এই ব্লগটি সন্ধান করুন

কোরানের দৃষ্টিতে বিবর্তনবাদ


কোরানের দৃষ্টিতে বিবর্তনবাদ। 


যদিও অল্প শিক্ষিত, একপেশে শিক্ষায় শিক্ষিত মৌলানারা বিজ্ঞানের তাবৎ আবিষ্কারের পিছনে পবিত্র কোরআন শরীফের ভূমিকা নিয়ে বগলদাবা বাজিয়ে চিৎকার করে, কিন্তু বিজ্ঞানের একটি আবিষ্কার 'বিবর্তনবাদ' এর বিষয়ে এদের এতই চুলকানি যে বিবর্তনবাদের কথা উঠিলেই এরা হৈ হৈ রৈ রৈ করে উঠে। এদের হৈচৈ শুনে মনে হবে যে এর চেয়ে বড় শত্রু ইসলামের আর নেই। 'বিবর্তনবাদও কোরআন শরীফ থেকে আবিষ্কার হয়েছে' এমন কথা বলতে কখনো বলতে শোনা যায় না। কেন? এই কয়েকদিন আগে কিছু আলেম নামধারী ব্যক্তিবর্গ পাঠ্যপুস্তক থেকে ডারউইনবাদ বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। বিবর্তনবাদ কি একেবারে ইসলামের বিপরীত? আমার তা মনে হয় না। আসুন একটু আলোচনা করা যাক।

প্রথমেই আসুন জানা যাক, বিবর্তন বলতে আমরা কি বুঝি- বিবর্তন বা অভিব্যক্তি ( Evolution) হলো এমন একটি জীববৈজ্ঞানিক ধারণা যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে জীবের গাঠনিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ক্রমপরির্তনকে বুঝায়। কোনো জীবের বংশধরদের মাঝে যে Genetic information ছড়িয়ে পড়ে তারাই বংশপ্রবাহে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি করে। জিনের Mutation বা পরিব্যক্তির মাধ্যমে জীবের নির্দিষ্ট কোনো বংশধরে নতুন বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব হতে পারে বা পুরনো বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটতে পারে। যদিও একটি প্রজন্মে জীবের বৈশিষ্ট্যের যে পরিবর্তন সাধিত হয়, তা খুবই সামান্য। কিন্তু কালক্রমে জীবগোষ্ঠীতে সেই পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য হয়ে দেখা দেয় এবং এমনকি একসময় তা নতুন Species বা প্রজাতির উদ্ভবেরও কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বের (যা প্রকাশিত হয় ১৯৫৯ সালে, তার গবেষণার প্রায় ত্রিশ বছর পর) প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠলেন সারা দেশের ধর্মগুরুরা। এই তত্ত্ব বাইবেললোক্ত সৃষ্টিতত্ত্বের বিরোধী- এই বলে আক্রমণ করা হলো ডারউইন তত্ত্বকে। শুধু সভা-সমিতি নয়, কার্যক্ষেত্রে নানা ভাবে ডারউইনকে হেয় করার চেষ্টা করা হলো। মানুষকে বানরের মতো করে কার্টুন আঁকা হলো। Monkey law নামে আমেরিকার বিভিন্ন প্রদেশে ডারউইন তত্ত্ব পড়ানো নিষিদ্ধ হলো।

তবে বইটি প্রকাশিত হওয়ার হওয়র সঙ্গে সঙ্গে গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়লেন ফ্রিডরিশ এঙ্গেলস। পরের বছর কার্ল মার্কস এই বইটি পড়ে ১৮৬০ সালের ১৯ ডিসেম্বর এঙ্গেলসকে লিখলেন, আমাদের ধারণার প্রাকৃতিক- ঐতিহাসিক বুনিয়াদ সৃষ্টি করে দিয়েছে বইটি। ডারউইনের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ঋণ স্বীকারের উদ্দেশ্যে ‘ক্যাপিটাল’ গ্রন্থটিতে ডারউইনের নামেই উৎসর্গ করেছিলেন মার্কস। এঙ্গেলস তার ‘ডায়লেকটিকস্ অব নেচার’ বইয়ে প্রকৃতিবিজ্ঞানের জগতে তিনটি ঘটনাকে চূড়ান্ত গুরুত্ব দিয়েছেন- জীবকোষের আবিষ্কার, শক্তির সংরক্ষণ ও তার রূপান্তরের নিয়ম আবিষ্কার এবং ডারউইনের আবিষ্কার।

