সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ঈশ্বরের মৃত্যু কবে কখন কিভাবে হবে?

অক্সিজেন ছাড়া প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব না। ঠিক তেমনই উপাসনা ছাড়া ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই। মানুষের উপাসনা না পেলে ঈশ্বরের মৃত্যু ঘটে, তাই বেঁচে থাকার জন্য ঈশ্বর মানুষের থেকেও বেশী মরিয়া। এক জন মানুষ মড়ে গেলেও তার বংশধর থাকে, কিন্তু ঈশ্বরের মৃত্যু ঘটা মানে নির্বংশ হয়ে যাওয়া।

তাই বেঁচে থাকার যুদ্ধ মানুষ থেকে ঈশ্বরের জন্য বেশী কঠিন। মানুষের উপাসনা পাবার জন্য ঈশ্বরের যুক্তি একটাই, তিনি সব কিছুর স্রষ্টা। আর সেটা বিশ্বাস করাবার জন্য পথ মাত্র দু'টি। একটা হচ্ছে লোভ আর একটা হচ্ছে ভয়। ঈশ্বর প্রথমে তার উপাসনা করার জন্য মানুষকে লোভ দেখান। তার উপাসনা করলে এটা দিব, ওটা দিব; মানুষের আরাধ্য সব জিনিস। আর লোভে যদি কাজ না হয়, তাহলে দেখানো হয় ভয়। আর এই পুরো প্রক্রিয়া চালানোর জন্য একটি বিধান দেয়া হয়। সেই বিধানের বাইরে যাই থাকে তার সবই অন্যায় ও অনৈতিক। আর বিধানের ভেতরের সব কাজ ঠিক মতো করলেই লোভনীয় সব জিনিস পত্র পাবার হাতছানি। আর বিধানের বাইরের কাজ করলে ভয় ভীতি দেখানো শুরু হয়ে যায়।

হীরক রাজার দেশে সিনেমাটি যাদের দেখা আছে, তাদের কাছে হীরক রাজের একটা উক্তি মনে থাকার কথা, "এরা যতো বেশী পড়ে, ততো বেশী জানে, ততো কম মানে"। রাজা মশাই জ্ঞান ও উপাসনার মাঝের মূল সূত্রটি ধরতে পেরেছিলেন। তাই তিনি তার প্রজাদের বেশী জানার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছিলেন পাঠশালা বন্ধ করে দিয়ে। তাতে প্রজাদের বেশী পড়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়, আর পড়তে না পেলে জানার রাস্তাও বন্ধ। প্রজা যতো কম জানে, ততোই তাদের ঘাড়ে আরো বেশী করে চেপে বসা যায়।

আমাদের ঈশ্বরও এই কথাটি জানেন। তাই ঈশ্বরের বিধানে জ্ঞান অর্জনের সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। ঈশ্বরের দেয়া বিধানে একমাত্র যে জ্ঞানের চর্চা করতে বলা হয়েছে সেটা হলো ঈশ্বর সংক্রান্ত জ্ঞান। ঈশ্বরের রূপ, ঈশ্বরের জ্ঞান, ঈশ্বরের ক্ষমতা, ঈশ্বরের বিধান ইত্যাদির বাইরে জ্ঞান চর্চা করা ঈশ্বরের দেয়া বিধানে নিষিদ্ধ। যে কোন নতুন জ্ঞান ঈশ্বরের বিধানে নিষিদ্ধ। কেন? কারন নতুন জ্ঞান মানেই নতুন কিছু জানা, আর নতুন কিছু জানা মানেই নতুন নতুন প্রশ্ন আর ঈশ্বরের উত্তর দিতে না পারা, আর উত্তর দিতে না পারা মানে হলো ঈশ্বরের দূর্বলতা, আর ঈশ্বরের দূর্বলতা মানে হলো মানুষের ঈশ্বরের ভয় থেকে মুক্ত করার সম্ভাবনা, আর ঈশ্বরের ভয় থেকে মুক্ত অবার মানে হলো ঈশ্বরের উপাসনা না করা।

