সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

এক ‘মানবতাবাদী নিরপেক্ষ মুসলমানিত্ববাদী’ মিডিয়া কর্মীর সঙ্গে আলাপ

-দেখলেন মুসলমানরা কি বোকা, কেমন করে হিন্দুত্ববাদীদের ফাঁদে পা দিলো! মাঝখান থেকে তাদের চারজন ছেলে শহীদ হলো!

-বলছেন হনুমানের পায়ের কাছে কুরআন রাখা পুরোটাই হিন্দুত্ববাদীদের কাজ? এটা করে তারাই মুসলমানদের উত্তেজিত করে দিয়েছে?

-এই সহজ জিনিসটুকু না বুঝলে এই ইস্যুতে আপনাদের কথা না বলাই ভালো বুঝলেন? এখানে মৌলবাদ দেখাতে পারলে ভারতে মোদি অমিত শাহদের লাভ।

-তাহলে তো ভাই নরেন্দ্র মোদি অমিত শাহও আহমদ শফি, জামাত ইসলাম, চরমোনাই পীরদের হাতে তৈরি? ভারতের ইস্যু ছাড়া কি বাইতুল মোকারর থেকে কোন উত্তেজিত মিছিল বের করা সম্ভব? চীন যে কুরআন নিষিদ্ধ করল, মুসলমাদের মসজিদ গুড়িয়ে দিয়ে পাবলিক টয়লেট বানালো সেটা নিয়ে ইসলামবাদীদের তো আন্দোলন হয় না। তার মানে ভারতে যে গরুর মাংস খেলে উত্তর প্রদেশে কিছু ঘটনা ঘটেছে তার পিছনে বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনকারীদের গভীর হাত রয়েছে?

-হা হা ভাই, এই জন্য তো বললাম, এই ইস্যুতে আপনাদের কথা না বলাই ভালো যদি সাধারণ জিনিসগুলি না বুঝেন।

-আমি বুঝতে চাই ভাই। ভারতের ষড়যন্ত্রের বিষয়টা বুঝতে চাই। বুঝতে চাই তসলিমা নাসরিনকে আপনারা বলেন উনি বিজেপির টাকা খেয়ে লজ্জ্বা উপন্যাস লিখেছিলেন যাতে বাংলাদেশকে মৌলবাদী দেখানো যায়। তাহলে ভারতে বাবরী মসজিদও আসলে বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনকারীরাই ভেঙ্গেছিলো যাতে এখানে ভারত বিরোধী রাজনীতি জমে উঠে? আহমদ ছফা তো প্রকাশ্যেই বলত বিজেপির টাকা খেয়ে তসলিমা এই বই লিখেছে। সালমান রুশদিও ইহুদীদের টাকা খেয়ে স্যাটানিক ভার্সেস লিখেছিলো। শুধু ভারতের হিন্দুত্ববাদের জন্য হিন্দুরাই দায়ী!

-আপনি বলতে চাইছেন বাংলাদেশে ভারতীয় এজেন্টদের কোন তত্পরতা নেই?

-থাকবে না কেন? ১৯৭১ সালের দৈনিক সংগ্রাম খুলে দেখুন, মুক্তিযোদ্ধারা যখন পাকিস্তান সেনা বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে হতাহত হতো সংগ্রাম লিখত বহু সংখ্যক ‘ভারতীয় চর’ হতাহত! তাজউদ্দিনকে পাকিস্তানের সৈন্যরা মনে করত সে ভারতীয় হিন্দু যার নাম ‘ত্যাজা রাম’। সে মুসলমান সেজে পাকিস্তান ভাঙ্গার চেষ্টা করে যাচ্ছে। মজা কী জানেন, কাশ্মীরের হযরত বাল মসজিদ থেকে মুহাম্মদের চুল চুরি করেছে হিন্দুরা এই গুজবে বাংলাদেশের খুলনায় হিন্দুদের কচু কাটার পর ঢাকার শিক্ষিত “মুসলমানিত্ববাদীরা” দেশের মধ্যে ভারতীয় চর ঢুকে পড়েছে সকলকে সতর্ক থাকার জন্য তাগিদ দিতে লাগল। এই মুসলমানিত্ববাদীদের সঙ্গেই গোলাম আযমদের মত ইসলামিস্টদের ছিলো বিরোধ। মুসলমানিত্ববাদীরাই পাকিস্তান আন্দোলন করেছিলো। তারাই প্রথম ভারতের ষড়যন্ত্র, দাদাবাবুদের অধিনে থাকার গ্লাণি, মুসলমানদের নিজেদের দেশ ইত্যাদি চেতনা তৈরি করেছিলো। ট্রাজিডি হচ্ছে ১৯৭১ সালে সেই মুসলমানিত্ববাদীরাই যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু করল তখন তাদেরকেই “ভারতীয় চর” বলে গোলাম আযমসহ ইসলামপন্থিরা খিলাফতপন্থিরা অভিহত করতে লাগল।

-কি বলতে চান আপনি?

