সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নৈতিকতা সংঙ্গে ধর্মের কি সম্পর্ক?

ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার নিয়ে আমরা অনেক কথা বলি কিন্তু ধর্মের নৈতিক ব্যবহার নিয়ে আমরা কোনো কথা বলি না। আবার দেখুন প্রায়ই বলতে শোনা যায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন কিন্তু দুনিয়ার আকাম কুকাম কোনোটা তার বাকি নেই – তার মানে কী, একথা যিনি বলছেন তিনি মনে করছেন নামাজ পড়া লোকটার আকাম কুকাম করাটা অস্বাভাবিক বা আকাম কুকাম করলে নামাজ পড়ার দরকার কি? এভাবে সততা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, লোভ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, হিংসা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে প্রতি প্রশ্নে আঙ্গুল তোলা হয় রোজা নামাজ করা লোক কেমনে এত অসৎ লোভী হিংসুক হয়। একথাও বলতে শোনা যায় আমি হাজি মানুষ আপনার মনে হয় আমি ওজনে কম দেব, রোজামুখে বলছি এই মাল বিক্রি করে আমার লস হবে, সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কথা কোরান ছুঁয়ে বলছি আমি ওনার সাথে সহবাস করিনি অথবা তিনি নামাজ কালাম পড়েন খুব আল্লাহওয়ালা ভাল মানুষ – এভাবে জীবনের প্রতি পদে পদে ধর্মকে সামনে দাঁড় করিয়ে নৈতিকতার ফিরিস্তি দেয়া হয় নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।


সাহিত্য শিল্প সৃষ্টি নিয়ে ও এসবের সাথে মাদকাসক্তির সম্পর্ক নিয়ে অনেক কথা বলতে শোনা যায়, কারো কারো কথা শুনলে এমনও মনে হতে পারে নিতান্ত মদই গিলতে পারে না সে আবার কবিতা লিখবে কী, গাঁজা নিয়েও এমন কথা উঠে আসে গিনসবার্গ গাঁজাসেবী তাই তিনি এত বড় কবি, আবার অন্যদিকেও কথা ওঠে কাড়ি কাড়ি মদ না গিললে বড় কথাশিল্পী হতেন তিনি, হেরোইনের নেশায় না পড়লে আপনারা কেউ কি দাঁড়াতে পারতেন ওর কবিতার সামনে। কিন্তু আমরা কখনো ভাবি না শুধু মাদক সেবন শিখলে তো কেউ কবিতা লিখতে পারে না বা শুধু কবিতা লিখতে শিখলে কেউ মাদক সেবক হতে পারে না – দুটোই আলাদা আলাদা শিখতে হয়।


তাই ধর্মের অনুশাসন পালন শিখলেই আপনার নৈতিক শিক্ষা হয়ে যাবে এটা তো হতে পারে না। আপনাকে নৈতিক শিক্ষার ভেতর দিয়ে যেতে হবে – আপনি অসৎ লোভী হিংসুক মানেই আপনার নৈতিক শিক্ষা হয়নি বা আপনি আপনার নৈতিক শিক্ষা ভুলে গেছেন, যেরকম অনেকেই শিক্ষাকালের পর তার আরব্ধ শিক্ষা ভুলে যায়।


প্রতি পদে পদে ধর্মের নৈতিক ব্যবহার থেকে সমাজকে মুক্ত হতে হবে – আপনার নামাজ কালাম আপনার, আপনার নৈতিকতাও আপনার – একটা দিয়ে আরেকটা হাসিল করতে যাবেন না, কারো নৈতিক দৃঢ়তাকে তার ধার্মিক দৃঢ়তা বলে ভুল করবেন না এবং কারো ধার্মিক অর্জনকে তার নৈতিক অর্জন বলে ভুল করবেন না। ধর্মের নৈতিক ব্যবহার ও নীতির ধার্মিক ব্যবহার পরিহার করুন। ধর্মের সাথে নৈতিকতার কোনো সম্পর্ক নেই, নৈতিকতার সাথেও ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই।

মন্তব্যসমূহ

  1. এক কথায় বলছি - কথাগুলো যৌক্তিক তাই ভাল্লাগছে । এই বিষয়টা নিয়া সিরিজ আকারে আরো বিস্তারিত আকারে লিখবেন এই আশা রাখছি -

    উত্তরমুছুন
  2. অসাধারণ চিন্তার অতি সাধারণ ব্যাখ্যা সত্যি চিন্তার খোরাক হয়ে মস্তিষ্ক নাড়া দিয়েছে ধন্যবাদ

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মুক্তচিন্তার সাথে হোক আপনার পথ চলা।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

