এই ব্লগটি সন্ধান করুন

ধর্ম বিষয়ে আমার প্রশ্নগুলো ২য় পর্ব



আমি ফাতিমা জান্নাত বলছি।
প্রথম এবং তৃতীয় পর্ব গুলোও পড়তে পারেন।
প্রথম পর্ব

তৃতীয় পর্ব

আমার ৫ম প্রশ্ন


ক) ইসলাম ধর্ম “Child Adoption/ সন্তান দত্তক" নেওয়াকে কেন নিষিদ্ধ করেছে (কারো কারো মতে নিরুৎসাহিত করেছে)???
খ) বাংলাদেশ সরকার কেন “ভিনদেশি নাগরিকদের” বাংলাদেশি শিশু adopt/ দত্তক দেওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আইন করেছে?

ছোট্ট একটা প্রাণ, তুলতুলে শরীর, এইটুকু হাত এইটুকু পা, অসহায় একটা চাহনি। কেও জিজ্ঞেস করবেন ঐ প্রাণটাকে কি চায় ও? আমার মনে হয় ভাষা দিয়ে বোঝাতে পারলে বলতো- “ আমার মা চাই” “আমার বাবা চাই”।

হ্যাঁ একটা শিশুর সবচেয়ে বেশি চাই মায়ের বুকের উষ্ণতা। কারনে অকারণে বাবার দেওয়া হাজারটা চুমো।
মায়ের মায়াভরা অপলক চাহনি যার ভাষা শুধু যেনো শিশুটাই বুঝে। পরম ভালবাসায় মাথায় বুলিয়ে দেওয়া বাবার হাত। মায়ের শরীরের ঘ্রাণ, মায়ের আদরের ডাকগুলো আরও কত কি।
বাবামায়ের এই আদর যত্ন ভালবাসাই তো ঐ নতুন প্রাণের সাথে বন্ধন নামের একটা অমূল্য জিনিস গড়তে থাকে।
আর এই মহামূল্যবান সম্পর্কগুলো ঘিরে ছোট্ট এই জীবনটাতে অনেকগুলো ছোট বড় স্বপ্নের জন্ম হয়।

কিন্তু সবার তো এক ভাগ্য হয়না।

কিছু শিশু ঐ বন্ধনে জরানোর আগেই বাবামাকে হারায়( যুদ্ধে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিংবা কোনও অসুখেবিসুখে, এক্সিডেন্টে)। কিছু শিশুর বাবা মা হয়ত তাকেই ত্যাগ করে (অবৈধ সম্পর্কে জন্ম হওয়ায়, ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়ায়, কন্যা শিশু কিংবা তৃতীয় লিঙ্গের হওয়ায়)।

কিছু দম্পতি আছেন যাদের সন্তান হয়না, কিছু আছেন সন্তান হয়ে মরে গিয়েছিল, কিছু আছেন মানবিক কারনে একটা অনাথ শিশুকে দত্তক নিতে চায়, কিছু আছেন পরিচিতজনের মৃত্যুতে ঐ সন্তানের দায়িত্ব তাদের উপর পরে।

এই দুই না পাওয়া জীবনগুলোকে একে অন্যকে পাইয়ে দিলে একটা ধর্মের কিংবা রাষ্ট্রের কি অসুবিধা হতে পারে আমার কাছে বোধগম্য নয়। পিতৃমাতৃহীন একটা শিশু কিংবা বাচ্চাকে দত্তক নিয়ে বাবা মায়ের ভালবাসা এবং একটা নতুন জীবন দেওয়ায়, নতুন স্বপ্ন গড়ার চেয়ে বেশি মানবিক কাজ আর কি কি হতে পারে?

ইসলাম এই ক্ষেত্রে কি বলেঃ
কোরান শরিফে ইয়াতিমের অধিকার ,তাদের সাথে ভাল ব্যবহার, তাদেরকে সাহায্য করা নিয়ে অনেক বেশি মানবিক কথা লিখা আছে যেটা সত্যি প্রশংসনীয়। আমার মনে হয়না অন্য কোনও ধর্মগ্রন্থ এভাবে এতোটা লিখছে।


কিন্তু কোনও শিশু কিংবা বাচ্চা কে দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে আমি যা পড়েছিঃ
একটা এতিম শিশুকে প্রতিপালন করা যাবে কিন্তু দত্তক নেওয়া যাবেনা। প্রতিপালন/guardianship বিষয়টা আমার কাছে পরিষ্কার না। ঐ সম্পর্কটার কি নাম আমার জানা নেই।
আর যদি কেও কোনও শিশুকে দত্তক নেয় ঐ শিশু বড় হয়ে (কন্যা তার বাবার এবং পুত্র তার মাতার) মাহরাম বলে গণ্য হবেনা। তবে হ্যাঁ যদি ঐ শিশু তার পালক মাতার দুধ পান করে শুধুমাত্র তখনি সে ঐ পিতা মাতার মাহরাম বলে গণ্য হবে।

মাহরাম = ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক যেসব পুরুষের সাথে কোনও নারী এবং যেসব নারীর সাথে কোনও পুরুষ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে না।

দত্তক শিশুকে সম্পত্তি থেকে দান করা যাবে কিন্তু সে কখনো ঐ সম্পত্তির উত্তারিধিকারি হতে পারবেনা।

পরিশেষে, দত্তক নেওয়া সন্তানকে তার আসল বাবা মায়ের নামে বড় করতে হবে এবং ডাকতে হবে। যে বাবা মা পেলে বড় করেছেন কিছুতেই তাদের সন্তান বলে পরিচয় দেওয়া যাবেনা।

" শুনতে নোংরা লাগলেও সত্যি ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক দত্তক নেওয়া সন্তান যদি তার পালক মায়ের দুধ পান না করে তবে বালেগ/ বড় হয়ে ছেলে সন্তান তার মাকে এবং মেয়ে সন্তান তার বাবাকে বিয়ে করতে পারবে যদি চায়।"

