সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মানববিজ্ঞানী Taylor-এর মতে ধর্ম ও তার উৎপত্তি


E.B. Taylor-এর মতে,
"ধর্ম হচ্ছে প্রেতাত্মায় বিশ্বাস।"
তিনি মনে করেন,
"It seems best simply to claim as a minimum definition of religion, the belief in spiritual beings."
তিনি ধর্মকে ধর্মকে দেখেছেন একটি বুদ্ধিবৃত্তিক প্রক্রিয়া হিসেবে এবং দেখিয়েছেন ধর্মের উদ্ভব ঘটেছে মানুষের চিন্তনপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে। তার নিকট ধর্ম হলো, আত্মা বা প্রেতাত্মায় বিশ্বাস (Belief in Soul or Spirit).
ধর্মেকে সংঙ্গায়িত করতে গিয়ে তিনি 'সর্বপ্রাণবাদ' (Animism) বলে একটি তত্ব দিয়েছেন। এখানে দু'টি প্রশ্ন করা হয়।
১. কি জীবিত এবং মৃতের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেয়?
২. মনশ্চক্ষে আবিষ্ট অবস্থায় অথবা স্বপ্নে যা দেখে তা কি?
উত্তর হচ্ছে আত্মা বা প্রেতাত্মা।
অর্থাৎ, আত্মা বা প্রেতাত্মায় বিশ্বাস এবং বিশ্বাসকেন্দ্রিক যে আচার ব্যবস্থা, তা-ই ধর্ম।
বিবর্তনবাদী মানববিজ্ঞানী E.B. Taylor তার বিখ্যাত Primitive Culture(1871) গ্রন্থে ধর্মের উৎপত্তি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেছেন, যা অনেকটা এরকম-
"মানুষ প্রথমে আত্মার ধারণায় উপনিত হয়েছে, তারপর সকল বস্তুতে আত্মার বা প্রাণের ধারণা আরোপ করেছে, এভাবেই মানুষ মহাশক্তিধর খোদা বা ঈশ্বরের ধারণায় উপনিত হয়েছে এবং ধর্মের উদ্ভব ঘটেছে ।
প্রথমে পূর্বপুরুষপূজা(Anceখstor Worship), তারপর প্রকৃতিপূজা(Nature Worship), তারপর বহুখোদা বা দেব-দেবীপূজা(Polytheism), তারপর একখোদা বা একেশ্বরবাদ(Monotheism)-এর উদ্ভব ঘটেছে।
প্রথমে মানুষ আত্মার ধারণায় উপনিত হয়েছে এবং তারপর সেখান থেকে প্রেতাত্মা,জ্বিন, ভূত, দৈত্য, দানব, ফেরেশতা, শয়তান প্রভৃতি ধারণায় উপনিত হয়েছে।
প্রথমে মানুষ স্বপ্নে, নিজের প্রতিচ্ছায়া, এবং পানিতে নিজের প্রতিমূর্তি দেখে দ্বৈতসত্ত্বার ধারণায় উপনিত হয়। একদিকে তার নিজের দৈহিক অস্তিত্ব, অন্যদিকে সে যখন ঘুমায় তখন সে স্বপ্নে দেখে সে দূর-দূরান্তে চলে যাচ্ছে, নানা ক্রিয়া-কর্মে অংশ নিচ্ছে, সে হচ্ছে তার অন্য আরেক সত্ত্বা। যখন সে চাঁদনীরাতে বা সূর্যের আলোয় চলাফেরা করছে তখন তার পিছু অনুসরণ করছে তার ছায়া। আবার যখন সে জলাশয়ে জলপান করতে গেছে বা নাইতে(স্নান) গেছে তখন সে পানিতে দেখেছে তার মতোই একজনকে।
এর ব্যাখ্যা কি???
অতি প্রাথমিক যুগের সহজ-সরল অজ্ঞ মানুষদের কাছে মনে হয়েছে তার ভেতরে তার মতোই কেউ একজন বসবাস করে। 'যে ছায়া হয়ে তার সাথে হাঁটে, পানিতে প্রতিচ্ছায়া হয়ে উপস্থিত হয় এবং ঘুমালে দেহ ছেড়ে বাইরে বেড়াতে যায়। এ হলো তার দোসর বা দ্বৈতসত্ত্বা অর্থাৎ তার ভেতরের আরেকজন।'
Taylor-এর মতে,
"The ancient savage philosophers probably made their first step by the obvious inference that every man has two things belonging to him, namely, a life a phantom. "
দ্বিতীয়জন অর্থাৎ দেহের ভিতরে বসবাসকারী অন্যজন দেহ ছেড়ে বাইরে চলে যায় আবার দেহে প্রত্যাবর্তনও করে। একে নিদ্রা বলা হয়।
কিন্তু যখন সেই সত্ত্বা চিরতরে দেহত্যাগ করে চলে যায় বা কোনক্রমে পথ ভুল করে ফিরে আসতে পারে না তখন মানুষ চিরনিদ্রায় শায়িত হয় বা তার দৈহিক মৃত্যু হয়। তবে আত্মা অমর, অবিনশ্বর এবং স্বাধীন।
আত্মা ভূত হয়ে ফিরে আসে তার আত্মীয়দের সাথে দেখা করতে। আত্মা অগ্নি, বায়ু, জলসহ সকল দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান মাধ্যমে চলাচল করতে পারে। আত্মার অনেক ক্ষমতা। কেউ অস্বাভাবিক বীরত্ব প্রদর্শন করলে বা শিকারে দক্ষতা দেখালে বুঝতে হবে তার উপর আত্মা ভর করেছে। আর কারো কোনো বিপর্যয় ঘটলে বা কেউ অস্বাভাবিক আচরণ করলে বুঝতে হবে তার উপর প্রেতাত্মার কুদৃষ্টি পড়েছে বা আছর করেছে ।
সেই প্রেতাত্মার অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রেতাত্মাকে খুশি করার বা খুশি রাখার উপায় হিসেবে আত্মাপূজা ধারণার উদ্ভব হয়। আত্মাপূজা থেকে পূর্বপুরুষপূজা, পূর্বপুরুষপূজা থেকে প্রকিতিপূজা, প্রকৃতিপূজা থেকে বহুঈশ্বর বা দেব-দেবীপূজা............ এভাবেই যুগের পরিক্রমায় ধর্মের উৎপত্তি হয় এবং ধর্ম বিকাশ লাভ করে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

