সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জ্যোতিষীদের প্রতি নারীদের এতো আস্থা কেন?


কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে কিংবা আড্ডায় মধ্যমনি হতে চাইলে শুধু মুখ ফুটে একবার বলুন আপনি একটু আধটু ভাগ্য গণনা করতে জানেন। ব্যাস, আপনার চারপাশে যে ভিড়টা জমে উঠবে। খেয়াল করবেন তাতে পুরুষদের তুলনায় নারীদের সংখ্যাটাই বেশি।

আপনার অনেক পুরুষ বন্ধুই বিরক্তি দেখিয়ে কেটে পড়লেও নারীদের ভিড় কিন্তু বাড়তেই থাকবে। কারণ জ্যোতিষিদের ওপর পুরুষদের চেয়ে নারীদের আস্থাটা একটু বেশিই।

মনোবিজ্ঞানী এইচ জে আইস্নেকের মতে, যে বিষয়টি কোনো মানুষের জন্ম, বিয়ে, পেশা, উন্নতি, চরিত্র এবং জীবন ইতিহাস গ্রহের অবস্থানের ওপর বিচার করে তাকেই জ্যোতিষ শাস্ত্র বলে।

 খ্রিস্টের জন্মের দুই হাজার বছর আগে ব্যবিলনীয়রা এই বিদ্যা আবিষ্কার করে। এ হিস্টোরি অব হরোস্কোপ অ্যাস্ট্রলজির লেখক জেমস এইচ হোলডেনের মতে, সমাজের জ্ঞানীরা এ বিদ্যা চর্চা করতেন। ভালো-মন্দ লক্ষণ বিচারের পাশাপাশি আধ্যাত্মিক চর্চা ও বিভিন্ন দেবতাদের শান্ত করতেও এটি ব্যবহৃত হতো।তবে শুরু থেকেই এ বিদ্যার ওপর পুরুষদের তুলনায় নারীদের বিশ্বাসটাই ছিল বেশি। এ কারণে বিভিন্ন সমাজে নারীদেরকেই এ বিদ্যা চর্চা করতে দেখা গেছে। এ কারণে অনেক সময় তাদের ডাকিনী, যোগীনি নামেও ডাকা হয়েছে।


কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিংয়ের অধ্যাপক ও বিবর্তিত আচরণ বিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ ড. গ্যাড সাডের মতে, জ্যোতিষ বিদ্যা পুরোটাই ভুয়া। এটি যাচাইযোগ্য নয় বিধায় প্রথম ধাক্কায় এটি ব্যর্থ। এটা কাজ করে কি করে না তাও প্রমাণ করা যায় না।
আধুনিক জ্যোতিষিরা পূর্বসূরীদের তুলনায় আরো এক কাঠি এগিয়ে। পত্রিকায় লেখায় হরোস্কোপ কলামে তারা মানুষের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে একটি সাধারণ মন্তব্য করে থাকেন। এটি হচ্ছে- আপনি শিগগিরিই সুখের দেখা পাবেন।
একজন নারী হাত দেখাচ্ছেন।
ড. গ্যাড বলেন, ‘এই একটি বাক্যই কৌশলে কোটি মানুষের ওপর প্রয়োগ করা হচ্ছে। অথচ এমন অনেকে রয়েছে যাদের জীবনে কখনও এ সুখের দিনের দেখা কখনও মিলছে না। আর তখনই এটি মিথ্যা বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।’

কিন্তু তারপরও মানুষ এর ওপর বিশ্বাস করে। ২০০৯ সালে পিউ রিসার্চ সেন্টার পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, প্রতি চারজন মার্কিনির মধ্যে একজন জ্যোতিষ বিদ্যায় বিশ্বাস করেন। আর এ হার প্রতিবছরই বাড়ছে। ২০১৩ সালে হ্যারিস ইন্টার্যাকটিভ নামে একটি সংস্থার পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, ২৯ শতাংশ লোক জ্যোতিষ বিদ্যায় বিশ্বাস করেন।

২০০৫ সালে লিঙ্গভিত্তিক পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, ২৮ শতাংশ নারী জ্যোতিষ বিদ্যায় বিশ্বাস করেন। অপরদিকে এ ক্ষেত্রে পুরুষ মাত্র ২৩ শতাংশ।

সংখ্যাগত দিক থেকে তাহলে নারীদের হার এতো বেশি কেন?

গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষদের তুলনায় নারীরা অপ্রমাণিত ও অতি প্রাকৃতিক বিষয়ের ওপর বেশি বিশ্বাস করে, যেমন: ধর্ম। এ ব্যাপারে ড. গ্যাড সাড বলেন, ‘মনোবিদ্যায় লোকাস অব কন্ট্রোল বা ঘটনাবিন্দুর ওপর নিয়ন্ত্রণ বলে একটি বিষয় রয়েছে। জীবনে সংঘটিত ঘটনার ওপর কতোটা নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব সে ব্যাপারে বিশ্বাসের দৃঢ়তা তা ব্যাখ্যা করে।


এক্সটারনাল লোকাস অব কন্ট্রোলের গুণ যাদের আছে তারা বিশ্বাস করেন, তাদের জীবনে যেসব ঘটনা ঘটছে তার ওপর তার কোনো নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা তার নেই। এ ধরনের লোক ভাগ্যে বিশ্বাস করে। অপরদিকে ইন্টারনাল লোকাস অব কন্ট্রোলের গুণ সম্পন্ন মানুষেরা বিশ্বাস করেন নিজেরাই নিজেদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন অর্থাৎ নিজেই নিজের ভাগ্যনিয়ন্তা।
গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের পুরুষদের তুলনায় এক্সটারনাল লোকাস অব কন্ট্রোল বেশি। এ কারণে তারা ভাগ্যের ওপর বেশি বিশ্বাসী। আর তাই অতিপ্রাকৃতিক বিষয়গুলোর ওপর বিশ্বাসও তাদের বেশি। তাই ভাগ্য গণণা করতে জ্যোতিষদের কাছে নারীরাই বেশি ছোটে।


তবে গবেষণা বা বিজ্ঞান যাই বলুক না কেন নারীরা এতে কান দিতে নারাজ। নিজের চাইতে জ্যোতিষদের মন ভোলানো হাসির ওপর আস্থাই তাদের বেশি। তাই জয়তু জ্যোতিষ, জয়তু নারী।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, নারীদের এই বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান পুরুষতান্ত্রিক সমাজের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
পিৎজার কলেজের সমাজবিজ্ঞানী ড. ফিল জুকারমান তার সাইকোলজি টুডে বইতে লিখেছেন, বর্তমান বিশ্বে যেহেতু পুরুষরাই সবস্থানে অগ্রাধিকার ও ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে কর্তৃত্ব করছে সেহেতু নারীরা এখানে প্রান্তিক প্রজাতি হিসেবে মানসিক প্রশান্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থন পেতে ধর্মের কাছে আশ্রয় খুঁজছে।

লিখেছেন:শহীদুজ্জামান সরকার।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

জাতীয়তাবাদ আরেকটি ধর্ম বই

বাংলাদেশীরা ধর্মভীরু। ইসলাম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ও জাতীয়তাবাদ নামক ধর্মগুলোর প্রতি বাঙ্গালীর দুর্বলতা নতুন কিছু নয়। আমরা যারা মুক্ত-চেতনাকে প্রয়োজনীয় মনে করি, যুক্তিকে ধর্মের ওপরে স্থান দেই তাদের অনেকেই ধর্মের মতই সামনে আসা অন্যান্য প্রতিটি ধারনা ও প্রস্তাবনাকেই যুক্তি দিয়ে বুঝতে চাই, খতিয়ে দেখতে চাই। বা দদূএকটি রূপ আধ্যাত্মিকতা ও ধর্ম হিসাবে মানুষের দলবদ্ধ সমাজব্যবস্থার দ্বিতীয় বড় চালক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। প্রস্তরযুগে আরো একটি ঘটনা ঘটতে শুরু করেছিল। মানুষেরা নিজেদের গ্রাম বা নগরকে কেন্দ্র করে একটি সামষ্টিক পরিচিতি অনুভব করে শুরু করেছিল। বোধ করি তখন থেকেই মানুষের দলবদ্ধতার তৃতীয় চালক জাতীয়তাবাদের প্রাথমিক যাত্রা শুরু। বর্তমানে সারা দুনিয়ায় জাতীয়তাবাদ নানান চেহারায় দলবদ্ধতার সবচাইতে শক্তিশালী চালক হিসাবে বিদ্যমান। একটি নৃগোষ্ঠী যখন পুঁজিবাদী হতে শুরু করে, যখন সে একটি কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্র গঠন করে তখনই সে একটি জাতিতে পরিণত হয়। ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ আমাদের দেশের রাজনীতিতে কাছাকাছি আছে ইতিহাসের শুরু থেকে। মহাভারত থেকে আজকের খালেদা-হাসিনার রাজনীতিতে ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ একে অন্যের হাত...

