মকারের উপর চলে । নারীসঙ্গমই এই উপাসনার ভিত্তি । এই সাধনায় নারীসঙ্গমের ভূমিকা সম্বন্ধে তাঁরা যে ব্যাখ্যা করেন, তার সমস্তটাই হচ্ছে রহস্যময়, গূঢ় ও গুহ্য । তন্ত্রমতে নারীর দুই রূপ -কামিনী ও জননী । তত্বগত ভাবে তাদের বক্তব্য মা হোক বা সম্ভোগের সাথী দুটোই মানুষের নিজের ভাব অথচ ওটা তো সেই একই নারীর রূপ । শুরুতে কাম এর উৎস আর পরে সন্তান এর মাতৃরূপ।


তান্ত্রিক সাধনায় তিনটি ধাপ আছে । পশ্বাচার, বীরাচার আর দিব্যাচার। ভোগ না হলে, ত্যাগ আসে না, সেজন্যই তান্ত্রিক সাধনার প্রথম ধাপ পশ্বাচার। এই ধাপে সাধক কামকে সম্পূর্ণভাবে জয় করেন। এরপর হলো বীরাচার,এতে শ্মশানে অমাবশ্যার রাতে শব মানে মৃতদেহের উপর বসে সাধনা । এই ধাপ টি তে মনের ভয় দূর করা হলো লক্ষ্য । অমাবস্যার অন্ধকারে শবের ওপরে বসে তন্ত্রাভিলাষী সাধনা শুরু করে । অবশেষে শেষ ধাপ মানে দিব্যাচার এর শুরু অর্থাৎ আরাধ্যা ইষ্টদেবী মানে মহাশক্তি কালিকার দর্শন। তখনই সে প্ৰকৃত শক্তির অধিকারী হয় ।

এই পথের বিবিধ দিশারী ,পুঁথি বা পন্থা ছেড়ে আবার সেই আমাদের বাংলার তন্ত্রচর্চা নিয়ে ফিরে আসি। কারন ওই আগের শাখাপ্রশাখা বা কিতাবাদি নিয়ে আলোচনা করলে আপনাদের ও আকর্ষণ কমে যাবে আর আমার ও লিখতে ইচ্ছা করবে না। যাই হোক ,লাইনে আসি ! তবে একটা কথা বলা দরকার,এই বৌদ্ধ বা হিন্দু ধর্মের বিবিধ মিশ্রণ যে সহজিয়া ভাব সৃষ্টি করেছিল ওটা আত্বস্থ করে বাউলরা ও। এর উপর প্রচুর লেখা আর গান আছে ,পরে কোনো দিন আলোচনা করা যাবে। উপরে যে বইটি সমন্ধে বলেছিলাম ,সেই বই এর লেখক নরেন্দ্রনাথ বলছেন, একটি তান্ত্রিক ধারার শুরু হয়েছিল যা সিদ্ধ ধারা নামে পরিচিত। এই ধারার অনুগামীদের লক্ষ্য ছিল সিদ্ধি বা অলৌকিক শক্তিলাভ। বিভিন্ন তিব্বতী পুঁথিতে চুরাশী জন সিদ্ধের উল্লেখ আছে। সিদ্ধদের লক্ষ্য ছিল অমরত্বের সাধনা। এই জন্য তাঁরা যৌগিক পদ্ধতি ছাড়া ঔষধপত্র ব্যবহার করতেন । এতে পারদ ও অভ্রের দ্বারা প্রস্তুত করা হত। তাঁরা রসায়নশাস্ত্রের প্রভূত চর্চা করেছিলেন এবং এই তান্ত্রিক রসায়নবিদ্যা রসেশ্বর দর্শন নামে পরিচিত হয়েছিল। মহারাষ্ট্র ও দক্ষিণ ভারতের সিদ্ধ সম্প্রদায়ের সঙ্গে বঙ্গদেশের সিদ্ধরা বিশেষ যোগাযোগ রাখতেন। চুরাশীজন সিদ্ধের তালিকায় কয়েকজন প্রসিদ্ধ নাথ সম্প্রদায়ের গুরুর নাম পাওয়া যায়।