জাতীয়তাবাদ আরেকটি ধর্ম বই

বাংলাদেশীরা ধর্মভীরু। ইসলাম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ও জাতীয়তাবাদ নামক ধর্মগুলোর প্রতি বাঙ্গালীর দুর্বলতা নতুন কিছু নয়। আমরা যারা মুক্ত-চেতনাকে প্রয়োজনীয় মনে করি, যুক্তিকে ধর্মের ওপরে স্থান দেই তাদের অনেকেই ধর্মের মতই সামনে আসা অন্যান্য প্রতিটি ধারনা ও প্রস্তাবনাকেই যুক্তি দিয়ে বুঝতে চাই, খতিয়ে দেখতে চাই। বা দদূএকটি রূপ আধ্যাত্মিকতা ও ধর্ম হিসাবে মানুষের দলবদ্ধ সমাজব্যবস্থার দ্বিতীয় বড় চালক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। প্রস্তরযুগে আরো একটি ঘটনা ঘটতে শুরু করেছিল। মানুষেরা নিজেদের গ্রাম বা নগরকে কেন্দ্র করে একটি সামষ্টিক পরিচিতি অনুভব করে শুরু করেছিল। বোধ করি তখন থেকেই মানুষের দলবদ্ধতার তৃতীয় চালক জাতীয়তাবাদের প্রাথমিক যাত্রা শুরু। বর্তমানে সারা দুনিয়ায় জাতীয়তাবাদ নানান চেহারায় দলবদ্ধতার সবচাইতে শক্তিশালী চালক হিসাবে বিদ্যমান। একটি নৃগোষ্ঠী যখন পুঁজিবাদী হতে শুরু করে, যখন সে একটি কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্র গঠন করে তখনই সে একটি জাতিতে পরিণত হয়। ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ আমাদের দেশের রাজনীতিতে কাছাকাছি আছে ইতিহাসের শুরু থেকে। মহাভারত থেকে আজকের খালেদা-হাসিনার রাজনীতিতে ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ একে অন্যের হাত...

