এই ব্লগটি সন্ধান করুন

দৈনিক বিদ্বেষ


গত ৩ই সেপ্টেম্বর জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের একটা খবরে দেখলাম শিরোনাম করেছে "অপূর্বর সাবেক স্ত্রীর বিয়ে"। বিষয়টা ভালো করে বুঝেন। একটা মানুষ একটা মেয়ে বিয়ে করছে সেখানে তাকে খবরের শিরোনাম হতে হয়েছে নিজের নামে নয় বরং ২ বছর আগে ডিবোর্স নেওয়া অপূর্বরের নামে। এই থেকে কি বোঝা যায় একটু ব্যাখা করুন তো!

পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পিতার পরিচয়ে খুব গুরুত্বপূর্ন। মায়ের নিজের কোন পরিচয় থাকতে নেই। কন্যারা তারা পুরুষের কন্যা, পুরুষের বোন পুরুষের স্ত্রী, পুরুষের মা, এ-ই তাদের পরিচয়। এর বাইরে তাদের পরিচয় থাকতে নেই। কেন নেই কিসের কারনে নেই তা হইতো সবাই জানি কিন্তু বলিনা কারন নিজেও তো পুরুষ। মেয়েদের নিয়ে বল্লে তো লোকে বলবে নারী ঘেষা নারীবাদীর ইত্যাদি বলবে কি দরকার ওসবের।

পিতৃতন্ত্র একসময় মেয়েদের ঘরের বাইরে বের হতে দিত না। বাল্যবিবাহ, সতীচ্ছদে, সতীত্বে, কুমাররীত্বে তাদের ছিল গভীর বিশ্বাস। মেয়েদের পড়ালেখা, ঘরের বাইরে গিয়ে চাকুরি করা টকা পয়সা রোজগার করা ছিল ঘোর বিরোধী। একসময় পুরুষতন্ত্রের কর্তারা যখন শিক্ষিতা শয্যাসঙ্গিনী কামনা করলো, তখন স্কুলে যাওয়া মেয়েদের জন্য বৈধ করা হলো। কতটুকু লেখাপড়া করবে তার সময় বেঁধে দিলো। কাজে অংশগ্রহলের সুযোগ দিলো কিন্তু সব কাজ নয় শিক্ষিকা বা সেবিকা ছাড়া। একসময় সাংস্কৃতিক কাজে মেয়েদের প্রবেশের অধিকার ছিলোনা অধিকাংশ সময় ছেলেরা মেয়ে সেজে অভিনয় করতো। পুরুষতন্ত্রে এমন ভাবে সমাজ ব্যাবস্থা কে আকঁড়ে ধরেছে যে সমাজের নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে মেয়েরা ঘরের রান্নবান্না করবে, ঘরদোর গোছাবে, সন্তান জন্ম দেবে, সন্তানের লালনপালন করবে, স্বামীর সেবা করবে ইত্যাদি ইত্যাদি।

বর্তামান সমাজ এখনো তাই মানে, মেয়েরা মেয়ে নাই বরং মানুষ তাদের একটা জিবন আছে ইচ্ছা আছে মেধা আছে বুদ্ধি বিবেক আছে সেটা মানতে নারাজ এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। আজও অনেক শিক্ষিত স্বনির্ভর মেয়ে আছে কিন্তু তারা আজও পিতৃতন্ত্রের বহাল তবিয়তে আটকা। কাউকে পরিচিত হতে হলে তার নিজের নামে নয় তার কর্মের গুনে নয় তার মেধার গুনে নয় বরং তার স্বামীর পরিচয়ে, তার ডিভোর্স দেওয়া স্বামীর পরিচয়ে পরিচিত হতে হয়। শিক্ষিত স্বনির্ভর হয়েও আজ অন্যের অধিনে চলতে হয়। এই হলো পুরুষতান্ত্রিক সমাজের আসল রূপ।

Written by Sajib Hossain

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