সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নারীবাদ বা নারীমুক্তির সংগ্রাম


নারী মাত্রেই নারীবাদী নন। নারীবাদী মাত্রেই নারী নন। পিতৃতান্ত্রিক সমাজবাস্তবতায় নারীবাদ নারীর অন্তিম অর্জন না প্রাথমিক শর্ত সেই নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে, কিন্তু এটা খুব সত্যি, নারীবাদ পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে নারীর অন্যতম প্রতিরোধ। কিন্তু বর্তমান ধনতান্ত্রিক পুঁজিবাদী বিশ্বে নারীবাদ কি আদৌ নারীর রক্ষাকবচ হয়ে উঠতে পেরেছে? এই প্রশ্নগুলির সাথে আমরা কতটুকু পরিচিত। আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাপনের সাথে এই প্রশ্নগুলিই বা কতটুকু সংশ্লিষ্ট? আমি বলছি আমাদের সাধারণ জনসাধারণের কথা। আমাদের দৈনন্দিন পারিবারিক জীবনচর্চার সামাজিক পরিসরে নারীবাদের প্রাসঙ্গিকতাই বা কতখানি? এবং নারী নিজে কি ভাবে দেখে থাকে এই বিষয়গুলি? না বিষয়টি এতটাই ব্যাপক ও বৈচিত্রময় যে, এক কথায় এর কোন উত্তর হয় না। কিন্তু আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাপনের পরিসরে, আমাদের সামজিক রীতিনীতির পরতে পরতে উত্তর রয়ে গিয়েছে প্রতিটি প্রশ্নেরই। পিতৃতন্ত্রের স্বরূপ ও ইতিহাস নির্ণয়ের দিকে না গিয়েও একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, কালের নিয়মেই পিতৃতন্ত্রের প্রকরণ ও অনুষঙ্গেও বদল ঘটেছে বিস্তর। আধুনিক প্রযুক্তির বিপ্লব ও ধনতন্ত্রের একচ্ছত্র বিশ্বায়নেই ঘটেছে এই পরিবর্তন। কিন্তু এই পরিবর্তন কতটা পিতৃতন্ত্রের অভ্যন্তরীণ প্রকৃতিগত আর কতটা বাইরের স্বরূপগত সেটি বিতর্কের বিষয় অবশ্যই। তবে একথা বলা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই নারী সুরক্ষার বিষয়ে নতুন নতুন আইন প্রণয়ন দিনে দিনে নারীবাদীদের হাত শক্ত করে পিতৃতন্ত্রের আস্ফালনে কেবলই লাগাম পড়ানোর চেষ্টা করে চলেছে। কাজের কাজ কতটুকু হচ্ছে আর হচ্ছে না সেটি পরের বিষয়। কিন্তু এই যে নারী সুরক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন আইন তৈরী হওয়া, এটি কিন্তু বিশ্বের নারীবাদের প্রসারের সরাসরি অভিঘাত। বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও সমাজ বাস্তবতায় এই অভিঘাতের ধরণ ও পরিমাণও ভিন্ন। এক দেশের সাথে আরেক দেশের এই বিষয়ে যে পার্থক্য থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নারীবাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিকগুলির বাইরেও একটি পরিসর রয়ে যায়। যেখানে অর্থনৈতিক স্বাধিকারও একটি নারীর স্বঅভিভাবকত্ব সুনিশ্চিত করতে পারে না। এই না পারার কারণগুলিই পর্যালোচনা করা সবচেয়ে বেশি জরুরী। সাধারণ ভাবে আর্থিক স্বনির্ভরতাই যেখানে নারীমুক্তির চাবিকাঠি, সেখানে বাস্তব পরিস্থিতি যে দেশে দেশে সমাজে সমাজে ভিন্ন এবং এক একটি ক্ষেত্রে সম্পূর্ণই বিপ্রতীপ অবস্থানে অবস্থানরত সেকথা কম বেশি আমরা জানি সকলেই। কিন্তু কেন হয় এরকমটি? অনুসন্ধান করে দেখা দরকার সেটাও।


