এই ব্লগটি সন্ধান করুন

স্বাধীনতা

আমার কাছে স্বাধীনতা ও মুক্তির অন্যতম শর্ত হলো মত প্রকাশের স্বাধীনতা , নিজের ভালো লাগা অনুযায়ী সাহিত্য , সংস্কৃতি , শিল্পের চর্চা করা ।

সুতরাং শিল্পী , সাহিত্যিক , সাংস্কৃতিক কর্মী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব , বুদ্ধিজীবী ইত্যাদিদের বন্দি করে , অত্যাচার করার মাধ্যমে তাঁদের কাজের ক্ষেত্র খর্ব করে থাকে যেই রাষ্ট্র , দেশ ও সমাজ - সেই রাষ্ট্র , দেশ ও সমাজ মোটেই স্বাধীন নয় ।

আসলে একজন লেখকের যা লিখতে ইচ্ছা করবে বা একজন শিল্পীর যেই শিল্পকর্ম করতে ইচ্ছা করবে তিনি সেইটাই লিখবেন বা করবেন , সেই স্বাধীনতা লেখক-শিল্পীর থাকতেই হবে যদি সভ্যতার বিকাশ চান , যদি মানবতাকে এগিয়ে নিতে চান , যদি জীবনটাকে বৈচিত্র্যময় ও আনন্দময় করতে চান ।

কিন্তু এইটা নিয়া পাঠক দর্শক শ্রোতারা কিছু বলে লেখক-শিল্পীকে বিব্রত করে কোনো সীমাবদ্ধতা তৈরী করার অধিকার নাই । পাঠকের ভালো লাগলে পড়বে , ভালো না লাগলে এড়িয়ে যাবে কিন্তু লেখককে না লেখার পরামর্শ দেয়া বোকামী , নির্বুদ্ধিতা এবং অমানবিকতা ।

- এই ব্যাপারটা আমি যখনই বুঝতে পেরেছি তখন আত্ম-অনুশোচনায় ভুগেছি , এবং তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেইসব লেখক-শিল্পীর কাছে ক্ষমা চাইবো - যাদের একসময় আমি প্রশ্ন করে বিব্রত করতাম তাদের লেখা কিংবা শিল্পকর্ম ভালো লাগত না বা বুঝতে পারতাম না বলে ।

আসলে যখন আমার মানবাধিকার সম্পর্কে পড়াশোনা কম ছিলো এবং মানবাধিকারে শ্রদ্ধা অতটা ছিলো না । তখন সেই কিশোর বয়সে - নিজের নিজের মনের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে বা করলে খুব রাগ লাগতো । তখন তাকে আগ বাড়িয়ে পরামর্শ দিতে যেতাম ওই কাজ যেনো না করে ।

তখন ভাবতাম ওই কাজটা থামিয়ে দেয়া বা কাজটা থেকে তার স্রষ্টাকে বিরত রাখা আমার নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব !! হাহাহাহা ! আসলে ব্যাপারটা ছিলো তখন আমার মানসিক সীমাবদ্ধতা , দৈন্যতা , অশিক্ষা ও কিছুটা বর্বরতাও বটে । কিন্তু মানবাধিকার সম্পর্কে যখন স্পষ্ট ধারনা হলো তখন খুবই সত্যিই লজ্জিত হলাম ।

কারণ , যখন সৃজনশীলতার চর্চা করে কিছু লেখার চেষ্টা করেছি তখন এবং তা প্রকাশ করার পর অনেকের কাছ থেকে গালাগালি , অপমান ভোগ করেছি । তখন নিজের পাওয়া কষ্ট থেকেই বা নিজেকে দিয়েই অনুভব করেছি একজন লেখক বা শিল্পীর স্বাধীনতা কতটা দরকার । আজ এই অবকাশে সেইসব লেখক-শিল্পীদের কাছে আন্তরিক ভাবে দুঃখিত প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি ।

আরেকটা ব্যাপার বলি - কোনো লোক যদি বাক-স্বাধীনতার সুযোগ নিয়া যা ইচ্ছা তাই মিথ্যাচার করে সেই ক্ষেত্রে আইনের আশ্রয়ে মামলা না করে তাদের কাছে প্রমাণ চাইতে হবে এবং তারা যে মিথ্যা কথা বলছে সেইটাও লিখে সবাইকে জানাইতে হইবে ।

কিন্তু যারা ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক সরকার তারা এইটা করছে না । বরং তারা তো উল্টা আইন করেছে জনগনের মুখ বন্ধ করে নিজের দুর্নীতি , স্বৈরাচারীতা , শোষণ , বঞ্চনা , অন্যায় , অত্যাচার , অবিচার ইত্যাদি নেতিবাচক বজায় রেখে ক্ষমতা ধরে রাখতে ।

সুতরাং সকল সচেতন জনগন প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নামুন , একে অন্যের সাথে আলোচনা করুন , নিজেরা একত্রিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিন কি করলে এই বন্দিদশা হতে দেশ ও সমাজকে শৃঙ্খল মুক্ত করা যায় এবং ধর্মনিরপক্ষেতা , গনতন্ত্র , সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তা - সংবিধানের এই চার নীতি অনুযায়ী কিভাবে দেশ পরিচালনা করা যায় ।

মনে রাখবেন - একটি সচেতন স্বশিক্ষিত জনগনের একত্রিত সংগঠিত প্রতিবাদই পারে দেশ থেকে সকল অন্যায় অত্যাচার বঞ্চনা শাসন শোষণ ইত্যাদি নেতিবাচকতা দূর করতে । আপনারা আর কতো ঘুমিয়ে থেকে পঁচে মরবেন !! ??

শিল্পী , সাহিত্যিক , সাংস্কৃতিক কর্মী ও ব্যক্তিত্ব , বুদ্ধিজীবী ইত্যাদিদের বন্দি করে একটি জাতি কখোনো উন্নতির দিকে ধাবিত হইতে পারেনা , কিছুতেই না । দেশের জনগন , আপনারা এবার আপন আপন শক্তিতে জেগে উঠুন । প্লিজ প্লিজ । বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় - সময়োপযোগী আহ্বান হইলো -

"ওরে সবুজ , ওরে অবুঝ , ওরে নবীন , ওরে কাঁচা ,
আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা ।"

নোটঃ পাকিস্তানের জুনাইদ হাফিজ এবং বাংলাদেশের লোক সঙ্গীতের বাউল শিল্পী রিতা দেওয়ান ও শরিয়ত বয়াতির মুক্তি চাই । কাজল দেওয়ানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা চলবে না ।


'স্বাধীনতা'
-খান ওয়াহিদুজ্জামান
(01.03.2020)


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

6 মন্তব্যসমূহ

মুক্তচিন্তার সাথে হোক আপনার পথ চলা।