মানুষ যতো কম জানে, ঈশ্বর ততোই তার ঘাড়ে চেপে বসে সিন্দবাদের ভূতের মতো। মানুষ যখন কাঁচা মাংশ খেত তখন আগুন তার কাছে অপার্থিব একটা জিনিস। ঈশ্বর তাকে আগুনের কাছে যেতে মানা করে দিলেন। বললেন ওটা মানুষের জন্য নিষিদ্ধ। মানুষকে আগুন থেকে দূরে রাখা হলো। তার পর এক সময় মানুষ আগুনকে ইচ্ছে মতো জ্বালাতে শিখে গেল। ঈশ্বরের তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকলো না। আগুন জ্বালানোর জ্ঞানটা যখন সবার হাতে পৌঁছে গেল, তখন ঈশ্বর বললেন যে তিনিই তো তার পোষ্যদের জন্য আগুন পাঠালেন তাদের আরামের জন্য। মূর্খ মানুষ বললো "আহা... ঈশ্বর কতো মহান"! মানুষের জন্য ঈশ্বরের রূপ নিয়ে প্রশ্ন করা নিষিদ্ধ। তাই মানুষ সেটা করে না, ঈশ্বরের ভয়ে। কিন্তু স্বভাবের দোষে মানুষের প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে তার পালানোর পথ খুঁজে না পেয়ে ঈশ্বর চন্দ্র সূর্য ইত্যাদি দেখিয়ে বললেন যে সেগুলোই ঈশ্বরের রূপ। কিন্তু একটা সময় মানুষ জেনে গেল যে সেগুলো ঈশ্বর না, চন্দ্র-সূর্যের রূপ আবিষ্কার করে বসলো সে। ঈশ্বর দেখলেন সমূহ বিপদ উপস্থিত। ঈশ্বর চন্দ্র-সূর্কে দখল করে বসলেন। বললেন, আরে, ওরা তো আমারই সৃষ্টি। আমি তো তোমাদের জন্যই তাদের বানিয়েছি। তিনি তার বিধান সংশোধন করে দিলেন। বলে দিলেন যে মানুষের থাকার জায়গা, যেটার নাম পৃথিবী, সেটার চারপাশে চাঁদ-সূর্য ঘুরতে থাকে, শুধুই মানুষকে সার্ভ করার জন্য। মানুষ আবার খুশী হয়ে গেল, "আহা... ঈশ্বর কতো সদয়"। বেয়াদব মানুষ তখন প্রশ্ন করে যে রাতে সূর্য আর দিনের বেলায় চাঁদ কোথায় যায়? ঈশ্বর দেখেন মহা বিপদ! বলে দিলেন যে ওরা তখন আমার সিংহাসনের নিচে বিশ্রাম নেয়! মানুষ প্রশ্ন করে পৃথিবী কিসের ওপর আছে? ঈশ্বর উত্তর দেন তারা একতা ষাড়ের শিং এর ওপর আছে ইত্যাদি। মানুষও ঈশ্বরের ক্ষমতার কথা ভেবে খুশী।

একটা সময় মানুষ ঈশ্বরের বিধানে দেয়া সীমা ভেঙ্গে আরো জ্ঞান অর্জন করলো। তার জন্য বিষ পানে মৃত্যু, আগুনে দগ্ধ হয়ে মৃত্যু, গৃহবন্দী হয়ে মৃত্যু ইত্যাদি অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে। তার পরেও মানুষ জ্ঞান অর্জনের পথে এগিয়ে গিয়েছে। অর্জিত জ্ঞান সবার মাঝে ছড়িয়েও দিয়েছে। হাজার বছরের একচ্ছত্র রাজত্বকে এক তুড়িতে উড়িয়ে দেয়ার ব্যাবস্থা করে দিল নবলব্ধ জ্ঞান। ঈশ্বর হন্তদন্ত হয়ে তার লাঠিয়াল বাহিনীকে আদেশ দেন "এই ব্যাটারা! যা, দখল কর"! লাঠিয়াল বাহিনী গিয়ে জ্ঞান প্রাকৃত জনে ছড়িয়ে যাবার আগেই দখল করে নিল। কি সেই জ্ঞান? সৌরজগৎ, মহাকাশ, নক্ষত্র ইত্যাদি। ঈশ্বর সেই জ্ঞানের আলোকে তার বিধান আপডেট করলেন। আকাস বাতাস ও মহাকাশের আলোকে তার অবস্থান ঢেলে সাজালেন। তার পর সেটা ছড়িয়ে দিলেন সবার মাঝে, তখন সবাই ভাবলো "দেখেছো ঈশ্বরের কতো ক্ষমতা। তিনি সেই সাত আকাশের ওপরে বসে কতো কিছু দেখেন!" তার পর কতো দিন কেটে গেল, কতো কিছু হলো, কতো জ্ঞান যোগ হলো মানুষের জ্ঞান ভান্ডানে। দখল করতে করতে এখন ঈশ্বরের লাঠিয়াল বাহিনীও ক্লান্ত। ছোট খাট কিছু হলে সেটা ছেড়ে দেয় সাব কনট্রাক্টে। সেই সাব কন্ট্রাক্টরেরা তখন বিজ্ঞানের ছোট খাট আবিষ্কার দখল করে দেয়। আর বড় কোন জ্ঞান আবিষ্কার হলেই কেবল এখন ঈশ্বরের এলিট ফোর্স আসে সেটা দখল করতে।

