সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বাংলাদেশের দুর্গাপুজায় হামলা একটি প্রি-প্লাণ কেন?

খেয়াল করুন, চাঁদপুরে যারা হিন্দু বাড়িতে হামলা করেছে তারা আগে আজান দিয়েছে। তারপর সেখানে তারা হামলা চালায়। জীবন্ত আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিতেই সেদিন বাড়িঘরে আগুন জ্বালায়। এটি কিন্তু একশত ভাগ ইসলামী তড়িকায় ঘটেছে। মদিনায় ইহুদীদে পল্লীগুলিতে অতর্কিত হামলা চালানোর সময়ও এভাবে আজান দেয়া হতো। অথচ এখন একদল মাওলানা বেরিয়েছে তারা বলছে হিন্দুদের পুজায় হামলা চালানো নবীজির আদর্শের বরখেলাফ! এক গ্রুপ হামলা চলাবে আরেক গ্রুপ এসে বলবে, এসব তো শান্তির ধর্ম অনুমোদন করে না! তাকিয়াবাজ মাওলানারা মাঠে নেমে গেছে। ইসলামে এটা নেই, ওটা নেই বলছে আর সেসব ইসলাম না জানা মডারেট মুসলমানরা শেয়ার করছে। এইসব তাকিয়াবাজ মোল্লারা কিন্তু জানেন আনাস ইবনে মালিক স্বয়ং বর্ণনা করেছেন, ‘আমরা খায়বারে পৌঁছে দেখতে পেলাম সকাল বেলা খাইবারের শ্রমিকরা (ইহুদীরা) কোদাল ও ঝুড়ি নিয়ে দিনের কাজে বেরুচ্ছিল। রাসূলুল্লাহ ও তাঁর বাহিনিকে দেখে তারা সবিস্ময়ে বলে উঠলো, “সর্বনাশ! মুহাম্মাদ তার বাহিনীসহ হাজির হয়েছে দেখছি”- বলেই তারা পালিয়ে পেছনে ফিরে যেতে লাগলো। সে দৃশ্য দেখে রাসূলুল্লাহ বললেন, “আল্লাহু আকবার! খাইবারের পতন ঘটেছে। আমরা কোন জনপদে আগমন করলেই তার অধিবাসীর সকাল বেলাটা দুর্ভাগ্যময় হয়ে ওঠে।‘
মুসলমানদের দেখেলেই কোন জনপদের অধিবাসীদের জীবন দুর্ভাগ্যময় হয়ে উঠবে কেন? ইসলামের শিক্ষা যদি হয় সত্য ন্যায় শেখানো তাহলে অন্যের জনপদে আক্রমন কেন? তাও আবার যখন লোকজন ভোরবেলা তাদের কাজে যাচ্ছে, মানে পুরোপুরি অতর্কিত হামলা! অথচ এই তাকিয়াবাজ হুজুরগুলি বলে ইসলামের যুদ্ধগুলি ছিলো মুসলমানদের জন্য আত্মরক্ষার! এই কয়দিন শুধু দেখছি ফেইসবুকে নতুন নাটক। মডারেট ও “পোগতিশীলরা” সেই নাটকগুলো শেয়ার করছেন। এক জায়গায় দেখলাম মাথায় টুপি পরা একদল মুসলমান যুবক দুর্গা প্রতিমার সামনে বসে আছে, ক্যাপশন হলো: মুসলিম যুবকরা পালা করে হিন্দুদের পুজা পাহারা দিচ্ছে। প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, সবার মাথায় নামাজের টুপি আর পাঞ্জাবী কেন? বাংলাদেশের মুসলমানরা কি এই পোশাক পরে? তাহলে টুপি পরে কেন পাহারা দেয়ার ছবি তুলতে হবে? যদি মুসলমানরাই পাহারা দিচ্ছে, তাও আবার ধার্মীক মুসলমান চেহারায় তাহলে ভাঙ্গতে আসছে কারা? বুঝানো হচ্ছে এগুলো ভাঙ্গছে যারা তারা মুসলমান নয়। ঐ যে “পোগতিশীলরা” বলছে এখানে ভারতের হাত আছে সেই তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে। অনেকগুলো ছবি ছড়িয়েছে দাড়ি টুপি পাঞ্জাবী পরা মুসলমান দূর্গা পুজার মন্ডব পাহারা দিচ্ছে। দলে দলে তাকিয়াবাজ হুজুর বেরিয়ে পড়েছে দুর্গা পুজায় হামলা করা কতটা ইসলাম বিরোধী কাজ হয়েছে। এর মধ্যে আবুল কালাম আযাদ নামের এক হুজুরের ভিডিও আমি নিজেই জিহাদ নামের যে ভিডিওটা বানিয়েছিলাম সেখানে দিয়েছিলাম যেখানে তিনি জিহাদ করতে মুসলমানদের পাগল করে তুলছিলেন। বেশ কিছু জিহাদী হুজুর গ্রেফতার হওয়ার পর তিনি সুযোগ নিচ্ছেন পুজা পালনের স্বাধীনতার বয়ান দিয়ে গ্রেফতার এড়াতে। দু-একদিনের মধ্যে দেখবেন নামাবলী পরা পুরুত-ক্রুশ গলায় ফাদার-গেরুয়া পরা ভিক্ষু-শেরওয়ানি দাড়ি টুপি পরা হুজুর হাতে হাত ধরে শাহবাগে সম্প্রীতির কথা বলছে। তারা বলবে আমরা সবাই ভাই। যারা পুজায় হামলা করে তারা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের মানুষ নয়। তারা মুসলমান নয়। তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী। বেশ শেয়ার হবে এসব মানববন্ধনের ছবি। থিতু হয়ে আসবে ইস্যু। হামলা যা করার তা তো করা হয়ে গেছেই। তারপর শেষটায় তাকিয়াবাজী করে ইসলাম ও মুসলমানদের দায়মুক্তিও ভালোভাবে সম্পন্ন হবে। প্রতিবারই এরকম ঘটে। এবারো তার বেতিক্রম নয়। পুজা শেষের পরও রংপুরের পীরগঞ্জে জেলে পাড়ায় আগুনে দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে ইসলাম অবমাননার অভিযোগে। আজ শুনলাম গাইবান্ধায় হামলা হয়েছে। একদিকে মুসলমানদের পাহারা দেয়ার শো-অফ, তাকিয়াবাজ হুজুরদের পুজার স্বাধীনতার ইসলামী বক্তব্য অপরদিকে লাগামহীন সাম্প্রদায়িক হামলা যা আজ পর্যন্ত চলেছে। এগুলো এক সূত্রে গাঁথা। রামু ঘটনার কোন আসামীরই বিচার এই দেশে হয়নি। কেন হয়নি? কারণ বিচার হোক সেটা সংখ্যাগরিষ্ঠরা চায় না। এখানকার মিডিয়াই তো এসব ঘটনাকে সেন্সর করে ফেলে। এখানকার ক্লিন সেভ মডারেট মুসলমানরাই যথেষ্ঠ সাম্প্রদায়িক রক্তের দাগ মুছে ফেলতে। তারাই জাস্টিফাই করবে ভারতের সঙ্গে। এসব ঘটনা ভারতেও ঘটে। হিন্দুত্ববাদীরাও মুসলমানদের সঙ্গে এমন করে।… মানে বুঝাতে চাইছেন ভারতেও যেহেতু হয় এখানে ঘটেছে সেটা এমন কি বড় ঘটনা? ভারত কেন পৃথিবীর কোন দেশে কোন একটি সম্প্রদায়ের উত্সবে গোটা দেশে হামলা করে পন্ড করে দেয়া হয়েছে? এমন একটি নজির দেখান ঈদের দিন সারাদেশে মুসলমানদের ঈদের নামাজের উপর হামলা হয়েছে। কোথাও তারা ঈদ করতে পারেনি। দেখানো হোক। পারবেন? বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকাবাসী ঈদের নামাজ পড়েছে! ঈদ পালন করেছে। ঈদের কেনাকাটা করেছে। ঈদের কোলাকুলি করেছে। পোলাও মাংস খেয়েছে। তখন যুদ্ধ চলছে! বুঝলেন কিছু? আর স্বাধীন দেশে প্রতি বছর হিন্দুদের একসেট করে মূর্তি ভাঙ্গা হয়। সেটা হিন্দুরা মেনেও নিয়েছিলো। কিন্তু এবার তো সশস্ত্র জিহাদ চালানো হয়েছে। এটাকে ৭১ সালকে আবার মনে করিয়ে দিয়েছে। -সুষুপ্ত পাঠক

