এই ব্লগটি সন্ধান করুন

আমি কোন ধর্মটি চয়ন করব?

আমি বয়সে তিরিশের মাঝামাঝি এবং একজন জীবন সাথীর খোঁজে প্রাণান্ত। এমতাবস্থায় ২০০৩ সালের মার্চ মাসে এক বন্ধু আমারই সমবয়সী এক মুসলিম মেয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। মেয়েটির পাকিস্তানী-ভারতীয় মুসলিম পিতামাতার ঘরে জন্ম এবং সে পশ্চিমা উদার পরিবেশে লালিত। সে ক্যানাডার ব্রাঞ্জুউইকবিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (B.Sc.) ও ইংল্যান্ডের কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেস্নাতকোত্তর (M.Sc.) ডিগ্রীধারী। এরপর সে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ বছর ধরে শিক্ষকতা ও পাশাপাশি পিএইচডি (Ph.D.) ডিগ্রীর উপর কাজ করছিল।
আমি বাংলাদেশের এক গ্রামে জন্মেছি ও রক্ষণশীল মুসলিম পরিবেশে বড় হয়েছি। কিন্তু ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরে আমেরিকার ওয়ার্ল্ড ট্রেইড সেন্টার-এর উপর ইসলামী জিহাদের নামে মুসলিম সন্ত্রাসীদের নির্মম আক্রমণের পর বিশ্বব্যাপী ইসলামের নামে আতংকের যে জোয়ার বইতে থাকে, তাতে ইসলামে আমার বিশ্বাস নড়বড়ে হয়ে উঠছিল। মেয়েটির সাথে পরিচয় হওয়ার সময় ইসলামের বিশ্বাসযোগ্যতা কিংবা ইসলাম ধর্ম হিসাবে গ্রহণযোগ্য কিনা সে বিষয়ে আমি কিছুটা সন্দিহান হয়ে উঠছিলাম। আমার বন্ধু ও তার নব্য ইসলাম-গ্রহণকারী জাপানী স্ত্রীর উপস্থিতিতে আমি যখন দ্বিতীয়বার মেয়েটির সাথে দেখা করি, তখন সে ইসলামে আমার বিশ্বাস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে বসে; কেননা ধর্ম তার জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ঐ মুহূর্তে ইসলামে আমার বিশ্বাস যেহেতু গোলমেলে বা দুর্বল হয়ে পড়ছিল, আমি তাকে তার মনঃপুত জবাব দিতে পারলাম না, কেননা আমি তার সাথে সততা দেখাতে চেয়েছিলাম – বিশেষত আমি যখন আমার বাকী জীবনটা তার সাথেই কাটানোর কথা ভাবছিলাম। আমি বললামঃ মুসলিম, হিন্দু বা খৃষ্টান হওয়া আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো একজন ভাল মানুষ হওয়া, মানবতাবাদী হওয়া। এ জবাব তার মনঃপুত হবার ধারে-কাছেও ছিল না। শেষ পর্যন্ত আমার বন্ধু ও মেয়েটি আমাকে যে প্রশ্নটি করল, তা হলোঃ আমাকে যদি একটা ধর্ম পছন্দ করতেই হয়, তাহলে কোন ধর্মটি চয়ন করব?
কিন্তু ইসলামসহ অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে আমার যথেষ্ট পড়াশুনা না থাকায় আমি এবারও মেয়েটির মনঃপুত কোন সুস্পষ্ট জবাব দিতে পারলাম না।
এরপর আমি ইন্টারনেটের কয়েকটি আলোচনা মঞ্চে “আমি কোন ধর্মটি চয়ন করব?” প্রশ্নটি উপস্থাপন করি নানান ধর্মের বিশ্বাসীদের কাছ থেকে মতামত ও কারণ জানার জন্য, যাতে করে আমি আমার সম্ভাব্য জীবন-সাথীকে প্রশ্নটার একটা সুস্পষ্ট জবাব দিতে পারি। সহমর্মী কয়েকজন ইন্টারনেট বন্ধুর (মুসলিম, হিন্দু, খৃষ্টান) কাছ থেকে কিছু ভাবালু ধরনের জবাব পাই মাত্র। তারা আমাকে সুস্পষ্টভাবে যুক্তি দিতে পারে নিঃ কেন আমি ইসলাম, হিন্দু বা খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করব?