গাজওয়াতুল হিন্দ

গাজওয়াতুল হিন্দকে বর্তমান বাংলাদেশ ভারত ও নেপাল শ্রীলংকার জিহাদীরা তাদের মনে আটকে রেখেছে। এই বিষয়ে নানা মতাভেদ থাকলেও সকল মুসলিম জিহাদীরা মনে করে বা আ শা করে যে ইসলাম সারা পৃথীবিতে এই জিহাদের মাধ্যামে প্রতিষ্টা হবে। তারা এটাকে মর্যাদার্পূণ জিহাদ বলে মনে করে। ইসলামের ভিত্তির অন্যতম হলো জিহাদ। ইসলাম প্রতিষ্ঠাকালীন প্রচুর যুদ্ধ করা এবং হত্যার পরেই মানুষ ভয়ে ইসলামকে গ্রহন করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ভায়রাস বলা হয় ইসলামকে। এই ভায়রাস আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে গাজওয়াতুল হিন্দকে কেন্দ্র করে। বর্তমানে জিহাদীরা তাদের দলে লোক বেসি করার জন্য অনলাইনে সহ নানা জাগাতে ঠিক এই ভাবে মুসলিমদের উপর প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে "গাজওয়াতুল হিন্দ বা ভারতবর্ষের যুদ্ধ সম্পর্কে কি আপনি অবগত? আপনি কি কাফের মুশরিকদের সাথে লড়াই করতে প্রস্তুত?" ইসলামীষ্ট  জিহাদীরা ঠিক এভাবে চাই যে সারা পৃথিবীতে সবচে’ বড় যে ধর্মযুদ্ধ হবে সেটা হবে হিন্দুস্তান তথা ভারতের হিন্দুদের সাথে মুসলমানদের যা সমস্থ জ্ঞানি ইসলামি স্কলার এবং আলেম উলামা জানে। মুসলমানদের জন্য এটা খুব বড়  জিহাদ এবং এই জিহাদের গুরুত্ব অপরিসীম। এই...

বাঙালি এবং লেখকের জীবন

লেখকের বেঁচে থাকার প্রথম শর্ত তার পরিবারের স্বীকৃতি।এখানে স্বীকৃতির অর্থ হচ্ছে-লেখালেখি যে একটি কাজ,অন্য মতোই একটি কাজের, এবং সেই কাজের জন্য মনোযোগ,সময় এবং শ্রম বিনিয়োগ করতে হয়-এই বোধটা তৈরী হওয়া।লেখালেখিকে মহাগুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে নাই বা ধরা হলো। কিন্তু এটি যে একটি কাজ,এই স্বীকৃতিটা পরিবার থেকে আসা খুব প্রয়োজন। আমাদের দেশের বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতি বান লেখক শেষ পর্যন্ত যে লেখক হয়ে উঠতে পারে না,লেখক জীবন যাপন করতে পারেন না,লেখালেখির জগত থেকে তাদের যে অকাল বিদায় নিতে হয়,তার সবচেয়ে বড় কারণ এটাই।লেখালেখিকে পারিবারিক ভাবে স্বীকৃতি না দেওয়া।দেশের অন্য সব মানুষদের মতোই বেশির ভাগ পরিবারে লেখালেখি একটি নেহাৎ ই শখের জিনিস।তারুণ্য বা অংকুরোদ্গমী যৌবনে যৌনতার চুলকানিরও পেয়ে বসে আমাদের দেশের মানুষদের।তখন তাদের লেখাকে বাবাহা দেয় বাড়ির ভাবীরা,কাকা-জ্যাঠারা,সহপাঠীরা,বা তার কোন প্রেমিক-প্রেমিকাও।কখনো কখনো এমনকি বাবা মাও।তারা সকলেই অবচেতনে,এবং নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানে যে,এই চুলকানি বেশিদিন থাকবে না।কিন্তু যার ক্ষেত্রে থেকে যায়,অর্থাৎ যে বুঝে যায় যে লেখক হওয়াটাই তার ভবিতব্য,সমস্যাটা তার ক্ষ...