এই ব্লগটি সন্ধান করুন

তবলীগ হুজুর এবং মুসলমান সমাজ




তবলীগি হুজুররা হয় কচ্ছপ টাইপের। একবার যাকে ধরে, তাকে হয় চিল্লা দিতে হয়, নাহয় অন্ততপক্ষে নামাজ পড়া আর বয়ান শোনার জন্য মসজিদে হাজিরা দিতে হয়। তাই তবলীগি হুজুরের দলকে লাইন ধরে এগিয়ে আসতে দেখলে বা দলবেঁধে কাউকে ঘিরে ধরে দাওয়াতি কাজকর্ম করতে দেখলে পারতপক্ষে আমি একশো হাত দূরত্ব বজায় রাখি। পরশুদিন আর সেটা সম্ভব হলোনা। পাড়ার দোকানে সিগারেট কিনতে গিয়ে পড়বি পড় এক্কেবারে মালির ঘাড়ে। তবলীগ দলের দলনেতা লম্বা একটা সালাম দিয়ে আমার উপর শান্তি, রহমত, বরকতের বর্ষন কামনা করায় আমি কোনরকম উত্তর না দিয়ে চোখেমুখে প্রচন্ড বিরক্তির ভাব দেখালাম।
- ভাইজান কি মুসলিম?
- সেটা জানা কি জরুরী? আমি মানুষ।
- জ্বী! তা তো বটেই। তারপরেও মানুষ হিসাবে আমাদের কিছু দায়িত্ব কর্তব্যও আছে। আল্লাহপাক মানুষ সৃষ্টি করেছেন, তাঁর ইবাদতের উদ্দেশ্যে।
- আল্লাহপাক যে মানুষ সৃষ্টি করেছেন, এটা কি আল্লাহপাক নিজে আপনাকে বলেছেন? তিনি আমাদেরকে কি উদ্দেশ্যে তৈরী করেছেন, সেটা কি আল্লাহপাক আপনাকে নিজে বলেছেন? নাকি আন্দাজের উপর বলছেন?
- আন্দাজে বলবো কেন? আল্লাহপাক নিজেই কোরানে বলেছেন, তিনি জ্বীন ও ইনসান সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদতের জন্য।
- কোরান যে আল্লাহর বানী, এটা কিভাবে জানেন? জ্বীন-ভূত এসব আবার কি? আপনি জ্বীন দেখেছেন কোনদিন?
- না দেখলেও যেহেতু কোরানে বলা আছে, এটাই সত্য। কোরানে কোন ভুল নাই। আজ পর্যন্ত কোরানের মত একটা আয়াত লিখতে পারেন নাই। আল্লাহপাকের বানী বলেই এতে কোন ভুল নাই।
- ভুল অনেক আছে। তথ্যগত ভুল আছে, ব্যাকরণগত ভুল আছে, স্ববিরোধী কথাবার্তা আছে। আপনারা যারা কোরান ছাড়া কিছু পড়েন না, জানেন না, আর কোরান পড়েও কিছু বোঝেন না, তারাই বলেন, কোরানে কোন ভুল নাই। রবীন্দ্রনাথের কোন গল্প, কবিতা, গান বা উপন্যাস পড়েছেন? এগুলোর কোনটাতে কোন ভুল ধরতে পেরেছেন? রবীন্দ্রনাথ ছয় বছর বয়সে যে "জল পড়ে, পাতা নড়ে" কবিতাটা লিখেছিলেন, দুইশো বছর পরেও কি এর মত কোন কবিতা কেউ লিখতে পেরেছেন?
- কি যে বলেন! কোরান হচ্ছে যাবতীয় জ্ঞান বিজ্ঞানের উৎস। সারা পৃথিবীর সব বিজ্ঞানীরা আজকে যা আবিষ্কার করছেন, পবিত্র কোরান রিসার্চ করেই তা করছেন। চিন্তা করে দেখেন, চৌদ্দশ বছর আগে....
- চাপাবাজি কমান। সব আবিষ্কার দূরের কথা, একটা আবিষ্কারের নাম বলেন তো!
- জ্বী মানে আমি তো বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম না! কিন্তু বড় বড় মনীষীরা পর্যন্ত স্বীকার করেছেন, কোরান হল পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম। প্রকৃত ইসলাম কায়েম হলে...
- প্রকৃত ইসলাম কোথায় শান্তি আনতে পেরেছে? এরকম একটা দেশের নাম বলেন তো! সৌদি আরবের ওহাবি মুসলিমরা কি প্রকৃত মুসলিম? সেখানে তো এখন মেয়েরা গাড়ি চালায়, ফুটবল খেলা দেখতে যায়, নাইট ক্লাবেও যায়।
- জ্বী না। ওরা ইসলাম থেকে দূরে সরে গেছে।
- তাহলে ইরানের ইসলামী শাসনতন্ত্র কি প্রকৃত ইসলাম?
- জ্বী না। ওরা তো বিভ্রান্ত শিয়া আকিদা অনুসরন করে।
- তাহলে আমাদের দেশে যে সুফি-দরবেশরা ইসলাম ধর্ম প্রচার করেছিল, সেটা কি প্রকৃত ইসলাম ছিল?
- জ্বী না। ইসলাম ধর্মে পীর-দরবেশ প্রথা সমর্থন করে না।