মানুষ সৃষ্টির রহস্য বাইবেলে এমনভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, পড়লে মনে হবে ঠাকুর মার ঝুলি পড়ছি। সবচেয়ে বড় কথা বিশ্বাস ব্যতীত এই গল্পের সপক্ষে যুক্তি বা প্রমাণের উল্লেখ নাই। ফলে ডারউইনের তত্ত্ব প্রথম দিকে সবচেয়ে বড় আঘাত হেনেছিল খ্রিস্টধর্মে। শুরু থেকেই গীর্জা ও গির্জার পাদ্রিরা কখনো মেনে নিতে পারেন নি। ডারউইন প্রথম প্রকৃতির বিবর্তনের এবং সেই প্রকৃতিতে মানবজাতির অবস্থানের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন- এবং সেই প্রথম তাঁর এই ব্যাখ্যায় ঈশ্বরের নাম উল্লেখ ছিল না। গির্জার নেতাদের অনেকের জন্য এটা ছিল প্রচলিত বিশ্বাসকে অবজ্ঞা করা। তারপরও ১৮৮২ সালের ২৬শে এপ্রিল মানব-ইতিহাসের সবচেয়ে যুগান্তকারী তত্ত্বের জন্মদাতা প্রকৃতিবিজ্ঞানী ডারউইনের মৃত্যুর পর লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার গির্জায় ব্রিটেনের মানুষ তাঁকে সর্বোচ্চ মর্যাদায় সমাহিত করেছিল।

যদিও তাঁর শেষকৃত্য কোথায় কীভাবে হবে সেই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিল তাঁর পরিবার, ইংল্যান্ডের ধর্মীয় নেতারা, বিজ্ঞানীমহল এবং রাষ্ট্র। তাঁর শেষকৃত্যের দিন সকালে টাইমস অফ লন্ডন তার খবরে লিখেছিল ''এধরনের মর্যাদা সহকারে সমাধি দেওয়াটা চালর্স ডারউইনের অবশ্য প্রাপ্য ছিল- ওয়েস্টমিনিস্টার গির্জায় তাঁকে সমাধিস্থ করার বিষয়টি ডারউইনের জন্য যতটা না সম্মানের তার থেকে অনেক বেশি সম্মানের ছিল ওই গির্জার জন্য''। অবশেষে তাঁকে ওয়েস্টমিনস্টার এবে তেই সমাহিত করা হয়। তাঁকে সম্মান জানিয়ে ইংল্যান্ডে এবং অস্ট্রেলিয়ায় একটি শহরের নামকরণ করা হয় ডারউইন।


গত কয়েক বছর আগে ভ্যাটিকান সিটির পোপ ডারউইনের মতবাদকে বাইবেল বিরোধী নয় বলে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে। ইহুদিদের তৌরাতেও একই রকম তত্ত্ব থাকা সত্বেও এ নিয়ে ইহুদিদের কোনরকম চুলকানি নাই, সব চুলকানি কেবল মুসলিম মৌলবি ও স্কলারদের (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) মধ্যে। কেন? মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থে পৃথিবী ও মানুষের সৃষ্টি তত্ত্ব তো বাইবেল ও তোরাহ্ এর প্রায় হুবহু একই রকম। যার কারণে ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা প্রায়ই বলে থাকেন কোরআন বাইবেল থেকে চুরি করে লেখা।

