সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমরা স্বপ্ন কেন দেখি?

স্বপ্ন কেন দেখি



এক সন্ধ্যায় আমি একটা অদ্ভুত রকমের স্বপ্ন দেখি।
স্বপ্নটি ছিলো রোমাঞ্চকর। বলে রাখা ভালো আমি অনেক দিন কোন স্বপ্ন দেখিনি।
শেষ কবে স্বপ্ন দেখেছিলাম আমার ঠিক মনে নেই।
স্বপ্নের মধ্যেই আমি বিচরণ করি অন্য রকম একটি জগতে যে জগতটা আমি কখনোই বাস্তবে দেখিনি।
আমি এক অরণ্যে বিচরণ করতেছি।
রাস্তার দুই পাশে সারি সারি গাছ আমি উদ্দাম এর মতো সে রাস্তা ধরে চলতেছি।।
যেতে যেতে একটি উচু পাহাড়ে উঠে পড়েছি।
একসময় দেখতেছি সেই উচু পাহাড় থেকে আমি নিচে পড়ে যাচ্ছি।
আমি তলিয়ে যাচ্ছি নিম্ন থেকে নিম্নতরে....
ঠিক সেই মহুর্তেই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেছে।
কিন্তু স্বপ্নের সেই অদ্ভুত রেশ আমার মনে দারুন দাগ কেটে গেছে।
মনের মধ্যে অন্য রকম রোমান্স এর জন্ম দিয়েছে।

এরকম স্বপ্ন হয়তো আপনারও দেখেন।
এই স্বপ্ন নিয়ে স্বপ্নের বিভিন্ন রকম বিষয় নিয়েই আজকের এই ফিচার।

স্বপ্ন নিয়ে গবেষকরা কি বলছেন আমরা এই ফিচারটি জেনে নিবো।

স্বপ্ন



তো চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নেই স্বপ্ন সম্পর্কিত কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা-

১- সাইকোলজিদের মতে আপনার যদি রাত্রে অনিদ্রা হয় তার মানে আপনি হয়ত অন্য কারো স্বপ্নে জীবিত ছিলেন। মানে আপনাকে নিয়ে হয়তো কেউ স্বপ্ন দেখছিল। যার কারনে আপনার রাত্রে ঠিক মতো ঘুম হয়নি।

২- যাদের রাত্রে ঘুমনোর সময় নাক ডাকার অভ্যাস আছে তাঁরা সচরাচর স্বপ্ন কম দেখে বা দেখেনা বল্লেই চলে। কারন বিজ্ঞান মনে করে নাক ডাকা ও স্বপ্ন দেখা দুটি একই সাথে সম্ভব না। (আমার কাছে এটা মিথ্যা কথা বলে মনে হয়)।

৩- বিজ্ঞান বলে, গড়ে একজন মানুষ বছরে প্রায় ১৪৬০টি স্বপ্ন দেখে। অর্থাৎ প্রতি রাতে গড়ে প্রায় ৪টি করে। (আপনারাই বলুন এটা কি বিশ্বাস করার মতো কথা? আপনি কি প্রতিদিন ৪টি করে স্বপ্ন দেখেন?)

৪- আমাদের মস্তিষ্ক কোন চেহারা তৈরী করতে পারে না। অর্থাৎ আমরা স্বপ্নে যাদের দেখি তাদের সবাইকে জীবনে কোন না কোন সময় দেখেছি। কথাটার ব্যাখ্যা হবে এমন, আমরা পথে ঘাটে চলার সময় অসংথ্য চেহারা দেখি যা মনে রাখতে পারি না।

কিন্তু আমাদের সাবন্সেন্স মাইন্ড তা ধরে রাখে এবং পরবর্তীতে স্বপ্নে দেখায়। আবার সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে কিন্তু আমরা আর মনে রাখতে পারিনা যে রাত্রে কাকে দেখেছি ঘুমনোর সময়।

৫- প্রতিটি মানুষই স্বপ্ন দেখে। যদি আপনি মনে করেন আপনি স্বপ্ন দেখেন না তার অর্থ হয় আপনি তা মনে রাখতে পারেন না অথবা আপনি জটিল কোন মানসিক রোগে ভুগছেন।

