এই ব্লগটি সন্ধান করুন

কোরআনের দৃষ্টিতে বিবর্তনবাদ-২



বিবর্তনের ধারণাকে দাঁড় করাতে হলে জিনে ও পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে কমপক্ষে পাঁচটি স্বতন্ত্র প্রক্রিয়ার প্রয়োজন, তা বুঝতে হবে; যথা Replication বা প্রতিলিপিকরণ, Variation বা প্রকরণ, Selection বা নির্বাচন, Fixation বা স্থায়ীকরণ ও Relocation বা স্থানান্তরকরণ।

Replication বা প্রতিলিপিকরণ : বাবা-মা থেকে যে সন্তানটি জন্ম নেয়, তার বৈশিষ্ট্য গুলো তার বাবা-মা'র খুব কাছাকাছি হয়। কারণ, প্রজননের সময় বাবা-মা দুজনই তাদের DNA-এর প্রতিরূপ সৃষ্টি করে, যেটি তাদের সন্তানের মধ্যে গিয়ে পুনর্গঠিত হয়। ফলে সন্তানের DNA-এর গঠন তার পিতামাতা থেকে কিছুটা হলেও পৃথক থাকে। ফলে সেই সন্তানের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও হয় পিতামাতা থেকে কিছুটা ভিন্ন। সন্তান কখনও তার পিতামাতার অবিকল প্রতিরূপ (ইংরেজি: clone) হয় না; বাবা-মা আর সন্তান-সন্ততি প্রত্যেকেই ভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হয়ে থাকে। যদি পিতামাতা আর তাদের সন্তানদের DNA হুবহু একই রকম হত, তাহলে জনগোষ্ঠী কখনও পরিবর্তিত হত না, অর্থাৎ বিবর্তন হত না।

Variation বা প্রকরণ: DNA-র হুবহু প্রতিরূপ তৈরি করতে না পারার কারণ হল, DNA একটি অত্যন্ত জটিল অনু, আর প্রতিরূপের সময় সামান্য ত্রুটি (error) তথা মিউটেশন (mutation) বা পরিব্যপ্তি ঘটতে পারে। ফলে তা সন্তানের দেহে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটায়। আর এই পার্থক্যের মূলে রয়েছে DNA তে gene sequence এ পরিবর্তন ঘটা। প্রকরণের আরেকটি প্রধান করণকৌশল হচ্ছে "জেনেটিক ড্রিফট", যে স্বাধীন পদ্ধতিতে গোষ্ঠীস্থিত বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতির হার বা ফ্রিকোয়েন্সি অব ট্রেইটস দৈবাৎ পরিবর্তিত হয়। এটি কোন প্রাকৃতিক কারণে বা কৃত্রিম উপায়ে, দুইভাবেই সংঘটিত হতে পারে।

Selection বা নির্বাচন: বলতে বোঝায়, যে প্রক্রিয়ায় কোন নতুন প্রকরণের জীব পরিবেশের সাথে ভালোভাবেই অভিযোজন ঘটাতে পারে, টিকে থাকতে পারে এবং তাদের জিনকে পরবর্তী প্রজন্মে পৌঁছে দিতে পারে। এটি এমন একটা ঘটনা যার মাধ্যমে জীবগোষ্ঠীতে অধিকতর সবল বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন জীবের আধিক্য হয় এবং কম সবল বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন জীবের সংখ্যা হ্রাস পায়। কারা ভালভাবে অভিযোজিত হতে পারবে কারা পারবে না তার কার্যকারণ ব্যাখ্যা করা কঠিন। সে জন্য এই নির্বাচনকে বলা হয় প্রাকৃতিক নির্বাচন বা Natural Selection।

Relocation বা স্থানান্তরকরণ: টিকে থাকার প্রয়োজনে যে সকল বৈশিষ্ট্য জীবের মাঝে অর্জিত হয় তার সবগুলোই পরবর্তী প্রজন্মে পৌঁছায় না। যেগুলো পরবর্তী প্রজন্মে পৌঁছাতে পারে কেবল সেই বৈশিষ্ট্যই পরবর্তী প্রজন্মে প্রকাশ পায়। তাকেই Relocation বা স্থানান্তরকরণ বলে।