একটা বিষয় স্বীকার করতেই হবে সাধারণ মোল্লা মৌলবিদের বেশিরভাগ ডারউইনের তত্ত্ব ছুঁয়েও দেখেনি। এরা ডারউইনের তত্ত্ব বলতে বুঝে বানর থেকে মানুষ সৃষ্টি হয়েছে (যদিও বিবর্তনবাদের কোথাও এমন কথা লেখা নেই)। কিন্তু যাঁরা ইসলামিক স্কলার বলে স্বীকৃত যেমন জাকির নায়েক, আহমেদ দিদাত, হারুন এহিয়া প্রমুখ যখন তাঁরাও বিবর্তনবাদের বিরোধিতা করে তখন বেশ অবাক হতে হয়। ডারউইনকে বাদই দিলাম আমরা যাঁরা জীববিজ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত তাঁরা তো হরহামেশাই জীবনের বিবর্তন দেখছি, এবং গবেষণাগারে প্রতিনিয়ত বিবর্তন ঘটাচ্ছি। সেই বিবর্তনকে কাজে লাগিয়ে চিকিৎসা শাস্ত্রে ও কৃষি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করছি, যার সুফল ভোগ করছে বিশ্বের লক্ষ কোটি মানুষ।

ডিএনএ রিকম্বিনেন্ট টেকনোলজির মাধ্যমে নতুন নতুন ঔষধ, প্রাকৃতিক হরমোন, এনজাইম প্রভৃতি আবিষ্কৃত হচ্ছে। উদ্ভাবন করা হচ্ছে নতুন নতুন প্রজাতির উচ্চ ফলনশীল ও কষ্টসহিষ্ণু শস্য (ইরি ধান, বি আর 28 ইত্যাদি) ফল (হাইব্রিড মুলা, টমেটো, বেগুন ইত্যাদি) ফসল ইত্যাদি। উদ্ভাবিত হচ্ছে উন্নত জাতের মৎস্য (তেলাপিয়া, নাইলোটিকা, কার্ফু ইত্যাদি) গবাদি পশু (ফ্রিজিয়ান, এরিশায়ার, জার্সি, ব্রাহমা ইত্যাদি) ও হাঁস (খাকি ক্যাম্পবেল, ইন্ডিয়ান রানার ইত্যাদি) মুরগি (ব্রয়লার, ককরেল, ব্রাহমা, কোচিন, ব্রাকেল, ডর্কিং, সিমানি ইত্যাদি)। এগুলো তো মানুষের চোখের সামনেই ঘটছে, এবং মানুষ সেগুলো খাচ্ছেও প্রতিদিন। তারপরও কিসের ভিত্তিতে বিবর্তনকে অস্বীকার করে তর্ক করতে আসে? বুঝে আসে না। আশা করি বিবর্তন যে সত্যি এ নিয়ে এখন বোধ হয় কারো কোন দ্বিমত নাই। সমস্যা হলো ডারউইনের বিবর্তনবাদ নিয়ে।

এর মূল কারণ হচ্ছে চার্লস ডারউইনের ‘অরিজিন অব স্পিসিজ’ প্রকাশিত হবার ১৫০ বছর পরেও বিবর্তন তত্ত্ব জনসাধারণের কাছে ব্যাপক পরিসরে ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়ে আসছে। কিন্তু বিবর্তন কোনো কম গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব নয় কিংবা বোঝার জন্য জটিল কোনো বিষয়ও নয়। অথচ শুধু ইসলামী দেশগুলোতে নয়, ধর্মীয় ভাবে উদার ও বিজ্ঞানে অগ্রসর খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সদ্য পরিচালিত এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, অর্ধেকের বেশি আমেরিকানরা মনে করেন, মানুষ তার বর্তমান কাঠামো নিয়ে আজ থেকে দশ হাজার বছর আগে সৃষ্টি হয়েছে (!!)।( Brooks 2001, CBS 2004)। প্রায় একই সংখ্যার জনসাধারণ মানুষের অন্য প্রজাতির প্রাণী থেকে বিবর্তিত হওয়ার তত্ত্বটিকে ভুল বলে মনে করেন। (National Science Board 2000)।