-আমি বলতে চাই, বাংলাদেশের “মুসলমানিত্ববাদীরা” দুর্গা পুজায় সারাদেশব্যাপী হামলার জন্য ভারতীয় “হিন্দুত্ববাদীদের” দায়ী করছে। তাদের যুক্তিগুলি ধরে এগুলো ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের উপর যত দোষ দেয়া হয় সেগুলোরও কোন অস্তিত্ব থাকে না। কারণ ভারতের হিন্দুত্ববাদের উত্থানে বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনেরই লাভ। জনগণকে বুঝাতে পারবে হিন্দুদের থেকে বাঁচতে মুসলমানদের ইসলামী শাসনের বিকল্প নাই। আচ্ছা আপনি তো মিডিয়াতে কাজ করেন, হিন্দুত্ববাদীদের এতবড় হামলার নিউজ তাহলে করলেন না কেন?

-কেন ফেইসবুকে লিখছি না?

-লিখেছেন সেটা তো দেখলাম, বলছেন মুসলমানদের চারজন মারা গেছে আর হিন্দুরা এ বছর খুশি মনে পুজাটা করতে পারল না। মানে হিন্দুদের স্রেফ আনন্দ না করার বিপরীতে মুসলমানদের সন্তান হারাতে হয়েছে। পুরাই গণেশ উল্টে দিয়েছেন। যারা মন্দিরে হামলা করতে গিয়েছিলো তারা পুলিশের গুলি খেয়ে মারা গিয়েছিলো। সেই মৃত্যুকে মহিমান্বিত করে প্রকাশ করার তুলনা নেই ভাই। আর হিন্দুরা শুধু খুশি মনে পুজাটা করতে পারল না…। তাদের কান্নার আহাজারী, তাদের মৃত্যুগুলিকে দিব্যি ক্লিনফিড করে দিলেন!

-ভারতের কংগ্রেস, বামফ্রন্ট তারাই বলছে বাংলাদেশের ঘটনার পিছনে হিন্দুত্ববাদীদের মদদ আছে!

-সেই ‘দাদাদেরই’ রেফারেন্স নিতে হবে যদি তাইলে কি বাল ফেলতে দেশ স্বাধীন করছিলেন?

-আপনি খুবই সাম্প্রদায়িক লোক!

-ঠিক বলেছেন ভাই। ঐ যে ব্রিটিশ এমপিকে ছুরি মেরেছে যে সোমালিয়ান মুসলমান সেও আসলে সাদা ইউরোপীয়ান বর্ণবাদীদের চর! কারণ এরকম ঘটনা ঘটলে অভিবাসী বিরোধী মনোভাব আরো বেশি করে তৈরি হবে। এরকম পাটিগণিত করতে পারলেই আমি অসাম্প্রদায়িক? ইসলাম ও মুসলমান মৌলবাদীদের দোষ গোপন করতে পারলে আমি অসাম্প্রদায়িক? আলেম ওলামাদের রাজনীতির অধিকারকে সমর্থন করব আর হিন্দুত্ববাদীদের রাজনীতিকে ফ্যাসিজম বলব- তাহলেই আমি নিরপেক্ষ আর মানবতাবাদী?

-দুর আমারই ভুল হইছে, যারা এসব বুঝে না তাদের সঙ্গে কেন যে কথা শুরু করছিলাম…!

‌‌‍সুষুপ্ত পাঠক


google

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

জাতীয়তাবাদ আরেকটি ধর্ম বই

বাংলাদেশীরা ধর্মভীরু। ইসলাম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ও জাতীয়তাবাদ নামক ধর্মগুলোর প্রতি বাঙ্গালীর দুর্বলতা নতুন কিছু নয়। আমরা যারা মুক্ত-চেতনাকে প্রয়োজনীয় মনে করি, যুক্তিকে ধর্মের ওপরে স্থান দেই তাদের অনেকেই ধর্মের মতই সামনে আসা অন্যান্য প্রতিটি ধারনা ও প্রস্তাবনাকেই যুক্তি দিয়ে বুঝতে চাই, খতিয়ে দেখতে চাই। বা দদূএকটি রূপ আধ্যাত্মিকতা ও ধর্ম হিসাবে মানুষের দলবদ্ধ সমাজব্যবস্থার দ্বিতীয় বড় চালক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। প্রস্তরযুগে আরো একটি ঘটনা ঘটতে শুরু করেছিল। মানুষেরা নিজেদের গ্রাম বা নগরকে কেন্দ্র করে একটি সামষ্টিক পরিচিতি অনুভব করে শুরু করেছিল। বোধ করি তখন থেকেই মানুষের দলবদ্ধতার তৃতীয় চালক জাতীয়তাবাদের প্রাথমিক যাত্রা শুরু। বর্তমানে সারা দুনিয়ায় জাতীয়তাবাদ নানান চেহারায় দলবদ্ধতার সবচাইতে শক্তিশালী চালক হিসাবে বিদ্যমান। একটি নৃগোষ্ঠী যখন পুঁজিবাদী হতে শুরু করে, যখন সে একটি কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্র গঠন করে তখনই সে একটি জাতিতে পরিণত হয়। ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ আমাদের দেশের রাজনীতিতে কাছাকাছি আছে ইতিহাসের শুরু থেকে। মহাভারত থেকে আজকের খালেদা-হাসিনার রাজনীতিতে ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ একে অন্যের হাত...

