সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি

আমি সম্পূর্ণ স্বজ্ঞানে, সুস্থ মস্তিষ্কে এবং সোচ্ছায় সাক্ষ্য দিচ্ছি যে ইতিপূর্বে লোকমুখে শোনা অনেক কাল্পনিক চরিত্র এবং তাদের সাথে জড়িত নানান ধরনের অবিশ্বাস্য, উদ্ভট, নিতান্ত কল্পনাপ্রসূত রূপকথা জাতীয় কাহিনীসমূহের সত্যতা সম্পর্কিত যেসকল মৌখিক এবং লিখিত সাক্ষ্য দিয়েছিলাম, তা নিতান্তই -


(১) সরল বিশ্বাসে
(২) ভুলবশত,
(৩) ব্যক্তিগত অজ্ঞতা
(৪) রাষ্ট্র, অগনিত উন্মাদপ্রকৃতির মানুষকর্তৃক শারিরীক আক্রমনের আশংকায়,
(৫) পারিপার্শ্বিক শান্তি ও সুসম্পর্ক বজায় রাখার স্বার্থে দিয়েছিলাম।

আল্লাহ, শয়তান, জ্বীন, ফেরেস্তা, বা যেসব কাল্পনিক জীবজন্তুর অস্তিত্বসংক্রান্ত সাক্ষ্য দিয়েছিলাম, তাদের কাউকে আমি নিজের চোখে দেখিনি, অনুভব করিনি, প্রমান পাইনি, এবং আমার যুক্তি ও বুদ্ধি ব্যাবহার করে তাদের অস্তিত্ব, গুনাগুন, শক্তি, ক্ষমতা, কর্মপরিধি, ইত্যাদি সম্পর্কে যেসব বহুল প্রচলিত কাহিনী ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়, তা আমার কাছে কৌতুহল উদ্দীপক কৌতুক বা বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রচারিত ধ্বংসাত্মক গুজবের চেয়ে বিন্দুমাত্র বেশী কিছু না। কাজেই তেমন কাউকে ভয় পেয়ে, সন্মান করে, মন্ত্রপাঠ বা বিভিন্ন শারিরীক অংগভঙ্গীমার মাধ্যমে তুষ্ট করার কোনরকম আচার অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার কোন প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি না।


আমি কোন পৌরানিক কাহিনীনির্ভর অাদিমযুগের অসভ্য-অশিক্ষিত-বর্বর মানুষদের জন্য প্রযোজ্য নৈতিকশিক্ষা ও বিধিমালা সংকলনকে কোন অদৃশ্য লেখকের পাঠানো ঐশী বানী বলে মনে করিনা। আজকের যুগে সেসব বিধিমালার একটিও আমি প্রযোজ্য হওয়া উচিৎ বলে মনে করি না।

মৃত্যূপরবর্তী বিচারব্যাবস্থা, পুরষ্কার বা শাস্তির সম্ভাব্যতা সংক্রান্ত যেসব বিবরন জানা যায়, তার কোম অংশই আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য না।

যেসকল বহুল প্রচলিত কাহিনীর মাধ্যমে কিছু বিশেষ আধ্যাত্মিক বা অতিন্দ্রিয় ক্ষমতাধর ব্যাক্তিবর্গ,  তাদের জীবন ইতিহাস ও গুনাবলী সম্পর্কে প্রচার-প্রচারনা চালানো হয়, তাদের অনেকের অস্তিত্ব ছিলনা। আর যাদের অস্তিত্বের প্রমান পাওয়া গেছে, প্রকৃতপক্ষে তাদের কোন অতিন্দ্রিয় ক্ষমতা ছিল না এবং তাদের মানবিক ও চারিত্রিক গুণাবলী ১০০% নিষ্কলুষ ছিলনা। এদের বেশীরভাগই কমবেশি মাত্রার মানসিক রোগাক্রান্ত এবং কেউ কেউ অপরাধপ্রবনও ছিলেন বলে লিখিত তথ্য ও প্রমান পাওয়া গেছে। কাজেই তাদের সম্পর্কে তথ্যনির্ভর সমালোচনা, কৌতুক বা ব্যাঙ্গবিদ্রুপ করা যাবে না, তা আমার কাছে বাকস্বাধীনতাবিরোধী বলে মনে হয়।