জাতীয়তাবাদ আরেকটি ধর্ম বই

বাংলাদেশীরা ধর্মভীরু। ইসলাম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ও জাতীয়তাবাদ নামক ধর্মগুলোর প্রতি বাঙ্গালীর দুর্বলতা নতুন কিছু নয়। আমরা যারা মুক্ত-চেতনাকে প্রয়োজনীয় মনে করি, যুক্তিকে ধর্মের ওপরে স্থান দেই তাদের অনেকেই ধর্মের মতই সামনে আসা অন্যান্য প্রতিটি ধারনা ও প্রস্তাবনাকেই যুক্তি দিয়ে বুঝতে চাই, খতিয়ে দেখতে চাই। বা দদূএকটি রূপ আধ্যাত্মিকতা ও ধর্ম হিসাবে মানুষের দলবদ্ধ সমাজব্যবস্থার দ্বিতীয় বড় চালক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। প্রস্তরযুগে আরো একটি ঘটনা ঘটতে শুরু করেছিল। মানুষেরা নিজেদের গ্রাম বা নগরকে কেন্দ্র করে একটি সামষ্টিক পরিচিতি অনুভব করে শুরু করেছিল। বোধ করি তখন থেকেই মানুষের দলবদ্ধতার তৃতীয় চালক জাতীয়তাবাদের প্রাথমিক যাত্রা শুরু। বর্তমানে সারা দুনিয়ায় জাতীয়তাবাদ নানান চেহারায় দলবদ্ধতার সবচাইতে শক্তিশালী চালক হিসাবে বিদ্যমান। একটি নৃগোষ্ঠী যখন পুঁজিবাদী হতে শুরু করে, যখন সে একটি কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্র গঠন করে তখনই সে একটি জাতিতে পরিণত হয়। ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ আমাদের দেশের রাজনীতিতে কাছাকাছি আছে ইতিহাসের শুরু থেকে। মহাভারত থেকে আজকের খালেদা-হাসিনার রাজনীতিতে ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ একে অন্যের হাত...

গাজওয়াতুল হিন্দ

গাজওয়াতুল হিন্দকে বর্তমান বাংলাদেশ ভারত ও নেপাল শ্রীলংকার জিহাদীরা তাদের মনে আটকে রেখেছে। এই বিষয়ে নানা মতাভেদ থাকলেও সকল মুসলিম জিহাদীরা মনে করে বা আ শা করে যে ইসলাম সারা পৃথীবিতে এই জিহাদের মাধ্যামে প্রতিষ্টা হবে। তারা এটাকে মর্যাদার্পূণ জিহাদ বলে মনে করে। ইসলামের ভিত্তির অন্যতম হলো জিহাদ। ইসলাম প্রতিষ্ঠাকালীন প্রচুর যুদ্ধ করা এবং হত্যার পরেই মানুষ ভয়ে ইসলামকে গ্রহন করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ভায়রাস বলা হয় ইসলামকে। এই ভায়রাস আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে গাজওয়াতুল হিন্দকে কেন্দ্র করে। বর্তমানে জিহাদীরা তাদের দলে লোক বেসি করার জন্য অনলাইনে সহ নানা জাগাতে ঠিক এই ভাবে মুসলিমদের উপর প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে "গাজওয়াতুল হিন্দ বা ভারতবর্ষের যুদ্ধ সম্পর্কে কি আপনি অবগত? আপনি কি কাফের মুশরিকদের সাথে লড়াই করতে প্রস্তুত?" ইসলামীষ্ট  জিহাদীরা ঠিক এভাবে চাই যে সারা পৃথিবীতে সবচে’ বড় যে ধর্মযুদ্ধ হবে সেটা হবে হিন্দুস্তান তথা ভারতের হিন্দুদের সাথে মুসলমানদের যা সমস্থ জ্ঞানি ইসলামি স্কলার এবং আলেম উলামা জানে। মুসলমানদের জন্য এটা খুব বড়  জিহাদ এবং এই জিহাদের গুরুত্ব অপরিসীম। এই...

বাঙালি এবং লেখকের জীবন

লেখকের বেঁচে থাকার প্রথম শর্ত তার পরিবারের স্বীকৃতি।এখানে স্বীকৃতির অর্থ হচ্ছে-লেখালেখি যে একটি কাজ,অন্য মতোই একটি কাজের, এবং সেই কাজের জন্য মনোযোগ,সময় এবং শ্রম বিনিয়োগ করতে হয়-এই বোধটা তৈরী হওয়া।লেখালেখিকে মহাগুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে নাই বা ধরা হলো। কিন্তু এটি যে একটি কাজ,এই স্বীকৃতিটা পরিবার থেকে আসা খুব প্রয়োজন। আমাদের দেশের বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতি বান লেখক শেষ পর্যন্ত যে লেখক হয়ে উঠতে পারে না,লেখক জীবন যাপন করতে পারেন না,লেখালেখির জগত থেকে তাদের যে অকাল বিদায় নিতে হয়,তার সবচেয়ে বড় কারণ এটাই।লেখালেখিকে পারিবারিক ভাবে স্বীকৃতি না দেওয়া।দেশের অন্য সব মানুষদের মতোই বেশির ভাগ পরিবারে লেখালেখি একটি নেহাৎ ই শখের জিনিস।তারুণ্য বা অংকুরোদ্গমী যৌবনে যৌনতার চুলকানিরও পেয়ে বসে আমাদের দেশের মানুষদের।তখন তাদের লেখাকে বাবাহা দেয় বাড়ির ভাবীরা,কাকা-জ্যাঠারা,সহপাঠীরা,বা তার কোন প্রেমিক-প্রেমিকাও।কখনো কখনো এমনকি বাবা মাও।তারা সকলেই অবচেতনে,এবং নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানে যে,এই চুলকানি বেশিদিন থাকবে না।কিন্তু যার ক্ষেত্রে থেকে যায়,অর্থাৎ যে বুঝে যায় যে লেখক হওয়াটাই তার ভবিতব্য,সমস্যাটা তার ক্ষ...