উন্নত বিশ্বের সমাজ ও অনুন্নত বিশ্বের সমাজ বাস্তবতার ভিন্নতার কারণে দুই সমাজের নারীবাদের প্রকৃতি ও নারীর প্রকৃত অবস্থান ভিন্নরূপ হতে বাধ্য। আবার বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি ও জাতপাতের বিভেদ এবং অর্থনৈতিক শ্রেণীবিন্যাস এই পার্থক্যগুলির পিছনেও কাজ করতে থাকে। সামাজিক পরিকাঠামোয় একটি মেয়ে কিভাবে বেড়ে উঠবে, কিভাবে তার চিন্তা-চেতনার প্রকাশ ঘটতে থাকবে, এবং বংশগত ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার কিভাবে তার সংস্কার ও বিশ্বাসকে রূপ দিতে থাকবে; এই সবগুলি বিষয়ই হিসাবের মধ্যে ধরতে হবে। আর এই বিষয়গুলি দেশ, সমাজ ও সম্প্রদায়গত ভাবে এতই বৈচিত্রপূর্ণ যে নারীবাদের প্রকৃতি ও নারীর প্রকৃত অবস্থানও এত বিভিন্ন রকমের। কিন্তু মুশকিল ঘটে তখনই, যখন আমারা এই জটিল বিষয়টিকে একরৈখিক মাত্রায় সরল করে নিয়ে দেখতে ও দেখাতে যাই। তাই শুধুমাত্র আর্থিক স্বনির্ভরতাই নারীর স্বঅভিভাবকত্ব নিশ্চিত করতে পারে না। পাশ্চাত্য সমাজে নারীর অবস্থান ও প্রাচ্যের নারীর অবস্থানজনিত কারণে এই দুই সমাজের নারীবাদের প্রকরণও ভিন্ন। কিন্তু যাঁরা সেটি বিস্মৃত হয়ে আন্তর্জাতিক নারীবাদের প্রবক্তা হয়ে উঠতে চান, তাঁরা ভুল করেন প্রথমেই। ইউরোপ-আমেরিকার মেয়েদের সাথে আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির মেয়েদের সংস্কার ও বিশ্বাস, চাহিদা ও প্রত্যাশার ভিন্নতা খুবই সুস্পষ্ট। সেই বাস্তব সত্যকে অস্বীকার করা যাবে কি করে? তাই বস্তুত আন্তর্জাতিক নারীবাদ বলে কিছু হয় না। এক একটি দেশে, রাষ্ট্রে, সমাজে ও সম্প্রদায়ে এবং জাতিগত গোষ্ঠীতে নারীর অবস্থান ভিন্ন ভিন্ন। তার জীবনবোধ ও মূল্যবোধও বিভিন্ন। তার সমস্যা ও সম্ভাবনার দিগন্তও বিশিষ্ট রকমভাবেই ভিন্ন। তাই তাদের চেতনায় নারীবাদ কখনোই একরৈখিক হতে পারে না। আমাদের সেই সত্যটি অস্বীকার করলে চলবে না কিছুতেই। এবং এর সাথে যুক্ত করতে হবে যুগলক্ষ্মণকেও। অর্ধ শতাব্দী পূর্বের নারী আর আজকের নারীর ভুবন, সে- যে দেশগত ঐতিহ্য ও সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির উত্তরাধিকারই বহন করুক না কেন; এক নয় কখনোই। তাই নারীবাদও পাল্টাতে থাকে, থাকবে দশক থেকে দশকে।