ঠিক কখন থেকে এবং কেন ইসলাম এই প্রথা শুরু করেছে আপনারা নিজ দায়িত্বে পড়ে নিবেন। ওটা নিয়ে কথা বললে এখন অনেক বিতর্কিত ব্যাপার সামনে চলে আসবে যা অনেকে হয়ত সহ্য করতে পারবেন না। বাদ দিলাম।
যাইহোক আমার পক্ষে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এই পুরো বিষয়টা মেনে নেওয়া কিছুতেই সম্ভব হচ্ছেনা।

তাই আমাদের মহামান্য আলেম সমাজ এবং ইসলামিক স্কলারদের কিছু প্রশ্ন করছি। আশা করি উত্তর দিবেন-

১) যুদ্ধবিদ্ধস্ত একটা জনপদ থেকে কিংবা ডাস্টবিনের পাশ থেকে কুড়িয়ে পাওয়া একটা শিশুকে যদি আমি পেলে বড় করতে চাই তাকে কি নামে কার নামে বড় করব?
২) যেহেতু সে কুড়িয়ে পাওয়া স্কুল, কলেজ থেকে চাকুরীজীবন, পাসপোর্ট ,কাবিননামা সবকিছুতে তার বাবা মায়ের নাম কি হবে?
৩) যাদের নিজের দুধপান শিশু আছে তারা খুব কমই অন্য শিশুকে দত্তক নেয়। তাই যদি একটি শিশুকে আমি দত্তক নেই শুধুমাত্র দুধ না খাওয়ানোর কারনে তার সাথে আমার এবং আমার স্বামীর সম্পর্কের চিত্রটা পুরপুরি ভিন্ন হয়ে যাবে?
৪) আত্মার সম্পর্কের চেয়ে ঐ কয়েকবার দুধ পানের সম্পর্কই বেশি। যদি সন্তানহীন নারী হয় দুধ কোথা থেকে আসবে?
৫) কোথাও গেলে আমার ছেলেকে আমার ছেলে বলবো এমনকি বাড়ির কাজের ছেলেটাকেও বলতে পারব কাজের ছেলে কিন্তু আমার দত্তক ছেলেটাকে আপনাদের মতে কি বলে সবার কাছে পরিচয় করিয়ে দিব?

৬) যখন বড় হবে সুখেদুঃখে , সফলতায়-বিফলতায় আমার ছেলেকে আমি বুকে জরিয়ে ধরব, দত্তক ছেলেটাকে কি পারব? যদি না পারি একবার ভেবে দেখেছেন কি পরিমাণ ব্যথা, যন্ত্রণা যাবে ঐ অনাথ এতিম ছেলেটার বুকের ভেতর, কি যাবে একজন মায়ের বুকে???
৭) আমার নিজের ছেলেটা যদি কুসন্তানও হয় শুধুমাত্র আমার পেট থেকে হয়েছে বলে আমার সব সম্পত্তির উত্তারিধিকার হবে। আর ঐ দত্তক ছেলে অপেক্ষায় থাকবে ওকে কখনও দয়া করে যদি কিছু দান করি?? বাহ বাহ!

ইসলামের এই নিয়মগুলো মানতে গিয়ে অনেক অনেক বাবা মা রাস্তায় পঁচে মরে থাকতে দেখলেও কোনও শিশুকে দত্তক নিতে চাইবেনা। কেনোই বা চাইবে তারা এতো কঠোর নিয়মের মধ্যে দিয়ে যেতে? দত্তক নিবে কিন্তু শিশুটা পুরোপুরি তাদের না এবং তারাও শিশুটার না। দান/ ভিক্ষা দিতে পারবে কিন্তু বাবা মা হতে পারবেনা।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশগুলো সারা পৃথিবীর অনেক অনেক দরিদ্র, অসহায় শিশুদের দত্তক করে তাদের দেশে নিয়ে যায়। বাবা মা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের সুন্দর একটা জীবন দেয়। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশ থেকে পারেনা, ১৯৮১ সালের করা একটা আইনের প্রেক্ষিতে। কিন্তু কি হয় আমাদের দেশ থেকে নিলে?

ঐ বাচ্চাগুলোকে ধর্মান্তরিত হতে পারে?
ঐ বাচ্চাদের উপর শারীরিক, মানসিক নির্যাতন হতে পারে?

হায়রে! যে বাচ্চাগুলোর বাবা মা নেই, যে বাচ্চাগুলো না খেয়ে মরে পরে থাকে, যে বাচ্চাগুলো ডাস্টবিন থেকে খাবার কুড়িয়ে খায়, যে বাচ্চাগুলোর রাতে ঘুমানোর জন্য মাথার উপর একটা ছাদ পর্যন্ত নাই, যে বাচ্চাগুলোকে দিয়ে চুরি ছিনতাই, ড্রাগস কেনাবেচা থকে শুরু করে পতিতাবৃত্তি পর্যন্ত করানো হয় তাদের আবার নতুন করে কি নির্যাতন করা হতে পারে আমি সত্যি জানিনা?
আর ধর্ম? না খেয়ে মরবি, শেয়ালে কুকুরে তোদের ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেলে খাবে তবু ধর্ম ত্যাগ করতে পারবিনা।
দুরনীতিগ্রস্থ এতিমখানাগুলোতে গরুছাগলের মত স্নেহ ভালবাসা ছাড়া বড় হবি তবু ধর্ম নিয়ে থাকতে হবে।

হায়রে ধর্মরে!!! ইয়েমেন সিরিয়া আফ্রিকার দিনের পর দিন না খেয়ে থাকা আধমরা শিশুগুলো থেকে অভুক্ত রাস্তার শিশু গুলোকে পেটে ভাত দিতে না পারলেও কঠিন কঠিন বানী দিয়ে ঠিকই ভরিয়ে রাখছে এই ধর্ম।

যাইহোক আমি কিন্তু বলেই যাবো, সন্তান দত্তক নিন এবং অন্যকে উৎসাহিত করুন। সাড়ে সাতশ বিলিয়নের পৃথিবীর উপরও কিছুটা চাপ কমুক। আর একটা এতিম, অনাথ শিশু নতুন একটা জীবন পাক যে জীবন তার বাবা মা বলেন আর ভাগ্য বলেন তাকে দিতে পারেনি। নিজের সন্তানকেতো সবাই ভালবাসে, যত্ন নেয়, স্বপ্ন দেখে, বড়াই করে আরও কত কি করে। একটা দত্তক সন্তানকে ওখান থেকে খানিকটা দিলে আপনার কি খুব বেশি কম পড়ে যাবে?


