সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শিল্পী

একজন মানুষ শিল্পী হয়ে ওঠে কখোন ? এবং শিল্পের চর্চা করে কেনো ? - নিজেকে জোর করে শিল্পী ভাবার আগেই সেই প্রশ্নের উত্তর আমাদের খুঁজতে হবে ।

আমার মতে - (সংক্ষেপে ও সাধারণ ভাষায় লিখছি) - একজন মানুষ যখন - মানুষ ও প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা অনুভব করতে শুরু করে , সততাকে অনুভব করে ও সততার চর্চা করতে শুরু করে এবং পৃথিবীর সবকিছু সততা সহ বিজ্ঞানের সুত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারে বা ব্যাখ্যা করতে সচেষ্ট থাকে ।

এবং সেই মানবিক মানুষ যখন দেশ ও পৃথিবীতে একটি সুষ্ঠ সমাজ ব্যাবস্থা চায় - তখন সে প্রকৃত মানুষ হয় এবং এই মানুষ যখন - অন্য মানুষ বা সমাজ ও পরিবেশ প্রকৃতির জন্য ইতিবাচক কিছু একটা করতে নিজের ভেতর দায়ীত্ববোধ উপলব্ধি করে - তখন সে শিল্পের যে কোনো একটা বা একের অধিক মাধ্যম বেছে নেয় - তার সৃজনশীল কাজ করার উদ্দেশ্যে ও আবেগ প্রকাশের জন্য - তাকেই তো আমরা শিল্পী বলতে পারি । তাই তো ?

সুতরাং একজন লেখক বা শিল্পী তো মানুষ , সমাজ ও পরিবেশ প্রকৃতির কল্যান বাদ দিয়ে - অবশ্যই জনপ্রিয় হতে বাজারে বিক্রি হওয়ার জন্য তার শিল্পকর্ম তৈরী করবেনা !! সে তার কাজটা যেই সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে করতে চেয়েছে - সেই উদ্দেশ্যটাকেই তার কাজে সততাসহ নিখুঁতভাবে ফুঁটিয়ে তুলবে । তাইনা ? এইটাই তো শিল্পীর সততা ও দায়িত্ববোধ । নাকি ?

এখানে শিল্পী তার শিল্পকর্ম দিয়ে ব্যবসা করা বা তার শিল্পকর্মটিকে বাজারে উঠানোর ধান্দায় নিশ্চয়ই থাকবেনা । হ্যাঁ , তবে কথা আছে - মানুষ ও সমাজের উন্নয়নের উদ্দেশ্য তৈরী করা সৃজনশীল শিল্পকর্মটি - যদি অন্য মানুষের কাছে ভালো লেগে যায় আর পাঠক বা দর্শকরা যদি শিল্পীকে সম্মানী দিতে চায় তবে সেই ভালোবাসার উপহার শিল্পী নিশ্চয়ই গ্রহন করতেই পারে । কি বলেন ?

আবার কোনো প্রকাশন বা কোনো সংস্থা যদি শিল্পীর অনুমতি সাপেক্ষে একটা আইনগত চুক্তির মাধ্যমে ওই শিল্পকর্মটির বহুসংখ্যক কপি তৈরী করে ও বাজারে বিক্রি করে - উপার্জিত অর্থ দিয়ে শিল্পীকে সম্মানী , নিজেদের পারিশ্রমিক বাবদ খরচ করার পর বাকি টাকাটা একটি মানবিক কাজে ব্যয় করতে চায় - তবে তা করতেই পারে - এতে আমার মোটেই দ্বিমত নাই ।

তো , একজন শিল্পীর কাছে - এই মার্কেটিং করার ইচ্ছার ব্যাপারটা আসবে পরে । আগে তো শিল্পকর্মটি তৈরী করতে হবে , তাইনা ? এখন কেউ যদি টাকা কামানোর ধান্দা নিয়ে কোনো শিল্পকর্ম তৈরী করতে চায় - তবে কি সেখানে সৎ উদ্দেশ্য শিল্পের চর্চা করা হয় ?? নাকি হালকিবালকি দিয়ে জগাখিচুড়ি বানিয়ে টাকা কামানোর ধান্দা করা হয় । কোনটা ?