পিতৃতন্ত্রের মধ্যেই সবচেয়ে মুখ্য যে বিষয়টি সুপ্ত ভাবে লুকিয়ে থাকে, সেটি হল নারীগর্ভের উপর পুরুষের সত্ত্বাধিকার। কম বেশি, দেশ-কাল-সমাজ নিরপেক্ষ ভাবে সবখানেই এটাই প্রতিষ্ঠিত সত্য। এবং মানব সভ্যতার আরও বিশেষ করে বললে বলা যায় এইটিই আধুনিক মানব সভ্যতার মূলস্বরূপ। বয়ঃসন্ধির পরপরই ছেলে-মেয়ে উভয়ই এই বিষয়টি সম্বন্ধে সচেতন হয়ে যায়। সচেতন হয়ে যায় এমন ভাবেই যে বিষয়টি তাদের বিশ্বাস ও সংস্কারের ভিতের মধ্যেই দৃঢ় হয়ে গেঁথে যায়। তাই এই নিয়ে প্রশ্ন করার সচেতনতা জন্মায়ই না সাধারণত। জল, হাওয়া, মাটি, আকাশের মতোই স্বতঃসিদ্ধ সত্য হয়ে যায় তাদের কিশলয় ধারণায়। আর সেই বিশ্বাসই তাদের আজীবন সংস্কারে পরিণত হয়ে ওঠে যৌবন পর্বেই। নারীবাদ এই বিশ্বাস ও সংস্কারকেই প্রশ্ন করে। যে বা যারা সেই প্রশ্নের শরিক হয়ে উঠতে থাকে, সমাজ সংসার তাদেরকেই নারীবাদী বলে দেগে দিতে চায়। দেগে দেয়ও। বিশেষত আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে পারিবারিক সংস্কৃতি ও সমাজিক রীতিনীতিগুলি এমনভাবেই ছেলেমেয়েদের উপর খবরদারি করতে থাকে যে, তাদের স্বাধীন চিন্তার ও অনুভববের পরিসরটিই ক্রমে সংকুচিত ও অবরুদ্ধ হয়ে পড়তে থাকে। তাই তারা প্রশ্ন করতে ভুলে যায়। একটি মেয়ে বা ছেলে এই রকম অবরুদ্ধ পরিসরে বেড়ে উঠতে থাকে বলেই পিতৃতন্ত্রের ভিতটা এতটাই মজবুত থাকে। আর সেই মজবুত ভিতটাই মেয়েদরকে গুরুত্বপূর্ণ জীবনপ্রশ্নগুলি থেকে দূরবর্তী করে রাখে। তাকে নির্বাক নীরব করে গড়ে তোলে। মেয়েরা শিখে যায়, না- প্রশ্ন করতে নাই। চিন্তা করতে নাই। অন্যরকম ভাবে ভাবতে নাই। অন্যরকম হতে নাই। এই নিরব আত্মসমর্পণ, পিতৃতন্ত্রের আধিপত্যের কাছে, এটিই তৃতীয় বিশ্বের মেয়েদের আসল ইতিহাস। এবং বর্তমানও। হ্যাঁ, প্রযুক্তি বিপ্লবের এই একুশ শতকেও। এই যে অন্যরকম হতে নেই, এই যে সংস্কার এইটিই একটি মেয়েকে নীরব করে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। আর তারপরেও যদি কাজ না হয়, তাহলেই সেই মেয়েটিকে দেগে দেওয়া যাবে নষ্ট তসলিমা বলে। এইটিই পিতৃতন্ত্রের রাজনৈতিক ছক। কজন মেয়ের মধ্যে সেই মানসিক শক্তি ও চারিত্রিক দৃঢ়তা আছে, যে এই ছকের বিরুদ্ধে গর্জে উঠবে? বেরিয়ে আসতে চাইবে চেনা এই ছকের ঘোরতর বাস্তবতা থেকে? মেয়েরা সাধারণত এবং খুবই স্বাভাবিক ভাবেই তাই অন্যরকম হতে চায় না। বরং কেবল একটি দরদী পুরুষের স্বপ্ন দেখতে চায়, যে আদরে সোহাগে সুরক্ষিত করে রাখবে তার প্রেয়সীর জীবন। সেটাই তো ভালোবাসার মাপকাঠি। আমাদের সমাজ-সংসার সেই মাপকাঠিটিই প্রতিটি মেয়ের চেতনায় গেঁথে দেয় সফল ভাবে। কেননা তবেই সেই মেয়েটির গর্ভের উপর পিতৃতন্ত্রের সত্ত্বটুকু আরোপ করা যাবে সহজে ও নিশ্চিন্তে।