আর আমাদের দেশের মহামান্য আইন নির্মাতাদের অনুরোধ করবো, দত্তক নেওয়াটাকে এতো কঠিন কিছু না বানিয়ে দুর্ভাগা কিছু আত্নাকে একটু শান্তির ব্যবস্হা করে দিন। মায়া ভালোবাসা মানুষের জন্মগত অধিকার। দুধের স্বাদ যদি কি ঘোলে মিটে( আপনাদের মতে)। কেউ যদি ঘোলটাতেই সন্তুষ্ট থাকতে পারে আপনাদের কি একটু সহায়তা করা উচিত নয়?

শেষ প্রশ্নঃ মহামান্য ইসলামিক আলেম সমাজ এবং আইন নির্মাতারা, দুটো মিনিট চোখ বন্ধ করে ভাবুন এবং জবাব দিন ঐ শিশুগুলোর জায়গায় যদি আপনার সন্তান থাকতো আপনি তাদের জন্য কোন জীবনটা চাইতেন ???


আমার ৬ষ্ঠ প্রশ্ন

ক) একজন নারীর (যে কোন মানুষের ই) পোষাক জিনিসটা কি স্হান-কাল, পরিবেশ-পরিস্হিতি এবং শারীরিক স্বস্তির উপর নির্ভর করেনা?

খ) একজন নারীকে কেনো পোষাক নামক জিনিসটার দোহায় দিয়ে মানসিক, শারীরিক এবং মৌখিকভাগে সবসময় অপমান, অভিযোগ এবং অপদস্থ করা হয়?

বেশ কয়েক বছর আগে উমরা করার জন্য সৌদি আরব গিয়েছিলাম। রাসুল সাঃ এর রওজা মোবারক জিয়ারত থেকে শুরু করে এখনও মনে পড়ে আল্লাহর ঘরের সামনে প্রথম যখন দাঁড়ালাম আমার নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে টপটপ পানি গড়িয়ে পড়ছিল। প্রতিটা দিন অন্য রকম অপার্থিব অনুভূতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছিল। উমরা শেষে যখন ফিরছিলাম জেদ্দা এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে আমার বর্তমান বসবাসরত দেশের এয়ারপোর্ট পর্যন্ত একটা ঘটনা দিয়ে আজকের লিখাটা শুরু করলাম।

জেদ্দা এয়ারপোর্টে দুজোড়া আরবী দম্পতি বিদায় নিচ্ছিল তাদের পরিবার থেকে। ছেলেগুলোর পরনে নরমাল শার্টপ্যান্ট পরা ছিল কিন্তু মেয়েগুলো একদম পুরা হিজাব নিকাবে ঢাকা। বিদায় দিতে আশা তাদের পরিবারের পরুষদের পরনের লোকাল এরাবিয়ান পোশাক, নারীদের কঠিন পর্দা এবং আরবি ভাষায় কথা বলাবলি দেখে বুঝলাম ওরা সৌদির স্থানীয় অধিবাসী। যাইহোক প্লেন এ উঠলাম এবং পরবর্তী গন্তব্য ফ্রাঙ্কফুটে ট্রানজিট। মাঝপথে ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য উঠে হেটে যাওয়ার সময় আমি ভুত দেখার মত শকড, ঐ দুই ভদ্রলোকের পাশে বসে থাকা বোরখা আপাদের বোরখা-হিজাব-নিকাব সব গায়েব। পরনে ফুলপ্যান্ট, গায়ে ফুল হাতা শার্ট এবং মাথা আর বুকের উপর পাতলা একটা শাল। একটা চিকন হাসি দিলাম।

যাইহোক ফ্রাঙ্কফুটে নেমে সবাই যে যার পরবর্তী প্লেন এর গন্তব্যের দিকে চলে গেলাম। দীর্ঘ ট্রানজিট এর পর যখন আমারা আমাদের শেষ ফ্লাইটে উঠছিলাম আল্লাগো এই আমি কি দেখলাম!!!! সৌদির ঐ কঠিন বোরখা আপারা আমার বসবাসরত দেশেই যাচ্ছিলেন। এবার পরনের শার্টগুলোও নাই। খুলে কোমরে পেঁচিয়ে রেখেছে আর গায়ের মধ্যে মেয়েদের ট্যাংটপ( হাতা কাটা গেঞ্জি) পরা। শাল গায়েব, খোলা চুল, চোখে চশমা। ওদের সাথে ঐ প্লেনেই শেষ সফর, শেষ দেখা। কেন জানি মনে হয় নেক্সট যদি কখনো দেখি কোনও বীচ কিংবা সুইমিং পুলে বিকিনি পরা দেখব।। যাইহোক ঘটনাটা শুনেঃ

১. কট্টর মুসলিমরা বলবেন- আস্তাগফিরুল্লাহ। এসব মেয়ের কারণেই ধর্ষণ হয়। এরাই দোজখ ভরাবে।
২. বেশি উদারপন্থীরা হয়তো বলবেন- কি ভণ্ডামি, কি দ্বিমুখীতা। বোরখা মানেই হচ্ছে একটা বস্তা।
৩. তখনকার আমি বলেছি- মাশাল্লাহ । উপরে ফিটফাট ভেতরে একদমই সদরঘাট।

কিন্তু এখনকার এই আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করি কি ভুল করেছে মেয়েগুলো। নাহ ওরা কোনই ভুল করেনি।

