এই ব্লগটি সন্ধান করুন

ধর্ম বিষয়ে আমার প্রশ্ন গুলি পঞ্চম পর্ব

আমার ১২তম প্রশ্ন।


ক) একটি মেয়ে সন্তান কিংবা একজন নারীকে নিয়ে কি কেউ স্বপ্ন দেখে?
খ) একজন নারীর স্বপ্ন পূরনে একটা পরিবার, সমাজ, কিংবা রাষ্ট্র কতটুকু সহযোগিতা করে?
গ) ধর্মগ্রন্থগুলোতে একজন নারীর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কি কি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে?
দুইজন নারী পুলিশ


আমি যে দেশটায় থাকি ওখানে কোনদিন কোন নারী প্রেসিডেন্ট হয়নি। ব্যাপারটা নিয়ে অনেকে আফসোস করে, কেউবা অবাক হয় আবার কেউ কেউ একজন নারীর অতো যোগ্যতা নেই বলে ব্যঙ্গ করে। আবার আশাবাদী মানুষও আছে যারা বলে আজ না হোক খুব শীঘ্রই হবে।

একদিন এক ফ্রেন্ডের সাথে গল্প করার সময় বলেই বসলাম

“ Dont worry, my daughter will be the first female President of this country”।

কথাটা হজম করতে সবার কষ্ট হচ্ছে তাইনা? আমারও হয়েছিলো। কিন্তু আমি একজন মা তো। আর দশজন মায়ের মতো সন্তানকে নিয়ে নাহয় একটু বেশীবেশীই বলে ফেললাম।

সত্যি কথা বলতে কি আমার মেয়ে বড়ো হয়ে কি হবে ওটা সম্পূর্ন তার উপর।

সে যদি কোন সায়েন্টিস্ট হতে চায় তার ইচ্ছা।
যদি সে এ্যাথলেট হতে চায় তার ইচ্ছা।
যদি সে রাজনীতিবিদ হতে চায় তার ইচ্ছা।
সে যদি ব্যবসায়ী হতে চায় তার ইচ্ছা
যদি টিভি মিডিয়ায় কাজ করতে চায় তার ইচ্ছা
যদি আর্মি কিংবা পুলিশ হতে চায় তার ইচ্ছা।

পুরোটা নির্ভর করছে তার ইচ্ছা ,লক্ষ্য এবং মেধার উপর। মা বাবা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব তাকে ইচ্ছা পূরনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা।
পুরুষ্কার নিচ্ছেন

আমার মেয়ে মাত্র স্কুলে যায়। বিশ্বাস করবেন না সে এখুনি গ্রীন হাউজ এ্যাফেক্ট, সোলার এনার্জি ট্রান্সফরমেশন, গ্রাভিটেশন থিউরি, ব্ল্যাক হোল, কনস্টেলেশন, সোলার-লুনার এক্লিপস্, অক্সিজেন সাইকেল, ট্যাকটোনিক প্লেইট মুভমেন্ট এরকম আরো অনেক সায়েন্টিফিক ব্যাপারগুলো বোঝে এবং বোঝাতে পারে বাচ্চাদের স্ট্যান্ডার্ডে। আমিও এতটুকু মেয়ের মুখে ওগুলো শুনে থমকে যাই। (কপাল ভালো বাপের ব্রেইন পাইছে। আমার মতো হলে ক্লাসে পিছনের সীটে বসে দুষ্টামী ছাড়া আর কিছুই শিখতো না জীবনে)।

যাইহোক আমি আমার মেয়েকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি।
অনেক অনেক অনেক স্বপ্ন!
আমার স্বপ্ন সে পূরন করবে ঐ স্বপ্ন না। তার নিজের স্বপ্ন একদিন নিজের মেধা, অক্লান্ত পরিশ্রম দিয়ে পূরন করবে ঐ স্বপ্ন।
1. মেয়ের স্বপ্ন পূরনে আমি এবং তার বাবা নিজের শেষ বিন্দু দিয়ে সহযোগিতা করবো।
2. বর্তমানে যে সমাজে আমার পরিবার বসবাস করছে সে সমাজ একজন নারীর স্বপ্ন পূরনে কোন বাঁধার সৃষ্টি করেনা।
3. যে দেশে আমরা বসবাস সেই দেশে নারীরা সব দিক থেকে অনেক এগিয়ে গেছে।