৬- মানুষ তার জীবন চক্রে প্রায় ৬ বছর স্বপ্ন দেখে কাটায়।

৭- আপনি কি জানেন, গর্ভবতী মহিলারা আমাদের চেয়ে বেশী স্বপ্ন মনে রাখতে পারে। এর কারণ, গর্ভকালীন সময়ে তাদের অতিমাত্রায় হরমোনের পরিবর্তন হয়।

৮- আমরা একটি স্বপ্ন দেখার ৫ মিনিটের মধ্যে তার প্রায় ৫০ শতাংশ ভুলে যাই, আর পরবর্তী ১০ মিনিটের মধ্যে ভুলে যাই প্রায় ৯০ শতাংশ। এজন্যই তো বলি আমি রাত্রে যে স্বপ্নটি দেখেছি সেটি মনে করতে পারছি না কেন।

৯- আমরা সাধারনত প্রায় ৯০ থেকে ১৮০ মিনিট স্বপ্ন দেখি যেখানে, গড়ে একটি স্বপ্নের স্থায়িত্ব হয় প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট। সবচেয়ে লম্বা সময় স্বপ্ন দেখি সকালের দিকে যার স্থায়িত্ব ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত। (কিন্তু আমি তো জানতাম আমাদের প্রতিটা স্বপ্নের স্থায়িত্ব মাত্র ৪ সেকেন্ড, তাহলে কোনটা সত্যি)

১০- সাধারণত শিশুরা দুঃস্বপ্ন বেশি দেখে। এর প্রমান, অনেক সময় দেখবেন দেখবেন বাচ্চারা হঠাথ করে ঘুম থেকে জেগে উঠেই কান্না করা শুরু করে।




মনোবিদদের মতে, আমাদের অবচেতনের ভাবনা-চিন্তা, ভয় বা ইচ্ছার প্রতিফলন হল এই স্বপ্ন। তবে এই স্বপ্ন সম্পর্কে অন্যান্য বিশ্বাসও রয়েছে। প্রচলিত বিশ্বাস আর জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, প্রত্যেক স্বপ্নের মধ্যেই কোনও না কোনও অর্থ লুকিয়ে রয়েছে। স্বপ্নে মানুষ অনেক কিছুই দেখে যার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল থাকে না বলেই আপাতভাবে মনে হয়।
স্বপ্ন সম্বন্ধে অনেক দর্শন, বিজ্ঞান, কাহিনী ইত্যাদি আছে। মজার বিষয় হল, পেটে কোনও সমস্যা থাকলে বা উল্টো পাল্টা বেশি কিছু খেয়ে নিলেও স্বপ্নের মাত্রা বাড়তে পারে বলে ধারণা গবেষকদের। মানুষ অনেক স্বপ্ন দেখে, তবে সব স্বপ্ন মনে রাখতে পারে না। স্বপ্নের অর্থ সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন লোক ভিন্ন ভিন্ন মতামত পোষণ করেছে। প্রায় ৫০০০ বছর আগে মেসোপটেমিয়ায় স্বপ্ন সম্পর্কে যে প্রাচীন রেকর্ডগুলি পাওয়া গিয়েছিল তা মূলত কাদামাটি দিয়ে তৈরি পাত্রতে নথিভুক্ত ছিল। গ্রিক এবং রোমান যুগে মানুষরা স্বপ্নকে এক বা একাধিক দেবতার থেকে প্রত্যক্ষ বার্তা অথবা মৃত ব্যক্তিদের থেকে আসা বার্তা যা প্রধাণত ভবিষ্যদ্বাণী হিসাবে গণ্য করা হত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভারতে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যে ৭৪ শতাংশ ভারতীয়, দক্ষিণ কোরিয়ানদের ৬৫ শতাংশ এবং ৫৬ শতাংশ আমেরিকানরা তাদের স্বপ্নের বিষয়বস্তুকে অবচেতন মনের বিশ্বাস এবং অপূরণ আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে তুলনা করেছে। ১৯৪০-এর দশক থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত ক্যালভিন এস হল পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি স্বপ্ন সম্পর্কে প্রতিবেদন সংগ্রহ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেইস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটিতে পেশ করেন। ১৯৬৬ সালে হল এবং ভ্যান দ্য ক্যাসল, দ্য কন্টেন্ট এনালাইসিস অফ ড্রিমস নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এতে তাঁরা কোডিং পদ্ধতির মাধ্যমে এক হাজার কলেজ ছাত্রের স্বপ্নের প্রতিবেদন তুলে ধরেছেন। সেখানে তাঁরা দেখিয়েছেন যে, সমগ্র বিশ্বের জনগণ সাধারণত একই ধরনের বিষয় নিয়ে স্বপ্ন দেখে। স্বপ্নে মানুষ অধিকাংশ সময়ই গত দিন বা গত সপ্তাহের বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কিত কিছু দেখে। প্রতিটি স্বপ্নেরই আলাদা আলাদা মানে রয়েছে। যার মধ্যে হয়তো বেশ কিছুর মানে বেশ পরিচিত। কিন্তু এমন অনেক স্বপ্ন মানুষ দেখে থাকেন, যার মানে খুঁজে পান না। কেন এমন দেখলেন! বুঝে উঠতে পারেন না। 