সৌদি একটি অত্যন্ত রক্ষণশীল ইসলামিক দেশ। ওখানে পর্দা করা বিধান তাই তারা তাই করেছে।
প্লেন এ অনেক হাজী ছিল তাই তারা বোরখা তো খুলেছে কিন্তু পরিবেশ বুঝে মাথায় এবং বুকে পাতলা শাল রেখেছে।
তারপর যখন তারা আমার বসবাসরত দেশ(সম্ভবত তাদেরও ) যাচ্ছিল ঐ পোশাকটাই( ট্যাংটপ) পরল যা ওদের জন্য ঐ পরিবেশে স্বস্তিদায়ক কিংবা পছন্দের ছিল।
এবং কোনও বীচে যদি তাদের বিকিনিতে কখনো দেখি অবাক হবোনা কারণ এখানে মানুষ বীচে বিকিনি পরাকেই স্বাভাবিক মনে করে। (প্রথম দিকে বিকিনি পরা মেয়েদের দেখে একটা মেয়ে হয়েও আমার নোংরা এবং অস্বস্তি লাগতো কিন্তু এখন মনে হয় ঐ পরিবেশে ওটাই উপযুক্ত পোশাক বলেই হয়ত ওরা ওটা পরে। আর দশজনের মত আমারও একসময় দৃশ্যগুলো চোখে সয়ে গেছে)।


যাইহোক, আমাদের সমাজে এবং আমাদের সমাজের মত অনেক দেশের সমাজে পরনিন্দা, পরচর্চা এবং অনধিকার চর্চা করাটা মনে হয় ইবাদত কিংবা পূজাঅর্চনা করার মত হয়ে গেছে। আর যদি চর্চার সাবজেক্ট কোনও মেয়ে হয় উরে বাবা পাইছে!!! একেকজন বিশাল বিশাল বিশেষজ্ঞ হয়ে যায়। আমাদের দেশের কিছু মানুষ আছে যারা কিছু পারুক না পারুক কোনও নারীকে নিয়ে ঘাটাঘাটি কিংবা নোংরামি করতে উদারতার এক ফোঁটাও কমতি দেখায় নাহ। একটা নারীকে খুব সামান্য ব্যাপারেও শারীরিক, মানসিক এমনকি মৌখিকভাবে হেয়, অপদস্থ করে যেনো খানিকটা অর্গাজমের আনন্দ পায়।

আমাদের দেশের খুব নিয়মিত একটা ডায়লগ ইদানীং শুনি
“ আপনার মা বোন যদি বোরখা না পরে তাকে বিকিনি পরান কিংবা উলঙ্গ করে রাস্তায় নামিয়ে দেন।"

বাহ বাহ বাহ!!!
আমি শতভাগ জান্নাতগামী ফ্লাইটের ঐ যাত্রীদের অবগতির জন্য বলব -

বোরখা এবং বিকিনির মাঝে এই দুনিয়ায় অনেক অনেক পোশাক আছে। বাংলাদেশে একটা মেয়ে সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী পোশাক শাড়ী পরে। সালওয়ার কামিজ পরে, ফতুয়া প্যান্ট পরে, জিনস টিশার্ট পরে আর এই পোশাগুলোর সাথে আবার অনেকে হিজাব করতে সাচ্ছন্দ বোধ করে। এছাড়াও পৃথিবীর অনেক অনেক দেশের মেয়েরা বিভিন্ন ধরনের অনেক সুন্দর সুন্দর পোশাক পরে।

পোশাক জিনিসটা পুরোপরি পরিবেশ এবং পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে আমার মতে। যে পোশাকে আপনি দাওয়াতে যাবেন সেটা পরে আপনি নিশ্চয় কাঁচা বাজারে যাবেন না। বিদেশে যে মেয়েটা বিকিনি পরে সুইমিং করবে সে কখনো সেটা অফিসে পরে যাবেনা। যে পোশাকটা তারা বিয়েতে পরবে সেটা পরে কখনই জগিংএ যাবেনা। শীতের পোশাক শীতে গরমের পোশাক গরমে পরবে। ((তাই বোরখাই মেয়েদের জন্য সব জায়গার একমাত্র পোশাক এটা কারো উপর চাপিয়ে দেওয়াটা আমার কাছে ভয়ঙ্কর অন্যায় মনে হয়))। তাইতো স্বয়ং আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন
“ হাতে মোজা, পায়ে মোজা, কালো বোরখা যেন এক একটা টেন্ট/ তাঁবু ”। উনি হয়তো মজার ছলে কিছুটা ব্যাঙ্গ করেই বলেছিলেন।

যাইহোক আমি আমার সাধামাঠা মতামত দিচ্ছিঃ

১) একজন নারী কি পোশাক পরবে না পরবে এটা সম্পূর্ণ তার নিজেস্ব ব্যাপার। পরিবেশ, পরিস্থিতি, আবহাওয়া এবং নিজের শরীরের স্বস্তি সবকিছু বুঝে কোন পোশাকটা তার পরার দরকার এই ব্যাপারটা বোঝার মত যথেষ্ট মেধা এবং বুদ্ধি একজন নারীর আছে। তাই তাদের পোশাকের ব্যাপারে আপনাদের নোংরা নাকটা গলানো বন্ধ করুন।

২) একজন নারী যদি নিজের ইচ্ছায় বোরখা পরে স্বস্তি এবং শান্তি পায় কারো এটা বলার অধিকার নেই সে কেন নিজেকে বস্তা বন্ধী করেছে। তার সম্পূর্ণ অধিকার আছে তার মত করে ঢেকেঢুকে চলার। (তবে হ্যাঁ নিকাব/ মুখ ঢাকার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাজনিত কারনে যদি কোনও দেশের কোনও আইন থাকে সেটা ভিন্ন কথা)।

৩) কোনও নারী যদি বোরখা বিহীন অন্য কোনও পোশাক পরে আপনার কোনও অধিকার নাই তাকে শারীরিক, মানসিক, মৌখিকভাবে নুন্নতম উত্যক্ত কিংবা নোংরা কথা বলার। আপনার ভাল না লাগলে আপনি দৃষ্টি নত করে রাখবেন( ইসলামে তো দৃষ্টিনত করতে বলেছে, তাইনা?)

৪) শুধুমাত্র পুরুষদেরকেই বলছি না পাশাপাশি আমাদের দেশের কিছু বোরখা পরিহিতা নারীরা যারা বোরখা বিহীন অন্য পোশাকে কোনও নারী এমনকি একটা কিশোরী মেয়েকে দেখলেও ব্যাঙ্গ কিংবা কটূক্তি করে আত্মতৃপ্তিতে ভোগেন যে এক একটা বাজে কথার বিনিময়ে কোটিকোটি নেকি জমাচ্ছেন এবং বেহেস্তের টিকেটটাও আস্তে আস্তে পাকা হচ্ছে তাদের বলছি......