এই দেশে একটা মানুষ কি স্বপ্ন দেখছে ওটাকেই মূখ্য ভাবে। মানুষটা কি নারী, পুরুষ, তৃতীয় লিঙ্গ নাকি শারিরীক-মানসিক প্রতিবন্ধী ওটা নিয়ে তাদের মাথা ব্যাথা খুবই কম। (তবে হ্যাঁ কিছু কিছু জায়গায় নারী পুরুষ বৈষম্য অবশ্যই আছে)।
মাথায় করে ভারী ঝুড়ি বহন করতেছেন


যাইহোক সবার আমার মেয়ের মতো ভাগ্য হয়না। আমার নিজের ভাগ্যও হয়নি। ক্লাস এইট নাইন থেকেই স্বপ্ন দেখতাম নাটক/ সিনেমার পরিচালক হবো ( Film Director)। নিজে ছোট ছোট গল্প লিখতাম। মনে মনে ঐ গল্পগুলোর জন্য ডায়লগ বানাতাম আর নিজে নিজেই প্র্যাকটিস করতাম। আমাকে প্রায়ই অনেকে বলতো ‘ কিরে তুই নিজে নিজে কথা বলিস কেনো?’
কোনদিন কারো সামনে সাহস করে সত্যি কথাটা বলিনি। সবাই হয় টিটকারী করবে নাহয় বকাঝকা দিবে। যাইহোক মাস্টার্সের একদম প্রথম দিকে একদিন সাহস করে আব্বাকে বললাম আমি চলচিত্র পরিচালনা( Film Direction) শিখতে চাই।

আমার বারোমাসি উত্তপ্ত মেজাজের আব্বা প্রচন্ড বিরক্তি আর রাগ দেখিয়ে বললেন “ মুসলমানের মেয়েরা কিভাবে এসব কাজ করে। টিভি, মিডিয়া এসব হচ্ছে বাজে মানুষদের জায়গা”।
আম্মাও শুকনা মুখে বললো “ কি দরকার মা এসবে জড়ানোর। ঠিকমমতো লেখাপড়া করো ওটাই যথেষ্ট”। ঐ ‘যথেষ্ট’ শব্দটা আমার সারা জীবনের জন্য একটা ধাঁধাঁ হয়ে রইলো।
ঠিক ঐদিন আমি আমার জীবনের ঐ স্বপ্ন বলেন আর প্রতিভা ওটাকে একটা লোহার খামে ভরে পার্মানেন্ট সিলগালা করে বুকের ভিতর লুকিয়ে থাকা এক সুপ্ত সাগরের মাঝখানে একদম ডুবিয়ে দিলাম। এ আর কি! আমার মতো পৃথিবীর লাখ লাখ নারী এমনটা করেই যাচ্ছে।

তবে আপনারাও বাংলাদেশের প্রথম অস্কারবিজয়ী নারী পরিচালক ফাতিমা জান্নাতকে ঐদিন হারিয়ে ফেলেছিলেন। দুষ্টামী করলাম( pure kidding)। তীব্র যন্ত্রনা মিশ্রিত দুষ্টামী। সেদিনও চোখে পানি এসেছিলো এখনো এসে গেছে।

শুধুমাত্র নারী হিসেবে জন্মানোর কারনে একটা পরিবার, সমাজ হয়তো দেশও আমাদেরকে নিজের স্বপ্ন পূরন করতে দেয়না যা একজন পুরুষ পানিভাতের মতো অনায়েসে পারে।

মজার বিষয় কি জানেন টিভি-মিডিয়ায় কাজ করা বিদ্বেষী আমার আব্বা শীতকালে গরম লেপের উমে বসে কিংবা গরমকালে এসি রুমের ঠান্ডায় বসে ঐ টিভি মিডিয়া দেখেই নিজের অবসর সময়ের বিনোদন মিটিয়েছেন।

যাইহোক আমি আমার জীবনে যতো অলরাউন্ডার ট্যালেন্টেড নারী দেখেছি আমার শ্বাশুড়ি তাদের মধ্যে অন্যতম। একযুগ হয়েছে উনি আমার আইনগত আম্মা হয়েছেন এখনো প্রতিটা ক্ষেত্রে উনার পরিশ্রম, মেধা আর বিচার-বিবেচনার ক্ষমতা দেখে আমি মুগ্ধ হই। উনি একটা ভালো প্রতিষ্ঠানে চাকরী করতেন ঠিকই কিন্তু জীবন-সংসারের ফাঁদে পড়ে ঐ স্বর্নচুড়াটায় যেখানে পৌঁছানোর শতভাগ যোগ্যতা রাখেন শুধুমাত্র একজন নারী হওয়ার কারনেই সেখানে যেতে পারেন নি। আমিতো রাতদিন আল্লাহর কাছে চাই আমার বাচ্চাগুলো যেনো পুরোপুরি ওদের দাদীর মতো অলরাউন্ডার হয়।
বিশ্বের কয়েকজন প্রভাবশালী নারী


