এই ব্লগটি সন্ধান করুন

যাপিত জীবনে প্রভাব ধর্মের



দরজার ওপাশে এত জোরে ডাকাডাকি আর চিল্পাপাল্লাতে কাঁচা ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো।
বালিশের পাশে রাখা মোবাইলে দেখলাম ৪.২০বাজে।
রাজ্যের সমস্ত চিন্তা,দুঃখ-হতাশা সারাদিনের না খাওয়া শরীর নিয়ে ঘুমিয়ে গেছিলাম যদি এইসব গুলোর একটা সমাধান হয়ে যায়।
যখন পারস্পরিক বিষয় গুলোর সমাধান আসে না ঠিক তখনই আমি ঘুমিয়ে বা চুপ হয়ে যাই।
এ যেন নিত্যদিনের একটা অভ্যেস হয়ে যাচ্ছে।
দরজা খুলেই দেখি একজনের মাথায় বাদশাহী টুপি আর মুখ ভরা দাড়িতে, পাশের দুই জনেরও মাথায় টুপি কিন্তু এদের মুখে দাড়ি নেই।
এদের তিন জনকেই আমি চিনি,প্রথমজন আমাদের বড় মসজিদের ইমাম,আর বাকী দুই জন  সেই মসজিদ কমিটিরই সদস্য!
দরজার এপাশ থেকেই বললাম কি চাই?
বাসায় তো কেউ নেই।
-আপনি কি এই বাসার কেউ না?
এটা বলতে বলতেই হাতে গুজে দিলো এক বাদশাহী ফরমান-নামা। "

বাদশাহী ফরমাননামাটা আসলে সুন্দর কাগজে মুড়ে কম্পিউটার ফটোশপ দিয়ে টাইপ করা।
এই খামটার উপরে লেখা দাওয়াত পত্র।
খামটা খুলতে খুলতেই জিগাইলাম কার বিয়ে?
একজন তো হেসেই ফেললো, বললো বিয়ে নয় আমরা একটা ইসলামী জলসার আয়োজন করেছি অবশ্যই আসবেন কিন্তু আর এই খামটা আপনার বাবাকে দেবেন।
আমি তাদের পাল্টা জবাবে বললাম বাংলা ওয়াজ তো?
তিন জনে খুব করে মাথা নাড়ালো।
বললাম,শুনবেন?
আমার কম্পিউটারে অনেক ওয়াজ আছে।
তিনারা বললেন বাবা আমাদের তো আরো বাড়িতে যেতে হবে দেরী হয়ে যাবে আরেকদিন এসে আপনার মায়ের হাতের রান্না খেয়ে আপনার কম্পিউটাররে বসে ওয়াজ শুনবো।
বললাম দেখুন সেই সৌভাগ্য আপনাদের নাও আসতে পারে,
আর আমি আপনাদের এই ফাঁকে চা খাওয়াতে পারি।
যা করার এখনই করতে হবে।
কি বুঝে তারা মেনে নিলো একজন বললো, খুব বেশি সময় দিতে পারবো না।

আজকাল কেন জানি সব কিছু দ্রুতই এই মুহুর্তেই হোক এরকম একটা এফেক্ট শুরু হয়েছে নিজের মধ্যে।
যা কিছুই হোক সেটার ফল বা অফলটা আমার দ্রুতই চাই।ওয়াজ শুরু হয়ে গেছে।
ইসলামে দাসদাসী নবীর জীবন যাপন নিয়ে।
ওয়াজকারী হুজুরের কিছু কিছু কথা শুনে তারা আমার দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছে মনে হয় আমি তাদের পর্ণ মুভি জাতীয় কিছু একটা দেখাচ্ছি,শোনাচ্ছি।
বসে থাকা হুজুরের অবশ্য কোন বিকার নেই তিনি মনোযোগ দিয়েই শুনতেছে।
হয়তো কথা গুলো নিজের মধ্যে গেঁথে নিচ্ছেন সামনের শুক্রবারে মসজিদে বাংলা খুদবা পড়ার পর যেন উচ্চারণ করতে পারেন।
পাশের দুই ভদ্রলোক বলেই বসলেন কি সব উল্টাপাল্টা কথা বলে।
এইসব ওয়াজ বন্ধ করেন,একজন কিবোর্ড এর এন্টার চাপ দিয়ে পজ করে দিলেন।
আমাকেই লক্ষ্য করে যিনি এখন কথা বলতেছেন,
তিনি এই মসজিদ কমিটির সভাপতিত্বে দায়িত্বে আছেন।
কোন আগ পাশ না ভেবেই বলে বসলেন আপনাকে কখনো মসজিদে দেখিনা কেন বাবাজি?
কথা কেড়ে নিয়ে হুজুর বললেন,
তাই তো আজ দিয়ে দুই বছর হলো আমি এখানে আছি,
আপনাকে মসজিদে কখনো দেখিনি তো!
আর তাদের কথা গুলো বন্ধ করার জন্যই বলে বসলাম আমি আসলে পড়াশোনার জন্য বাইরে ছিলাম এইজন্যই হয়তো দেখেননি আর এই যে এইসব ওয়াজ শুনেই আমার নামাজ বন্দেগিতে রুচি নষ্ট হয়ে গেছে।
কথাটা শুনামাত্র হুজুর আমার দুই হাত চেপে ধরলো।
আর বললো মুসলমানের ছেলে হয়ে কি বললেন,
তওবা করেন।
আর দয়া করে মসজিদে আসবেন মাগরিব এর নামাজে প্রথম কাতারেই যেন আপনারে দেখি।
এরকম একটা প্রস্তাবে বললাম দেখা যাক...বলে আস্থা দেয়ার একটা বর্থ্য চেষ্টা করে গেলাম।
শেষ বারের মতো শুধু বললাম চাচা চা'টা খেয়ে গেলেন না?
শেষ পর্যন্ত তাদের চোখ মুখে যা আন্তরিকতা দেখলাম তাতে মনে হলো এরা যদি পৃথিবীর সমস্ত কাজগুলোতেই আন্তরিকতা দেখাতো,
তাহলে পৃথিবী কোথায় যেতো।
পরক্ষণেই মনে হলো,
কোথায় যেতো শরীয়া আইনের একটা সুন্দর পৃথিবী আমরা পাইতাম।
মাগরিব এর নামাজের সময়টা পার হয়ে গেলো নামাজে না গিয়ে আমি এই বিষয়টা নিয়ে লিখছি।
আপনারাই বলেন তো,
শরীয়া আইন থাকলে কি আমি ঘরে বসে থাকতে পারতাম?
লিখেছেন:শহীদুজ্জামান সরকার 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