একটা সভ্য মানুষ, সভ্য সমাজ, সভ্য জাতি কখনোই কাউকে পোশাক নামক একটা জিনিসের দোহায় দিয়ে উত্যক্ত, অপমানিত কিংবা ক্ষতিসাধন করতে পারেনা। জীবনে করার মত অনেক অনেক সওয়াবের কাজ আছে। দয়া করে ওগুলোতেও একটু মন দিন।

৫) কোনও সভ্য সমাজ কিংবা দেশগুলোতে কোনও নারী পানিতে বিকিনী পরে নামুক কিংবা বোরখা পরে কেও মাথাও ঘামায় নাহ। তারা উভয়টাকেই শ্রদ্ধা করতে জানে, উভয়াটাকেই মেনে নিতে জানে।
আর আমাদের দেশের বীচে একটা নারী তো দুরে কথা নারীর পোস্টারও যদি বিকিনি পরা থাকে বেশিরভাগ মানুষ পারলে চোখ দিয়েই ধর্ষণ করে দিবে।

(আজকের টিপসঃ যাদের নারী দেখলেই লালা ঝরা নামক দুষিত রোগ আছে তারা থাইল্যান্ড এর পাতায়া বীচে কিংবা মুসলিম দেশ দুবাইয়ের কোনও একটি বীচে গিয়ে টানা এক সপ্তাহ একদম গেঁড়ে বসে থাকুন। আপনাদের চোখের, মুখের এবং মনের বিষধর লালাগুলো ঝরতে ঝরতে আরেকটা ছোটখাটো সাগর সৃষ্টি হয়ে যাবে। সব লালা ঝরা শেষ হয়ে গেলে দেশে ফিরে আসুন। আমি নিশ্চিত আপনাদের থেকে আমাদের নারী, বাচ্চা ছেলেমেয়ে, শিশু, পশু সবাই সুরক্ষিত থাকবে। ধন্যবাদ!!!)



আমার সপ্তম প্রশ্ন 

ক) আপনার জীবনের মুল্যবান সময়ের ১০টি মিনিট আমার এই লেখাটা পড়ার জন্য দিবেন কি?
খ) আপনার জীবনের মুল্যবান সময়ের ১১টি মিনিট দিয়ে আমার কথাগুলো একবার মন থেকে ভেবে দেখবেন কি?

জ্ঞানের কথা কিংবা উপদেশমূলক কথাগুলো খুব বোরিং এবং কাটখোট্টা টাইপের হয়। মজার বিষয় হল আমি নিজেও পাঁচ মিনিটের বেশি ছয় মিনিট ওগুলো শুনতে পারিনা। একটু অস্থির আর মাথা গরম প্রকৃতির হয়তো তাই। তবু আপনাদের বলব অনেক কষ্ট করে দাতে দাঁত চিপে হলেও আমার আজকের লিখাগুলো পড়বেন।

আজ আমার বাচ্চাদের নিয়ে দুটো কথা দিয়ে শুরু করি। অনেকেই বলেন ভালো জায়গায় বসবাস করে দুহাতভর্তি টাকাপয়সা থাকলে সবাই লম্বা লম্বা কথা বলতে পারে। চলার মতো নুন্যতম টাকা পয়সা সবার দরকার এক ফোঁটাও অস্বীকার করবো না কিন্তু ওটার বাইরেও আরো কতো কতো জিনিস যে একটা সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করার পথে আমাদের দরকার হয় নিজেরা মা বাবা না হলে জীবনেও হয়তো উপলব্ধি করতাম না।

আমি এবং আমার হাসবেন্ড দুজনই আমাদের বাচ্চাদের পায়ের নখ থেকে শুরু করে মাথার চুল এমনকি শরীরের প্রতিটি লোমকুপের ভালো গঠন, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা এবং সৌন্দর্যের ব্যাপারে যেন প্রতিদিনের একটু একটু সাধনা করি।

আমাদের বাচ্চাদের এমন জায়গায় নিয়মিত নিয়ে যাই যাতে প্রচুর খেলাধুলা করে ছোটবেলা থেকেই ওরা শারীরিকভাবে সুস্হ এবং সুঠাম দেহের অধিকারী হয়।

প্রতিদিন নিয়ম করে এমন খাবার খাওয়ানোর
চেষ্টা করি যাতে একটু একটু করে প্রতিটি খাদ্যগুন থাকে।

স্কুলের পড়াশোনার পাশাপাশি আমি এবং আমার জামাই পুরোপুরি একটা ইউনিট হয়ে ওদেরকে জ্ঞান-বিজ্ঞান, নীতি-নৈতিকতা, আচার-ব্যবহার, ধর্ম-ধর্মীয় ব্যাপার, মানুষ-মানবিকতা এই বিষয়গুলো প্রচন্ড ধৈর্য নিয়ে আস্তে আস্তে শেখাচ্ছি যাতে অল্প বয়স থেকে ওদের মেধার বিকাশ ঘটে তারা একজন ভালো মানুষ হিসেবে বড় হতে পারে।

বাচ্চাদের বাবা অবশ্য অতি আদরের কারনে মাঝে মাঝে তাদের অতিরিক্ত দামী এবং অপ্রয়জনীয় খেলনা কিনে দেয়। কিন্তু আমি এসব ব্যাপারে একটু কঠোর। আমি চাইনা আমার বাচ্চারা তাদের বাবার আছে বলে যা চাইবে তা পাবে এই টাইপের মন মানসিকতা নিয়ে বড় হোক। পৃথিবীতে অসংখ্য বাচ্চা যেখানে তিনবেলা খেতে পায়না সেখানে কোন খাবার অপচয়, পানি অপচয়, কোন জিনিস অপচয় এসব নিয়ে বাসায় মোটামুটি একটু কঠিন আইন করে রেখেছি আমি।

যাইহোক আমি জানি আমার ঘরের মতো সবার ঘরের ই ছোট বড় মাঝারি নানান রঙের সুখ দু:খে ভেজানো গল্প আছে। এই গল্পগুলোতে প্রিয় বাবা মা থাকে, আদরের ভাইবোন থাকে, আর থাকে কলিজার টুকরা সন্তানেরা। আর এভাবে আমরা আপনারা সবাই মিলে স্বপ্ন দেখি, স্বপ্নের মধ্যে বাঁচি এবং সেই স্বপ্ন পুরনের সংগ্রামে নিজেদের পুরোপুরি নিংড়ে দেই। এটাই যেন ছোট্ট এই জীবনটায় বেঁচে থাকার আনন্দ।

কিন্তু হঠ্যাৎ একদিন কিংবা একটি মুহুর্তে....