কিন্তু কেনো একজন নারীকে তার জীবনের স্বপ্ন পূরনে একটা সমাজ, পরিবার কিংবা দেশ একটার পর একটা কাঁটাওয়ালা শেকল পড়িয়ে দেয়? কেনো? আমার তো তাও কপাল ভালো আব্বা আম্মা ধাক্কা দিয়ে দিয়ে হলেও পড়াশোনা করিয়ে ছাড়িয়েছেন।

এরকম বহু মেয়েকে দেখেছি যারা প্রচন্ড মেধাবী ছাত্রী হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র ‘ভালো পাত্র’ নামক লটারীটা পাওয়ার কারনে মেয়েটাকে বিয়ে দিয়ে তার মেধা চর্চার পথটা বদলে দিয়েছেন।

এরকম বহু নারীকে চিনি যারা বিয়ের পর স্বামী, শ্বশুর বাড়ির মিষ্টি মিষ্টি ডায়লগ বলেন আর ঝাল ঝাল ডায়লগ ওসবের ফাঁদে পড়ে তাদের মেধার বিসর্জন দিয়েছে।
একজনের ইনকামে যদি সংসার চলে তাহলে দুজনের চাকুরী করার কি দরকার। ঘর সংসার ই তো করবা। এতো পড়াশোনার দিয়ে কি হবে ।
এবার একটা বাবু নিয়ে নাও। পড়াশোনা পরেও করতে পারবা। চাকরি করলে বাচ্চা কে পালবে?
চাকরী করো কিন্তু আগে ঘরের সব কাজ, ঘরেরে মানুষদেরকে ঠিক রাখতে হবে।
বাহ শেষ! !

যে গুটিকয়েক নারী আজ সফলতার শীর্ষে পৌঁছেছে একটু খবর নিলেই জানতে পারবেন কি পরিমান কষ্ট আর বাঁধার মধ্যে দিয়ে তাদের যেতে হয়েছে। যেনো দুটো মানুষ একটি রেইস দিচ্ছে কিন্তু একজনের সামনে মসৃন উম্মক্ত পথ আর অন্যজনের সামনে কাঁটা-কঙ্কর থেকে শুরু করে বিশাল বিশাল পাথর বিছিয়ে রাখা হয়েছে।

স্কুল কলেজে রাস্তার পাশের বখাটে পোলাগুলোর উত্যক্ত করা থেকে বাসায় বাবামায়ের বৈষম্য মুলক আচরন, বিয়ের পর স্বামী-শ্বশুর বাড়ীর পাহাড় পরিমান কাজের চাপ থেকে শুরু কর্মক্ষেত্রে অসভ্য সহকর্মীদের অসভ্যতা আরো কতো কি। কিন্তু কেনো? শুধু সে নারী তাই.....?

ধিক্কার দেই ঐ পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ব্যবস্হাকে।
আর ধর্ম? ওটা নিয়ে বলতে গেলেতো আবার জান থাকেনা।

একজন নারীর জন্য প্রায় সব ধর্মগুলোর শুধু একটা পথই দেখানো আছে। জন্ম হবে ,বিয়ে হবে, স্বামী হবে, সন্তান হবে, বুড়ো হবে নাতিনাতনি হবে তারপর মরে যাবে।
স্রষ্টার ইবাদত, স্বামীর প্রতি দায়িত্ব , সন্তানের প্রতি দায়িত্ব, সংসারের প্রতি দায়িত্ব এটাই তার পুরো জীবনের রেল লাইনের মতো এক লাইনের এঁকে দেওয়া পুরো ছক।
এর বাইরে কেউ পা রাখলেই সে ধর্মের চোখে খারাপ নারী, নষ্টা নারী, পতিতা নারী, উচ্চবিলাশী নারী, careerist নারী , দায়িত্বহীন নারী হিসেবে বিবেচিত হয়।