আমি মেয়েটির সাথে আরেকবার দেখা করেছি এবং এক-দু’বার ফোনে কথা বলেছি। শেষ পর্যন্ত সে আমাদের যোগাযোগের সমাপ্তি টানল এই বলেঃ “ধর্ম (ইসলাম) আমার জীবনে সবচেয়ে বড় জিনিস এবং আমি অনুরূপ জীবনদর্শনের একজন জীবনসাথী খুঁজছি।”
যাহোক, “আমি কোন ধর্মটি চয়ন করব?” প্রশ্নটির জবাব আমি খুঁজতে থাকি। এরপর বেশ সময় পার হয়ে গেছে এবং ইতিমধ্যে আমি আব্রাহামীয় (ইসলাম, খৃষ্টান, ইহুদী) ও হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে কিছুটা পড়াশুনা করেছি। সেই সাথে আমার জীবনে ও আশেপাশে ঘটা কিছু ঘটনার ভিত্তিতে আমি এখন মোটামুটি একটা স্পষ্ট সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছি যে, আমাকে যদি একটা ধর্ম চয়ন করতেই হয়, সে ধর্মটি কী হবে!
কেন ধর্ম ও কোন ধর্ম?
কেন আমাদের একটা ধর্মের প্রয়োজন? এটা ব্যাখ্যা করার দরকার পড়ে না যে, কেউ একটা ধর্মকে আলিঙ্গন করে যাতে সেটা পালনের মাধ্যমে মৃত্যুপর অনন্ত জীবনে সুখ-শান্তি নিশ্চিত হয় – যেমন ইসলামের ক্ষেত্রে তার জন্য বেহেস্তের দ্বার খুলে যায়। একজন ধার্মিক মানুষের জন্য পার্থিব জীবন হলো এক স্বল্পস্থায়ী বিরতিমাত্র, যার গুরুত্ব খুবই নগণ্য। তার কাছে অসীম গুরুত্বপূর্ণ হলো মৃত্যু-পরবর্তী আগামী জীবন, যা অন্তহীন। কাজেই কোন ধর্মটি আমরা বেছে নিব তার জন্য এটা উপলব্ধি করা প্রয়োজন যে, সৃষ্টিকর্তা মাত্র একজন এবং তাঁর প্রদত্ত সত্যধর্ম মাত্র একটি বা কয়েকটি – যদিও মানবজাতির ইতিহাসে হাজার হাজার ধর্ম এসেছে এবং সেগুলোর বহু বিলীন হয়ে গিয়েছে। কাজেই আমাদেরকে যথার্থ চৌকস হতে হবে সত্যিকার ধর্মটি নির্ণয় করতে এবং সেটিই গ্রহণ করতে হবে। কেউ যদি এখানে ভুল করে বসে এবং ভ্রান্ত একটি ধর্ম চয়ন করে ফেলে, তাহলে তার সর্বনাশ। মৃত্যুপর অনন্তকাল ধরে প্রচণ্ড অগ্নিদাহনে জ্বলেপুড়ে মরা হবে তার নিয়তি।
কাজেই আমি ব্যক্তিগতভাবে কোন ধর্মটি পছন্দ করব সে বিষয়ে গভীর ও সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করেছি এবং আমার মনে হয় আমি নির্ণয় করতে পেরেছি কোন ধর্মটি সত্য বা সর্বাধিক সত্য ও খাঁটি, যা আমি নীচে আলোচনা করব।
