এই ব্লগটি সন্ধান করুন

ইসলাম কেন আজও টিকে আছে ?



মানুষ দু'টি কারনে প্রভাবিত হয়। ভয় ও লোভ। মানুষের মনে যদি প্রচন্ড ভীতির সঞ্চার করা যায়, তাতে মানুষের সকল রকম যুক্তিবোধ , প্রতিবাদ, মুক্তচিন্তা এসব চুড়ান্তভাবে রোধ করা যায়। একই সাথে যদি মানুষকে যদি তার কামনা ও বাসনার সাথে সম্পর্কযুক্ত বস্তুগত বিষয় নিয়ে প্রচন্ড লোভ দেখান হয়, তাহলেও সে তার নৈতিকতা, মুক্তচিন্তা ইত্যাদিকে বিসর্জন দিতে পারে। ইসলাম ঠিক এই দু'টি কারনে টিকে আছে। ইসলাম মুসলমানদের মনে কঠিনভাবেই একই সাথে ভীতি ও লোভের সঞ্চার করতে পেরেছে।

ইসলামের চুড়ান্ত বিধান হচ্ছে - যদি ইসলাম পালন না করা হয়, তাহলে তাকে দোজখে গিয়ে আগুনে পুড়তে হবে অনন্তকাল। আর যদি পালন করে তাহলে বেহেস্তে গিয়ে নানারকম ফল, খাদ্য, মদ ইত্যাদি সহ ৭২ টা কুমারী নারীর উষ্ণ সঙ্গ উপভোগ করতে পারবে অনন্তকাল।
সাধারন মুসলমানদের কাছে যদি প্রশ্ন করা হয়- তুমি কেন ইসলাম পালন কর? সে পরিস্কার উত্তর দেবে - দোজখের আগুন থেকে বাঁচতে।দেখা যায়, যতটা না বেহেস্তে গিয়ে আনন্দ ফূর্তি করার জন্যে মানুষ ইসলাম পালন করে, তার চাইতে বরং মানুষ ইসলাম পালন করে দোজখের আগুন থেকে বাঁচতে। ইসলামের নবী মানুষের চরিত্রের এই দু'টি দিক খুব ভালভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন - মানুষকে যদি প্রচন্ডরকম ভয় দেখান হয়, তাহলে তাদেরকে যা বলা হবে , সেটাই শুনবে। শুধু শুনবেই না, তার জন্যে তারা জান পর্যন্ত দিয়ে দেবে। তবে সেই ভীতির বিষয়টাকে যে কোনভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যদি মুসলিম সমাজে মানুষের মনস্তাত্বিক বিশ্লেষণ করা হয়, আগুনে পোড়ার ভীতির বিষয়টা সহজেই আবিস্কার করা যায়। একজন মুসলমান যত শিক্ষিতই হোন না কেন, তার মধ্যে সেই মজ্জাগত ভীতিটা সেই শৈশব থেকেই প্রোথিত হয়ে থাকে। খুব ছোট বেলাতেই তার মনোজগতে আগুনে পোড়ার এই ভীতিটা ঢুকিয়ে দেয়া হয়। সেজন্যে সে যত উচ্চ শিক্ষা লাভ করুক না কেন, অবচেতন মনে সেই ভীতিটা সব সময়ই কাজ করে, তা থেকে সে প্রায় কখনই মুক্ত হতে পারে না, আর ভীতিটাই তাকে সারাজীবন ইসলামের প্রতি অনুগত থাকতে বাধ্য করে।