আরে ভাই
আমার মতো যোগ্যতাহীন দু একজন ফাতিমা জান্নাতকে নাহয় ঐ ছকে ফেলতে পারেন।
কিন্তু একটা মেয়ে যে কিনা নাসার সায়েন্টিস্ট হওয়ার মেধা রাখে,
যে কিনা আন্তর্জাতিকমানের একজন খেলোয়াড় কিংবা উচ্চমানের অভিনেত্রী/ সংগীতশিল্পী হওয়ার যোগ্যতা রাখে,
যে কিনা নিজের বুদ্ধি এবং সাহসিকতা দিয়ে একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী কিংবা রাষ্ট্রপতি হতে পারে,
যে কিনা একজন দক্ষ আর্মি ,পুলিশ, এয়ারফোর্স কিংবা নৌবাহিনীর অফিসার হতে পারে,
যে কিনা একজন সফল ব্যবসায়ী কিংবা কোন প্রতিষ্ঠানের CEO হওয়ার যোগ্যতা রাখে,

তাকে কোন সাহসে আপনারা ঐ ছকের মধ্যে আটকে রাখার দু:সাহস দেখান । বহু হয়েছে এবার আপনাদের এসব ছকগুলো একজন নারীর উপর চাপিয়ে দেওয়া বন্ধ করুন। লাগামগুলো সামলান নইলে লাগামগুলো ছিড়লে নিজেরাই উড়েধুরে যাবেন।

আর শোনেন যে এতোটা যোগ্যতা সম্পন্ন সে বাইরের কাজগুলোর পাশাপাশি ঘরের কাজ কিভাবে করবে খুব ভালো করেই জানে।

ছোট্ট তুলতুলে একটা মাংসের টুকরাকে যখন কোলে তুলে নেয় বাবা মায়ের চোখে, মুখে এবং বুকে আনন্দের চেয়ে শঙ্কা ই বেশী থাকে শুধুমাত্র আপনাদের বানানো ঐ ছকগুলোর জন্যই। কথা যদি আরো বলি একদম ছিড়েবিড়ে ফেলতে পারবো কিন্তু আপাতোত এখানেই দম ফেলতে দিলাম।

আর আমার ধর্মে সন্মানিত আল্লামাহ শাহ আহমেদ শফী হুজুর এবং মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ কিন্তু বলেই দিয়েছেন আমরা মুসলিম নারীরা কি কি করতে পারবো এবং কতদুর করতে পারবো। আর এখন পর্যন্ত কোন ইসলামিক স্কলার কিংবা আলেম সমাজের একজন ব্যক্তিকেও ওটা নিয়ে দ্বিমত পোষন করে কোন বক্তব্য পেশ করতে শুনিনি। কেউ শুনলে প্লিজ আমাকে জানাবেন। আর কারো কাছে উনাদের মতের বিপক্ষে কোন ইসলামিক ব্যাখ্যা থাকলেও আমাকে একটু দিবেন প্লিজ।

সবশেষে এতটুকুই বলবো পুরুষ, নারী, তৃতীয় লিঙ্গ, মানসিক-শারিরীক প্রতিবন্ধী প্রতিটি মানুষের ই স্বপ্ন দেখার এবং নিজের মেধা, পরিশ্রম দিয়ে তা পূরনের অধিকার আছে। ছোটছোট পানির কনা এক হয়েই একটা সাগর মহাসাগর হয়ে যায়। যারা আমাদের পথ আটকাবে তাদের বলছি, ঐ তাকিয়ে দেখুন সুনামি আসছে...


ইতি
মঙ্গলগ্রহে অবতরণকারী ( হয়তো ভবিষ্যতে একদিন) প্রথম নারী নভোচারী এর মা।

এবং প্রথম বাংলাদেশী অস্কারপ্রাপ্ত নারী চলচিত্র পরিচালক( যা কোনদিনই হবেনা)


আমার ১৩তম প্রশ্ন।


ক) কখনো অন্ধকারে শব্দহীন কান্না শুনেছেন ?
অন্ধকারেরে শব্দহীন কান্না আপনাদের কাউকে কি কাঁদায় ?