মাত্র একটা আঘাত !!!

বন্দুকের বুলেটের মতো বলুন কিংবা বিষাক্ত সাপের ছোবলের মতো আমার আপনার সব স্বপ্নগুলোকে চোখের পলকে তছনছ করে দেয়। কেও যেন একটা জ্বলন্ত মোমবাতিকে নির্দয়ের মত এক নিমিষে ফুঁ দিয়ে নিবিয়ে দিয়ে গেলো। চারপাশের সবাই দুদিন ক্ষোভ দেখায়, চারদিন শোক করে তারপর সব অতীতের পাতায় আস্তে আস্তে ঝাপসা হয়ে বাস্পের মতো মিলে যায়। যে মানুষটার জীবনে আঘাত আসে তার আপন মানুষগুলোর বুকে জ্বলতে থাকা বিরামহীন আগ্নেয়গিরির উত্তাপটা একসময় যেন আর কাউকে ছোঁয় নাহ।

আমাদের দেশের কিংবা আমাদের পৃথিবীর এটা যেন নিয়মিত ঘটনা হয়ে গেছে। সামান্য থেকে সামান্যতম কারনে একটা জলজ্যান্ত মানুষকে মেরে ফেলতে কেও যেন দুবার ভাবেনা।

একটা ছোট শিশু যে বাবা মায়ের চোখের মনি, বুকের ধন সামান্যও কটা টাকার জন্য তাকে কিডন্যাপ করে তুলে নিয়ে মেরে ফেলছে।

একটা বাচ্ছা হেসে খেলে ঘুরে বেড়াচ্ছে সামান্য যৌন লালসায় ওকে মাংসাশী প্রাণী যেমন খাবলে খাবলে খায় ঠিক তেমনভাবে ধর্ষণ করে রক্তাত্ত করে মেরে ফেলছে।

একজন বাবা, একজন স্বামী, একজন মায়ের আদরের ছেলেটা যে কিনা জীবন জীবীকার তাগিদে ছুটে বেড়াচ্ছে কি অদ্ভুত কারো এক মিনিটও লাগছে না তাকে শেষ করে দিতে।

আর একজন নারীকে ধর্ষণ থেকে শুরু করে পুড়িয়ে কতো কতভাবে যে মারা হচ্ছে তা লিখতে গেলে আর কিছুই হয়তো লিখার জায়গা থাকবেনা। নারীর( নিজের মা, বোন, কন্যা ব্যতীত) প্রতি মায়া এবং সন্মান দেখাতে হলে অনেক বড় কলিজা লাগে।

আজকের পৃথিবীর মানুষগুলো নাকি সভ্য হচ্ছে। জানিনা ঠিক কিভাবে। আর যারা সত্যিকার অর্থেই সভ্য কেন জানি তাদের হাতে 'ক্ষমতা' নামক ভয়ঙ্কর অস্রটি নেই। হয়তো ক্ষমতা আর সভ্যতা এই দুটো জিনিশ সমান্তরালভাবে যায়না কিংবা সভ্য মানুষের হাতে ক্ষমতা আসলে সে আর সভ্য থাকতে পারেনা। এই ব্যাপারগুলো আমার কাছে ভয়ানক ঘোলাটে লাগে। তাই আর কথা না বাড়াই।

আজ কোনও টিপস কিংবা অফার নাহ সবার কাছে হাত জোড় করে অনুরোধ করব -

১. দয়া করে একটু ধৈর্যশীল হন। সামান্য সামান্য ব্যাপারে নিজেকে এবং অন্যকে অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে যেতে বাধা দিন। দেখবেন আমার আপনার এই অভ্যাসটা আজ নাহয় কাল একদিন আমার আপনার উপকারেই আসবে।

2. নিজের পরিবারের মানুষগুলোকেতো সবাই জানপ্রাণ দিয়ে ভালবাসে, সন্মান করে এবং সহ্য করে। ওখান থেকে খুব সামান্যও কিছু যদি অন্য পরিবারের অন্য মানুষগুলোকে আমরা দেই দেখবেন সবকিছু কেমন সহজ এবং সুন্দর হয়ে আসছে।

৩. আমার সন্তানগুলোকে আমরা যেমন আদরে, যত্নে, ভালেবাসায় মাখিয়ে বড় করছি প্রতিটি মা বাবা ঠিক তেমনভাবেই করেন কিংবা করার চেষ্টা করেন। আমাদের মতো সবার সন্তানও সবার জন্য এক একটা রত্ন, জীবনে বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য। ঐ একটা রত্নকে এক নিমিষে হারানো মানে বুকের মধ্যে আজীবনের প্রলয় বয়ে যাওয়া।


তাই, কারো জীবনে যখন ঐ আঘাতটা আসে। সে মুসলিম, হিন্দু, খৃষ্টান, বৌদ্ধ, আস্তিক, নাস্তিক, কালো, সাদা, বাদামী, নারী, পুরুষ, তৃতীয় লিঙ্গ যেই হোক না কেনো চোখ বন্ধ করে শুধু দুটো মিনিট ঐ জায়গায় নিজেকে একটাবার কল্পনা করুন, দেখবেন কারো কিচ্ছু বলতে হবেনা নিজেই উপলব্ধি করতে পারবেন আপনার করনীয়টা কি।