আমাদের অবচেতনের ভাবনা-চিন্তা, ভয় বা ইচ্ছার প্রতিফলন হল এই স্বপ্ন

প্রত্যেক স্বপ্নের মধ্যেই কোনও না কোনও অর্থ লুকিয়ে রয়েছে
স্বপ্নে মানুষ অনেক কিছুই দেখে যার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল থাকে না
মানুষ অনেক স্বপ্ন দেখে, তবে সব স্বপ্ন মনে রাখতে পারে না...

আসলে আমাদের ঘুমের মাঝেই রয়েছে ৩টি পর্যায়। দুঃস্বপ্নের মুহূর্ত হল র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট অর্থাৎ ঘুমন্ত পর্যায়ের শেষ তৃতীশ। প্রথম পর্যায় হল স্লিপ অনসেট, দ্বিতীয় পর্যায় পড়ে লাইট স্লিপ, তারপর তৃতীয় এবং চতুর্থ পর্যায় নিয়ে হয় ডিপ স্লিপ বা র‌্যাপিড আই মুভমেন্ট স্টেজ। এই পর্যায়েই মূলত দুঃস্বপ্নগুলো দেখা হয়।ক্যারল ওয়াশারম্যান  নামের এক গবেষক জানান, যে যে রাতে তিনি চিংড়ি দিয়ে ডিনার সারতেন, সেসব রাতেই তিনি ভয়াবহ দুঃস্বপ্নে বিশ্রামহীন রাত পার করতেন। পরবর্তীতে তিনি চিংড়ি খাওয়া বন্ধ করে দেন এবং সে সব দুঃস্বপ্নের ইতি ঘটান। শুধুমাত্র দুশ্চিন্তা থেকেই নয়, অসচেতনতা থেকেও দুঃস্বপ্নের উৎপত্তি ঘটে।
স্বপ

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

জাতীয়তাবাদ আরেকটি ধর্ম বই

বাংলাদেশীরা ধর্মভীরু। ইসলাম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ও জাতীয়তাবাদ নামক ধর্মগুলোর প্রতি বাঙ্গালীর দুর্বলতা নতুন কিছু নয়। আমরা যারা মুক্ত-চেতনাকে প্রয়োজনীয় মনে করি, যুক্তিকে ধর্মের ওপরে স্থান দেই তাদের অনেকেই ধর্মের মতই সামনে আসা অন্যান্য প্রতিটি ধারনা ও প্রস্তাবনাকেই যুক্তি দিয়ে বুঝতে চাই, খতিয়ে দেখতে চাই। বা দদূএকটি রূপ আধ্যাত্মিকতা ও ধর্ম হিসাবে মানুষের দলবদ্ধ সমাজব্যবস্থার দ্বিতীয় বড় চালক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। প্রস্তরযুগে আরো একটি ঘটনা ঘটতে শুরু করেছিল। মানুষেরা নিজেদের গ্রাম বা নগরকে কেন্দ্র করে একটি সামষ্টিক পরিচিতি অনুভব করে শুরু করেছিল। বোধ করি তখন থেকেই মানুষের দলবদ্ধতার তৃতীয় চালক জাতীয়তাবাদের প্রাথমিক যাত্রা শুরু। বর্তমানে সারা দুনিয়ায় জাতীয়তাবাদ নানান চেহারায় দলবদ্ধতার সবচাইতে শক্তিশালী চালক হিসাবে বিদ্যমান। একটি নৃগোষ্ঠী যখন পুঁজিবাদী হতে শুরু করে, যখন সে একটি কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্র গঠন করে তখনই সে একটি জাতিতে পরিণত হয়। ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ আমাদের দেশের রাজনীতিতে কাছাকাছি আছে ইতিহাসের শুরু থেকে। মহাভারত থেকে আজকের খালেদা-হাসিনার রাজনীতিতে ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ একে অন্যের হাত...