হোলি আর্টিজান - ঐ হামলার ঘটনাটা দেশে বিদেশে সবাই জানে। কয়েকজন অল্প বয়সী যুবক মিলে অনেকগুলো দেশী বিদেশী অতিথিকে একটা রেস্টুরেন্টে সারা রাত আটকে রেখে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। বাংলাদেশীদের মধ্যে ফারাজ আইয়াজ হোসেন, অবিন্তা কবির নামের দুটো নি:স্পাপ ছেলেমেয়ে ছিলো যারা বেঁচে থাকলে হয়তো পৃথিবীর কল্যানে অনেক কিছু করতো।

নুসরাত জাহান রাফী - মাদ্রাসা পড়ুয়া বাচ্চা একটা মেয়ে। একটা জানোয়ার তাকে যৌন হয়রানী করেছিলো আর অন্য জানোয়ারগুলো এই জানোয়ারের নির্দেশে মেয়েটার হাত পা বেঁধে গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলো। এবং মেয়েটা হাসপাতালে অসহ্য যন্ত্রনা সইতে না পেরে মারা গেলো। নুসরাত মরেছে কিন্তু হার মানে নি।

আবরার ফাহাদ - অল্প বয়সী প্রচন্ড মেধাবী একটি ছেলে। বুয়েটের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছিলো। ফেইসবুকে তার কিছু লিখা, কিছু চিন্তাধারা তার একই প্রতিষ্ঠানের অন্য কিছু সহপাঠী এবং সিনিয়র ভাইদের পছন্দ হয়নি। এই সামান্য একটি ব্যাপারে তারা সম্মিলিতভাবে একটা তরতাজা প্রানকে সারা রাত পিটিয়ে মেরেই ফেললো। ভেবে দেখেছেন শিক্ষাও মানুষকে সভ্য বানাতে পারেনি।

ফারাজ, অবিন্তা, নুসরাত, আবরার ওদের বাবা মায়ের বুক ফাটানো কান্না আমরা দেখেছি, শুনেছি। ওদের মতো হাজারো ছেলেমেয়ে, নারীপুরুষ, শিশুদের অকারনে ঝরে যেতে হচ্ছে পৃথিবী থেকে। আর আমরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখতে থাকি ওদের বাবা মা, সন্তান, আত্নীয়স্বজনদের আপনজন হারানো গগনবিদারী কান্না।


কিন্তু ঐ কান্নাগুলোর শব্দ আছে। ঐ শব্দগুলো সবাই শুনতে পায়। ঐ কান্নাগুলো আমার দেখতেও পাই । কারন ওগুলো আলোর মাঝে হয়। ঐ কান্নার সাথে আমাদের আমাদের হৃদয়ও কাঁদে। ঐ কান্না হারানোর কিন্তু লজ্জার নাহ। তাই উনারা আলোর মাঝে সবার মাঝে দাঁড়িয়ে বুক ফাটিয়ে কাঁদতে পারে। উনাদের সাথে আমরাও কাঁদি।

কিন্তু কিছু কিছু কান্না আছে আলোতে কাঁদা যায়না, না কাঁদা যায় শব্দ করে। ঠিক শুনেছেন।

অন্ধকারের শব্দহীন কান্না

কারা ঐ কান্নাগুলো করে জানেন?

▪️ যারা ফারাজ, অবিন্তাকে হত্যা করেছিলো তাদের মা বাবারা ঐ কান্না করে।

▪️ যারা নুসরাত জাহান রাফীকে পুরিয়ে মেরেছিলো তাদের স্ত্রী সন্তানেরা ঐ কান্না করে।

▪️ যারা আবরারকে খুন করেছিলো তাদের ভাইবোন, বন্ধুবান্ধবরা ঐ কান্না করে।

• ঐ কান্নাগুলোর প্রতি কারো কোন সহানুভুতি নেই। না থাকার ই কথা।
• ঐ কান্নাগুলো লজ্জার, ঐ কান্নাগুলো অপমানের।
• ঐ কান্নাগুলো আলোর মাঝে এসে করা যায়না।
• ঐ কান্নাগুলোর কোন শব্দ নেই। শব্দ করে কাঁদলে আশেপাশের মানুষ আরো কটু কথা শোনায়।
• ঐ কান্না বুকের মধ্যে কষ্ট, যন্ত্রনার পাথর জমে তা নি:শব্দে চোখের পানি হয়ে বের হয়ে আসে আবার পাথর জমে আবার বের হয় এবং চলতেই থাকে।

আমি প্রায় অন্ধকারের শব্দহীন এই কান্না নিয়ে ভাবি।
নিজেদের পরিচিতদের মধ্যে এমন কাউকে চিনি না বলে কোন বাস্তব উদাহরন দিতে পারছিনা। কিন্তু আমাদের সমাজে এই এই কান্নাটা যারা কাঁদে তাদের অবস্হাটা ভালোই অনুমান করতে পারি।