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

জাতীয়তাবাদ আরেকটি ধর্ম বই

বাংলাদেশীরা ধর্মভীরু। ইসলাম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ও জাতীয়তাবাদ নামক ধর্মগুলোর প্রতি বাঙ্গালীর দুর্বলতা নতুন কিছু নয়। আমরা যারা মুক্ত-চেতনাকে প্রয়োজনীয় মনে করি, যুক্তিকে ধর্মের ওপরে স্থান দেই তাদের অনেকেই ধর্মের মতই সামনে আসা অন্যান্য প্রতিটি ধারনা ও প্রস্তাবনাকেই যুক্তি দিয়ে বুঝতে চাই, খতিয়ে দেখতে চাই। বা দদূএকটি রূপ আধ্যাত্মিকতা ও ধর্ম হিসাবে মানুষের দলবদ্ধ সমাজব্যবস্থার দ্বিতীয় বড় চালক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। প্রস্তরযুগে আরো একটি ঘটনা ঘটতে শুরু করেছিল। মানুষেরা নিজেদের গ্রাম বা নগরকে কেন্দ্র করে একটি সামষ্টিক পরিচিতি অনুভব করে শুরু করেছিল। বোধ করি তখন থেকেই মানুষের দলবদ্ধতার তৃতীয় চালক জাতীয়তাবাদের প্রাথমিক যাত্রা শুরু। বর্তমানে সারা দুনিয়ায় জাতীয়তাবাদ নানান চেহারায় দলবদ্ধতার সবচাইতে শক্তিশালী চালক হিসাবে বিদ্যমান। একটি নৃগোষ্ঠী যখন পুঁজিবাদী হতে শুরু করে, যখন সে একটি কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্র গঠন করে তখনই সে একটি জাতিতে পরিণত হয়। ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ আমাদের দেশের রাজনীতিতে কাছাকাছি আছে ইতিহাসের শুরু থেকে। মহাভারত থেকে আজকের খালেদা-হাসিনার রাজনীতিতে ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ একে অন্যের হাত...