এই প্রসঙ্গে শশিভূষণ দাশগুপ্তর রচনা ' ভারতের শক্তি-সাধনা ও শাক্ত সাহিত্য ' থেকে এক চিমটি তুলে দিতে ইচ্ছা হলো। তার মতে উত্তর পশ্চিমে কাশ্মীর থেকে বঙ্গ এবং কলিঙ্গ আর তার সাথে উত্তর পূর্ব ভারত এবং ভুটান ,নেপাল এবং চীন ইত্যাদি অঞ্চলে এই তন্ত্রমত প্রচলিত ছিল। শরীরের শেষ অংশে মানে মেরুদণ্ডের শেষ ভাগে মূলাধার চক্র আর উপরে দুই ভুরু মানে কপালের মাঝে আজ্ঞাচক্র নিয়ে ষড়ৈশ্বজ বা ছয়টি আলাদা আলাদা চক্রের কথা বলেছেন। স্তর ভিত্তিতে প্রত্যেকটিতে একটি করে দেবী যেমন ডাকিনী, রাকিণী, লাকিনী, কাকিনী, শাকিনী এবং হাকিনী র উল্লেখ করে তিনি দেখিয়েছেন যে এই নামগুলো একটা ও সংষ্কৃত না। ‘ডাক’ কথাটি তিব্বতী, অর্থ জ্ঞানী - স্ত্রীলিঙ্গে ডাকিনী। খেয়াল করুন,আজো আমরা বাংলায় ডাইনি কথাটি ব্যবহার করি। কদর্থে করলেও বিষয়টি কিন্তু খেয়াল করার ! এ প্রসঙ্গে লাকিনি এবং হাকিনীর সন্ধান দিয়েছেন ভুটানে এই দুই দেবীর মন্দির এর কথা বলে। আরো দেখিয়েছেন যে তন্ত্রের মধ্যে থাকা মন্ত্র বিশেষতঃ বীজমন্ত্র মূলত এক অক্ষরের। এর মধ্যে বৈদিক ‘ওঁ’ যেমন আছে তেমন আছে হ্রীং ক্লীং হৈঁ ক্রীং ইত্যাদি। পরের গুলো কিন্তু কোনো সংস্কৃত ভাষার অংশ না !


তন্ত্রে গুরুর গুরুত্ব এবং কালিকার বিবিধ রূপের কিঞ্চিত বর্ননা :

স্বল্প জ্ঞানে যা বুঝেছি এই ধর্মাচরণে গুরু এবং শিষ্যের একটা যোগসূত্র আছে যা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। গুরু বাছাই করা এবং শিষ্য বাছাই করার উপর প্রচুর জোর দেওয়া হয়েছে। বস্তুতঃ গুরু ঠিক না হলে শিষ্যের কপালে অশেষ দুর্গতি আছে তার সতর্কতা বইগুলোতে পাচ্ছি। শিষ্যের দীক্ষার বিধিবদ্ধ পদ্ধতি আছে। গুরু শিষ্যকে নির্দিষ্ট ইষ্টদেবতার উপর বীজমন্ত্র দিয়ে থাকেন। এই মন্ত্র হয় অতীব গোপনীয় এবং তার অর্থ বাইরের লোকের কাছে প্রকাশিত না করার জন্য হয় অতীব দুর্বোধ্য।

নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের বই থেকে ধার করে বলতে হলে ক্রমানুসারে এই কালী রুপী শক্তির বিবিধ প্রকার দেখা যায় :
১ এক জায়গায় এই আটটি বর্ণের দেবীদের নাম হলো বশিনী, কামেশ্বরী, মোদিনী, বিমলা, অরুণা, জয়িনী, সর্বেশ্বরী ও কালিনী।
২. আবার তান্ত্রিক দেবীদের বিভাজিত করা হয়েছে দশ মহাবিদ্যায়। এঁরা হলেন মহাকালী, তারা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, বগলা, ছিন্না, মহাত্রিপুরসুন্দরী, ধূমাবতী এবং মাতঙ্গী।
৩. আর এক সূত্রে দেখা যাচ্ছে আরো একটি তালিকা যেমন : কালী, তারা, ষোড়শী , ভুবনেশ্বরী , ছিন্নমস্তা, ভৈরবী , ধূমাবতী , বগলামুখী, মাতঙ্গী ও কমলা ।
৪. এ ছাড়া দ্বাদশ মহাবিদ্যার ক্ষেত্রে এই ১২টি রূপ হলো – কালী, নীলা, মহাদুর্গা, ত্বরিতা, ছিন্নমস্তিকা, বাগ্বাদিনী, অন্নপূর্ণা, প্রত্যঙ্গিরা, কামাখ্যাবাসিনী, বালা, মাতঙ্গী ও শৈলবাদিনী।
৫. শেষ হয় নি , এই কালীর আবার প্রধান দুই ভাগ আছে – দক্ষিণকালিকা ও বামাকালিকা। দক্ষিণকালীর পূজার অধিকার সকলেরই আছে, কিন্তু ওই দেবীর ‘রহস্যপূজার’ অধিকার একমাত্র দীক্ষিত তান্ত্রিকদেরই। এই পুজোর নিয়ম হচ্ছে চক্র তৈরী। পাঠক এই চক্র কিন্তু একটি বিশেষ আকর্ষণ ! বামাকালীর আরাধনা একমাত্র সন্ন্যাসীরাই করতে পারে।

মন্ত্রের কিছু নমুনা :
১.তারা বীজমন্ত্র “হ্রীঁ স্ত্রীঁ হূ ফট্”।
২.দুর্গা বীজমন্ত্র “ওঁ হ্রীঁ দূঁ দুর্গয়ৈ নমঃ”।
৩. শ্মশান কালিকা বীজমন্ত্র “ঐঁ হ্রীঁ শ্রীঁ ক্লীঁ কালিকে ঐঁ হ্রীঁ শ্রীঁ ক্লীঁ”।
৪. শ্যামা বীজমন্ত্র “ক্রীঁ ক্রীঁ ক্রীঁ হূঁ হূঁ হ্রীঁ হ্রীঁ দক্ষিণে কালিকে ক্রীঁ ক্রীঁ ক্রীঁ হূঁ হূঁ হ্রীঁ হ্রীঁ স্বাহা”।

আরো প্রচুর আছে সব গুলোতে একটা অদ্ভুত জিনিস দেখা যায় এই ইং জাতীয় শব্দের চয়ন। তিব্বতী বা ওই দিকের কোনো প্রভাব কি ? আমার জানা নেই ! যাই হোক আরো একটু বিস্তারিত বলি। এই মন্ত্র আবার একদম সঠিকভাবে উচ্চারন করতে হবে এর অর্থ জেনে এবং যে ছন্দে আছে সেই ছন্দে। কোনো এদিক ওদিক হওয়া চলবে না কিন্তু ! মন্ত্রার্থ মানে শব্দার্থ নয়। মন্ত্রের ভাবার্থ উপলব্ধি করা শিখতে হবে, এবং তা সাধনসাপেক্ষ।

যাইহোক ,আমরা তন্ত্রসাধনার কোনো হাতেকলমে শিক্ষাদান করছি না ,তাই আবার নরেন্দ্রনাথ এর লেখনি অনুযায়ী বলতে হয় ‘তান্ত্রিক সাধনার তিনটি ধারা– পশু, বীর ও দিব্য। পশু বলতে জীবাত্মাকে বোঝায় যা কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য এই ছয় রিপুর অধীন। অধিকাংশ মানুষই এই পর্যায়ভুক্ত। নিজের চেষ্টায় এই পর্যায় থেকে বীর পর্যায়ে রূপান্তরিত হয় মানুষ । এ জন্য প্রয়োজন ন্যায় ও সত্যের পথ অবলম্বন, সামাজিক মঙ্গলের পক্ষে কাজ, ইন্দ্রিয়দমন, সমদৃষ্টি, নারীর প্রতি মর্যাদাপূর্ণ ব্যবহার, দুর্বলের পক্ষ সমর্থন প্রভৃতি বীরোচিত গুণাবলী অর্জন। বীর পর্যায়ের মানুষরা নির্ভয়, প্রেরণাদায়ক , দৃঢ় সংকল্প , ভদ্র, শক্তিশালী, বুদ্ধিমান ও কর্মপ্রবণ। বীরপর্যায়ের মানুষরা দক্ষিণাচারে এবং বামাচারে দীক্ষাগ্রহণের অধিকারী। দক্ষিণাচারী পর্যায়ে তাকে জ্ঞান ও ভক্তিমার্গের চর্চা করতে হবে।