ফারাজ, অবিন্তাকে যারা হত্যা করেছিলো তাদের প্রায়ই সবগুলোই অল্পবয়সী ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া স্টুডেন্ট ছিলো। ঐ ছেলেগুলোর বাবা, মা, ভাইবোন থেকে বন্ধুবান্ধব সবাই হয়তো তাদের অসম্ভব ভালোবাসতো, তাদের নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতো। আর দশটা মানুষের মতো তাদেরও সুস্হ এবং স্বাভাবিক জীবন ছিলো। কিন্তু হোলি আর্টিজানের ঐ ঘটনার পর পুরো চিত্রটা পাল্টে গেলো।

ঐ ছেলেগুলোর অমার্জনীয় অপরাধের কারনে বিনা দোষে তাদের পরিবারগুলো মৃত্যু পর্যন্ত কষ্ট পেয়েই যাবে।

• আপনজন হারানোর কষ্ট।
• আপনজনের এতো জঘন্য অপরাধ সহ্য করার কষ্ট।
• ঘরেরে বাইরে মানুষের কটুক্তির কষ্ট।
• আত্নীয়স্বজনদের এরিয়ে চলার কষ্ট। বন্ধুবান্ধবদের বাঁকা চোখে তাকানোর কষ্ট।
সমাজের কাছে সারা জীবন মাথা নীচু করে থাকার কষ্ট।

প্রিয় অপরাধীরা, একবার ভেবে দেখেছেন কি আপনারা তো মজায় মজায় অপরাধ করেন তারপর হয় ধরা পরে জেল খাটেন নাহয় মরা পরেন (মারা যান)।
কিন্তু একবার কি ভেবে দেখেছেন এরপর আপনার পরিবার, আপন মানুষগুলোর কি হয়। আমি বলছি কি হয়।

• আপনার মাকে উঠতে বসতে নোংরা ভাষায় মানুষ কথা শোনায়।
• আপনার বাবা মাথাটা উপরেরে দিকে তুলে হাঁটতে পারেনা। সমাজ তাকে অপরাধীর বাবা ডাকে।

• আপনার মেয়ে, বোনটাকে কোন ভালো ফ্যামিলির কেউ বিয়ে করতে চায়না। আর বিয়ে ঠিক থাকলে সেটা ভেঙ্গে যায়।
• আপনার বোন, মেয়েটা যদি বিবাহিতা হয় তাকে স্বামী , শ্বশুরবাড়ির অমানসিক শারিরীক এবং মানসিক অত্যাচারের স্বীকার হতে হয়।

আপনার ছেলে কিংবা ভাইটাকে ও কেউ মেয়ে বিয়ে দিবেনা। আপনার নামের গালি দিয়ে তাদের কথা শোনাবে।

স্কুল পড়ুয়া হোক কিংবা চাকরীজিবী আপনার ভাই কিংবা ছেলের জীবনটাকে জাহান্নাম বানিয়ে ফেলবে তারই বন্ধু বান্ধব কিংবা কলিগরা।

আপনি যদি ধর্ষক হোন তাহলে তো কথাই নেই আপনার পরিবারের প্রতিটি নির্দোষ নারীকে নিয়ে এই সমাজের মানুষ রীতিমতো খাবলাখাবলি শুরু করবে। কোন প্রতিবাদ করলে সোজা আপনার উদাহরন টেনে গালাগালি করবে।
আপনি তো ধর্ষন করে একবারে জেল কিংবা ফাঁসির সাজা পেলেন কিন্তু এই সমাজ আপনার পরিবারের প্রতিটি মানুষকে এক একটা দিন ফাঁসিতে ঝুলাবে।
আপনার অপরাধের কারনে তারা দিনের আলোতে হেনস্হা হবে আর রাতের আঁধারে নি:শব্দে কাঁদবে।

প্রিয় খুনী, ধর্ষক, চোর, ডাকাত, সন্ত্রাসী ভাইবোনেরা, আপনি অন্যায় করছেন শাস্তি হিসেবে কারাবাস কিংবা মৃত্যুদন্ড পেয়েছেন। ওটা তো কিছুই না।

আসল শাস্তি তো পাবে আপনার পরিবার , আপনার আপন মানুষগুলো। সারাটা জীবন তারা এমন একটা সাজা ভুগবে যেটার পেছনে হয়তো বিন্দুমাত্র তাদের হাত নেই। হ্যাঁ অন্ধকারের শব্দহীন কান্না।