এই প্রচন্ড ভীতির বিষয়টা আমরা বাস্তবে খুব যে কাজের সেটা প্রমান করতে পারি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে, হিটলার জার্মানিতে প্রথমে জাতিয়তাবাদী চেতনার দ্বারা জার্মান জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেন। কিন্তু যখন তিনি ক্ষমতায় আরোহন করেন, তার বিরুদ্ধবাদীদেরকে এমন নৃশংসভাবে হত্যা করতেন যে তা সাধারন মানুষের মনে প্রচন্ড ভীতির সঞ্চার করে আর তখন প্রায় কেউই তার বিরোধীতা করতে পারত না। সারা দেশে নানা রকম গোয়েন্দা বাহিনীর দ্বারা বিরোধীদেরকে ধরা হতো আর তাদের সোজা হত্যা করা হতো। ফলে এক সময় হিটলারের বিরুদ্ধে কথা বলার কেউ ছিল না। একসময় সোভিয়েত রাশিয়া, চীন ইত্যাদি দেশেও ঠিক এই ভীতি সঞ্চার করে গোটা জাতিকে চুপ করে রাখা হয়েছিল। স্ট্যালিনের বিরোধীতা যারাই করত, তাদেরকেই তিনি নির্মমভাবে হত্যা করতেন , মাও সেতুং চীনেও ঠিক একই ভাবে প্রচন্ড ভীতির সঞ্চার করেছিলেন জনগনের মধ্যে। অর্থাৎ তাদের আদর্শ যা ই হোক না কেন , তারা সেই আদর্শকে জোর করে সমাজে চাপিয়ে দেয়ার জন্যে আশ্রয় নিত জনগনের মধ্যে প্রচন্ড ভীতি সঞ্চারের। ভীতি সঞ্চার করতে গিয়ে, তারা হত্যা করেছে লক্ষ লক্ষ ভিন্ন মতাবলম্বী। কাউকে সামান্য ভিন্ন মতাবলম্বী বলে মনে হলেও তারা তাকে হত্যা করত। এমনই নির্মম ছিল তাদের ভীতি সঞ্চারের পদ্ধতি।

বর্তমানে উত্তর কোরিয়াতে ঠিক সেই ধরনের ভীতির সঞ্চার করেছেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। কিম জং উন এতটাই নির্মমভাবে ভীতির সঞ্চার করেছেন যে, এই কিছুদিন আগে তার এক চাচাকে তিনি কুকুর দিয়ে কামড়িয়ে কামড়িয়ে হত্যা করেছেন, কারন তিনি নাকি কিম জং উনের বিরোধীতা করছিলেন গোপনে গোপনে। ঠিক একারনে বর্তমানে উত্তর কোরিয়াতে প্রকাশ্যে কিম জং উনের বিরুদ্ধে কথা বলবে, এমন একজনকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। নিকট অতীতে এ ধরনের ভীতির সঞ্চার করে খুব সফলভাবে দীর্ঘকাল রাজত্ব করেছেন ইরাকের সাদ্দাম হোসেন, লিবিয়ার মুয়াম্মার গাদ্দাফি প্রমুখ। সাদ্দাম হোসেনের নির্মমতার কাহিনী তো এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।

ইসলাম মানুষকে শুধু পরকালেই দোজখের প্রচন্ড আগুনের ভয় দেখিয়ে চুপ থাকেনি, বাস্তব জগতেই মানুষের মনে এমন প্রচন্ড ভীতির সঞ্চার করেছে যে সেই ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই মানুষ সর্বদাই ভয় ভীতির মধ্যে থেকেছে। স্বাধীনভাবে বিচার বুদ্ধি করে কখনই চিন্তা ভাবনা করার সুযোগ পায়নি। ১৪০০ বছর আগের আরবে মানুষ মদ ও নারীর প্রতি প্রচন্ডভাবে দুর্বল ছিল। এখনও আরবরা প্রচন্ড নারী লিপ্সু জাতি হিসাবে পরিচিত। ইসলাম পালন না করলে দোজখে গিয়ে প্রচন্ড আগুনে পুড়তে হবে , আর পালন করলে বেহেস্তে গিয়ে আকণ্ঠ মদ পান করে অগনিত কুমারি নারীর সাথে যৌন সঙ্গম করা যাবে। আরবের অসভ্য বর্বর মানুষের কাছে এর চাইতে মোক্ষম দর্শন আর কিছু ছিল না। একই সাথে কেউ যদি ইসলাম ত্যাগ করে , তাহলে তাকে এই দুনিয়াতেই এমন ভাবে শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল যে , অত:পর কোন মুসলমান কখনই উক্ত কাল্পনিক দোজখের আগুনের শাস্তি ও বেহেস্তের নারীসঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন করার সাহস পায় নি। এমন কি ইসলাম নিয়ে, মুহাম্মদ নিয়ে সামান্য সন্দেহ যাদের মধ্যে দেখা গেছে তাদেরকে এমন নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে যে কেউ অত:পর ইসলাম ত্যাগ করা তো দুরের কথা , ত্যাগ করার কল্পনাও করতে পারে নি।
ইসলাম ত্যাগকারির কি শাস্তি হবে , তা আছে কোরানে:

সুরা নিসা -৪: ৮৯: তারা চায় যে, তারা যেমন অবিশ্বাসী, তোমরাও তেমনি অবিশ্বাসী হয়ে যাও, যাতে তোমরা এবং তারা সব সমান হয়ে যাও। অতএব, তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর পথে হিজরত করে চলে আসে। অতঃপর যদি তারা বিমুখ হয়, তবে তাদেরকে পাকড়াও কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর। তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না এবং সাহায্যকারী বানিও না।

উক্ত আয়াতের প্রেক্ষাপট ছিল : মক্কার কিছু লোক বানিজ্য করার জন্যে যখন মদিনার পাশ দিয়ে যেত, তারা মদিনায় মুহাম্মদের কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহন করত, কিন্তু মক্কায় গিয়ে তারা ঘোষণা করত , তারা ইসলাম ত্যাগ করেছে , আর তাদের কি শাস্তি হবে , সেটাই বলা হয়েছে উক্ত আয়াতে। উক্ত আয়াতের বিধান অত:পর মুহাম্মদ ঘোষনা করেছেন তার নানা হাদিসে , আর কিভাবে খলিফারা তা বাস্তবায়ন করেছে-
সহিহ বুখারী :: খন্ড ৮ :: অধ্যায় ৮৪ :: হাদিস ৫৭:

আবূ নু’মান মুহাম্মদ ইবন ফাযল (র) ইকরামা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আলী (রা)- এর নিকট একদল যিন্দীককে (নাস্তিক ও ধর্মদ্রোহী) আনা হল। তিনি তাদেরকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলেন। এ ঘটনা ইবন আব্বাস (রা)- এর কাছে পৌঁছলে তিনি বললেন, আমি হলে কিন্তু তাদেরকে পুড়িয়ে ফেলতাম না। কেননা, রাসূলুল্লাহ – এর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর শাস্তি দ্বারা শাস্তি দিও না। বরং আমি তাদেরকে হত্যা করতাম। কেননা, রাসূলুল্লাহ – এর নির্দেশ রয়েছে, যে কেউ তার দীন বদলে ফেলে তাকে তোমরা হত্যা কর।
সহিহ বুখারী :: খন্ড ৪ :: অধ্যায় ৫২ :: হাদিস ২৬০:

