সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

উমরের চুক্তি



উমরের চুক্তি


উমরের (ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা) চুক্তি (ওমর চুক্তি, উমর সন্ধি বা উমর আইন হিসাবেও পরিচিত) সিরিয়া, মেসোপটেমিয়া এবং জেরুসালেমে মুসলমান শাসক এবং খ্রিস্টান এবং অন্যান্য বিধর্মী প্রজাদের মধ্যকার একটি অ-স্বাক্ষরিত চুক্তি যেটা পরবর্তীতে ইসলামী আইনশাস্ত্রে একটি আনুশাসনিক মর্যাদা অর্জন করে এবং বিভিন্ন মুসলিম অধ্যুষিত সাম্রাজ্যে প্রচলন করা হয়। চুক্তিতে অমুসলিমদের অধিকার (ধীম্মি) এবং বিধিনিষেধের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে –

  • চুক্তিটির বিধি অনুসরণ করে এমন খ্রিস্টান বিশ্বাসীদের মুসলিম শাসক সুরক্ষা প্রদান করবেন
  • নতুন গির্জা, উপাসনালয়, মঠ নির্মাণের এবং নতুন কক্ষ  সংযোজনার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা
  • বিধর্মীদের নিজেদের এলাকায় কিংবা মুসলমানদের কোয়ার্টারে অবস্থিত ধ্বংস হওয়া গির্জাগুলি দিন বা রাতে পুনর্নির্মাণের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা
  • গির্জার উপর ক্রস ঝুলানোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা
  • দিন বা রাত উভয় সময়েই যে কোনও মুসলমানদের গির্জার (আশ্রয়ের জন্য) প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে
  • ঘণ্টা বা এক ধরণের গং (নাকোস) দ্বারা প্রার্থনার আহ্বানের শব্দের ভলিউম কম রাখতে হবে
  • প্রার্থনার সময়ে খ্রিস্টান ও ইহুদীদের গলা স্বর উঁচু করা নিষিদ্ধ
  • অমুসলিম বাচ্চাদের কুরআন শিক্ষা দেওয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা
  • খ্রিস্টানদের প্রকাশ্যে তাদের ধর্মীয় প্রদর্শন করা বা খ্রিস্টান বই বা প্রতীক সহ প্রকাশ্যে, রাস্তায় বা মুসলমানদের বাজারে যাবার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা
  • পাম রবিবার এবং ইস্টার প্যারেড নিষিদ্ধ ঘোষণা
  • অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নিঃশব্দে করতে হবে
  • মুসলিমদের নিকটে অমুসলিম মৃতদের কবর দেওয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা
  • মুসলিম প্রতিবেশীর পাশে শূকর পালার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা
  • খ্রিস্টানদের মুসলমানদের কাছে মদ বা অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় বিক্রির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা
  • খ্রিস্টানদের গুপ্তচরদের রক্ষা করা বা আশ্রয় দেওয়া নিষিদ্ধ
  • মুসলমানদের সম্পর্কে মিথ্যা বলার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা
  • মুসলমানদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের বাধ্যবাধকতা। যদি কোন মুসলিম বসতে চায় তবে অমুসলিমকে তার আসন থেকে উঠে মুসলিমকে বসতে দিতে হবে
  • ইসলাম থেকে ধর্মান্তরিত করার প্রয়াসে মুসলমানদের সঙ্গে কথা বলার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা
  • কেউ ধর্মান্তর করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে চাইলে তার বিপক্ষে কোনো বাঁধা দেয়া যাবে না
  • অমুসলিমদের চেহারা ও পোশাক মুসলমানদের থেকে আলাদা হতে হবে: ক্যালানসুওয়া (বেদুইনদের মাথা আবরণের জন্য ব্যবহৃত এক প্রকার পরিধেয়), বেদুইন পাগড়ী (আম্মাহ), মুসলমানদের জুতো এবং তাদের কোমরে সাশ পরা নিষেধ। অমুসলিমদের চুল মুসলিম রীতি অনুযায়ী পাশ দিয়ে ঘুরিয়ে আঁচড়ানো নিষিদ্ধ এবং সেই সাথে তারা মাথার সামনের অংশের চুল কাটাতে বাধ্য থাকবে । এছাড়াও অমুসলিম আরব-মুসলিমদের কথা বলার পদ্ধতি অনুকরণ করবে না বা কুনিয়াস (আরবী উপাধি যেমন "আবু খতিব") ব্যবহার করবে না
  • অমুসলিমদের শনাক্ত করার জন্য মাথার অগ্রভাগের চুল কেটে ফেলতে হবে এবং যেখানেই তারা যায় তারা সর্বদা একই ধরণের পোশাক ও জুনার (এক ধরণের কোমরের বেল্ট)পরতে বাধ্য থাকবে।  খ্রিস্টানরা নীল বেল্ট বা পাগড়ী পরতেন, ইহুদিরা হলুদ বেল্ট বা পাগড়ী পরতেন, জুরোস্ত্রিয়ানরা কালো বেল্ট বা পাগড়ী পরতেন এবং সামেরিয়ানরা লাল বেল্ট বা পাগড়ী পরতেন
  • মুসলিম রীতিনীতিতে কোনও পশুতে চড়া এবং জিন বা স্যাডল দিয়ে ঘোড়ায় চড়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা
  • মুসলিম উপাধি গ্রহণের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা
  • নামাঙ্কিত ব্যক্তিগত সীলমোহরে আরবি শিলালিপি খোদাইয়ের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা
  • যে কোনও অস্ত্র রাখার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা
  • অমুসলিমদের অবশ্যই একজন মুসলিম পথিক এলে তাঁকে কমপক্ষে ৩ দিনের জন্য অতিথি করতে হবে এবং তাঁকে খাওয়াতে হবে
  • অমুসলিমদের জন্য মুসলিম বন্দীদের দাস হিসেবে কেনা নিষিদ্ধ
  • মুসলমানদের জন্য বরাদ্দকৃত দাস গ্রহণের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা
  • মুসলিমদের নেতৃত্ব, পরিচালনা বা নিয়োগের জন্য অমুসলিমদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা
  • যদি কোনও অমুসলিম কোনও মুসলিমকে মারধর করে, তবে তার ধীম্মি অপসারণ করা হবে
  • অমুসলিমদের উপাসনালয়গুলি শহরের সর্বনিম্ন মসজিদের তুলনায় উচ্চতায় কম হতে হবে
  • অমুসলিমদের ঘরগুলি অবশ্যই মুসলমানদের বাড়ির চেয়ে উঁচুতে লম্বা হবে না
লিখেছেন - মেনাহাতি