পুরো পৃথিবী জুড়ে যে ভয়ঙ্কর অস্হিরতা চলছে ওটা আমাকে আপনাকে এক হয়েই ঠিক করতে হবে। ঠিক শুনেছেন আমাকে আপনাকে এক হয়েই। যে বিষাক্ত ছোবল অন্যের সন্তানকে এক মিনিটে ছোঁ মেরে নিয়ে যাচ্ছে ওটার পরবর্তী লোলুপ দৃষ্টি কিন্তু এখন আমার আপনার পরিবারের উপরেই। এবং বিশ্বাস করুন আকাশ থেকে কোনদিন কোন স্পাইডার ম্যান, সুপার ম্যান কিংবা ব্যাট ম্যান নেমে আসবেনা আমাদর উদ্ধার করতে।

আমার অষ্টম প্রশ্ন 

ক) আপনি নিজেকে কিংবা আপনার সন্তানকে স্বল্প খরচে সমাজে ধনী এবং জনপ্রিয় ব্যক্তি বানাতে চান কি ?

খ) পৃথিবীর অন্যতম শূন্য বিনিয়োগ( zero investment), স্বল্প বিনিয়োগ ( low investment) কিংবা এক কালীন বিনিয়োগের (one time investment) বিনিময়ে অগনিত লাভ( unlimited profit) এবং সারা জীবনের জন্য লাভ (lifetime profit) ব্যাবসাটার নাম কি?

আমার হাজব্যান্ড দুইবার জাতীয় মেধা তালিকায় স্হানপ্রাপ্ত ছাত্র এবং একজন এক্স বুয়েটিয়ান ছিলো ।
সবার কাছে থেকে যেটুকু শুনেছি লেখাপড়া জিনিসটাকে সারাজীবন সে একটা সাধনার মতো নিয়েছিলো। শিক্ষাজীবনে দিনরাত এক করে পরিশ্রম আর সাধনার বিনিময়ে দেশ-বিদেশে তার অর্জনগুলো আমাদের বিয়ের আগের ছিলো বলে নিজ চোখে দেখার সৌভাগ্য হয়নি।

তাই আমি দুষ্টামী করে বলি, জীবনে এতো বেশী কষ্ট করে কিইবা পেলা? ভালো একটা চাকরী, সুস্হভাবে বাঁচার একটা পরিবেশ আর সামান্য বাড়ি গাড়ি? সে হালকা হেসে বলে- “তোমাদেরকে পেয়েছি। একটা সুন্দর পরিবার।”
তার উত্তরটা শুনতে এতো ভালো লাগে যে ইচ্ছা করেই প্রায় প্রশ্নটা করি। আমি আর আমার জামাই দুজনেই নিজেদের জন্য এর চেয়ে বেশী কিছু জীবন থেকে চাইনা।

তবুও আমি একটু দুষ্ট টাইপের তো তাই উত্তরে তাকে বলি পড়ালেখার পিছনে ওরকম জান জীবন না লাগিয়ে যদি পৃথিবীর অন্যতম শূন্য/ স্বল্প/এক কালীন বিনিয়োগের বিনিময়ে অধিক লাভের ( কখনো তলাবিহীন ঝুড়ির মতো) ব্যবসাটা করতা কি মজাই না হতো। ও অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করতো কি এমন ব্যবসা। আমি উত্তরে বলতাম-

ধর্ম ব্যবসা মিস্টার জামাই। হ্যাঁ ধর্ম ব্যবসা!

এই ধর্ম ব্যবসার মত আরামের নিশ্চিত ব্যবসা দুনিয়ায় আর কয়টা আছে সত্যি আমার জানা নেই।
অল্প কিছু টাকা এক কালীন খাটিয়ে হাল্কা কিছু মার্কেটিং করে একবার মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে পারলেই কেল্লা ফতেহ! কয়েক বছরের মধ্যে পুরাই লালে লাল! টাকার পাহাড় উনাদের পায়ের নিচে! মৃত্যু পর্যন্ত উনাদেরকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবেনা। আমার তো উনাদের দেখলে ভালোই ঈর্ষা হয়ঃ

আহ! কি আরামের জীবন! ( স্বল্পশ্রমে বিশাল বাড়ীগাড়ী, কারো কারো জন্য নারী।)

টাকার অভাব নাই! ( মানুষ পারলে পরনের কাপড় বিক্রি করে উনাদের পেট ভরায়।)

সন্মানের অভাব নাই! (সবখানে প্রথম সিট, সবচেয়ে ভালো খাবার দাবার, পোশাক।)

ক্ষমতার অভাব নাই! ( এম পি, মন্ত্রী থেকে বড় বড় ব্যবসায়ীরা সব উনাদের পকেটে।)

আকর্ষণীয় ফিগার! ( উন্নত মানসম্মত চর্বিতে সারাটা শরীর কত নাদুসনুদুস।)

মসৃণ ত্বক সবসময় চকচক! (লাক্স কিংবা ফেয়ার&লাভলি কেন যে বাইরে মডেল খোঁজে?)


একটা দিনমজুর পায়ের নিচে ছাল আর হাতে ফোস্কা ফেলে শুধু সন্তানের মুখে দুবেলা দুমুঠো খাবার দিতে রাত দিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনি করছে।

একজন প্রবাসী পরিবার পরিজনের মায়া ছেড়ে বিদেশের মাটিতে অবহেলায়, অযত্নে থেকে বিরামহীনভাবে খেটেই যাচ্ছে।


একটা মধ্যবিত্ত পরিবার সীমিত আয়ের টাকায় চলতে গিয়ে প্রতিতিদিন ই যেন এক একটা জীবন যুদ্ধ করছে। আর সারা দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর দিন শেষে প্রাপ্তি শুধু একটা দীর্ঘনিশ্বাস।


আমার হাজব্যান্ড এর মত যারা একটা ভালো চাকরী করে সচ্ছলভাবে জীবনটা চালাচ্ছে তারাও যদি কোনও একটা এক্সিডেন্টে এক বছর পড়ে থাকে দু একজন আত্মীয়স্বজন হয়তো কয়েকমাস দেখবে। তারপর আমাদের জীবনেও হাহাকার নেমে আসবে।