বামাচার অবলম্বন করলে তবেই তাকে শক্তিমন্ত্রে দীক্ষিত হতে হবে, নতুবা নয়। দিব্য পর্যায়ে উন্নীত মানুষের গুণাবলীকে তার সত্তা থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। বীরাচারীর মধ্যে কিছুটা অহংবোধ থাকে, কিন্তু দিব্যস্তরে যে শিশুর মত সদা সন্তুষ্ট, তার ভিতর ও বাইরের কোন প্রভেদ নেই। সে কোন শৃঙ্খলেরই অধীন নয়, সামাজিক বিধিনিষেধ তাকে স্পর্শ করতে পারে না। অর্থাত পশুভাবের মানুষকে দিব্যভাবে রূপান্তরিত করাই তন্ত্রের উদ্দেশ্য।’

নরেন্দ্রনাথ এর লেখনী বা অন্য লেখকদের থেকে যা জানতে পারি তা হলো এই তন্ত্রের চক্র ইত্যাদি একটি বিশেষ গুণাবলীর মানুষের জন্য ধার্য। আরো দেখছি এই কার্যকরণ সবার জন্য নহে এই স্লোগান উঠেছে। এর কারন যা দেখছি তা হলো সার্বিক ভাবে এই যৌনাচার বা মদ্যপান একটা সার্বিক অবক্ষয়ের কারন হয়ে উঠছিল মনে হয়। আরো মনে হয় এই তত্বের সাথে জাদু বা বিশেষ ক্ষমতার মতো বিষয়গুলো মানুষ কে আকর্ষণ করছিল প্রবল ভাবে (আজো করে ),সে ক্ষেত্রে একটা আড়াল এবং 'ইহা সবার জন্য নহে ' ধরণের একটি ধারণা আনার কাজ হয়েছিল।


এই উপরে নরেন্দ্রনাথ এর বর্ণনা অনুযায়ী জানতে পারছি শাস্ত্র সম্মত সাতটি 'আচার ' আছে এই তন্ত্রে। আচার বলতে আচরণ কে বোঝানো হয়েছে যা শাস্ত্র অনুমোদন করে। এই 'আচার' কে দেখছি বেদ, বৈষ্ণব, শৈব, দক্ষিণ, বাম, সিদ্ধান্ত ও কৌল ভাগে ভাগ করা হয়েছে । প্রথম তিনটি সর্বসাধারণ এর জন্য অর্থাৎ পশুভাবের মানুষদের জন্য, চতুর্থ ও পঞ্চমটি বীরভাবের মানুষদের জন্য, ষষ্ঠ ও সপ্তমটি দিব্যভাবের মানুষদের জন্য। প্রথম আচারটি হল দেহ ও মনের শুচিতার জন্য, দ্বিতীয়টি ভক্তির জন্য, তৃতীয়টি জ্ঞানের জন্য, চতুর্থটি প্রথম তিনটির সমন্বয়, পঞ্চমটি ত্যাগের জন্য, ষষ্ঠটি ত্যাগের উপলব্ধির জন্য এবং সপ্তমটি মোক্ষের জন্য নির্দিষ্ট।