- তাহলে কোনটা প্রকৃত ইসলাম? শুধু আপনাদের তবলীগ জামাতই প্রকৃত ইসলাম? তা আপনারা কোন ধারার তবলীগ জামাত? মওলানা সাদপন্থী নাকি জুবায়ের পন্থী?
- ভাইজানতো দেখি অনেক খবর জানেন! মওলানা সাদ অনেক বিতর্কিত, না-হক্ব ফতোয়া প্রচার করেছেন, ফিৎনা সৃষ্টি করে চলেছেন। আমরা মওলানা জোবায়েরপন্থী। আমরাই প্রকৃত ইসলামী ঈমান আকিদা অনুসরন করে চলি।
- আপনাদের সবাই আসলে একেকজন ফিৎনা সৃষ্টিকারী। যেখানে যারা দলে ভারী, সেখানে তারাই মনে করেন, আমরাই প্রকৃত মুসলিম। বাকীরা জাহান্নামী। আপনাদের জন্যই নিজেকে মুসলিম হিসাবে পরিচয় দিতেও লজ্জা পাই। আপনারা আগে নিজেরা এক হন, তারপর মানুষকে দাওয়াত দেন।
- জ্বী ভাইজান। এসব আসলে কেয়ামতের আলামত। ইমাম মাহদী এসে সব বিভ্রান্তি দূর করবেন, ইনশাল্লাহ!
- চাপাবাজী বন্ধ করেন। ইসলাম ধর্ম শুরু হওয়ার পর থেকেই বলে আসছেন, কেয়ামত নজদিক! ইমাম মাহদী এসে সব ঠিক করবেন! কত মাহদী আসলো গেল!
- কেয়ামত আসবেই! এটা তো মানেন?
- কেয়ামত আসবে, তবে সবার জন্য না। কেয়ামত মানে "পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে" - এটা না। কেয়ামত মানে - ইসলাম ধর্ম ধ্বংস হয়ে যাবে। খুব শিঘ্রই হবে।
- আস্তাগফিরুল্লাহ! ভাইজান কি কেয়ামত বিশ্বাস করেন না?
- না।
- আল্লাহপাক তো কোরানে পরিষ্কার বলেছেন, কেয়ামত অবশ্যই আসবে। আপনি কি আল্লাহতালার কথা বিশ্বাস করেন না?
- পরিষ্কার প্রমান ছাড়া আমি কিছুই বিশ্বাস করি না। জ্বীন ভুত পেত্নী ফেরেশতা যেমন বিশ্বাস করি না, আল্লাহ - ভগবান এসবও বিশ্বাস করি না। সব গাঁজাখোরী গল্প।
- তাহলে আপনি কি বিশ্বাস করেন? এই যে এত সুন্দর পৃথিবী, সৃষ্টির সেরা মানুষ, আশরাফুল মখলুকাত, এগুলি কি কোন স্রষ্টা ছাড়া এমনি এমনি সৃষ্টি হয়েছে? সবকিছু এত সুন্দরভাবে চলছে, কারো নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই?
- স্রষ্টা কেউ একজন হয়তো ছিলেন, তবে আপনারা যে আল্লাহর কথা বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, চাপাবাজী। পৃথিবী সৃষ্টি করা আর চালানোর বিষয়ে তার কোন ভূমিকা নাই। আর কেউ সম্ভবত কিছু কিছু বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে, কিন্তু সেটা আল্লাহ নামের কেউ না। তার কোন নাম নাই। নাম নেয়ার কোন প্রয়োজনও নাই।
- আল্লাহ না করলে কে এই নিয়ন্ত্রণটা করে? আপনি তো নাকি প্রমান ছাড়া কিছুই বিশ্বাস করেন না। তাহলে যে বললেন, কেউ একজন সব নিয়ন্ত্রণ করে, এটা কিভাবে বললেন? এর কি প্রমান আছে?
- প্রমান অবশ্যই আছে। গত বছর ঈদের দিনের ঘটনা। সন্ধ্যার পর তাস খেলতে বসছিলাম, এক বোর্ডে বারোজন। থ্রি - কার্ড খেলতে শুরু করার পর একটানা একুশ দান আমি একাই পেয়ে গেলাম। যেহেতু আমিই বোর্ড পাচ্ছিলাম, তাই এটা নিশ্চিত, কার্ড বাটার মধ্যে কোন চুরিজারী ছিলনা। অনেকে অনেকরকমভাবে কার্ড কেটে-ফেটে-শাফল করে, জায়গা বদল করেও একই রেজাল্ট। শেষে খেলা বাদ দিয়ে সবাই বাসায় চলে গেল। এর আগেও আমার এবং আরো অনেকের একইরকম ঘটনা নিজের চোখে দেখেছি। এসব ব্যাপার কোন নিয়ম, সূত্র, পরিসংখ্যানের মধ্যে পড়ে না। পুরাই আধ্যাত্মিক ব্যাপার। কাজেই, মানুষের জ্ঞান, বিজ্ঞান, বুদ্ধি, অভিজ্ঞতার বাইরে অবশ্যই অনেক কিছু আছে। এইযে এত বড় একটা বিষয়ে স্পষ্ট প্রমাণ পাইলাম, অথচ ইসলাম ধর্মে এই তাস খেলা, জুয়া খেলাই হারাম। এইটা কোন কথা হল!