আলী ইব্ন আব্দুল্লাহ (র) ইকরামা (রা) থেকে বর্ণিত, আলী ( রা) এক সম্প্রদায়কে আগুনে পুড়িয়ে ফেলেন। এ সংবাদ আব্দুল্লাহ ইব্ন আববাস (রা)-এর নিকট পৌছলে তিনি বলেন, ‘যদি হতাম, তবে আমি তাদেরকে জ্বালিয়ে ফেলতাম না। কেননা, নবী নবী (সাঃ) বলেছেন, তোমরাল্লাহ নির্ধারিত শাস্তি দ্বারা কাউকে শাস্তি দিবে না। বরং আমি তাদেরকে হত্যা করতাম। যেমন নবী (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার দীন পরিবর্তন করে, তাকে হত্যা করে ফেল।’
সহিহ বুখারী :: খন্ড ৮ :: অধ্যায় ৮৪ :: হাদিস ৫৮
মুসাদ্দাদ (র)... আবূ মূসা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী – এর কাছে এলাম। আমার সাথে আশআরী গোত্রের দু’ব্যক্তি ছিল। একজন আমার ডান্দিকে, অপরজন আমার বামদিকে। আর রাসূলুল্লাহ তখন মিসওয়াক করছিলেন। উভয়েই তাঁর কাছে আবদার জানাল। তখন তিনি বললেনঃ হে আবূ মূসা! অথবা বললেন, হে আবদুল্লাহ ইবন কায়স! রাবী বলেন, আমি বললাম, ঐ সত্তার কসম! যিনি আপনাকে সত্য দীনসহ পাঠিয়েছেন তারা তাদের অন্তরে কি আছে তা আমাকে জানায়নি এবং তারা যে চাকরি প্রার্থনা করবে তা আমি বুঝতে পারিনি। আমি যেন তখন তাঁর ঠোটের নিচে মিসওয়াকের প্রতি লক্ষ্য করছিলাম যে তা এক কোণে সরে গেছে। তখন তিনি বললেন, আমরা আমাদের কাজে এমন কাউকে নিয়োগ দিব না বা দেই না যে নিজেই তা চায়। বরং হে আবূ মূসা! অথবা বললেন, হে আবদুল্লাহ ইবন কায়স! তুমি ইয়ামনে যাও। এরপর তিনি তার পেছনে মু’আয ইবন জাবাল (রা) কে পাঠালেন। যখন তিনি তথায় পৌছলেন, তখন আবূ মূসা (রা) তার জন্য একটি গদি বিছালেন। আর বললেন, নেমে আসুন। ঘটনাক্রমে তার কাছে একজন লোক শৃঙ্খলাবদ্ধ ছিল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ঐ লোকটি কে? আবূ মূসা (রা) বললেন, সে প্রথমে ইহুদী ছিল এবং মুসলমান হয়েছিল। কিন্তু পুনরায় সে ইহুদী হয়ে গিয়েছে। আবূ মূসা (রা) বললেন, বসুন। মু’আয (রা) বললেন, না, বসব না, যতক্ষণ না তাকে হত্যা করা হবে। এটাই আল্লাহ্ও তাঁর রাসূলের ফায়সালা। কথাটি তিনি তিনবার বললেন। এরপর তার সম্পর্কে নির্দেশ দেয়া হল এবং তাকে হত্যা করা হল। তারপর তাঁরা উভয়ই কিয়ামুল লায়ল (রাত জাগরণ) সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তখন একজন বললেন, আমি কিন্তু ইবাদতও করি, নিদ্রাও যাই। আর নিদ্রাবস্থায় ঐ আশা রাখি যা ইবাদত অবস্থায় রাখি।

শুধু ইসলাম ত্যাগই নয় , যারাই মুহাম্মদের চরিত্র সম্পর্কে কোরান হাদিস থেকে প্রকৃত তথ্য জেনে কোন রকম প্রশ্ন তুলবে, তাদেরকেও হত্যা করার জন্যে নির্দেশ আছে। আজকের দিনেও ঠিক এই বিধান গুলো অধিকাংশ মুসলিম দেশে চালু আছে। সৌদি আরব সহ সকল মুসলিম দেশে, পাকিস্তান ইত্যাদি দেশে ইসলাম ত্যাগকারীর শাস্তি মৃত্যু দন্ড, মুহাম্মদের সমালোচনাকারীর শাস্তি মৃত্যু দন্ড। আর যদি দেখা যায়, সরকার কোন ইসলাম ত্যাগকারীকে শাস্তি দিচ্ছে না, তখন খাটি মোমিন মুসলমানরা নিজেরাই সেই দায়ীত্ব নিজেদের হাতে নিয়ে হত্যা করছে। সাম্প্রতিক কালে কথিত ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ বলে পরিচিত বাংলাদেশেই অনেক ব্লগারকে এই দোষে খাটি মোমিনরা চাপাতি দিয়ে হত্যা করেছে। দেশের সরকার এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা তো নেয় নি , বরং প্রকারান্তরে সতর্ক করে দিয়েছে, কেউ যেন ইসলাম নিয়ে কিছু না বলে।

কথিত সত্য ধর্ম ইসলাম রক্ষা করবে স্বয়ং আল্লাহ যা কোরানেই বর্ণিত। সেখানে আল্লাহ কি এমনই অক্ষম যে, সে তার দায়ীত্ব পালন করতে পারছে না বলে, খাটি মুমিনরা সেই দায়ীত্ব পালন করছে ? এই যদি বাস্তব অবস্থা হয়, তাহলে ইসলাম কিভাবে সত্য ধর্ম হয়? কিন্তু প্রানের ভয়ে এই প্রশ্নটাও কেউ করতে পারে না।

লিখেছেন রাজু আহম্মেদ 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