এ আলোচনায় আমি চারটি প্রধান ধর্মকে গুরুত্ব দিয়েছিঃ ইসলাম, ইহুদী, খৃষ্টান ও হিন্দু ধর্ম। মানব সভ্যতার ইতিহাসে হারিয়ে যাওয়া হাজার হাজার ধর্ম – যেমন হেলিনিক যুগের (Hellenic Age) জিউস, এ্যাপোলো প্রমুখ ইশ্বরের ধর্মগুলো, যা মৃত্যুর নির্মম শিকারে পরিণত হয়েছে, সেগুলোও এ আলোচনায় আসে নি। কেননা আমি মনে করি সর্বশক্তিমান ও মহাবিশ্বের সবকিছুর নিয়ন্তা প্রকৃত স্রষ্টার সত্যধর্ম এমন শোচনীয় মৃত্যুবরণ করতে পারে না। আমি আজকের যুগে বিদ্যমান অনেক ছোট ছোট ধর্মগুলোকেও আলোচনায় আনি নি; কেননা সর্বশক্তিমান ঈশ্বর যখন ধর্মের মাধ্যমে মানবজাতির কাছে নিজেকে প্রকাশ করতে এতটাই আগ্রহী এবং যার জন্য তিনি হাজার হাজার বছর চেষ্টা চালিয়েছেন ইতিমধ্যে, তাহলে আল্লাহর প্রকৃত ধর্ম পৃথিবীতে বিদ্যমান ছোট ছোট ধর্মগুলোর মধ্যে থাকার কথা নয়। এটা বিশেষত যুক্তিযুক্ত এ কারণে যে, মরণশীল মানুষ তার প্রচেষ্টা ও বুদ্ধি-বিবেচনা খাটিয়ে আজ জ্ঞান-বিজ্ঞান, উন্নতি ও সভ্যতার অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, যেখানে আল্লাহর ধর্মীয় প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে ক্ষুদে ধর্মগুলোর মধ্যে ঘুরে মরতে পারে না। আর এটাও হতে পারে না যে, মানুষ আজ জ্ঞানগরিমার চরম শীর্ষে পৌঁছে গেছে, অথচ স্রষ্টার আসল ধর্মটি নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়েছে। কাজেই ঈশ্বরের প্রকৃত ধর্মটি বা ধর্মগুলো অবশ্যই আজকের পৃথিবীতে বিদ্যমান বড় বড় ধর্মগুলোর মধ্যে থাকবে।
বৌদ্ধ ধর্ম আজ একটি প্রভাবশালী ধর্ম হলেও সেটা এ আলোচনায় আসে নি, কেননা তাতে কোন সৃষ্টিকর্তা বা পরকালে বেহেস্ত-দোজখের ধারণা নেই। প্রকৃতপক্ষে গৌতম বুদ্ধ কখনোই কোন ধর্ম প্রচার করেন নি। তিনি ছিলেন সমকালীন একজন ভাবুক চিন্তাবিদ, যিনি তার শিষ্যদের মাঝে আদর্শ জীবনযাপনের উপায় বা পথ কি হবে সেটা প্রচার করতেন। প্রায় সমকালীন প্রাচীন গ্রীসে সক্রেটিস, এ্যারিস্টোটল, লুক্রিটিয়াস, এপিকিউরাস প্রমুখ বড় বড় চিন্তাবিদও তাদের শিষ্যদের মাঝে অনুরূপভাবে জীবনদর্শন প্রচার করতেন। বুদ্ধবাদকে ধর্ম হিসাবে স্বীকৃতি দিলে সক্রেটিস, এ্যারিস্টোটল, লুক্রিটিয়াস, এপিকিউরাস প্রচারিত শিক্ষা এবং জীবনদর্শনও ধর্ম হিসাবে গণ্য হবে।
ইসলাম, খৃষ্টান ও ইহুদী ধর্ম একই প্রকৃতির?