আর তাই আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের এই দেশগুলিতে আর্থিক স্বনির্ভর নারীও অন্যরকম করে ভাবতে পারে না। অন্যরকম হয়ে উঠতে পারে না। যেখানে সে তার গর্ভের উপর পিতৃতন্ত্রের সত্ত্বাধিকার আরোপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে নিজের মতো করে। বই পড়া নারীবাদী তত্ব মুখস্থ করে নয়, বা নয় সেমিনারে শোনা নারীবাদের আলোচনাকে অন্ধের মতো অনুসরণ করে। সেইখানে নিজেকে দেখার মতো সাহস ও অধ্যাবসায় নিরানব্বই শতাংশ নারীরই থাকে না। উচ্চশিক্ষা কিংবা অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা যতই থাকুক না কেন। আর সেইখানেই কি শিক্ষিত কি অশিক্ষিত, কি আর্থিক স্বনির্ভর , কি স্বামীর অর্থে প্রতিপালিত সব নারীর চেতনাতেই চলতে থাকে পিতৃতন্ত্রের আরোপিত কার্ফিউ। বরং যে মেয়ে যতবেশি শিক্ষিত ও আর্থিক স্বনির্ভর সে তত বেশি তার থেকে শিক্ষিত ও অর্থবান মনের মানুষ কল্পনা করতে থাকে। যার আদরে সোহাগে সুরক্ষার নিশ্চয়তার নিশ্চিত পরিসরে তুলে দিতে পারবে আপন নারীগর্ভের স্বত্বাধিকার সম্পূর্ণ করে। হ্যাঁ, নিরানব্বই শতাংশ নারীই এইখানেই নারী জন্মের মূল সার্থকতা খুঁজে পেয়ে কৃতার্থ হয়ে যায়। ঘটনাচক্রে যাদের জীবনে এই প্রত্যাশা এইরকম মসৃণ ভাবে পরিপূর্ণ হয় না, তারাই বিলাপ করতে থাকে নারী হয়ে জন্মানোর জন্যে। দোষারোপ করতে থাকে আপন ভাগ্যের উপর। তবুও অন্যরকম হয়ে উঠতে পারে না। ভাবতে পারে না অন্যভাবে। অনুধাবন করতে পারে না, গণ্ডগোলটা ঠিক কোথায় ঘটে গিয়েছে। কিভাবে ঘটেছে, বা কেনই বা ঘটলো। এই সমাজ বাস্তবতায় আমাদের দেশীয় পরিস্থিতিতে নারীবাদের চর্চা নেহাৎই ইউরোপ-আমেরিকা থেকে আমদানী করা শৌখিন অবসর বিনোদন মাত্র। কিংবা কখনো সখনো সেটাই খ্যাতির চৌকাঠে পা রাখার কৌশল বা পেশাগত দক্ষতা পরিচর্যার একটি মাধ্যম মাত্র।



না নারীর এই অক্ষমতার কারণ নারী নয়। একেবারে শৈশব থেকেই মেয়েদেরকে গড়ে তোলার সাংসারিক ও সামাজিক প্রকরণই এই ঘটনার জন্যে দায়ী। আমাদের সমাজে আমরা মেয়েদেরকে সর্ববিষয়ে খাটো করে গড়ে তুলি। কে কত কলেজ-বিশ্বাবিদ্যালয়ের ডিগ্রী অর্জন করলো, কিংবা নির্দিষ্ট পেশাগত দক্ষতায় কত পারদর্শী হয়ে উঠলো সেটাই শেষ কথা নয়। যে আত্মপ্রত্যয় ও ব্যক্তি স্বাতন্ত্রের নির্যাসে স্বাধীন ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে আমাদের সমাজে আমাদের সংসারে মেয়েদেরকে সচেতন ভাবেই তার থেকে অনেক দূরবর্তী করে রেখে দেওয়া হয়। স্বাধীন ব্যক্তিত্ব বলতে ইচ্ছে মতো পেশা নির্বাচন কি স্বামীর অর্থে খেয়াল খুশির মতো শপিং করতে পারাই বোঝায় না। স্বাধীন ব্যক্তিত্ব তাই, যা একটি মানুষকে তার দেহ মন সত্তার কোনটিই  কি কোনদিন কোন ভাবে কোথাও কারুর কাছে বন্ধক দিতে প্ররোচিত করে না। এই যে স্বাধীন ব্যক্তিত্ব, দুঃখের বিষয় তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির অনুন্নত সমাজব্যবস্থায় প্রত্যক্ষ করা যায় কদাচিৎই। আর করলেই সমাজ তাকে একঘরে করতেই উঠে পড়ে লাগে। তাই এই দুষ্টচক্রের মধ্যে পড়ে নারীর দশা দশচক্রে ভগবান ভুতের মতো আজো।