আর সেই টাকার কামানোর ধান্দাজনিত মানসিক অসুস্থতা নিয়ে যখন কোনো কাজ শুরু করা হয় - সেইখানে থাকে - আমজনতার মনোরঞ্জনের কারসাজি , থাকে এমন কিছু সংযোজন করা যার সাথে শিল্পের দূরত্ব প্রকটভাবে লক্ষণীয় - যা শিল্পকর্ম তৈরির মূল উদ্দেশ্যকে বলে - "দূরে গিয়া মর" কিংবা "এক ধারে থাক!"

তো , এই জগাখিচুড়িমার্কা জিনিষ মানবতার ও মানবাধিকারের চর্চার কি কাজে লাগে বা লাগবে ?? এইগুলো আদৌ কি সভ্যতা বিকাশের কোনো কাজে লাগে ?? বরং এইসব ভন্ডামীমূলক কুকর্ম - মানুষ হবার পথে যারা নিরন্তর সংগ্রাম করার শপথ নিয়ে কাজ করা শুরু করেছে ও করে যাচ্ছে - তাদেরকে প্রতি পদেপদে বিভ্রান্ত করে যাবে এবং তা যাচ্ছেও । ভুল বল্লাম কি ! ?

বাজারে "বেস্ট সেলার" বলে একটা ব্যাপার আছে । আচ্ছা , এই "বেস্ট সেলার" - শব্দ দুইটাই কেনো একটি সৃজনশীল কাজের সাথে যুক্ত করতে হবে ?? আমি তো সেইটাই বুঝতে পারছিনা !! এর সাথে শিল্পচেতনা , চর্চা ও শিল্পের কি সম্পর্ক !! ?? শিল্পচর্চাকে অর্থ-সম্পদের কাছে পরাজিত হতেই হবে কি ! ?

আমার মতে "বেস্ট সেলার" শব্দটা যুক্ত করা হচ্ছে - নির্বোধ লোকদের কাছে বই বা যেকোনো সৃজনশীল শৈল্পিককাজ বিক্রি করে টাকা কামানোর ধান্দায় । যেই লোকেরা - বই সহ অন্যান্য সৃজনশীল শৈল্পিককর্ম কেনে/কিনে শুধু ঘরে সাজিয়ে রাখার জন্য , কিন্তু উপভোগ করা বা জানার জন্য না , তাদের পকেট থেকে টাকা খসানোর জন্যই কি "বেস্ট সেলার" শব্দদ্বয় ব্যবহার করা হচ্ছেনা ?

যারা প্রকৃত বোদ্ধা ও বিদগ্ধ পাঠক অর্থাৎ যারা জানা বোঝা শেখার জন্য পড়ে তারা "বেস্ট সেলার" শব্দদুইটাকে পাত্তাই দেয়না । ওই দুইটা শব্দ থাকলেও সই , নাথাকলেও সই । বিদগ্ধ পাঠকরা বইটা সম্পর্কে সম্যক ধারনা সংগ্রহ করেই কিনে থাকে , প্রকাশনীর পাবলিসিটির ধান্দাবাজীতে তারা ভুলেনা/ভোলেনা ।

লেখক একটা বই লিখেছে, প্রকাশক প্রকাশ করেছে - পাঠকের পড়তে ইচ্ছা করলে কিনে পড়বে , ভালো লাগলে প্রশংসা করবে - ব্যস । তা - নিজের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করার অনুষ্ঠান করে , বিভিন্ন মাধ্যমে বইয়ের প্রচার করে এতো আদিখ্যেতা ও আত্মপ্রচার করা কেনো ?? লেখকের আত্মবিশ্বাসে টান পড়েছে ?? নাকি লেখা বা শিল্পের চর্চা করা একটা ব্যবসা ?? যত্তসব , ইতরামী আর ধান্দাবাজী ।

শিল্পের নামে টাকা কামানোর ধান্দায় তৈরী জিনিষগুলি হলো সভ্যতার গু , যার সাথে ধর্ম ও ধর্মান্ধদের কুকর্মের খুব বেশী একটি পার্থক্য নাই । আছে কি ?? দুঃখিত ! ছোট মুখে অনেক বড় কিছু লিখে/লেখে ফেললাম । মাইন্ড খাবেননা যেনো !!

