সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ধর্ম এবং এথেইজম

ধর্ম নিয়ে কৌতুহলকে অনেকে নিন্দার চোখে দেখেন। তারা পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত ধর্ম বিশ্বাসে অবিচল আস্থা দেখানোর পক্ষপাতী। কিন্তু অনেকেই পাল্টা এই যুক্তি দেন যে, সবাই যদি বংশসূত্রে প্রাপ্ত ধর্মে অবিচল থাকতো তবে পৃথিবীতে নতুন ধর্ম আসতো না। না ইসলাম, না বাহাই, না সাইন্টোলজি। সুতরাং ধর্ম নিয়ে আলোচনা হবেই। মানুষের কৌতুহল, আগ্রহ ও অনুসন্ধানী মনকে বাধাহীন চলতে দেয়াটাই সঙ্গত। এই বঙ্গের ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মুক্ত পরিবেশে ঈশ্বর আর সৃষ্টি চিন্তা নিয়ে তাই কম পোস্ট পরে না। কিন্তু একজনের কথার সাথে অন্যের কথার তুলনা করা যায় না। দেখা যায় একেকজন আস্তিকতা ও নাস্তিকতাকে ব্যাখ্যা করছেন একেকভাবে। যাকে এথেইস্ট বলছেন সে হয়তো এগনোস্টিক। একইভাবে যারা প্যানথিইজমে বিশ্বাসী তারা ভাবছেন তারা মনোথিইজমের অনুসারী। সুতরাং একটা সর্বজনগ্রাহ্য পরিভাষা না থাকলে কে কার বিপক্ষে কী মত দিচ্ছেন তা ধরা যায় না। সে কারণেই মূলত: সৃষ্টি রহস্য বা স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে চালু বিভিন্ন মতবাদের বিচিত্র সব টার্মিওনোলজি বা পরিভাষা নিয়েই এই লেখা।


সৃষ্টিরহস্য সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদের বিভিন্ন মাত্রার যদি একটা স্কেল আমরা কল্পনা করি তবে বিশ্বাসীদেরকে আমরা রাখতে পারবো স্কেলের বিভিন্ন বিন্দুতে। বিশ্বাস বলতে এখানে অবশ্যই বুঝাচ্ছে অদৃশ্য কোনো বিপুল শক্তিতে বিশ্বাস। যার একটি নাম হতে পারে ঈশ্বর। প্রথমে আসি ডানদিকে যারা আছেন। যাদের এসব বিশ্বাস সম্পর্কে আস্থা নেই। নেগেটিভ ধারণার একেবারে শেষ মাথায় হলো এথেইজম।

ক) এথেইজম: এই মতবাদের মূল কথা হলো কোনো ধরণের কোনো ঈশ্বর নেই। সৃষ্টিকে ব্যাখ্যা করার জন্য কোনো ঈশ্বর কল্পনার প্রয়োজন নেই। প্রাকৃতিক সূত্র ও বিজ্ঞান দিয়েই ব্যাখ্যা সম্ভব।

খ) এগনোস্টিসিজম: এই মতবাদের মূল কথা হলো 'আমি জানি না'। অর্থাৎ ঈশ্বরের অস্তিত্ব মেনে নেয়ার মত বা অস্বীকার করার মত যথেষ্ট যুক্তি দেখতে পাচ্ছি না। সুতরাং আমি জানি না।

গ) স্কেপটিসিজম: শুধুই সন্দেহ। অর্থাৎ ঈশ্বর আছেন কিনা সে বিষয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে।

ঘ) ন্যাচারালিজম: এই মতবাদের অনুসারীরা মনে করেন, মানুষের জীবন, তার অভিজ্ঞতা, তার মূল্যবোধ বা তার ধর্মপরায়ণতাকে বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে তার সম্পর্কের ভিত্তিতে ব্যাখ্যা করা যায়। অর্থাৎ সৃষ্টি রহস্য ব্যাখ্যা করার জন্য যা আমরা দেখছি, এই যে প্রকৃতি, এই-ই যথেষ্ট। প্রকৃতিই ঈশ্বর বা ঈশ্বরহীনতা।


এতো গেলো ডানে যারা আছেন ঈশ্বরহীনতার মতবাদ নিয়ে। এখন স্কেলের বামদিকে যারা আছেন তারা যদি এই ঈশ্বর বিশ্বাসের ধ্বনাত্মক মানে পজেটিভ অনুসারী হন তবে তারাও বিভক্ত কয়েকটি ভাগে। তাদের ভাগগুলো হলো:

ঙ) ডিইজম: এরা বিশ্বাস করেন ঈশ্বর এই বিশ্বব্রহ্মান্ড তৈরি করে তারপর বিশ্রামে গেছেন। তারা একধরনের "এ্যাবসেন্টি" গডের ধারণা নিয়ে ন্যাচারাল থিওলজির শিক্ষা দেন।

চ) থিইজম: এদের বিশ্বাস ঈশ্বর হচ্ছেন একটি ব্যক্তি সত্ত্বা। অর্থাৎ এটা কোনো ধারণা বা শক্তি নয়। ব্যক্তি-ঈশ্বর বা পার্সোনাল ডেইটির ধারণা নিয়েই চালু হয়েছে থিইজম।


এই থিইজমের আবার নানা রূপ।

1) পলিথিইজম: মানে সোজা কথায় ম্যানি-গড-ইজম। প্রাচীন সমাজে এর চল ছিল ব্যাপক। এর চূড়ান্ত রূপ আমরা দেখতে পাই গ্রিস আর রোমানদের বহু দেব-দেবীর উপাসনায়। একেক দেবতা জীবনের একেক ক্ষেত্রকে শাসন করছেন। কেউ ফসলের দেবত, কেউ ভালবাসার।

2) হেনোথিইজম: এধরনের বিশ্বাসীরা মনে করে ইশ্বর অনেক তবে তারা একজনের কাছেই আনুগত্য স্বীকার করে। এই একজনকেই তারা মানে তাদের গোত্রের ঈশ্বর হিসেবে।

3) প্যানথিইজম: এই বিশ্বাসের মূল কথা হলো সবকিছুই ঈশ্বর। বাউল, সুফি বা ভাববাদী কবিরাই মূলত: এরকম বিশ্বাসের স্রষ্টা। তাদের বক্তব্য হলো প্রকৃতি, পৃথিবী সব মিলিয়েই ঈশ্বর। এই বিশ্বে যা আছে সবকিছুই ঈশ্বরের অংশ।

4) মনোথিইজম: এই বিশ্বাসের মূল কথা ঈশ্বর এক। সেই সর্বৈব ক্ষমতার অধিকারী। সে ব্যক্তি-ঈশ্বর, তিনি কোথাও থাকেন, আদেশ দেন, ইশারা করেন, তার বাহিনী আছে, তারা তার হয়ে নানা কাজ করে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই ঈশ্বর চান তার সৃষ্টির বিনাশর্তে আত্মসমর্পণ। নতজানু হওয়া। বর্তমান ও পরজীবনের জন্য তার কাছে প্রার্থনা করা। এসব মিলিয়েই এই মতবাদ।


একত্ববাদীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার দৌরাত্মে থিইজম এখন অনেকের কাছে মনোথিইজমে পরিণত হয়েছে। কিন্তু থিইজমেরও যে ভাগ রয়েছে তা আমরা উপরে দেখতে পাচ্ছি।

তো এই যে একক, সয়ম্ভু, অসীম, পবিত্র, ব্যক্তি-সত্ত্বার দয়াময় ঈশ্বর তার ধারণাটা মানুষ কখন প্রথম শুনতে পেলো কানে?

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

জাতীয়তাবাদ আরেকটি ধর্ম বই

বাংলাদেশীরা ধর্মভীরু। ইসলাম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ও জাতীয়তাবাদ নামক ধর্মগুলোর প্রতি বাঙ্গালীর দুর্বলতা নতুন কিছু নয়। আমরা যারা মুক্ত-চেতনাকে প্রয়োজনীয় মনে করি, যুক্তিকে ধর্মের ওপরে স্থান দেই তাদের অনেকেই ধর্মের মতই সামনে আসা অন্যান্য প্রতিটি ধারনা ও প্রস্তাবনাকেই যুক্তি দিয়ে বুঝতে চাই, খতিয়ে দেখতে চাই। বা দদূএকটি রূপ আধ্যাত্মিকতা ও ধর্ম হিসাবে মানুষের দলবদ্ধ সমাজব্যবস্থার দ্বিতীয় বড় চালক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। প্রস্তরযুগে আরো একটি ঘটনা ঘটতে শুরু করেছিল। মানুষেরা নিজেদের গ্রাম বা নগরকে কেন্দ্র করে একটি সামষ্টিক পরিচিতি অনুভব করে শুরু করেছিল। বোধ করি তখন থেকেই মানুষের দলবদ্ধতার তৃতীয় চালক জাতীয়তাবাদের প্রাথমিক যাত্রা শুরু। বর্তমানে সারা দুনিয়ায় জাতীয়তাবাদ নানান চেহারায় দলবদ্ধতার সবচাইতে শক্তিশালী চালক হিসাবে বিদ্যমান। একটি নৃগোষ্ঠী যখন পুঁজিবাদী হতে শুরু করে, যখন সে একটি কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্র গঠন করে তখনই সে একটি জাতিতে পরিণত হয়। ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ আমাদের দেশের রাজনীতিতে কাছাকাছি আছে ইতিহাসের শুরু থেকে। মহাভারত থেকে আজকের খালেদা-হাসিনার রাজনীতিতে ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ একে অন্যের হাত...