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

জাতীয়তাবাদ আরেকটি ধর্ম বই

বাংলাদেশীরা ধর্মভীরু। ইসলাম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ও জাতীয়তাবাদ নামক ধর্মগুলোর প্রতি বাঙ্গালীর দুর্বলতা নতুন কিছু নয়। আমরা যারা মুক্ত-চেতনাকে প্রয়োজনীয় মনে করি, যুক্তিকে ধর্মের ওপরে স্থান দেই তাদের অনেকেই ধর্মের মতই সামনে আসা অন্যান্য প্রতিটি ধারনা ও প্রস্তাবনাকেই যুক্তি দিয়ে বুঝতে চাই, খতিয়ে দেখতে চাই। বা দদূএকটি রূপ আধ্যাত্মিকতা ও ধর্ম হিসাবে মানুষের দলবদ্ধ সমাজব্যবস্থার দ্বিতীয় বড় চালক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। প্রস্তরযুগে আরো একটি ঘটনা ঘটতে শুরু করেছিল। মানুষেরা নিজেদের গ্রাম বা নগরকে কেন্দ্র করে একটি সামষ্টিক পরিচিতি অনুভব করে শুরু করেছিল। বোধ করি তখন থেকেই মানুষের দলবদ্ধতার তৃতীয় চালক জাতীয়তাবাদের প্রাথমিক যাত্রা শুরু। বর্তমানে সারা দুনিয়ায় জাতীয়তাবাদ নানান চেহারায় দলবদ্ধতার সবচাইতে শক্তিশালী চালক হিসাবে বিদ্যমান। একটি নৃগোষ্ঠী যখন পুঁজিবাদী হতে শুরু করে, যখন সে একটি কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্র গঠন করে তখনই সে একটি জাতিতে পরিণত হয়। ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ আমাদের দেশের রাজনীতিতে কাছাকাছি আছে ইতিহাসের শুরু থেকে। মহাভারত থেকে আজকের খালেদা-হাসিনার রাজনীতিতে ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ একে অন্যের হাত...