অথচ সাক্ষ্য-প্রমাণ থেকে স্পষ্ট, শুধু মনুষ্য প্রজাতিই নয়, কোনো প্রজাতিই হঠাৎ করে আসেনি। প্রতিটি জীবেরই বিবর্তনের ইতিহাস রয়েছে এবং এই ইতিহাস গুলো প্রত্যেকেই একে অপরের সাথে জটিলভাবে বিন্যস্ত। এর আগে ল্যাবরেটরিতে নতুন নতুন প্রজাতি উদ্ভাবনের কথা তো উল্লেখ করেছিই। বিরূপ পরিবেশের বিরুদ্ধে (এন্টিবায়োটিকের মুখোমুখি) টিকে থাকার জন্য ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস কিভাবে নিজেকে বিবর্তিত করে নতুন প্রজাতির (Drug resistant) জীবাণু হিসেবে আবির্ভূত হয় এটি কিন্তু আজ কারোরই অজানা নয়।

ডারউইনের তত্ত্ব কে জানতে হলে ডারউইনের পূর্বে বিবর্তনের পক্ষে যে সকল মতবাদ ছিল তা জানতে হবে, ল্যামার্কের তত্ত্ব ও গ্রেগরি মেন্ডেলের সূত্র তদুপরি লিনিয়াসের শ্রেণী বিন্যাসের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে। তা নাহলে ডারউইনের বিবর্তনবাদকে বিশ্লষণ করা যাবে না, করলেও ভুল ব্যাখ্যা হবে। কারণ শুধুমাত্র অর্ধশিক্ষিত মানুষ না, শিক্ষিত অনেকেই ডারউইনের বিবর্তনবাদ ল্যামার্কের তত্ত্ব, গ্রেগরি মেন্ডেলের বংশগতির সূত্র এবং লিনিয়াসের শ্রেণী বিন্যাসের সাথে গুলিয়ে ফেলে। তাই প্রথমে সংক্ষেপে এগুলো নিয়ে আলোচনা করবো, তারপর ডারউইনের বিবর্তনবাদ বিশ্লেষণ করব। তাহলে বিষয়টি বুঝতে সুবিধা হবে।


জ্যাঁ ব্যাপতিস্তে ল্যামার্ক ছিলেন একজন প্রপ্রখ্যাত ফরাসি জীববিজ্ঞানী। ১৭৪৪ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৮২৯ সালে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি অসংখ্য উদ্ভিদ ও জীবজন্তুর উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বিবর্তনের বিষয়ে নিশ্চিত হন এবং এ বিষয়ে একটি তত্ত্ব প্রদান করেন। অনেকে ল্যামার্কবাদের সাথে ‘ ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব’-কে গুলিয়ে ফেলেন। এক দিক দিয়ে ল্যামার্ক-ও বিবর্তনবাদী ছিলেন কারণ তিনি মানতেন, নতুন প্রজাতিসমূহ প্রাচীন প্রজাতি থেকে বিবর্তিত হয়ে এসেছে। কিন্তু তিনি প্রজাতির পরিবর্তনে প্রয়োজনীয় সময় এবং জৈববিবর্তনের পদ্ধতি নির্ণয়ে ভুল করেছিলেন। ল্যামার্ক জৈববিবর্তনের পদ্ধতি সম্পর্কে ভেবেছিলেন- একটি জীবের জীবনকালে পরিবেশ থেকে অর্জিত বৈশিষ্ট্য পরবর্তী প্রজন্মে প্রবাহিত হয়ে থাকে।

এক্ষেত্রে তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ ‘জিরাফ’। ল্যামার্কের মতে, জিরাফের পূর্বপুরুষদের তুলনামূলক ছোট গলা ছিল এবং এরা উঁচু গাছের পাতা খেতে গিয়ে গলাটাকে লম্বা করার চেষ্টা করত। জিরাফের এই উঁচু ডাল থেকে পাতা খাওয়ার প্রবণতা পরবর্তী প্রজন্মে ছড়িয়ে যায় এবং বংশধরেরা লম্বা গলা লাভ করে। যা মূলত ভুল ছিল। অর্জিত বৈশিষ্ট্য বংশধরদের মধ্যে প্রবাহিত হয় না। আপনি যদি কোন দুর্ঘটনায় আপনার হাত বা পা হারান, তবে আপনার পরবর্তী প্রজন্ম হাতছাড়া অবস্থায় জন্ম লাভ করে না। পেশি শক্ত করতে বা বৃদ্ধি করতে আপনি যদি ভার উত্তোলন করেন, তবে আপনার উত্তরসূরির কেউই সেই শক্ত পেশির বৈশিষ্ট্য জন্ম থেকেই লাভ করে আসবে না। ইহুদিরা (মুসলমানরাও) শত শত প্রজন্ম ধরে খৎনা প্রথা মেনে চলছে কিন্তু আজ পর্যন্ত এই অর্জিত বৈশিষ্ট্য জৈবিকভাবে প্রবাহিত হওয়ার কোন লক্ষণ (ছেলে সন্তানের খৎনা করা লিঙ্গ নিয়ে জন্ম, যদিও মাঝেমধ্যে পাওয়া যায় কিন্তু তা ব্যতিক্রম হিসাবেই আসে, ধারাবাহিকতায় নয়) পাওয়া যায়নি।