আজকাল কাউকে নিয়ে সমালোচনা করতেও ভয় লাগে। কখন যে নিজের আপনজনদের মধ্যে কেউ এমনটা ঘটিয়ে বসে। তাই সবসময় আশা করি এবং দোয়া করি কাউকে যেনো অন্ধকারের শব্দহীন কান্না কাঁদতে না হয়।

সবার কাছে অনুরোধ করবো অপরাধ করার আগে একটু ভাবুন। জাস্ট অল্প একটু।
কারন অপরাধ করে ধরা পরার পর আপনি যে লাঞ্ছনা আর শাস্তিটা পাবেন তারচেয়ে কয়েকগুন লাঞ্ছনা আর শাস্তি পেতে হবে আপনার প্রিয় মানুষগুলোকে। তাও এক দুদিন নয় দিনের পর দিন এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত।

অন্ধকারের শব্দহীন কান্নার কথা কল্পনা করতেই আমার আত্না কেঁপে উঠে জানিনা যে কিংবা যারা ঐ কান্না কাঁদে তারা কি পরিমান ব্যাথার মধ্যে দিয়ে যায়।


আমার ১৪ তম প্রশ্ন


ক) মুসলিমরা কি অমুসলিম দেশে স্হায়ীভাবে বসবাস করতে পারবে?

আমাদের গ্রামের একজন অত্যন্ত পরহেজগার দাদা ছিলেন। উনার ছোট ভাই ডিভি লটারী পেয়ে আমেরিকা গিয়েছিলেন।

যাইহোক আমাদের ছোট দাদা উনার পুরো ফ্যামিলির জন্য আবেদন করেছিলেন। এবং উনার চার ভাই তিন বোন ছেলে মেয়ে , আন্ডা বাচ্চাসহ সবাই আমেরিকা চলে গেলেন। শুধু যাননি আমাদের ঐ পরহেজগার দাদা।

সবাই উনাকে অনেক বুঝালেন যে উনি স্হায়ীভাবে বসবাস না করুক অন্তত বাচ্চাদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য ওদের ওখানে স্যাটেল করে দিয়ে আসুক।
আমার ঐ দাদা কিছুতেই রাজী হননি। অনেক আগের কথা তবু সবার সামনে বলা উনার কথাগুলো আমার স্পষ্ট মনে আছে। উনি বলেছিলেন-

মুহম্মদ সা: মুসলিমদেরকে কাফিরদের দেশে বসবাস করতে নিষেধ করেছিলেন।

আর যেসব দেশ মুসলিমদের বিপক্ষে যুদ্ধ করে ঐসব দেশে উনি কোনদিন বসবাস করবেন না।

যেসব দেশে শব্দ করে আজান দেওয়া যায়না, যেসব দেশে প্রকাশ্যে মদ খাওয়া হয়, যেসব দেশে জুয়া নিষিদ্ধ নয়, যেসব দেশে নারী পুরুষ অবাধ মেলামেশা করে ওখানে উনি জীবন থাকতে যাবেন না।
এবং উনি যাননি, না উনার পরিবারকে যেতে দিয়েছেন।

ইদানীং এই ব্যাপারটা নিয়ে আমাদের এখানকার বাংলাদেশীদের কেউ কেউ কথা বলছে।
অনেকে নিজের মতো ফতোয়াও বানিয়ে নিচ্ছেন।

এক বয়স্ক আঙ্কেল তো বলেই ফেললেন, আমরা কাজ করে এসব দেশে ট্যাক্স দেই আরা ঐ ট্যাক্সের টাকা সরকার অনেক অনেক ইসলামে নিষিদ্ধ করেছে এমন খাতে লাগাচ্ছে এমনকি মুসলিমদের বিপক্ষে যুদ্ধ পরিচালনাতেও খরচ করছে।

কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে কেউ ঐ দেশগুলো ত্যাগ করার নাম নেয়না। শুধু হালকা নাকি কান্না করে।

(কাফিরদের দেশের টাকা পয়সা, নিরাপদ জীবন ধর্মের জন্য বিসর্জন দিবে কোন পাগল?


