সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মূর্তি ভাঙ্গার সুন্নত সমূহ

নবি মুহাম্মদের জিবনের প্রতিটি কাজ ছিল তার উম্মত এবং সাহাবীদের জন্য সুন্নত। ইসলামি শরিয়া আইনের প্রতিষ্ঠিতা মুহাম্মদের প্রতিটা নির্দেশ মানা মুসলিমদের প্রধান কাজ কয়েক দিন আগে সুপ্তষ পাঠক বলেছিলেন মূর্তি ভাঙ্গার খবর বা ছবি না দেখলের উনি বুঝতেই পারেনা যে শরতকাল চলে এসেছে। আসলে কি মুসলিমরা শরতকাল আনার জন্য মূর্তি ভাঙ্গে না কি সেটা তাদের ইমানী দাত্বিয় চলুন দেখে নেওয়া যাক। মূর্তিপূজকদের মূর্তি ভেঙ্গে ফেলা রাসূল ও সাহাবীগণের সুন্নাহ।


আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুহাম্মদ যখন (মক্কা বিজয়ের দিন) মক্কায় প্রবেশ করেন, তখন কাবা ঘরের চারপাশে তিনশত ষাটটি মূর্তি ছিল। মুহাম্মদ নিজের হাতের লাঠি দিয়ে মূর্তিগুলোকে আঘাত করতে থাকেন আর বলতে থাকেনঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয়ই মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল। [সহীহুল বুখারী, হাদিস নং ৪৭২০]


ইবনে ইসহাক বলেনঃ মক্কা বিজয়ের পর উযযা মূর্তি ধ্বংস করার জন্যে রাসূলুল্লাহ খালিদ ইবনে ওয়ালিদকে প্রেরণ করেন। নাখলা নামক স্থানে একটি মন্দিরে উযযা মূর্তি স্থাপিত ছিল। কুরাইশ, কিনানা ও মুদার গোত্র এর পূজা করত এবং সেবা যত্ন ও পাহারাদারীর দায়িত্ব ছিল বনু হাশিমের মিত্র ও বনু সুলাইমের শাখা গোত্র বনু শাইবানের উপর। খালিদ যখন সেখানে পৌঁছলেন তখন মূর্তিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে তবে ছাড়লেন এবং কাজ সম্পাদন করে রাসূলুল্লাহ  এর নিকট ফিরে এলেন। [আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৪৫]


তায়েফের যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পর সাকীফ গোত্রের লোকেরা যখন ইসলাম গ্রহণ করে, তখন তারা রাসূল এর সাথে যে সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিল তার মধ্যে একটি ছিল এই যে, তাদের লাত নামক মূর্তিটি তিন বছর পর্যন্ত রেখে দিতে হবে। এ সময়ের মধ্যে এটিকে ভাঙ্গা যাবে না। যাতে করে এ গোত্রের মূর্খ লোকদের ক্ষতি থেকে বাঁচা যায়। নবী তাদের এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন। তারপরও তারা জোর দাবি করতে থাকল। নবী বরাবরই অস্বীকার করলেন। পরিশেষে তারা মাত্র এক মাস রেখে দেওয়ার অনুরোধ করলে নবী কোন মেয়াদেই তা রেখে দিতে অস্বীকার করলেন।


সবশেষে তারা যখন নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিল, নবী তখন তাদের সাথে আবু সুফিয়ান ও মুগীরা ইবনে শুবাকে লাত নামক মূর্তিটি ভাঙ্গার জন্য পাঠালেন। মুগীরা ইবনে শুবা যখন হাতিয়ার হাতে নিয়ে মূর্তিটির ঘরে প্রবেশ করলেন, তখন বনী মুগীসের লোকেরা মুগীরাকে হেফাযতের জন্য তার চারপাশে ঘুরাফেরা করছিল। কারণ তাদের আশঙ্কা ছিল উরওয়ার মত তাকেও তীর নিক্ষেপে হত্যা করা হয় কিনা (ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার কারণে বনী সাকীফ গোত্র পূর্বে উরওয়া বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে তীর নিক্ষেপের মাধ্যমে শহীদ করে দিয়েছিল)। আর বনী সাকীফের মহিলারা মূর্তিটির জন্য বিলাপ শুরু করে দিল। তিনি মূর্তিটি ভেঙ্গে সেখানকার সকল ধন-সম্পদ নিয়ে আসলেন।