পিতৃতন্ত্রের এই ঘেরাটোপে নারীকে খর্ব করে রেখে নারীর গর্ভের উপর পুরুষের একচ্ছত্র অধিকার কায়েম রাখার আবহমান সংস্কৃতির সবচেয়ে বড়ো হাতিয়ারই হলো সাম্প্রদায়িক ধর্ম। কম বেশি সকল ধর্মই এই অপকর্মে যথেষ্ট পরিমাণে কার্যকরি। এবং পারদর্শী। আজকের প্রযুক্তির এই অভুতপূর্ব সাফল্য ও অগ্রগতির যুগেও সাম্প্রদায়িক ধর্ম নারীর উপর পিতৃতন্ত্রের কর্তৃত্ব কায়েম রাখার বিষয়ে প্রবলভাবেই শক্তিশালী। তাই ধর্ম ও পিতৃতন্ত্র এই বিষয়ে একে অপরের পরিপূরক। আর লিঙ্গরাজনীতির শুরুই এই দুইয়ের অশুভ আঁতাত থেকে। তাই ব্যক্তিগত ভাবে যে কোন নারীর পক্ষেই এই অসম লড়াইয়ে জয়ী হওয়া প্রায় অসম্ভব। আর সেই জন্যে তো নারীবাদকে সেই অসম্ভব কাজটিতে মেয়েদেরকে প্রয়োজনীয় শক্তি যোগানোর কাজে স্বচেষ্ট হতে হয়েছে। আরও বেশি করে হতে হবে। আরও বেশি করে হতে হবে কারণ বিষয়টি, আগেই দেখানো হয়েছে আদৌ এক রৈখিক কোন সমস্যা নয়। তাই পথ ও পদ্ধতি সকল সমাজেই সকল সম্প্রদায়েই একরকমও হতে পারে না। সেই কারণেই নারীবাদকেও হয়ে উঠতে হবে আরও বেশি বাস্তববাদী। এখানে আবেগ সর্বস্ব শ্রেয়বাদের ভুমিকা যত কম হয় ততই ভালো। বাস্তব পরিস্থিতির মোকাবিলায় বস্তুনিষ্ঠ পর্যালোচনা কেন্দ্রিক বিবেচনার প্রয়োজন। প্রয়োজন নারীশিক্ষা বিস্তারের মধ্যে দিয়েই কাজ শুরু করা। নারীর অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার নিশ্চয়তা বৃদ্ধির সাথে তার আত্মপ্রত্যয়ের উদ্বোধনে কাজ করে যেতে হবে নারীবাদকে। এক এক অঞ্চলে এক এক ভাবে। আত্মপ্রত্যয়ের উদ্বোধনের পথেই অর্জিত হবে আত্মশক্তির। লিঙ্গরাজনীতির ঘেরাটোপ কেটে নারীমুক্তির জন্যে যার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। একমাত্র তখনই পিতৃতন্ত্রের আস্ফালন ও আধিপত্যের কাছে নিঃশর্ত ও নীরব আত্মসমর্পন না করেও নারী তার নিজস্ব ভুবনে লড়াই করে বেঁচে থাকার সাহসটুকু খুঁজে পাবে। সেইদিনই একজন নারীর কাছে মুক্তির দিন। গর্বিত হওয়ার দিন। পথ দেখানোর দিন বাকিদেরকে।

মন্তব্যসমূহ

  1. পর্যবেক্ষণটা বাস্তবতার নিরিখে ও পরামর্শগুলা সময়োপযোগী । আপাতত এইটুকুই মন্তব্য করলাম - পরে আরো বিস্তারিত আলোচনা করার আগ্রহ রাখি - ধন্যবাদ ।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মুক্তচিন্তার সাথে হোক আপনার পথ চলা।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

জাতীয়তাবাদ আরেকটি ধর্ম বই

বাংলাদেশীরা ধর্মভীরু। ইসলাম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ও জাতীয়তাবাদ নামক ধর্মগুলোর প্রতি বাঙ্গালীর দুর্বলতা নতুন কিছু নয়। আমরা যারা মুক্ত-চেতনাকে প্রয়োজনীয় মনে করি, যুক্তিকে ধর্মের ওপরে স্থান দেই তাদের অনেকেই ধর্মের মতই সামনে আসা অন্যান্য প্রতিটি ধারনা ও প্রস্তাবনাকেই যুক্তি দিয়ে বুঝতে চাই, খতিয়ে দেখতে চাই। বা দদূএকটি রূপ আধ্যাত্মিকতা ও ধর্ম হিসাবে মানুষের দলবদ্ধ সমাজব্যবস্থার দ্বিতীয় বড় চালক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। প্রস্তরযুগে আরো একটি ঘটনা ঘটতে শুরু করেছিল। মানুষেরা নিজেদের গ্রাম বা নগরকে কেন্দ্র করে একটি সামষ্টিক পরিচিতি অনুভব করে শুরু করেছিল। বোধ করি তখন থেকেই মানুষের দলবদ্ধতার তৃতীয় চালক জাতীয়তাবাদের প্রাথমিক যাত্রা শুরু। বর্তমানে সারা দুনিয়ায় জাতীয়তাবাদ নানান চেহারায় দলবদ্ধতার সবচাইতে শক্তিশালী চালক হিসাবে বিদ্যমান। একটি নৃগোষ্ঠী যখন পুঁজিবাদী হতে শুরু করে, যখন সে একটি কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্র গঠন করে তখনই সে একটি জাতিতে পরিণত হয়। ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ আমাদের দেশের রাজনীতিতে কাছাকাছি আছে ইতিহাসের শুরু থেকে। মহাভারত থেকে আজকের খালেদা-হাসিনার রাজনীতিতে ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ একে অন্যের হাত...