ড: আবু বকর জাকারিয়ার কাফির দেশে বসবাস নিয়ে দেওয়া ঐ লেকচারটিও মুল্যহীন।

যদি পারতাম কাফির শব্দটাই দুনিয়া থেকে উঠিয়ে দিতাম। প্রচন্ড বাজে এবং অপমানজনক এই শব্দ। মানুষে মানুষে এক বিশাল বিভেদ সৃ্ষ্টি করে এই শব্দটি।

আমি এবং আমার স্বামী একজন মানুষকে ভালো এবং মন্দ শুধু এই দুটো ভাগেই দেখি এবং আমাদের বাচ্চাদেরকেও তাই শেখাচ্ছি।
মানুষ ভালো হলে তার সাথে মিশবো, উঠবো, বসবো, খাবো আর খারাপ হলে শোধরানোর চেষ্টা করবো, না শোধরালে পুলিশে দিবো। একদম সোজা হিসাব।
আমরা কখনো এটা দেখিনা তার ধর্ম কি, জাত কি, তার গায়ের রং কেমন, তার দেশ কোনটা ব্লা ব্লা ব্লা।

মানুষে মানুষে এই বিভেদগুলো যেদিন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে সেদিন পৃথিবী নামক গ্রহটা তার আসল সৌন্দর্যে ভরে উঠবে।

যারা মুসলিম দেশে বুক ফুলিয়ে কাফির কাফির বলে নাচেন আর অমুসলিম দেশে তোলাপোকার মতো দুর্ঘন্ধযুক্ত কোনাচিপায় বসে কাফিরদের নিয়ে চিকন কান্না করেন তাদের জন্য তিনটা চ্যালেন্জ -

১) কাফিরদের ফেইসবুকটা ব্যবহার বন্ধ করতে পারবেন?
২) কাফিরদের গুগলে জীবনেও না ঢুকে থাকতে পারবেন?
৩) কাফিরদের দেশ ত্যাগ করে দেখাতে পারবেন?

Ladies and Gentlemen আমি প্রস্তুত আছি কিছু আধুনিক ফতোয়া শোনার জন্য।

আমাকে ফতোয়া শোনানোর আগে দয়া করে ড: আবু বকর জাকারিয়া সাহেবের এই ভিডিওটা একটু শুনে নিবেন।

  আমার ১৫তম প্রশ্ন।


ক) একজন মুসলিম নারী মাহরাম ব্যতীত কতদুর সফর করতে পারবে এবং কতদিন অবস্হান করতে পারবে?
 ছবি:আকাশে উড়ন্ত বিমান


খ) পর্দা করে একজন মুসলিম নারী কি মাহরাম ব্যতীত স্টাডি কিংবা চাকরী করার উদ্দেশ্যে দুর দুরত্বের কোথাও সফর করতে পারবে কিংবা পরিবারের বাইরে ভিন্ন কোন স্হানে দীর্ঘদিন অবস্হান করতে পারবে?


গ) পর্দা করে একজন মুসলিম নারী কি পুরুষদের সাথে একসাথে কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে স্টাডি করতে পারবে কিংবা পুরুষ কলিগদের সাথে কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারবে?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর শুধু আমি নয় অনেক নারীরা জানতে চেয়েছেন। এগুলো আমার অনেক আগের প্রশ্ন।

আজকের নারীরা স্টাডি এবং চাকরী করার জন্য বিভিন্ন শহরে এমনকি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে
এবং মাহরাম ব্যতীত একা একা থাকছে কিংবা থাকতে হচ্ছে।

যদি কোন নারী ভিন্ন কোন শহরে কিংবা বিদেশে স্টাডি কিংবা চাকরী করতে যায় প্রত্যেকবার তো মাহরাম নিয়ে সফর করা সম্ভব না।
এবং এটাও সবসময় সম্ভব না ভিন্ন শহরে কিংবা দেশে মাহরাম নিয়ে থাকতে পারাটা।

উদাহরন- মফস্বলের একটা মেয়ে ঢাকা মেডিকেল কিংবা বুয়েটে চান্স পেলে সে কি একা একা ঢাকা যেতে পারবে?
কিংবা সে কি কোন ধরনের মাহরাম ব্যতীত ঢাকায় কোন হোস্টেলে কিংবা ফ্ল্যাট রেন্ট করে থাকতে পারবে?

বুয়েটে স্টাডি করুক কিংবা মেডিকেলে, ব্যাংকে চাকরী করুক কিংবা হাসপাতালে পুরুষ সহকর্মীর উপস্হিতি থাকাটাই স্বাভাবিক। তাদের সাথে একত্রে কাজ করাটাকে কি ইসলাম অনুমতি দেয়?

এই প্রশ্নের উত্তরগুলোর উপর অনেক মুসলিম নারীর অনেক কিছু নির্ভর করছে তাই আশা করি সৎ এবং সঠিক উত্তর দিবেন।....

লিখেছেন:ফাতিমা জান্নাত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