বাংলাদেশের আইনজীবীরা অনেক ক্ষুদ্র ও গুরুত্বহীন বিষয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। কিন্তু বেশীরভাগ মানুষকে শিশুকাল থেকে মিথ্যা সাক্ষ্য বা ঘোষণা দিতে বাধ্য করা, কাল্পনিক চরিত্র ও মৃত্যূপরবর্তী শাস্তি সংক্রান্ত ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রচুর অর্থহীন বিজাতীয় ভাষার শ্লোক ও শ্লোগান মুখস্থ করানো এবং প্রচুর শারিরীক কসরত ও পিটি-প্যারেড করতে বাধ্য করা, ভিন্ন ধর্মবিশ্বাসের অনুসারীদেরকে বিনা কারনে তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও ঘৃণা করতে শেখানোকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, এবিষয়ে কোন রীট করার কথা শুনিনা। জঙ্গিনির্মূল তৎপরতা, সাবধানতার নামে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালানো হয়, প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়, তারপরও প্রচুর মানুষকে জীবন দিতে হয়। সেইসাথে সুস্থসবল কিছু মানুষকে বিভ্রান্ত করে ধ্বংসাত্মক কাজে টেনে আনা হয়, তাদের জীবনও নষ্ট হয় যেসব পৌরানিক পুস্তকে বর্নিত বিধিমালা ও তার ব্যখ্যা বা অপব্যখ্যার নামে, সেই পুস্তকগুলিকে যে কোন সভ্য সমাজব্যবস্থা এমনকি সমগ্র মানবজাতি জন্য, সেগুলোর সংস্কার বা বাতিলের জন্য কোন জাতীয় বা আন্তর্জাতিক আদালতে কাউকে আবেদন করতে শুনিনি।


অন্যদিকে, যারা সেই আদিমযুগের কল্পকাহিনির অসঙ্গতিপূর্ণ অংশের ব্যখ্যা দাবী করে, কুসংস্কারের সমালোচনা করে, কোন ঐতিহাসিক চরিত্রের তথ্যবহুল নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ করে, তাদেরকেই নাকি নাম, ঠিকানা, চেহারা-ছবি, পরিচয় গোপন রেখে নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে হবে। নিরাপদে থাকতে হলে কোন প্রশ্ন না করে, অঞ্চলভেদে প্রচলিত রূপকথাভিত্তিক নিয়মকানুন ও আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হবে। অংশ না নিয়ে চুপচাপ থাকলেই নানা প্রশ্ন, নিমন্ত্রণ, কুযুক্তি আর মিথ্যার মাধ্যমে বোঝানোর অপচেষ্টা, তর্কবিতর্কে জড়িয়ে পড়া, ঝগড়াবিবাদ, সম্পর্ক নষ্ট, আরো কত কি!

এ কেমন দেশ বা বিশ্বে বসবাস করছি আমরা!

লিখেছেনঃ  শুভ্রনীল ব্রহ্মচারী 

↑PREVIOUS-গডলেস কালী 

NEXT-ধর্ম বিষয়ে আমার প্রশ্নগুলো তৃতীয় পর্ব

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

জাতীয়তাবাদ আরেকটি ধর্ম বই

বাংলাদেশীরা ধর্মভীরু। ইসলাম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ও জাতীয়তাবাদ নামক ধর্মগুলোর প্রতি বাঙ্গালীর দুর্বলতা নতুন কিছু নয়। আমরা যারা মুক্ত-চেতনাকে প্রয়োজনীয় মনে করি, যুক্তিকে ধর্মের ওপরে স্থান দেই তাদের অনেকেই ধর্মের মতই সামনে আসা অন্যান্য প্রতিটি ধারনা ও প্রস্তাবনাকেই যুক্তি দিয়ে বুঝতে চাই, খতিয়ে দেখতে চাই। বা দদূএকটি রূপ আধ্যাত্মিকতা ও ধর্ম হিসাবে মানুষের দলবদ্ধ সমাজব্যবস্থার দ্বিতীয় বড় চালক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। প্রস্তরযুগে আরো একটি ঘটনা ঘটতে শুরু করেছিল। মানুষেরা নিজেদের গ্রাম বা নগরকে কেন্দ্র করে একটি সামষ্টিক পরিচিতি অনুভব করে শুরু করেছিল। বোধ করি তখন থেকেই মানুষের দলবদ্ধতার তৃতীয় চালক জাতীয়তাবাদের প্রাথমিক যাত্রা শুরু। বর্তমানে সারা দুনিয়ায় জাতীয়তাবাদ নানান চেহারায় দলবদ্ধতার সবচাইতে শক্তিশালী চালক হিসাবে বিদ্যমান। একটি নৃগোষ্ঠী যখন পুঁজিবাদী হতে শুরু করে, যখন সে একটি কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্র গঠন করে তখনই সে একটি জাতিতে পরিণত হয়। ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ আমাদের দেশের রাজনীতিতে কাছাকাছি আছে ইতিহাসের শুরু থেকে। মহাভারত থেকে আজকের খালেদা-হাসিনার রাজনীতিতে ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ একে অন্যের হাত...