একজন বিত্তশালী ব্যাবসায়ীরও মাথার উপর সবসময় একটা তলোয়ার ঝুলে থাকে। তাকেও আজকের প্রতিযোগিতার বাজারে তার ব্যাবসা টিকিয়ে রাখতে রাতের ঘুম দিনের খাওয়া হারাম করতে হয়।


সবাইকে বাদ দিলাম। হায়রে! একজন পতিতা এবং তার সন্তানদের কপালেও একবেলার বেশি দু বেলা খাবার জুটবেনা যদি কয়েকদিন দেহ না খাটায়।

আমেরিকা তে নাকি অনেক খ্রিস্টান পাদ্রির নিজস্ব প্লেন পর্যন্ত আছে। শুনে খুব অবাক হয়েছিলাম। একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কই পায় তারা এতো টাকা। উনি বললেন দেশটা আমেরিকা হলেও এখানে এমন এমন ধর্মান্ধ মানুষ আছে যারা কোটি কোটি ডলার চার্চ আর পাদ্রিদের পেছনে ঢালে। আর পাদ্রিরা মাগনা খেয়ে চর্বি বানায়।

ভারতে এবং আমাদের দেশে হিন্দুরা যে পরিমাণ অর্থ মন্দিরের পেছনে ঢালে ওরকম নাকি কখনো কোনও খাতেই ঢালেনা। এক একজন মন্দিরের পুরোহিতের জীবন নাকি এক একজন রাজা বাদশার সাথে আমরা তুলনা করতে পারি। মহামান্য পুরোহিতরা নারীদের ব্যাপারেও নাকি বেশ রঙ্গিন মেজাজ রাখেন। এক ভারতীয় বন্ধু কলকাতায় একটা মণ্ডপের দুর্গা পূজার বাজেট একবার শুনিয়েছিল। ওতেই আমার মাথা ঝিঁ ঝিঁ করে উঠেছিল। হায়রে ধর্ম দিয়ে টাকার বানানোর খেলা রে!

এবার আসি আমার ধর্মের কথায়। যেবার উমরা করতে গিয়েছিলাম মক্কা এবং মদিনা শরীফের চারপাশে কোটিকোটি টাকা খরচের কারুকাজ করা দালানকোঠা আর হাজারো-লাখো বৈদ্যতিক বাতি আর ঝাড়বাতির চোখ ঝলসানো আলোতে তখন থেকেই আমার মনের ভেতরে একটার পর একটা প্রশ্নের আঘাত হেনেছিল।

আর আমাদের দেশের খবর তো সবাই জানে। মাজারের পীর থেকে শুরু করে ওয়াজ মাহফিলের আলেম ওলামাদের তেলতেলে গাল ,দামি ফিটফাট কাপড়চোপড় আর ব্রান্ডের গাড়ীতে চড়া জীবনযাপন দেখলে মনে হয় পুরো পৃথিবীর সব প্রফেশান ছেড়ে সবার উনাদের পথ অবলম্বন করা উচিত।
আমার দাদার বাড়ির এমন বহু মানুষ দেখেছি যারা নিজেরা খেতে পায়না ঠিকমতো কিন্তু ধার করেও হুজুরদের জন্য টাকাপয়সা, হাঁস-মুরগি, ছাগল নিয়ে যেতো।


সোমালিয়া , সিরিয়া, ইয়েমেন সহ পৃথিবীর বহু দেশের মানুষ খাবার না পেয়ে গাছের পাতা ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে।


ছোটছোট বাচ্চারা খেতে না পেরে মরে গিয়ে শেয়াল, কুকুর আর শকুনের খাবারে পরিণত হচ্ছে।

শিশুরা মায়ের শুকিয়ে যাওয়া বুকে দুধ না পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে মায়ের বুকেই শেষ নিঃশাস ত্যাগ করছে।

কিন্তু আমাদের মহামান্য এই ধর্ম ব্যাবসায়ীদের এসবের চিন্তার কোন কারন নাই। উনাদের বাসার চুলা কখনো বন্ধ হয়না, উনাদের শরীরের চর্বি কখনো গলেনা, উনাদের ব্যাংক ব্যালেন্স কখনো কমেনা, উনাদের ঘরে কাজের লোকের কখনো অভাব হয়না।

“ধর্ম" ব্যাবহার করে উনারা সাধারণ মানুষের মনের ভেতরে এমন একটা পাকাপোক্ত জায়গা সৃষ্টি করে নিয়েছে যে দরকার হলে মানুষ নিজে কয়েক বেলা খাবেনা তবু উনাদের পেট ভর্তি রাখবে। আর কেনোই বা রাখবে না ?

পৃথিবীর ঐ অভুক্ত অর্ধমৃত মানুষগুলো কি আমাদের সবাইকে ' বেহেশত্/ heaven / স্বর্গে ' নিতে পারবে? না পারবেনা। কিন্তু পিয়ারের ধর্ম ব্যাবসায়ী ভাইয়েরা পারবেন। আর বেহেশত্-heaven-স্বর্গে নিতে না পারলেও কমপক্ষে যাওয়ার রাস্তাটা পদে পদে দেখিয়ে দিতে পারবেন।

আহ! বেহেশত! Heaven! স্বর্গ! শুধুমাত্র কল্পনা করতেই একটা অপার্থিব আনন্দে আমার পুরা সত্তা কেমন ঝিলিক মেরে উঠছে, না জানি আসল জায়গায় যেতে পারলে কেমন লাগে।

তাই ব্যস্ত দোস্তরা আর দেরী নয়, মুক্তহস্তে বস্তা ভরে দান করে ঐ মস্ত মানুষদের গোস্ত বাড়াতে এগিয়ে আসুন।

সবচেয়ে ভালো হয় যদি নিজেরাই এই ব্যাবসায় নেমে পড়ুন। লাইফ হবে সেইরকম ঝাকানাকা।

লিখেছেন:ফাতিমা জান্নাত


↑PREVIOUS-ইসলামে বর্বরতা ও অনুভুতি

Next-ধর্ম বিষয়ে আমার প্রশ্নগুলো প্রথম পর্ব

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