আচার ইত্যাদির বাইরে যদি আমরা একটা মোটামুটি সরল বিভাজন করি তা হলে দেখতে পাচ্ছি দক্ষিণাচার আর বামাচার এই দুটো পথ আছে। এর মধ্যে বামাচার সর্বাধিক আলোচিত হয়েছে বিভিন্ন যুগে,হয়েছে নিন্দিত বা আকর্ষণের বস্তু। এই মতে সাধনা করার জন্য দিনে ব্রাহ্মচর্য আর রাতে ওই পঞ্চ ম মানে মদ্য, মাংস, মৎস্য, মুদ্রা, মৈথুন সহকারে এবং 'খপুষ্প ' দিয়ে স্ত্রীশক্তির পুজো করবে। এক্ষেত্রে নারী হবে সাধন সহায়িকা। অতীব গোপনীয় এবং লোক চোখের আড়ালের একটি কর্ম বলা হয়েছে এটিকে।


এই স্ত্রী এবং পুরুষের মিলন কে বর্ণনা করার বিশদে গেলাম না কারন ওটা আমার উদ্দেশ্য না। কাম ছাড়া মুদ্রা শস্যের প্রতীক, মৎস্য প্রজননের, মাংস ও মদ্য সৃষ্টির উপাদান। এই সাধনার উদ্দেশ্য হলো মোক্ষ লাভ আর ওটা হবে কুলকুন্ডলিনী কে জাগ্রত করে। এই কুলকুন্ডলিনী কি ? তন্ত্র বলছে শক্তি মানুষের দেহে কুণ্ডলিনী শক্তি হিসেবে মূলাধারচক্রে লুকিয়ে থাকে। এই কুণ্ডলিনীশক্তিকে সাধনার মাধ্যমে জাগাতে হবে। মূলাধার থেকে স্বাধিষ্ঠান, আর তারপর মণিপুর, অনাহত, বিশুদ্ধি ও আজ্ঞাচক্রের মধ্য দিয়ে সহস্রারে নেওয়া সাধকের লক্ষ্য। ওটা অন্য ধর্মীয় বস্তুর মত একটি বায়বীয় বিষয়,বিজ্ঞান এর কোনো যন্ত্রর মাধ্যমে দেখার উপায় নেই !

এই ছয়টি চক্র থাকে কোথায় ?

নিচ থেকে উপরের ক্রমানুসারে এই চক্রের ধাপ হলো গুহ্যে মানে পায়ুদ্বার , লিঙ্গের মুখে , নাভিতে, হৃদয়ে, গলায় ও মাথায় মানে কপালে দুই চোখের ম্যাচে অবস্থিত। কুণ্ডলিনীশক্তিকে সম্যক জাগরিত করে নিম্নতর চক্রগুলির মধ্য দিয়ে সহস্রারে প্রেরণ করার অর্থ শক্তিকে তাঁর উৎসে পৌঁছে দেওয়া।

এখানে একটু ছুঁয়ে যাই ওই 'খপুষ্প ' বিষয়টি। ওটি রজকালীন রক্ত নামের উপাদান এর কথা বলা হয়েছে। এক অর্থে পাঠক ওটাকে ঘৃণা করতে পারেন কিন্তু খেয়াল করুন,ব্রাত্য বস্তুগুলোকে স্থান করে দেওয়া হয়েছে পুজোর উপকরণে। প্রথার বিরুদ্ধে হেঁটেছে এই শ্রেণীর মানুষ।
নরেন্দ্রনাথ বা অন্য লেখকদের থেকে যা জানতে পারি তা হলো এই তন্ত্রের চক্র ইত্যাদি একটি বিশেষ গুণাবলীর মানুষের জন্য ধার্য। আরো দেখছি এই কার্যকরণ “ সবার জন্য নহে “ এই স্লোগান উঠেছে। এর কারন যা দেখছি তা হলো সার্বিক ভাবে এই যৌনাচার বা মদ্যপান একটা সার্বিক অবক্ষয়ের কারন হয়ে উঠছিল মনে হয়। আরো মনে হয় এই তত্বের সাথে জাদু বা বিশেষ ক্ষমতার মতো বিষয়গুলো মানুষ কে আকর্ষণ করছিল প্রবল ভাবে (আজো করে ),সে ক্ষেত্রে একটা আড়াল এবং সামাজিক অবক্ষয় রোধ করার একটা ব্যবস্থা হিসেবে করা হয়েছিল বলে মনে করি ।