গাজওয়াতুল হিন্দ

গাজওয়াতুল হিন্দকে বর্তমান বাংলাদেশ ভারত ও নেপাল শ্রীলংকার জিহাদীরা তাদের মনে আটকে রেখেছে। এই বিষয়ে নানা মতাভেদ থাকলেও সকল মুসলিম জিহাদীরা মনে করে বা আ শা করে যে ইসলাম সারা পৃথীবিতে এই জিহাদের মাধ্যামে প্রতিষ্টা হবে। তারা এটাকে মর্যাদার্পূণ জিহাদ বলে মনে করে। ইসলামের ভিত্তির অন্যতম হলো জিহাদ। ইসলাম প্রতিষ্ঠাকালীন প্রচুর যুদ্ধ করা এবং হত্যার পরেই মানুষ ভয়ে ইসলামকে গ্রহন করেছে। বর্তমানে বিশ্বের ভায়রাস বলা হয় ইসলামকে। এই ভায়রাস আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে গাজওয়াতুল হিন্দকে কেন্দ্র করে। বর্তমানে জিহাদীরা তাদের দলে লোক বেসি করার জন্য অনলাইনে সহ নানা জাগাতে ঠিক এই ভাবে মুসলিমদের উপর প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে "গাজওয়াতুল হিন্দ বা ভারতবর্ষের যুদ্ধ সম্পর্কে কি আপনি অবগত? আপনি কি কাফের মুশরিকদের সাথে লড়াই করতে প্রস্তুত?" ইসলামীষ্ট  জিহাদীরা ঠিক এভাবে চাই যে সারা পৃথিবীতে সবচে’ বড় যে ধর্মযুদ্ধ হবে সেটা হবে হিন্দুস্তান তথা ভারতের হিন্দুদের সাথে মুসলমানদের যা সমস্থ জ্ঞানি ইসলামি স্কলার এবং আলেম উলামা জানে। মুসলমানদের জন্য এটা খুব বড়  জিহাদ এবং এই জিহাদের গুরুত্ব অপরিসীম। এই...

বাঙালি এবং লেখকের জীবন

লেখকের বেঁচে থাকার প্রথম শর্ত তার পরিবারের স্বীকৃতি।এখানে স্বীকৃতির অর্থ হচ্ছে-লেখালেখি যে একটি কাজ,অন্য মতোই একটি কাজের, এবং সেই কাজের জন্য মনোযোগ,সময় এবং শ্রম বিনিয়োগ করতে হয়-এই বোধটা তৈরী হওয়া।লেখালেখিকে মহাগুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে নাই বা ধরা হলো। কিন্তু এটি যে একটি কাজ,এই স্বীকৃতিটা পরিবার থেকে আসা খুব প্রয়োজন। আমাদের দেশের বেশিরভাগ প্রতিশ্রুতি বান লেখক শেষ পর্যন্ত যে লেখক হয়ে উঠতে পারে না,লেখক জীবন যাপন করতে পারেন না,লেখালেখির জগত থেকে তাদের যে অকাল বিদায় নিতে হয়,তার সবচেয়ে বড় কারণ এটাই।লেখালেখিকে পারিবারিক ভাবে স্বীকৃতি না দেওয়া।দেশের অন্য সব মানুষদের মতোই বেশির ভাগ পরিবারে লেখালেখি একটি নেহাৎ ই শখের জিনিস।তারুণ্য বা অংকুরোদ্গমী যৌবনে যৌনতার চুলকানিরও পেয়ে বসে আমাদের দেশের মানুষদের।তখন তাদের লেখাকে বাবাহা দেয় বাড়ির ভাবীরা,কাকা-জ্যাঠারা,সহপাঠীরা,বা তার কোন প্রেমিক-প্রেমিকাও।কখনো কখনো এমনকি বাবা মাও।তারা সকলেই অবচেতনে,এবং নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানে যে,এই চুলকানি বেশিদিন থাকবে না।কিন্তু যার ক্ষেত্রে থেকে যায়,অর্থাৎ যে বুঝে যায় যে লেখক হওয়াটাই তার ভবিতব্য,সমস্যাটা তার ক্ষ...