Fixation বা স্থায়ীকরণ: যে বৈশিষ্ট্যগুলো কোন জীবের সন্তান উৎপাদনের সময় অধিক প্রাধান্য পায়, বংশগতভাবে সে বৈশিষ্ট্য গুলোই পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত হয় এবং প্রজন্মান্তরে সেই বৈশিষ্ট্য গুলোই অধিক সংখ্যক প্রজন্মে দেখা দিতে থাকে। এভাবে বাড়তে বাড়তে এমন এক পর্যায় আসে যখন পপুলেশনের অন্তর্গত প্রতিটা জীবের মধ্যেই সেই বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। এটাকে বলা হয় "ফিক্সেশন" (fixation)। আর তখনই তা নতুন প্রজাতি হিসেবে গড়ে উঠে।

এই পাঁচটি প্রক্রিয়া প্রতিনিয়তই আমাদের প্রকৃতিতে ঘটে চলছে, নতুন নতুন প্রজাতির জন্ম দিচ্ছে এবং এদের সম্মিলিত ক্রিয়াকেই আমরা বিবর্তন (ক্রমবিকাশ) বলে অভিহিত করে থাকি।

এটি নব্য-ডারউনবাদ (Neo-Darwinism) নামে অভিহিত। কারণ ডারউইনের আমলে জিন সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা ছিল না। ফলে বিবর্তনের molecular ব্যাখ্যা দেওয়া তখন সম্ভব ছিল না। ডারউইনের বিবর্তনবাদ প্রায় এরকমই, কিন্তু তা ছিল তাঁর নিবিড় পর্যবক্ষেণের ফল। পরবর্তীতে সেই পর্যবক্ষেণের অনেকগুলি দিকেরই সত্যতা ল্যাবরেটরিতে যাচাই করা সম্ভব হয়েছে।

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের দিকে ডারউইনীয় প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্বের সাথে মেন্ডেলীয় বংশগতি বিদ্যার মেলবন্ধনে প্রতিষ্ঠিত হয় মডার্ন এভুলিউশনারি সিনথেসিস, যা প্রাকৃতিক নির্বাচন ও মেন্ডেলীয় জেনেটিক্সের সাহায্যে সমন্বিতভাবে বিবর্তনকে ব্যাখ্যা করে। এই শক্তিশালী ও ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম তত্ত্বটি বা প্রেডিক্টিভ থিওরি আজ আধুনিক জীববিজ্ঞানের কেন্দ্রীয় মূলতত্ত্বে পরিণত হয়েছে; প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই পৃথিবীতে প্রাণিবৈচিত্র্যের একমাত্র বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যারূপে। সে জন্যই জীববিজ্ঞানী এবং বংশগতিবিদ, কলম্বিয়া এবং রকফেলার ইউনিভার্সিটি ও ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিউট অব টেকনোলজির অধ্যাপক থিওডসিয়াস ডবঝানস্কি উল্লেখ করেছেন, " বিবর্তনের আলোকে না দেখলে জীববিজ্ঞানের কোনো কিছুরই আর অর্থ থাকে না।"

তাই ডারউইনের মতে ব্যাপার গুলি ছিল এইরকম -
(১) অধিক মাত্রায় বংশবৃদ্ধি :- অত্যধিক হারে বংশবৃদ্ধি করাই হল জীবের সহজাত বৈশিষ্ট্য । এর ফলে জ্যামিতিক ও গাণিতিক হারে জীবের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এই অত্যাধিক হারে বংশবৃদ্ধি প্রাণীকে বেঁচে থাকার বা অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই এর দিকে ঠেলে দেয়।
(২) অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম :- জীবের জ্যামিতিক ও গাণিতিক হারে সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটার জন্য এবং খাদ্য ও বাসস্থান সীমিত থাকায় বেঁচে থাকার জন্য জীবকে কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হয়। ডারউইন এই রকম সংগ্রামকে 'অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম' (struggle for the existence) আখ্যা দিয়েছেন । জীবকে তিনটি পর্যায়ে এই সংগ্রাম করতে হয়, যথা :
ক) অন্তঃপ্রজাতির (Intraracial struggle) সংগ্রাম, অর্থাৎ একই প্রজাতিভুক্ত বিভিন্ন সদস্যদের মধ্যে সংগ্রাম ।
খ) আন্তঃপ্রজাতির (Interracial struggle) সংগ্রাম, অর্থাৎ যে কোনো দুই বা ততোধিক প্রজাতির মধ্যে সংগ্রাম ।
গ) প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম (Struggle against adversity)।