গাজওয়াতুল হিন্দ

গাজওয়াতুল হিন্দকে বর্তমান বাংলাদেশ ভারত ও নেপাল শ্রীলংকার জিহাদীরা তাদের মনে আটকে রেখেছে। এই বিষয়ে নানা মতাভেদ থাকলেও সকল মুসলিম জিহাদীরা মনে করে বা আ শা করে যে ইসলাম সারা পৃথীবিতে এই জিহাদের মাধ্যামে প্রতিষ্টা হবে। তারা এটাকে মর্যাদার্পূণ জিহাদ বলে মনে করে। ইসলামের ভিত্তির অন্যতম হলো জিহাদ। ইসলাম প্রতিষ্ঠাকালীন প্রচুর যুদ্ধ করা এবং হত্যার পরেই মানুষ ভয়ে ইসলামকে গ্রহন করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ভায়রাস বলা হয় ইসলামকে। এই ভায়রাস আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে গাজওয়াতুল হিন্দকে কেন্দ্র করে। বর্তমানে জিহাদীরা তাদের দলে লোক বেসি করার জন্য অনলাইনে সহ নানা জাগাতে ঠিক এই ভাবে মুসলিমদের উপর প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে "গাজওয়াতুল হিন্দ বা ভারতবর্ষের যুদ্ধ সম্পর্কে কি আপনি অবগত? আপনি কি কাফের মুশরিকদের সাথে লড়াই করতে প্রস্তুত?" ইসলামীষ্ট  জিহাদীরা ঠিক এভাবে চাই যে সারা পৃথিবীতে সবচে’ বড় যে ধর্মযুদ্ধ হবে সেটা হবে হিন্দুস্তান তথা ভারতের হিন্দুদের সাথে মুসলমানদের যা সমস্থ জ্ঞানি ইসলামি স্কলার এবং আলেম উলামা জানে। মুসলমানদের জন্য এটা খুব বড়  জিহাদ এবং এই জিহাদের গুরুত্ব অপরিসীম। এই...

বাঙালি এবং লেখকের জীবন

লেখকের বেঁচে থাকার প্রথম শর্ত তার পরিবারের স্বীকৃতি।এখানে স্বীকৃতির অর্থ হচ্ছে-লেখালেখি যে একটি কাজ,অন্য মতোই একটি কাজের, এবং সেই কাজের জন্য মনোযোগ,সময় এবং শ্রম বিনিয়োগ করতে হয়-এই বোধটা তৈরী হওয়া।লেখালেখিকে মহাগুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে নাই বা ধরা হলো। কিন্তু এটি যে একটি কাজ,এই স্বীকৃতিটা পরিবার থেকে আসা খুব প্রয়োজন। আমাদের দেশের বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতি বান লেখক শেষ পর্যন্ত যে লেখক হয়ে উঠতে পারে না,লেখক জীবন যাপন করতে পারেন না,লেখালেখির জগত থেকে তাদের যে অকাল বিদায় নিতে হয়,তার সবচেয়ে বড় কারণ এটাই।লেখালেখিকে পারিবারিক ভাবে স্বীকৃতি না দেওয়া।দেশের অন্য সব মানুষদের মতোই বেশির ভাগ পরিবারে লেখালেখি একটি নেহাৎ ই শখের জিনিস।তারুণ্য বা অংকুরোদ্গমী যৌবনে যৌনতার চুলকানিরও পেয়ে বসে আমাদের দেশের মানুষদের।তখন তাদের লেখাকে বাবাহা দেয় বাড়ির ভাবীরা,কাকা-জ্যাঠারা,সহপাঠীরা,বা তার কোন প্রেমিক-প্রেমিকাও।কখনো কখনো এমনকি বাবা মাও।তারা সকলেই অবচেতনে,এবং নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানে যে,এই চুলকানি বেশিদিন থাকবে না।কিন্তু যার ক্ষেত্রে থেকে যায়,অর্থাৎ যে বুঝে যায় যে লেখক হওয়াটাই তার ভবিতব্য,সমস্যাটা তার ক্ষ...