মুসলিমরা দাবী করে যে, আল্লাহ নামক একই ঈশ্বর নূহ, মূসা, যীশু এবং সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাম্মদকে নবী হিসাবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছিলেন তার ধর্মকে মানবজাতির কাছে প্রচার করতে। তবে ইহুদী ও খৃষ্টানরা বিশ্বাস করে না যে, তাদের ঈশ্বরই মুহাম্মদকে নবী হিসাবে পাঠিয়েছিলেন। মুসলিমদের মত খৃষ্টানরা বিশ্বাস করে মুসা ও যীশুকে পাঠিয়েছিলেন একই স্রষ্টা, কিন্তু ইহুদীরা সেটা বিশ্বাস করে না। এরূপ বিশ্বাস করা না-করার মাঝে আমি ঘুরে ফিরেছি বহুদিন এবং ভেবেছিঃ একই ঈশ্বর যদি এসব নবীকে পাঠিয়ে থাকেন তাঁর নীতি ও শিক্ষা প্রচার করতে, তাহলে এ ধর্মগুলোর আচার-প্রকৃতি এতটা ভিন্ন কেন, যেমনটি আমরা দেখি এসব ধর্মের অনুসারীদের ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় আচার-প্রথা পালনের মাঝে। বিগত দু’বছর ধরে আমি ধর্মগুলো সম্পর্কে বেশকিছু জ্ঞান অর্জন করেছি এবং আমি ব্যক্তিগত জীবনে এমন কিছু ঘটনার মুখামুখি হয়েছে – যার ভিত্তিতে আমি অনুধাবন পারি যে, এসব ধর্মকে বাহ্যিকভাবে ভিন্ন মনে হলেও মূল শিক্ষায় সেগুলোর মাঝে একত্ব বা সমরূপতা আছে। বাহ্যিক আচারের ভিন্নতাগুলো সম্ভবত শত শত বছর ধরে পরিবর্তন বা পথ-ভ্রষ্টতার কারণে সৃষ্টি হয়েছে। আমি এখানে কিছু দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করব যা সূত্রহীন হতে পারে, কেননা আমি সেগুলো পারস্পারিক আলোচনার ভিত্তিতে জেনেছি; তবে আমার বিশ্বাস সেগুলো সত্যকে প্রতিফলিত করবে।
ব্যভিচারের জন্য পাথর ছুঁড়ে জ্যান্ত হত্যাঃ ইসলাম, খৃষ্টান ও ইহুদী ধর্মে একই প্রথা!
আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত বেশীরভাগ মুসলিমরা তর্ক করে যে, ব্যভিচারের জন্য পাথর ছুঁড়ে জ্যান্ত হত্যার প্রথা ইসলামে নেই। তারা দাবী করেঃ “ব্যভিচারের জন্য পাথর ছুঁড়ে হত্যার বিষয়ে কিছুই বলা হয় নি কোরানে।” এটা সত্য যে ব্যভিচারের জন্য পাথর ছুঁড়ে হত্যার বিষয়ে কোরান কিছুই বলে নি, তবে জ্যান্ত ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা, হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা ইত্যাদিকে স্বর্গীয়ভাবে অনুমোদিত শাস্তি হিসাবে উল্লেখ করেছে (কোরান ৫:৩৩)। অবৈধ যৌনকর্মের জন্য শাস্তির ব্যাপারে কোরান ২৪:২-৩ আয়াতে বলেঃ
“ব্যভিচার ও বিয়ে-পূর্ব যৌনকর্মে দোষী নারী ও পুরুষকে ১০০টি দোররা মেরে শাস্তি দাও... ব্যভিচার ও বিয়ে-পূর্ব যৌনকর্মে দোষী পুরুষ কেবল একই চরিত্রের বা একজন কাফের নারীকে বিয়ে করতে পারবে...”