(৩) প্রকরণ (Variation):- ডারউইনের মতে, পৃথিবীতে যে-কোনও দুটি জীব কখনই অবিকল একই রকমের হতে পারে না। অর্থাৎ জীবের মধ্যে কিছু না কিছু পার্থক্য বা ভেদ থাকবেই। ডারউইনের ধারণা অনুসারে ছোটো ছোটো ধারাবাহিক পরিবর্তনই হল নতুন প্রজাতির জীবের উত্পত্তির জন্য দায়ী ।

(৪) যোগ্যতমের উদবর্তন (Survival for the fittest):- ডারউইনের মতে, যে সমস্ত বা ভেদ জীবের জীবন সংগ্রামের পক্ষে সহায়ক এবং পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজনমূলক, তারাই কেবল বেঁচে থাকবে এবং তাদের উদবর্তন ঘটবে। অন্যরা কালক্রমে পৃথিবী থেকে অবলুপ্ত হবে ।

(৫) প্রাকৃতিক নির্বাচন (Random Selection):- যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় অনুকূল ভেদ সমন্বিত জীবেরা অন্যান্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বেশি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে, তাকে প্রাকৃতিক নির্বাচন বলে। অনুকূল ভেদ সমন্বিত জীবেরা প্রকৃতির দ্বারা নির্বাচিত হলে বেশি সংখ্যায় বেঁচে থাকে এবং অত্যাধিক হারে বংশবিস্তার করে। প্রাকৃতিক নির্বাচন এক্ষেত্রে চালুনির মতো কাজ করে এবং সবচেয়ে উন্নত ও যোগ্যতম বংশধরকে ধরে রাখে।

(৬) নতুন প্রজাতির উৎপত্তি (Origin of new species) :- একটি বিশেষ জীবগোষ্ঠীর মধ্যে অনুকূল প্রকারণগুলি পুঞ্জীভূত হওয়ায় জীবের পূর্বপুরুষ ও উত্তরপুরুষের মধ্যে অনেক বেশি বৈসাদৃশ্য দেখা দেয় এবং এরই ফলে কালক্রমে একটি নতুন প্রজাতির উৎপত্তি ঘটে। বিবর্তনের ফলস্বরূপ জীবজগতে নতুন প্রজাতির জন্ম হয়।

একজন ভূতাত্ত্বিক কখনোই সময়ের পিছন দিকে গিয়ে পৃথিবীর প্রথম দিককার বহিরাবরণের গঠন দেখে আসতে পারবেন না, বা মহাকাশ-বিজ্ঞানী যেমন পারবেন না একটি নক্ষত্রের কৃষ্ণ গহ্বরে পরিণত হওয়া প্রত্যক্ষ করতে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে এই বৈজ্ঞানিক থিওরি বা তত্ত্বগুলো একেবারে ‘অপ্রমাণিত অনুমান’। কিছু বৈজ্ঞানিক থিওরি রয়েছে, যেগুলো ফ্যাক্টকে খুব স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করতে পারে। জীববিজ্ঞানে ‘বিবর্তন তত্ত্ব’ ব্যতীত একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্বও নেই যা বিবর্তনকে এর চেয়ে বেশি ভালভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে। সেজন্যই জীববিজ্ঞানে ডারউইনের বিবর্তনবাদ এখনো এত প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয়। যাঁরা বিবর্তনবাদের প্রমাণ সমূহকে অযৌক্তিক বা প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় তাঁরা তার বিপরীতে সৃষ্টিবাদকে টেনে নিয়ে আসে, যার পক্ষে ন্যূনতম একটি প্রমাণও নাই। এক হাস্যকর বিশ্বাস বা রূপকথার গল্প ব্যতীত।

আমরা এখন দেখবো এই তত্ত্বের কোন অংশটুকু ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুভূতির বিরুদ্ধে থাকার কারণে এই তত্ত্বের সাথে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।

আমি একবার একজন মডারেট মুসলিম জীববিজ্ঞানীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম,
- কোরআন কি ডারউইনের বিবর্তনবাদ সমর্থন করে?
উনি আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন,
-- কোরআনের কোথায় বিবর্তনবাদের বিরোধিতা করা হয়েছে বলতে পারবেন?
- ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব কি তাহলে কোরআনের সৃজনবাদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ?
-- ডারউইনের বিবর্তনবাদের কোন জায়গায় ধর্মীয় বিশ্বাসকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে দেখাতে পারবেন?