এলাকার মোড়লদের মতো, ছোট খাট খাল-বিলে চর জাগলে তেমন গা করেন না, কিন্তু পদ্মার চর দখল করতে যায় তাদের খাস লাঠিয়াল বাহিনী। এই যেমন এখন ঈশ্বর দখলের চেষ্টা করছেন অচিন্তনীয় মহাবিশ্বের এখনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত রহস্যসমূহ। সৌরজগতের তুলনায় এটা একটু বেশীই বড়। তাই পুরনো বিধানে চলছে না। মানুষ বেমক্কা প্রশ্ন করে তাকে বপদে ফেলে দিচ্ছে। তবে ঈশ্বর হাল ছাড়ছেন না, পদ্মার চর বলে কথা, সেটা তো দখল করতেই হবে!

হীরকরাজ পাঠশালা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কী বোকা। পাঠশালা বন্ধের রাস্তা এখন বন্ধ, ঈশ্বর তাই পাঠশালা দখল করে নিয়েছেন! কী চালাক!

 ব্লগার: শহীদুজ্জামান সরকার



মন্তব্যসমূহ

  1. শহীদুজ্জামান সরকার। মনে যা আসতেছে তাই নিয়ে ব্লগ লিখে দিচ্ছো???


    (((অক্সিজেন ছাড়া প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব না। ঠিক তেমনই উপাসনা ছাড়া ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই।)))

    তোমার মতন যদি পৃথিবীর সবাই আল্লাহর ইবাদত না করে তবে আল্লাহর কোনো কিছুই হবে না। কিন্তু তুমি এক মিনিট অক্সিজেন না নিলে তোমার অস্তিত্ব থাকবে কিনা সেটার চিন্তা করো?

    মালাকুল মাউত যখন রুহ কবজ করার জন্যে সামনে এসে দাঁড়াবে তখন অনেক বেশিই আফসোস করবো হায়রে জীবনে শুধু ভুল কাজগুলোই করলাম! সময় থাকতে সরল ও সঠিক পথে আসো।




    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মুক্তচিন্তার সাথে হোক আপনার পথ চলা।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

জাতীয়তাবাদ আরেকটি ধর্ম বই

বাংলাদেশীরা ধর্মভীরু। ইসলাম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ও জাতীয়তাবাদ নামক ধর্মগুলোর প্রতি বাঙ্গালীর দুর্বলতা নতুন কিছু নয়। আমরা যারা মুক্ত-চেতনাকে প্রয়োজনীয় মনে করি, যুক্তিকে ধর্মের ওপরে স্থান দেই তাদের অনেকেই ধর্মের মতই সামনে আসা অন্যান্য প্রতিটি ধারনা ও প্রস্তাবনাকেই যুক্তি দিয়ে বুঝতে চাই, খতিয়ে দেখতে চাই। বা দদূএকটি রূপ আধ্যাত্মিকতা ও ধর্ম হিসাবে মানুষের দলবদ্ধ সমাজব্যবস্থার দ্বিতীয় বড় চালক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। প্রস্তরযুগে আরো একটি ঘটনা ঘটতে শুরু করেছিল। মানুষেরা নিজেদের গ্রাম বা নগরকে কেন্দ্র করে একটি সামষ্টিক পরিচিতি অনুভব করে শুরু করেছিল। বোধ করি তখন থেকেই মানুষের দলবদ্ধতার তৃতীয় চালক জাতীয়তাবাদের প্রাথমিক যাত্রা শুরু। বর্তমানে সারা দুনিয়ায় জাতীয়তাবাদ নানান চেহারায় দলবদ্ধতার সবচাইতে শক্তিশালী চালক হিসাবে বিদ্যমান। একটি নৃগোষ্ঠী যখন পুঁজিবাদী হতে শুরু করে, যখন সে একটি কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্র গঠন করে তখনই সে একটি জাতিতে পরিণত হয়। ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ আমাদের দেশের রাজনীতিতে কাছাকাছি আছে ইতিহাসের শুরু থেকে। মহাভারত থেকে আজকের খালেদা-হাসিনার রাজনীতিতে ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ একে অন্যের হাত...