তবলীগি হুজুরদের নিয়ম শৃঙ্খলা চমৎকার। এরা যখন এক মসজিদ ছেড়ে আরেক মসজিদে যায়, তখন পিঠে বস্তা পোটলা নিয়ে একসারি হয়ে রাস্তার একপাশ দিয়ে এগিয়ে চলে। সবার সামনে থাকে দলনেতা, আর সবার পিছনে থাকে একজন পাহারাদার। এগিয়ে চলার সময় সামনের কেউ এদিক-ওদিক তাকালে কিংবা শৃংখলা বহির্ভূত কিছু করলে এই পাহারাদার "আল্লাহু আকবার" বলে সবাইকে সতর্ক করে দেয়। পাঁচ-ছয়জনের দল নিয়ে যখন দাওয়াতের কাজে বের হয়, তখনও একজন কথা বলে আর বাকিরা বুকে হাত বেঁধে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আর মাথা ঝাঁকায়।

আমার সাথে তাদের দাওয়াতী আলোচনার এই পর্যায়ে দলের পাহারাদার "আল্লাহু আকবার" ধ্বনি দিয়ে সতর্কতা জারী করে দিল। অতঃপর, স্হানীয় মসজিদে আরো বিস্তারিত আলোচনার জন্য বাদ মাগরেব বয়ান হবে, সেখানে শরীক হওয়ার দাওয়াত দিয়ে তারা দ্রুত বিদায় নিলেন।

 লিখেছেনঃশুভ্রনীল ব্রহ্মচারী।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

  1. উহ�� দারুন কিছু প্রশ্ন, সর্বদাই শুনতে হয় । নতুন কিছু উত্তর পাওয়া গেল। ভাল্লাগছে✌

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. আরো সব দারুন সব উত্তর পেতে এবং প্রশ্ন পেতে ব্লগের সংঙ্গে যুক্ত থাকুন।।

      মুছুন

মুক্তচিন্তার সাথে হোক আপনার পথ চলা।