আসলেই ভেবে দেখলাম, ডারউইনের বিবর্তনবাদে যযে ছয়টি বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে (অত্যাধিক বংশবৃদ্ধি, অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম, জীব বৈচিত্র্য, যোগ্যতমের উদবর্তন, প্রাকৃতিক নির্বাচন ও নতুন প্রজাতির উৎপত্তি) তার কোনটাই তো অস্বীকার করার উপায় নাই এবং কোনটাই ইসলামী আকিদার সাথে সাংঘর্ষিকও মনে হচ্ছে না। তাহলে কিসের ভিত্তিতে এত বিরোধিতা, গালাগালি? আসলে এই গালাগালি কোরআনের সাথে বিরোধের জন্য নয়, বরং কোরআন শরীফে আদম সৃষ্টির কাহিনীকে সঠিক ভাবে বিশ্লেষণ না করে নিজের মনগড়া যে কাহিনী বলে বেড়াচ্ছে তার সাথে সাংঘর্ষিক বলে। আদমকে যে পৃথিবীর প্রথম মানুষ কোরআনের কোথাও বলা হয়নি এটি এখন অনেক ইসলামী স্কলারও স্বীকার করে নিয়েছেন। শুধু মেনে নিচ্ছেন না কাঠমোল্লারা।

অথচ সূরা নূহ এর ১৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ বলছেন, "তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন পর্যায়ক্রমে (নানা স্তর অতিবাহিত করে)।"
এর চেয়ে সুন্দর প্রমাণ কোথায় চান?

ডারউইনের উষ্ণ পুকুর (Darwin’s warm little pond)  থিওরী অনুযায়ী  প্রথম কোষ বা আদিকোষ আবির্ভূত হয়েছে জল থেকে। জাকির নায়েকও ডারউইনের এই তত্ত্বকে দেখলাম মেনে নিয়েছেন (অর্থাৎ কিছু মানি কিছু মানি না)। কেননা কোরআনের অনেক জায়গাতেই পানি থেকে প্রাণ তথা মানুষ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে।

সূরা আল ফুরকান (الفرقان), আয়াত: ৫৪
وَهُوَ ٱلَّذِى خَلَقَ مِنَ ٱلْمَآءِ بَشَرًا فَجَعَلَهُۥ نَسَبًا وَصِهْرًا وَكَانَ رَبُّكَ قَدِيرًا
অর্থঃ তিনিই পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন মানবকে, অতঃপর তাকে রক্তগত, বংশ ও বৈবাহিক সম্পর্কশীল করেছেন। তোমার পালনকর্তা সবকিছু করতে সক্ষম।

সূরা আন নূর (النّور), আয়াত: ৪৫
وَٱللَّهُ خَلَقَ كُلَّ دَآبَّةٍ مِّن مَّآءٍ فَمِنْهُم مَّن يَمْشِى عَلَىٰ بَطْنِهِۦ وَمِنْهُم مَّن يَمْشِى عَلَىٰ رِجْلَيْنِ وَمِنْهُم مَّن يَمْشِى عَلَىٰٓ أَرْبَعٍ يَخْلُقُ ٱللَّهُ مَا يَشَآءُ إِنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
ঞঅর্থঃ আল্লাহ প্রত্যেক চলন্ত জীবকে পানি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। তাদের কতক বুকে ভয় দিয়ে চলে, কতক দুই পায়ে ভর দিয়ে চলে এবং কতক চার পায়ে ভর দিয়ে চলে; আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম।

সূরা ক্বাফ (ق), আয়াত: ৩৮
وَلَقَدْ خَلَقْنَا ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِى سِتَّةِ أَيَّامٍ وَمَا مَسَّنَا مِن لُّغُوبٍ
অর্থঃ আমি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয়দিনে সৃষ্টি করেছি এবং আমাকে কোনরূপ ক্লান্তি স্পর্শ করেনি। সূরা মাআরিজের ৪নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ সুবহানাতাআলা তাঁর একদিনকে পৃথিবীর পঞ্চাশ হাজার বছর বলে উল্লেখ করেন। সেই অর্থে পৃথিবী সৃষ্টি করতে লেগেছে তিন লক্ষ বছর। যা পর্যায়ক্রমিতারই ইঙ্গিত বহন করে এবং যা আধুনিক বিজ্ঞানের সৃষ্টি তত্ত্বের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।