গাজওয়াতুল হিন্দ

গাজওয়াতুল হিন্দকে বর্তমান বাংলাদেশ ভারত ও নেপাল শ্রীলংকার জিহাদীরা তাদের মনে আটকে রেখেছে। এই বিষয়ে নানা মতাভেদ থাকলেও সকল মুসলিম জিহাদীরা মনে করে বা আ শা করে যে ইসলাম সারা পৃথীবিতে এই জিহাদের মাধ্যামে প্রতিষ্টা হবে। তারা এটাকে মর্যাদার্পূণ জিহাদ বলে মনে করে। ইসলামের ভিত্তির অন্যতম হলো জিহাদ। ইসলাম প্রতিষ্ঠাকালীন প্রচুর যুদ্ধ করা এবং হত্যার পরেই মানুষ ভয়ে ইসলামকে গ্রহন করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ভায়রাস বলা হয় ইসলামকে। এই ভায়রাস আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে গাজওয়াতুল হিন্দকে কেন্দ্র করে। বর্তমানে জিহাদীরা তাদের দলে লোক বেসি করার জন্য অনলাইনে সহ নানা জাগাতে ঠিক এই ভাবে মুসলিমদের উপর প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে "গাজওয়াতুল হিন্দ বা ভারতবর্ষের যুদ্ধ সম্পর্কে কি আপনি অবগত? আপনি কি কাফের মুশরিকদের সাথে লড়াই করতে প্রস্তুত?" ইসলামীষ্ট  জিহাদীরা ঠিক এভাবে চাই যে সারা পৃথিবীতে সবচে’ বড় যে ধর্মযুদ্ধ হবে সেটা হবে হিন্দুস্তান তথা ভারতের হিন্দুদের সাথে মুসলমানদের যা সমস্থ জ্ঞানি ইসলামি স্কলার এবং আলেম উলামা জানে। মুসলমানদের জন্য এটা খুব বড়  জিহাদ এবং এই জিহাদের গুরুত্ব অপরিসীম। এই...

বাঙালি এবং লেখকের জীবন

লেখকের বেঁচে থাকার প্রথম শর্ত তার পরিবারের স্বীকৃতি।এখানে স্বীকৃতির অর্থ হচ্ছে-লেখালেখি যে একটি কাজ,অন্য মতোই একটি কাজের, এবং সেই কাজের জন্য মনোযোগ,সময় এবং শ্রম বিনিয়োগ করতে হয়-এই বোধটা তৈরী হওয়া।লেখালেখিকে মহাগুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে নাই বা ধরা হলো। কিন্তু এটি যে একটি কাজ,এই স্বীকৃতিটা পরিবার থেকে আসা খুব প্রয়োজন। আমাদের দেশের বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতি বান লেখক শেষ পর্যন্ত যে লেখক হয়ে উঠতে পারে না,লেখক জীবন যাপন করতে পারেন না,লেখালেখির জগত থেকে তাদের যে অকাল বিদায় নিতে হয়,তার সবচেয়ে বড় কারণ এটাই।লেখালেখিকে পারিবারিক ভাবে স্বীকৃতি না দেওয়া।দেশের অন্য সব মানুষদের মতোই বেশির ভাগ পরিবারে লেখালেখি একটি নেহাৎ ই শখের জিনিস।তারুণ্য বা অংকুরোদ্গমী যৌবনে যৌনতার চুলকানিরও পেয়ে বসে আমাদের দেশের মানুষদের।তখন তাদের লেখাকে বাবাহা দেয় বাড়ির ভাবীরা,কাকা-জ্যাঠারা,সহপাঠীরা,বা তার কোন প্রেমিক-প্রেমিকাও।কখনো কখনো এমনকি বাবা মাও।তারা সকলেই অবচেতনে,এবং নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানে যে,এই চুলকানি বেশিদিন থাকবে না।কিন্তু যার ক্ষেত্রে থেকে যায়,অর্থাৎ যে বুঝে যায় যে লেখক হওয়াটাই তার ভবিতব্য,সমস্যাটা তার ক্ষ...