গাজওয়াতুল হিন্দ

গাজওয়াতুল হিন্দকে বর্তমান বাংলাদেশ ভারত ও নেপাল শ্রীলংকার জিহাদীরা তাদের মনে আটকে রেখেছে। এই বিষয়ে নানা মতাভেদ থাকলেও সকল মুসলিম জিহাদীরা মনে করে বা আ শা করে যে ইসলাম সারা পৃথীবিতে এই জিহাদের মাধ্যামে প্রতিষ্টা হবে। তারা এটাকে মর্যাদার্পূণ জিহাদ বলে মনে করে। ইসলামের ভিত্তির অন্যতম হলো জিহাদ। ইসলাম প্রতিষ্ঠাকালীন প্রচুর যুদ্ধ করা এবং হত্যার পরেই মানুষ ভয়ে ইসলামকে গ্রহন করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ভায়রাস বলা হয় ইসলামকে। এই ভায়রাস আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে গাজওয়াতুল হিন্দকে কেন্দ্র করে। বর্তমানে জিহাদীরা তাদের দলে লোক বেসি করার জন্য অনলাইনে সহ নানা জাগাতে ঠিক এই ভাবে মুসলিমদের উপর প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে "গাজওয়াতুল হিন্দ বা ভারতবর্ষের যুদ্ধ সম্পর্কে কি আপনি অবগত? আপনি কি কাফের মুশরিকদের সাথে লড়াই করতে প্রস্তুত?" ইসলামীষ্ট  জিহাদীরা ঠিক এভাবে চাই যে সারা পৃথিবীতে সবচে’ বড় যে ধর্মযুদ্ধ হবে সেটা হবে হিন্দুস্তান তথা ভারতের হিন্দুদের সাথে মুসলমানদের যা সমস্থ জ্ঞানি ইসলামি স্কলার এবং আলেম উলামা জানে। মুসলমানদের জন্য এটা খুব বড়  জিহাদ এবং এই জিহাদের গুরুত্ব অপরিসীম। এই...

বাঙালি এবং লেখকের জীবন

লেখকের বেঁচে থাকার প্রথম শর্ত তার পরিবারের স্বীকৃতি।এখানে স্বীকৃতির অর্থ হচ্ছে-লেখালেখি যে একটি কাজ,অন্য মতোই একটি কাজের, এবং সেই কাজের জন্য মনোযোগ,সময় এবং শ্রম বিনিয়োগ করতে হয়-এই বোধটা তৈরী হওয়া।লেখালেখিকে মহাগুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে নাই বা ধরা হলো। কিন্তু এটি যে একটি কাজ,এই স্বীকৃতিটা পরিবার থেকে আসা খুব প্রয়োজন। আমাদের দেশের বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতি বান লেখক শেষ পর্যন্ত যে লেখক হয়ে উঠতে পারে না,লেখক জীবন যাপন করতে পারেন না,লেখালেখির জগত থেকে তাদের যে অকাল বিদায় নিতে হয়,তার সবচেয়ে বড় কারণ এটাই।লেখালেখিকে পারিবারিক ভাবে স্বীকৃতি না দেওয়া।দেশের অন্য সব মানুষদের মতোই বেশির ভাগ পরিবারে লেখালেখি একটি নেহাৎ ই শখের জিনিস।তারুণ্য বা অংকুরোদ্গমী যৌবনে যৌনতার চুলকানিরও পেয়ে বসে আমাদের দেশের মানুষদের।তখন তাদের লেখাকে বাবাহা দেয় বাড়ির ভাবীরা,কাকা-জ্যাঠারা,সহপাঠীরা,বা তার কোন প্রেমিক-প্রেমিকাও।কখনো কখনো এমনকি বাবা মাও।তারা সকলেই অবচেতনে,এবং নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানে যে,এই চুলকানি বেশিদিন থাকবে না।কিন্তু যার ক্ষেত্রে থেকে যায়,অর্থাৎ যে বুঝে যায় যে লেখক হওয়াটাই তার ভবিতব্য,সমস্যাটা তার ক্ষ...