গাজওয়াতুল হিন্দ

গাজওয়াতুল হিন্দকে বর্তমান বাংলাদেশ ভারত ও নেপাল শ্রীলংকার জিহাদীরা তাদের মনে আটকে রেখেছে। এই বিষয়ে নানা মতাভেদ থাকলেও সকল মুসলিম জিহাদীরা মনে করে বা আ শা করে যে ইসলাম সারা পৃথীবিতে এই জিহাদের মাধ্যামে প্রতিষ্টা হবে। তারা এটাকে মর্যাদার্পূণ জিহাদ বলে মনে করে। ইসলামের ভিত্তির অন্যতম হলো জিহাদ। ইসলাম প্রতিষ্ঠাকালীন প্রচুর যুদ্ধ করা এবং হত্যার পরেই মানুষ ভয়ে ইসলামকে গ্রহন করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ভায়রাস বলা হয় ইসলামকে। এই ভায়রাস আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে গাজওয়াতুল হিন্দকে কেন্দ্র করে। বর্তমানে জিহাদীরা তাদের দলে লোক বেসি করার জন্য অনলাইনে সহ নানা জাগাতে ঠিক এই ভাবে মুসলিমদের উপর প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে "গাজওয়াতুল হিন্দ বা ভারতবর্ষের যুদ্ধ সম্পর্কে কি আপনি অবগত? আপনি কি কাফের মুশরিকদের সাথে লড়াই করতে প্রস্তুত?" ইসলামীষ্ট  জিহাদীরা ঠিক এভাবে চাই যে সারা পৃথিবীতে সবচে’ বড় যে ধর্মযুদ্ধ হবে সেটা হবে হিন্দুস্তান তথা ভারতের হিন্দুদের সাথে মুসলমানদের যা সমস্থ জ্ঞানি ইসলামি স্কলার এবং আলেম উলামা জানে। মুসলমানদের জন্য এটা খুব বড়  জিহাদ এবং এই জিহাদের গুরুত্ব অপরিসীম। এই...

বাঙালি এবং লেখকের জীবন

লেখকের বেঁচে থাকার প্রথম শর্ত তার পরিবারের স্বীকৃতি।এখানে স্বীকৃতির অর্থ হচ্ছে-লেখালেখি যে একটি কাজ,অন্য মতোই একটি কাজের, এবং সেই কাজের জন্য মনোযোগ,সময় এবং শ্রম বিনিয়োগ করতে হয়-এই বোধটা তৈরী হওয়া।লেখালেখিকে মহাগুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে নাই বা ধরা হলো। কিন্তু এটি যে একটি কাজ,এই স্বীকৃতিটা পরিবার থেকে আসা খুব প্রয়োজন। আমাদের দেশের বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতি বান লেখক শেষ পর্যন্ত যে লেখক হয়ে উঠতে পারে না,লেখক জীবন যাপন করতে পারেন না,লেখালেখির জগত থেকে তাদের যে অকাল বিদায় নিতে হয়,তার সবচেয়ে বড় কারণ এটাই।লেখালেখিকে পারিবারিক ভাবে স্বীকৃতি না দেওয়া।দেশের অন্য সব মানুষদের মতোই বেশির ভাগ পরিবারে লেখালেখি একটি নেহাৎ ই শখের জিনিস।তারুণ্য বা অংকুরোদ্গমী যৌবনে যৌনতার চুলকানিরও পেয়ে বসে আমাদের দেশের মানুষদের।তখন তাদের লেখাকে বাবাহা দেয় বাড়ির ভাবীরা,কাকা-জ্যাঠারা,সহপাঠীরা,বা তার কোন প্রেমিক-প্রেমিকাও।কখনো কখনো এমনকি বাবা মাও।তারা সকলেই অবচেতনে,এবং নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানে যে,এই চুলকানি বেশিদিন থাকবে না।কিন্তু যার ক্ষেত্রে থেকে যায়,অর্থাৎ যে বুঝে যায় যে লেখক হওয়াটাই তার ভবিতব্য,সমস্যাটা তার ক্ষ...