ল্যামার্ক আরো মনে করতেন, নতুন প্রজাতির বিবর্তন অল্প কিছু প্রজন্মে বা এক প্রজন্মেই হওয়া সম্ভব। ঐ সময়ে ল্যামার্কের ধারণা হয়তো ন্যায়সঙ্গত ছিল কিন্তু পরবর্তীতে এই ধারণাগুলি ভুল বলেই প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। বর্তমানে (Drug resistant bacteria ও ল্যাবরেটরিতে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভাবনের পর) পুনরায় এটিকে সত্য বলেই ভাবতে হচ্ছে।

অনেকেই বৈজ্ঞানিক লিনিয়াসের শ্রেণী বিন্যাস দিয়ে বিবর্তনকে বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু এখানেও কিছু গলদ রয়েছে। যদিও এই শ্রেণী বিন্যাস প্রাণী জগতের প্রাণীদের মধ্যকার পারষ্পরিক সম্পর্ক (hierarchy) নির্দেশ করে, কিন্তু বিবর্তনকে বুঝতে এটি যথেষ্ট নয়। লিনিয়াসের পূর্বেও প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সভ্যতায় Great Chain এর ধারণার উদ্ভব হয়েছিল। গ্রেট চেইন-এর মূল বিষয়গুলো এরকম : ঈশ্বর এবং তার সৃষ্টির একটি পদক্রম (hierarchy) রয়েছে, যার একেবারে নীচে রয়েছে সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ বস্তু বা জীব আর একদম শীর্ষে রয়েছেন ঈশ্বর নিজে। নীচ থেকে উপরের ক্রমটি অনেকটা এভাবে সাজানো : শিলা, খলিজ, উদ্ভিদ, প্রাণী, মানুষ, দেবদূত, ঈশ্বর। গ্রেট চেইন-এর এই ধারণাটি মোটেই বিবর্তনকে সামনে রেখে তৈরি করা হয়নি, হয়েছিল সৃজনবাদকে সামনে রেখে।

লিনিয়াসের শ্রেণী বিন্যাস অনুযায়ী প্রাণী জগত অধিজগত (domain), জগত (kingdom), পর্ব (phylum), শ্রেণী(class), বর্গ (order), পরিবার (family), গন (genus) ও প্রজাতি (species) এইভাবে পদক্রম করা হয়েছে। ফলে দেখা যায় যে কোন প্রজাতি পদক্রমের কোন না কোন স্তরে অন্য অনেক প্রজাতির পদক্রমের সাথে মিলিত হয়ে যায়। ফলে ধারণা করা হয় ঐ সকল প্রজাতির উদ্ভব হয়েছিল ঐ একটি কমন পদক্রম হতে, বিবর্তনের পথ ধরে।

বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যকার দৃশ্যমান বিভিন্ন অঙ্গসাংস্থানিক ও জিনগত সাদৃশ্যগুলো একটা ধারণা দেয় যে আমাদের পরিচিত সকল প্রজাতির প্রাণীই এক ধারাক্রমিক পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি "সাধারণ পূর্বপুরুষ" থেকে ধীরে ধীরে উৎপত্তি লাভ করেছে।
চলবে------
 

লিখেছেনঃDara Chowdhury.
ফেসবুক লেখক এবং ব্লগার।
prev post
next post

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