তায়েফের ঘটনা থেকে প্রমাণ মিলে যে, ভেঙ্গে ফেলার ক্ষমতা থাকলে শিরক ও তাগুতের আড্ডাকে একদিনের জন্যও অবশিষ্ট রাখা জায়েজ নেই। কেননা এগুলো হচ্ছে শিরক ও কুফরের নিদর্শন এবং সর্বাধিক গর্হিত কাজ। সুতরাং ক্ষমতা থাকলে এগুলোকে বহাল রাখা কখনোই বৈধ নয়। [মুখতাসার যাদূল মাআদ কিতাব থেকে সংগৃহীত]


খলিফা ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিকের খিলাফতকালে কুতাইবা ইবনে মুসলিম জিহাদ ও সন্ধির মাধ্যমে মুশরিকদের নিকট থেকে সমরকন্দ বিজয় করেন। উক্ত শহরে একটি মসজিদ ও মিম্বার তৈরির পর কুতাইবা শহরে প্রবেশ করেন। তিনি মসজিদে সালাত আদায় করেন, খুতবা দেন ও খাদ্য গ্রহণ করেন। অতঃপর সমরকন্দের মুশরিকদের মূর্তিগুলো তাঁর সামনে উপস্থিত করা হল এবং সেগুলোকে স্তুপ করে রাখা হল। মূর্তির সংখ্যা এত বেশি ছিল যে, স্তুপটি একটি বিরাট প্রাসাদের রূপ ধারণ করল। তারপর তিনি এগুলোকে পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। তারা তখন ক্রন্দন ও বিলাপ করতে লাগল। এক অগ্নিপূজারী বলল, এগুলোর মধ্যে একটি পুরানো দেবী আছে। যে এটিকে পুড়াবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। সমরকন্দের বাদশাহ গাওরাক এগিয়ে আসলেন এবং এ কাজ করতে নিষেধ করলেন। আর কুতাইবাকে বললেন, আমি আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী, আপনি এরূপ কাজ করবেন না। কুতাইবা দাঁড়ালেন ও অগ্নিশিখা হাতে নিলেন এবং বললেন, আমার নিজের হাতে এটিকে পুড়াবো, তোমরা সকলে মিলে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কর, তোমাদেরকে বেশি সময় দেওয়া হবে না। তারপর তিনি এটির কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং আল্লাহু আকবার বললেন ও তার উপর অগ্নিশিখা ফেলে দিলেন। তারপর তা পুড়ে গেল। [আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খন্ড ৯, পৃষ্ঠা ১৪৭]

লিখেছেন সজীব হোসেন

↑PREVIOUS-একটু ইসলাম প্রীতি 

NEXT- নাস্তিক বিদ্বেষী

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

জাতীয়তাবাদ আরেকটি ধর্ম বই

বাংলাদেশীরা ধর্মভীরু। ইসলাম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ও জাতীয়তাবাদ নামক ধর্মগুলোর প্রতি বাঙ্গালীর দুর্বলতা নতুন কিছু নয়। আমরা যারা মুক্ত-চেতনাকে প্রয়োজনীয় মনে করি, যুক্তিকে ধর্মের ওপরে স্থান দেই তাদের অনেকেই ধর্মের মতই সামনে আসা অন্যান্য প্রতিটি ধারনা ও প্রস্তাবনাকেই যুক্তি দিয়ে বুঝতে চাই, খতিয়ে দেখতে চাই। বা দদূএকটি রূপ আধ্যাত্মিকতা ও ধর্ম হিসাবে মানুষের দলবদ্ধ সমাজব্যবস্থার দ্বিতীয় বড় চালক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। প্রস্তরযুগে আরো একটি ঘটনা ঘটতে শুরু করেছিল। মানুষেরা নিজেদের গ্রাম বা নগরকে কেন্দ্র করে একটি সামষ্টিক পরিচিতি অনুভব করে শুরু করেছিল। বোধ করি তখন থেকেই মানুষের দলবদ্ধতার তৃতীয় চালক জাতীয়তাবাদের প্রাথমিক যাত্রা শুরু। বর্তমানে সারা দুনিয়ায় জাতীয়তাবাদ নানান চেহারায় দলবদ্ধতার সবচাইতে শক্তিশালী চালক হিসাবে বিদ্যমান। একটি নৃগোষ্ঠী যখন পুঁজিবাদী হতে শুরু করে, যখন সে একটি কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্র গঠন করে তখনই সে একটি জাতিতে পরিণত হয়। ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ আমাদের দেশের রাজনীতিতে কাছাকাছি আছে ইতিহাসের শুরু থেকে। মহাভারত থেকে আজকের খালেদা-হাসিনার রাজনীতিতে ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ একে অন্যের হাত...