এবার লক্ষ্য করা যাক নীচের আয়াতটির দিকে-
সূরা আয্‌-যুমার (الزّمر), আয়াত: ৬
خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَٰحِدَةٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَأَنزَلَ لَكُم مِّنَ ٱلْأَنْعَٰمِ ثَمَٰنِيَةَ أَزْوَٰجٍ يَخْلُقُكُمْ فِى بُطُونِ أُمَّهَٰتِكُمْ خَلْقًا مِّنۢ بَعْدِ خَلْقٍ فِى ظُلُمَٰتٍ ثَلَٰثٍ ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبُّكُمْ لَهُ ٱلْمُلْكُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ فَأَنَّىٰ تُصْرَفُونَ
অর্থঃ তিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে একই বস্তু থেকে। অতঃপর তা থেকে তার যুগল সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি তোমাদের জন্যে আট প্রকার চতুষ্পদ জন্তু অবতীর্ণ করেছেন। তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভে পর্যায়ক্রমে একের পর এক ত্রিবিধ অন্ধকারে। তিনি আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা, সাম্রাজ্য তাঁরই। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতএব, তোমরা কোথায় বিভ্রান্ত হচ্ছ?

এখানে আল্লাহ্ সুবহানাতাআলা আট প্রকার চতুষ্পদ প্রাণী সৃষ্টির কথা বলেছেন। তাহলে হাজার হাজার চতুষ্পদ প্রাণী কোথা থেকে এলো? বিবর্তন ছাড়া আর কি কোনও পদ্ধতি কারো জানা আছে? ডারউইনের সময় গির্জার পাদ্রিরা এই বলে বিরোধীতা করেছিল যে বিবর্তনবাদেরকোথাও ঈশ্বরের কথা বলা হয়নি। অর্থাৎ ঈশ্বরকে যুক্ত করলে এটি মেনে নিতে তাঁদের আপত্তির কিছু ছিল না। আর এখন ওঁরা বলছেন, বিবর্তনবাদ সত্য, তবে এটি ঘটিয়েছেন স্বয়ং ঈশ্বর। নির্বাচনটা (Selection) মোটেও প্রাকৃতিক (Natural) নয়। মুসলমানেরাও ঠিক একইভাবে ঈশ্বরের স্থলে আল্লাহ্ কে যুক্ত করে এটিকে মেনে নিতে পারে। ফলে একটি সত্যকে অস্বীকার করার হাত থেকে এই ধর্মটা বেঁচে যেতে পারে। অবশ্য ধীরে ধীরে তা হচ্ছেও। ইসলামেরই একটি উপদল আহমদিয়া মুসলিম জামাত বিবর্তনবাদ কে ইসলাম সম্মত বলে স্বীকার করে নিয়েছে। এবং তাঁদের বিভিন্ন পুস্তকাদিতে 'ইসলামের আলোকে বিবর্তনবাদ' নিয়ে কোরআন ও হাদিসের অনেক রেফারেন্স দিয়ে এ বিষয়ে বিশদ বর্ণনা করা হয়েছে।

ব্রিটেনের 'ইসলামিক সোসাইটি'র একজন ধর্মীয় নেতা খালিদ আনিস ইসলাম ও বিবর্তনবাদ নিয়ে একটি আলোচনার সূত্রপাত করেন ২০০৪ সালে। সেখানে তিনি বলেন-
Islam also has its own school of Evolutionary creationism/Theistic evolutionism, which holds that mainstream scientific analysis of the origin of the universe is supported by the Quran.

এই সময়ের তিনজন বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার গোলাম আহমেদ পারভেজ, এদিব  ইউকসুল এবং টি ও সানাভাস তাঁদের Islamic Theory of Evolution: the Missing Link between Darwin and the Origin of Species  গ্রন্থে বলেন, that there is no contradiction between the scientific theory of evolution and Quran's numerous references to the emergence of life in the universe। এমন কি যে মরিস বুকাইলিকে  ইসলামিক স্কলাররা প্রায়ই রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করেন, তিনিও attempted to reconcile evolution with the Quran by accepting animal evolution up to early hominid species, and then positing a separate hominid evolution leading to modern humans.

আরও একজন আধুনিক মুসলিম দার্শনিক ওসামা আল আজমি দাবি করেন, the scriptural narratives of creation, and evolution as understood by modern science, may be believed by modern Muslims as addressing two different kinds of truth, the revealed and the empirical.
(চলবে---------)


লিখেছেনঃDara Chowdhury.
ব্লগার বাংলাদেশ।
prev post
next post

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