আমি তো আর সবজান্তা নই , তাই আমার ভুল থাকতেই পারে । তাই আপনার কাছে যদি আমার কোনো ভুল চোখে পড়ে তবে অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে আমার ভুলটি ধরিয়ে দিবেন । কিন্তু সেইসাথে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন আপনার মুখের প্রতিবাদের ভাষাটা যেনো ভদ্রজনিত সভ্য ভাষা হয় ।

ধন্যবাদ সবাইকে - আমার মতো একজনের ছোটমুখের মানুষের বড়ো বড়ো কথাগুলো শেষ পর্যন্ত পড়ে সহ্য করে যাওয়ার জন্য । আর যদি আমার কথাগুলো অসহ্যই লাগে তবে গালাগালি না করে পাল্টা যুক্তি দিন - আমার ভুলটা কোথায় ।

অফুরন্ত ভালোবাসা রইলো আপনাতের প্রতি - যারা শুধু শিল্পের জন্যই শিল্পচর্রা না করে মানবতা ও মানবাধিকার জন্য শিল্পের চর্চা করে যাচ্ছেন -

'শিল্পী'
-খান ওয়াহিদুজ্জামান
(13.02.2020)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

জাতীয়তাবাদ আরেকটি ধর্ম বই

বাংলাদেশীরা ধর্মভীরু। ইসলাম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ও জাতীয়তাবাদ নামক ধর্মগুলোর প্রতি বাঙ্গালীর দুর্বলতা নতুন কিছু নয়। আমরা যারা মুক্ত-চেতনাকে প্রয়োজনীয় মনে করি, যুক্তিকে ধর্মের ওপরে স্থান দেই তাদের অনেকেই ধর্মের মতই সামনে আসা অন্যান্য প্রতিটি ধারনা ও প্রস্তাবনাকেই যুক্তি দিয়ে বুঝতে চাই, খতিয়ে দেখতে চাই। বা দদূএকটি রূপ আধ্যাত্মিকতা ও ধর্ম হিসাবে মানুষের দলবদ্ধ সমাজব্যবস্থার দ্বিতীয় বড় চালক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। প্রস্তরযুগে আরো একটি ঘটনা ঘটতে শুরু করেছিল। মানুষেরা নিজেদের গ্রাম বা নগরকে কেন্দ্র করে একটি সামষ্টিক পরিচিতি অনুভব করে শুরু করেছিল। বোধ করি তখন থেকেই মানুষের দলবদ্ধতার তৃতীয় চালক জাতীয়তাবাদের প্রাথমিক যাত্রা শুরু। বর্তমানে সারা দুনিয়ায় জাতীয়তাবাদ নানান চেহারায় দলবদ্ধতার সবচাইতে শক্তিশালী চালক হিসাবে বিদ্যমান। একটি নৃগোষ্ঠী যখন পুঁজিবাদী হতে শুরু করে, যখন সে একটি কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্র গঠন করে তখনই সে একটি জাতিতে পরিণত হয়। ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ আমাদের দেশের রাজনীতিতে কাছাকাছি আছে ইতিহাসের শুরু থেকে। মহাভারত থেকে আজকের খালেদা-হাসিনার রাজনীতিতে ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ একে অন্যের হাত...