গাজওয়াতুল হিন্দ

গাজওয়াতুল হিন্দকে বর্তমান বাংলাদেশ ভারত ও নেপাল শ্রীলংকার জিহাদীরা তাদের মনে আটকে রেখেছে। এই বিষয়ে নানা মতাভেদ থাকলেও সকল মুসলিম জিহাদীরা মনে করে বা আ শা করে যে ইসলাম সারা পৃথীবিতে এই জিহাদের মাধ্যামে প্রতিষ্টা হবে। তারা এটাকে মর্যাদার্পূণ জিহাদ বলে মনে করে। ইসলামের ভিত্তির অন্যতম হলো জিহাদ। ইসলাম প্রতিষ্ঠাকালীন প্রচুর যুদ্ধ করা এবং হত্যার পরেই মানুষ ভয়ে ইসলামকে গ্রহন করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ভায়রাস বলা হয় ইসলামকে। এই ভায়রাস আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে গাজওয়াতুল হিন্দকে কেন্দ্র করে। বর্তমানে জিহাদীরা তাদের দলে লোক বেসি করার জন্য অনলাইনে সহ নানা জাগাতে ঠিক এই ভাবে মুসলিমদের উপর প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে "গাজওয়াতুল হিন্দ বা ভারতবর্ষের যুদ্ধ সম্পর্কে কি আপনি অবগত? আপনি কি কাফের মুশরিকদের সাথে লড়াই করতে প্রস্তুত?" ইসলামীষ্ট  জিহাদীরা ঠিক এভাবে চাই যে সারা পৃথিবীতে সবচে’ বড় যে ধর্মযুদ্ধ হবে সেটা হবে হিন্দুস্তান তথা ভারতের হিন্দুদের সাথে মুসলমানদের যা সমস্থ জ্ঞানি ইসলামি স্কলার এবং আলেম উলামা জানে। মুসলমানদের জন্য এটা খুব বড়  জিহাদ এবং এই জিহাদের গুরুত্ব অপরিসীম। এই...

বাঙালি এবং লেখকের জীবন

লেখকের বেঁচে থাকার প্রথম শর্ত তার পরিবারের স্বীকৃতি।এখানে স্বীকৃতির অর্থ হচ্ছে-লেখালেখি যে একটি কাজ,অন্য মতোই একটি কাজের, এবং সেই কাজের জন্য মনোযোগ,সময় এবং শ্রম বিনিয়োগ করতে হয়-এই বোধটা তৈরী হওয়া।লেখালেখিকে মহাগুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে নাই বা ধরা হলো। কিন্তু এটি যে একটি কাজ,এই স্বীকৃতিটা পরিবার থেকে আসা খুব প্রয়োজন। আমাদের দেশের বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতি বান লেখক শেষ পর্যন্ত যে লেখক হয়ে উঠতে পারে না,লেখক জীবন যাপন করতে পারেন না,লেখালেখির জগত থেকে তাদের যে অকাল বিদায় নিতে হয়,তার সবচেয়ে বড় কারণ এটাই।লেখালেখিকে পারিবারিক ভাবে স্বীকৃতি না দেওয়া।দেশের অন্য সব মানুষদের মতোই বেশির ভাগ পরিবারে লেখালেখি একটি নেহাৎ ই শখের জিনিস।তারুণ্য বা অংকুরোদ্গমী যৌবনে যৌনতার চুলকানিরও পেয়ে বসে আমাদের দেশের মানুষদের।তখন তাদের লেখাকে বাবাহা দেয় বাড়ির ভাবীরা,কাকা-জ্যাঠারা,সহপাঠীরা,বা তার কোন প্রেমিক-প্রেমিকাও।কখনো কখনো এমনকি বাবা মাও।তারা সকলেই অবচেতনে,এবং নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানে যে,এই চুলকানি বেশিদিন থাকবে না।কিন্তু যার ক্ষেত্রে থেকে যায়,অর্থাৎ যে বুঝে যায় যে লেখক হওয়াটাই তার ভবিতব্য,সমস্যাটা তার ক্ষ...