গাজওয়াতুল হিন্দ

গাজওয়াতুল হিন্দকে বর্তমান বাংলাদেশ ভারত ও নেপাল শ্রীলংকার জিহাদীরা তাদের মনে আটকে রেখেছে। এই বিষয়ে নানা মতাভেদ থাকলেও সকল মুসলিম জিহাদীরা মনে করে বা আ শা করে যে ইসলাম সারা পৃথীবিতে এই জিহাদের মাধ্যামে প্রতিষ্টা হবে। তারা এটাকে মর্যাদার্পূণ জিহাদ বলে মনে করে। ইসলামের ভিত্তির অন্যতম হলো জিহাদ। ইসলাম প্রতিষ্ঠাকালীন প্রচুর যুদ্ধ করা এবং হত্যার পরেই মানুষ ভয়ে ইসলামকে গ্রহন করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ভায়রাস বলা হয় ইসলামকে। এই ভায়রাস আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে গাজওয়াতুল হিন্দকে কেন্দ্র করে। বর্তমানে জিহাদীরা তাদের দলে লোক বেসি করার জন্য অনলাইনে সহ নানা জাগাতে ঠিক এই ভাবে মুসলিমদের উপর প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে "গাজওয়াতুল হিন্দ বা ভারতবর্ষের যুদ্ধ সম্পর্কে কি আপনি অবগত? আপনি কি কাফের মুশরিকদের সাথে লড়াই করতে প্রস্তুত?" ইসলামীষ্ট  জিহাদীরা ঠিক এভাবে চাই যে সারা পৃথিবীতে সবচে’ বড় যে ধর্মযুদ্ধ হবে সেটা হবে হিন্দুস্তান তথা ভারতের হিন্দুদের সাথে মুসলমানদের যা সমস্থ জ্ঞানি ইসলামি স্কলার এবং আলেম উলামা জানে। মুসলমানদের জন্য এটা খুব বড়  জিহাদ এবং এই জিহাদের গুরুত্ব অপরিসীম। এই...

বাঙালি এবং লেখকের জীবন

লেখকের বেঁচে থাকার প্রথম শর্ত তার পরিবারের স্বীকৃতি।এখানে স্বীকৃতির অর্থ হচ্ছে-লেখালেখি যে একটি কাজ,অন্য মতোই একটি কাজের, এবং সেই কাজের জন্য মনোযোগ,সময় এবং শ্রম বিনিয়োগ করতে হয়-এই বোধটা তৈরী হওয়া।লেখালেখিকে মহাগুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে নাই বা ধরা হলো। কিন্তু এটি যে একটি কাজ,এই স্বীকৃতিটা পরিবার থেকে আসা খুব প্রয়োজন। আমাদের দেশের বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতি বান লেখক শেষ পর্যন্ত যে লেখক হয়ে উঠতে পারে না,লেখক জীবন যাপন করতে পারেন না,লেখালেখির জগত থেকে তাদের যে অকাল বিদায় নিতে হয়,তার সবচেয়ে বড় কারণ এটাই।লেখালেখিকে পারিবারিক ভাবে স্বীকৃতি না দেওয়া।দেশের অন্য সব মানুষদের মতোই বেশির ভাগ পরিবারে লেখালেখি একটি নেহাৎ ই শখের জিনিস।তারুণ্য বা অংকুরোদ্গমী যৌবনে যৌনতার চুলকানিরও পেয়ে বসে আমাদের দেশের মানুষদের।তখন তাদের লেখাকে বাবাহা দেয় বাড়ির ভাবীরা,কাকা-জ্যাঠারা,সহপাঠীরা,বা তার কোন প্রেমিক-প্রেমিকাও।কখনো কখনো এমনকি বাবা মাও।তারা সকলেই অবচেতনে,এবং নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানে যে,এই চুলকানি বেশিদিন থাকবে না।কিন্তু যার ক্ষেত্রে থেকে যায়,অর্থাৎ যে বুঝে যায় যে লেখক হওয়াটাই তার ভবিতব্য,সমস্যাটা তার ক্ষ...