এর বিবিধ উপাচার এবং মন্ত্র ইত্যাদি দেখে আমার মতো সাধারণ অল্পবুদ্ধির মানুষের একটা কথাই মনে হচ্ছে,মূলত প্রথা বহির্ভুত এই আদি ধর্ম এক অদ্ভুত মিশ্রণ তৈরী করেছে বৈদিক এবং পরবর্তী বা পূর্ববর্তী ধর্মের আচরণের। অস্বীকার করেছে পুরুষতন্ত্রের ঈশ্বর কে ওটা আমার কাছে প্রশংসনীয় লেগেছে। আরো আশ্চর্য লেগেছে এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টির সাথে মানব শরীরের তুলনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে সৃষ্টির একটি চিরকালীন চক্রর কথা যা বেশ উচ্চমানের চিন্তার প্রকাশ বলে সম্ভ্রম আদায় করে। রিশিষ্টঃ :

আমি ইচ্ছা করেই হরপ্পা ময়েঞ্জোদাড়ো বা সুদূর পেশোয়ার থেকে অন্য অঞ্চল অথবা আফ্রিকা থেকে মায়া সর্বত্র এই ধরনের কোনো রহস্যবিদ্যার একই ধরণের চর্চা কে আলোচনায় আনি নি কারন মূল বিষয় ছিল আমাদের এই বাংলার তন্ত্র চর্চা আর কালীপুজো মাথায় রেখে এই লেখা।
নারী সঙ্গম বা মদ্যপান অথবা মরার উপর সাধনা এমনকি সিদ্ধাই বা বিশেষ ক্ষমতার উপর আলোচনা করি নি কারন ওটা করলে হয়তো নিজের মতামতের একটা ছায়া চলে আসতো। যতটা পেরেছি নির্মোহ ভাবে এই বিষয়টা তুলে ধরতে। মনে রাখবেন আমার এই বিষয়ে কোনো জ্ঞান নেই (কিছুতেই নেই ! ),যা পড়েছি তার উপর লিখেছি।


আজকের এই বিজ্ঞানের সার্বিক প্রসারের দিনে একটাই স্বনির্বন্ধ অনুরোধ,এই তান্ত্রিক ইত্যাদি যাদের সমন্ধে বিজ্ঞাপন বা অন্যভাবে প্রচারে দেখেন তাদের থেকে শত হস্ত দূরে থাকুন। কোনো অলৌকিতা নেই এই প্রকৃতিতে। যা আমাদের কাছে অলৌকিক লাগে তা আমরা ব্যাখ্যা করতে পারি না তাই ওটা ঐরকম লাগে। নিজের বা সমাজের উন্নয়ন এর জন্য কোনো শর্টকাট রাস্তা নেই। যা আছে তা হলো বিজ্ঞানের এবং যুক্তির। এই পথেই মানব জাতির ক্রমোন্নয়ন আর এই জগতের মঙ্গল সম্ভব।

সবাইকে আলোর উৎসবের অনেক শুভেচ্ছা। ভালো থাকুন সবাই ! আসুন একটু মনের আলো জ্বালাই একসাথে !

ছবি ইন্টারনেট থেকে পাওয়া,লেখার উপর একটু আকর্ষন বাড়াতে দেওয়া হয়েছে,কোনো ভীতি বা অন্য অনুভুতি জাগ্রত করার জন্য নহে !

তথ্যসুত্র:
১.নারী সংঙ্গম ও তন্ত্রমন্ত্র বাংলা লাইব্রেরি 
২. তন্ত্র নিয়ে অজানা কিছু তথ্য ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা
৩.আরো কিছু তথ্য এখানে দেখতে পারেন।
 ৪.অঘোরীদের উপর লেখা বই পড়ে দেখতে পারেন। 


লিখেছেনঃ-আজিজুল সাইজী


↑PREVIOUS-ইসলাম এবং দাসী

NEXT-গডলেস কালী

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