গাজওয়াতুল হিন্দ

গাজওয়াতুল হিন্দকে বর্তমান বাংলাদেশ ভারত ও নেপাল শ্রীলংকার জিহাদীরা তাদের মনে আটকে রেখেছে। এই বিষয়ে নানা মতাভেদ থাকলেও সকল মুসলিম জিহাদীরা মনে করে বা আ শা করে যে ইসলাম সারা পৃথীবিতে এই জিহাদের মাধ্যামে প্রতিষ্টা হবে। তারা এটাকে মর্যাদার্পূণ জিহাদ বলে মনে করে। ইসলামের ভিত্তির অন্যতম হলো জিহাদ। ইসলাম প্রতিষ্ঠাকালীন প্রচুর যুদ্ধ করা এবং হত্যার পরেই মানুষ ভয়ে ইসলামকে গ্রহন করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ভায়রাস বলা হয় ইসলামকে। এই ভায়রাস আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে গাজওয়াতুল হিন্দকে কেন্দ্র করে। বর্তমানে জিহাদীরা তাদের দলে লোক বেসি করার জন্য অনলাইনে সহ নানা জাগাতে ঠিক এই ভাবে মুসলিমদের উপর প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে "গাজওয়াতুল হিন্দ বা ভারতবর্ষের যুদ্ধ সম্পর্কে কি আপনি অবগত? আপনি কি কাফের মুশরিকদের সাথে লড়াই করতে প্রস্তুত?" ইসলামীষ্ট  জিহাদীরা ঠিক এভাবে চাই যে সারা পৃথিবীতে সবচে’ বড় যে ধর্মযুদ্ধ হবে সেটা হবে হিন্দুস্তান তথা ভারতের হিন্দুদের সাথে মুসলমানদের যা সমস্থ জ্ঞানি ইসলামি স্কলার এবং আলেম উলামা জানে। মুসলমানদের জন্য এটা খুব বড়  জিহাদ এবং এই জিহাদের গুরুত্ব অপরিসীম। এই...

বাঙালি এবং লেখকের জীবন

লেখকের বেঁচে থাকার প্রথম শর্ত তার পরিবারের স্বীকৃতি।এখানে স্বীকৃতির অর্থ হচ্ছে-লেখালেখি যে একটি কাজ,অন্য মতোই একটি কাজের, এবং সেই কাজের জন্য মনোযোগ,সময় এবং শ্রম বিনিয়োগ করতে হয়-এই বোধটা তৈরী হওয়া।লেখালেখিকে মহাগুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে নাই বা ধরা হলো। কিন্তু এটি যে একটি কাজ,এই স্বীকৃতিটা পরিবার থেকে আসা খুব প্রয়োজন। আমাদের দেশের বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতি বান লেখক শেষ পর্যন্ত যে লেখক হয়ে উঠতে পারে না,লেখক জীবন যাপন করতে পারেন না,লেখালেখির জগত থেকে তাদের যে অকাল বিদায় নিতে হয়,তার সবচেয়ে বড় কারণ এটাই।লেখালেখিকে পারিবারিক ভাবে স্বীকৃতি না দেওয়া।দেশের অন্য সব মানুষদের মতোই বেশির ভাগ পরিবারে লেখালেখি একটি নেহাৎ ই শখের জিনিস।তারুণ্য বা অংকুরোদ্গমী যৌবনে যৌনতার চুলকানিরও পেয়ে বসে আমাদের দেশের মানুষদের।তখন তাদের লেখাকে বাবাহা দেয় বাড়ির ভাবীরা,কাকা-জ্যাঠারা,সহপাঠীরা,বা তার কোন প্রেমিক-প্রেমিকাও।কখনো কখনো এমনকি বাবা মাও।তারা সকলেই অবচেতনে,এবং নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানে যে,এই চুলকানি বেশিদিন থাকবে না।কিন্তু যার ক্ষেত্রে থেকে যায়,অর্থাৎ যে বুঝে যায় যে লেখক হওয়াটাই তার ভবিতব্য,সমস্যাটা তার ক্ষ...