গাজওয়াতুল হিন্দ

গাজওয়াতুল হিন্দকে বর্তমান বাংলাদেশ ভারত ও নেপাল শ্রীলংকার জিহাদীরা তাদের মনে আটকে রেখেছে। এই বিষয়ে নানা মতাভেদ থাকলেও সকল মুসলিম জিহাদীরা মনে করে বা আ শা করে যে ইসলাম সারা পৃথীবিতে এই জিহাদের মাধ্যামে প্রতিষ্টা হবে। তারা এটাকে মর্যাদার্পূণ জিহাদ বলে মনে করে। ইসলামের ভিত্তির অন্যতম হলো জিহাদ। ইসলাম প্রতিষ্ঠাকালীন প্রচুর যুদ্ধ করা এবং হত্যার পরেই মানুষ ভয়ে ইসলামকে গ্রহন করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ভায়রাস বলা হয় ইসলামকে। এই ভায়রাস আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে গাজওয়াতুল হিন্দকে কেন্দ্র করে। বর্তমানে জিহাদীরা তাদের দলে লোক বেসি করার জন্য অনলাইনে সহ নানা জাগাতে ঠিক এই ভাবে মুসলিমদের উপর প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে "গাজওয়াতুল হিন্দ বা ভারতবর্ষের যুদ্ধ সম্পর্কে কি আপনি অবগত? আপনি কি কাফের মুশরিকদের সাথে লড়াই করতে প্রস্তুত?" ইসলামীষ্ট  জিহাদীরা ঠিক এভাবে চাই যে সারা পৃথিবীতে সবচে’ বড় যে ধর্মযুদ্ধ হবে সেটা হবে হিন্দুস্তান তথা ভারতের হিন্দুদের সাথে মুসলমানদের যা সমস্থ জ্ঞানি ইসলামি স্কলার এবং আলেম উলামা জানে। মুসলমানদের জন্য এটা খুব বড়  জিহাদ এবং এই জিহাদের গুরুত্ব অপরিসীম। এই...

বাঙালি এবং লেখকের জীবন

লেখকের বেঁচে থাকার প্রথম শর্ত তার পরিবারের স্বীকৃতি।এখানে স্বীকৃতির অর্থ হচ্ছে-লেখালেখি যে একটি কাজ,অন্য মতোই একটি কাজের, এবং সেই কাজের জন্য মনোযোগ,সময় এবং শ্রম বিনিয়োগ করতে হয়-এই বোধটা তৈরী হওয়া।লেখালেখিকে মহাগুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে নাই বা ধরা হলো। কিন্তু এটি যে একটি কাজ,এই স্বীকৃতিটা পরিবার থেকে আসা খুব প্রয়োজন। আমাদের দেশের বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতি বান লেখক শেষ পর্যন্ত যে লেখক হয়ে উঠতে পারে না,লেখক জীবন যাপন করতে পারেন না,লেখালেখির জগত থেকে তাদের যে অকাল বিদায় নিতে হয়,তার সবচেয়ে বড় কারণ এটাই।লেখালেখিকে পারিবারিক ভাবে স্বীকৃতি না দেওয়া।দেশের অন্য সব মানুষদের মতোই বেশির ভাগ পরিবারে লেখালেখি একটি নেহাৎ ই শখের জিনিস।তারুণ্য বা অংকুরোদ্গমী যৌবনে যৌনতার চুলকানিরও পেয়ে বসে আমাদের দেশের মানুষদের।তখন তাদের লেখাকে বাবাহা দেয় বাড়ির ভাবীরা,কাকা-জ্যাঠারা,সহপাঠীরা,বা তার কোন প্রেমিক-প্রেমিকাও।কখনো কখনো এমনকি বাবা মাও।তারা সকলেই অবচেতনে,এবং নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানে যে,এই চুলকানি বেশিদিন থাকবে না।কিন্তু যার ক্ষেত্রে থেকে যায়,অর্থাৎ যে বুঝে যায় যে লেখক হওয়াটাই তার ভবিতব্য,সমস্যাটা তার ক্ষ...