গাজওয়াতুল হিন্দ

গাজওয়াতুল হিন্দকে বর্তমান বাংলাদেশ ভারত ও নেপাল শ্রীলংকার জিহাদীরা তাদের মনে আটকে রেখেছে। এই বিষয়ে নানা মতাভেদ থাকলেও সকল মুসলিম জিহাদীরা মনে করে বা আ শা করে যে ইসলাম সারা পৃথীবিতে এই জিহাদের মাধ্যামে প্রতিষ্টা হবে। তারা এটাকে মর্যাদার্পূণ জিহাদ বলে মনে করে। ইসলামের ভিত্তির অন্যতম হলো জিহাদ। ইসলাম প্রতিষ্ঠাকালীন প্রচুর যুদ্ধ করা এবং হত্যার পরেই মানুষ ভয়ে ইসলামকে গ্রহন করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ভায়রাস বলা হয় ইসলামকে। এই ভায়রাস আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে গাজওয়াতুল হিন্দকে কেন্দ্র করে। বর্তমানে জিহাদীরা তাদের দলে লোক বেসি করার জন্য অনলাইনে সহ নানা জাগাতে ঠিক এই ভাবে মুসলিমদের উপর প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে "গাজওয়াতুল হিন্দ বা ভারতবর্ষের যুদ্ধ সম্পর্কে কি আপনি অবগত? আপনি কি কাফের মুশরিকদের সাথে লড়াই করতে প্রস্তুত?" ইসলামীষ্ট  জিহাদীরা ঠিক এভাবে চাই যে সারা পৃথিবীতে সবচে’ বড় যে ধর্মযুদ্ধ হবে সেটা হবে হিন্দুস্তান তথা ভারতের হিন্দুদের সাথে মুসলমানদের যা সমস্থ জ্ঞানি ইসলামি স্কলার এবং আলেম উলামা জানে। মুসলমানদের জন্য এটা খুব বড়  জিহাদ এবং এই জিহাদের গুরুত্ব অপরিসীম। এই...

বাঙালি এবং লেখকের জীবন

লেখকের বেঁচে থাকার প্রথম শর্ত তার পরিবারের স্বীকৃতি।এখানে স্বীকৃতির অর্থ হচ্ছে-লেখালেখি যে একটি কাজ,অন্য মতোই একটি কাজের, এবং সেই কাজের জন্য মনোযোগ,সময় এবং শ্রম বিনিয়োগ করতে হয়-এই বোধটা তৈরী হওয়া।লেখালেখিকে মহাগুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে নাই বা ধরা হলো। কিন্তু এটি যে একটি কাজ,এই স্বীকৃতিটা পরিবার থেকে আসা খুব প্রয়োজন। আমাদের দেশের বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতি বান লেখক শেষ পর্যন্ত যে লেখক হয়ে উঠতে পারে না,লেখক জীবন যাপন করতে পারেন না,লেখালেখির জগত থেকে তাদের যে অকাল বিদায় নিতে হয়,তার সবচেয়ে বড় কারণ এটাই।লেখালেখিকে পারিবারিক ভাবে স্বীকৃতি না দেওয়া।দেশের অন্য সব মানুষদের মতোই বেশির ভাগ পরিবারে লেখালেখি একটি নেহাৎ ই শখের জিনিস।তারুণ্য বা অংকুরোদ্গমী যৌবনে যৌনতার চুলকানিরও পেয়ে বসে আমাদের দেশের মানুষদের।তখন তাদের লেখাকে বাবাহা দেয় বাড়ির ভাবীরা,কাকা-জ্যাঠারা,সহপাঠীরা,বা তার কোন প্রেমিক-প্রেমিকাও।কখনো কখনো এমনকি বাবা মাও।তারা সকলেই অবচেতনে,এবং নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানে যে,এই চুলকানি বেশিদিন থাকবে না।কিন্তু যার ক্ষেত্রে থেকে যায়,অর্থাৎ যে বুঝে যায় যে লেখক হওয়াটাই তার ভবিতব্য,সমস্যাটা তার ক্ষ...