গাজওয়াতুল হিন্দ

গাজওয়াতুল হিন্দকে বর্তমান বাংলাদেশ ভারত ও নেপাল শ্রীলংকার জিহাদীরা তাদের মনে আটকে রেখেছে। এই বিষয়ে নানা মতাভেদ থাকলেও সকল মুসলিম জিহাদীরা মনে করে বা আ শা করে যে ইসলাম সারা পৃথীবিতে এই জিহাদের মাধ্যামে প্রতিষ্টা হবে। তারা এটাকে মর্যাদার্পূণ জিহাদ বলে মনে করে। ইসলামের ভিত্তির অন্যতম হলো জিহাদ। ইসলাম প্রতিষ্ঠাকালীন প্রচুর যুদ্ধ করা এবং হত্যার পরেই মানুষ ভয়ে ইসলামকে গ্রহন করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ভায়রাস বলা হয় ইসলামকে। এই ভায়রাস আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে গাজওয়াতুল হিন্দকে কেন্দ্র করে। বর্তমানে জিহাদীরা তাদের দলে লোক বেসি করার জন্য অনলাইনে সহ নানা জাগাতে ঠিক এই ভাবে মুসলিমদের উপর প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে "গাজওয়াতুল হিন্দ বা ভারতবর্ষের যুদ্ধ সম্পর্কে কি আপনি অবগত? আপনি কি কাফের মুশরিকদের সাথে লড়াই করতে প্রস্তুত?" ইসলামীষ্ট  জিহাদীরা ঠিক এভাবে চাই যে সারা পৃথিবীতে সবচে’ বড় যে ধর্মযুদ্ধ হবে সেটা হবে হিন্দুস্তান তথা ভারতের হিন্দুদের সাথে মুসলমানদের যা সমস্থ জ্ঞানি ইসলামি স্কলার এবং আলেম উলামা জানে। মুসলমানদের জন্য এটা খুব বড়  জিহাদ এবং এই জিহাদের গুরুত্ব অপরিসীম। এই...

বাঙালি এবং লেখকের জীবন

লেখকের বেঁচে থাকার প্রথম শর্ত তার পরিবারের স্বীকৃতি।এখানে স্বীকৃতির অর্থ হচ্ছে-লেখালেখি যে একটি কাজ,অন্য মতোই একটি কাজের, এবং সেই কাজের জন্য মনোযোগ,সময় এবং শ্রম বিনিয়োগ করতে হয়-এই বোধটা তৈরী হওয়া।লেখালেখিকে মহাগুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে নাই বা ধরা হলো। কিন্তু এটি যে একটি কাজ,এই স্বীকৃতিটা পরিবার থেকে আসা খুব প্রয়োজন। আমাদের দেশের বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতি বান লেখক শেষ পর্যন্ত যে লেখক হয়ে উঠতে পারে না,লেখক জীবন যাপন করতে পারেন না,লেখালেখির জগত থেকে তাদের যে অকাল বিদায় নিতে হয়,তার সবচেয়ে বড় কারণ এটাই।লেখালেখিকে পারিবারিক ভাবে স্বীকৃতি না দেওয়া।দেশের অন্য সব মানুষদের মতোই বেশির ভাগ পরিবারে লেখালেখি একটি নেহাৎ ই শখের জিনিস।তারুণ্য বা অংকুরোদ্গমী যৌবনে যৌনতার চুলকানিরও পেয়ে বসে আমাদের দেশের মানুষদের।তখন তাদের লেখাকে বাবাহা দেয় বাড়ির ভাবীরা,কাকা-জ্যাঠারা,সহপাঠীরা,বা তার কোন প্রেমিক-প্রেমিকাও।কখনো কখনো এমনকি বাবা মাও।তারা সকলেই অবচেতনে,এবং নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানে যে,এই চুলকানি বেশিদিন থাকবে না।কিন্তু যার ক্ষেত্রে থেকে যায়,অর্থাৎ যে বুঝে যায় যে লেখক হওয়াটাই তার ভবিতব্য,সমস্যাটা তার ক্ষ...