এ আয়াতটির ভিত্তিতে শিক্ষিত মুসলিমরা দাবী করে যে, কোরানে ব্যভিচারের (বিয়ে-পূর্ব অবৈধ যৌনকর্মের) শাস্তি ১০০টি দোররা মারা, পাথর ছুঁড়ে হত্যা নয়। এখানে কয়েকটি বিষয় বিবেচ্যঃ
ক) সেসব শিক্ষিত মুসলিমদেরকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়ঃ বিয়ে-পূর্ব যৌনকর্মের জন্য অবিবাহিত ছেলেমেয়েদেরকে ১০০টি দোররা মারা ঠিক কিনা, তারা তাতে না’সূচক উত্তর দিবে। তারাই দাবী করছে এটা আল্লাহর স্বর্গীয়ভাবে অনুমোদিত শাস্তি – অথচ সেটা কার্যকর করা যাবে না।
খ) আয়াতটিতে আপাতঃদৃষ্টিতে অবিবাহিত ছেলেমেয়েদের মাঝে এবং বিবাহিত নারী-পুরুষের মাঝে অবৈধ যৌনকর্মের জন্য একই শাস্তির রায় দিয়েছে আল্লাহ। কিন্তু সেসব শিক্ষিত মুসলিমদেরকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়ঃ অবৈধ যৌনকর্মে দোষী অবিবাহিত ছেলেমেয়ে ও বিবাহিত নারী-পুরুষকে একই শাস্তি দেওয়া ন্যায় বা যুক্তিযুক্ত কিনা – তারা না’সূচক উত্তর দিবে। এখানেও সেই একই সমস্যাঃ তারা স্বীকার এবং দাবী করছে এটা আল্লাহ-অনুমোদিত শাস্তি, কিন্তু সঠিক না।
হারিয়ে যাওয়া ব্যভিচারের আয়াতঃ পৃথিবীর কোন জনগোষ্ঠীই ব্যভিচার ও অবিবাহিত ছেলেমেয়েদের মাঝে যৌনকর্মকে একই দৃষ্টিতে দেখে না, এবং উভয়কে একই শাস্তি দেওয়া অন্যায় মনে করবে। তার মানে দাঁড়ায় আল্লাহর চিন্তাধারা ভুল; স্বয়ং শিক্ষিত মুসলিমরাও সেটাই বলছে। তবে আল্লাহ কিভাবে ভুল করতে পারেন? ভুল করতে পারে কেবল মানুষ। ইসলামের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হয়েছে। উপরে উল্লেখিত ২৪:২-৩ আয়াতে আল্লাহ সম্ভবত কেবল অবিবাহিতদের মাঝে যৌনকর্মের কথা বলেছেন। বিবাহিতদের মাঝে ব্যভিচারের কথা বললে তাদের বিয়ের কথা আসবে কেন! ইসলামী সূত্র থেকে আমরা জানতে পাই, আল্লাহ আসলে ব্যভিচারের বিষয়ে আলাদা একটা আয়াত (আর-রাজম) নাজিল করেছিলেন, কিন্তু সেটা হারিয়ে যায়। সহি হাদীস সংগ্রহকারী ইসলামী পণ্ডিত ইবনে মাযা জানানঃ আল-আহযাব সুরাটি (সুরা ৩৩) চামড়ার পাতায় লিখে মহানবী তা প্রিয়তম স্ত্রী আয়শার কাছে রেখেছিলেন। মহানবীর মৃত্যুর পর আয়শা তার মৃতদেহের সাথে কবরস্থানে যান, এবং ফিরে এসে দেখেন চামড়া পাতাগুলোর একটি ছাগলে খেয়ে ফেলেছে, যার অন্তর্ভুক্ত ছিল আর-রজমের (পাথর ছুঁড়ে হত্যার) আয়াতটি। এ সম্পর্কে মহানবীর প্রথম জীবনীতে ইবনে ইসহাক লিখেছেনঃ
“আল্লাহ মুহাম্মদকে প্রেরণ করেন এবং তার মাধ্যমে ধর্মীয় বাণী পাঠান, যার মাঝে ছিল আর-রজমের বা পাথর ছুঁড়ে হত্যার আয়াত। উমর বলেনঃ “আমরা সেটা পড়েছি, আমাদেরকে সেটা শিখানো হয়েছিল এবং আমরা সে নির্দেশ মেনে চলেছি। মহানবী পাথর ছুঁড়ে মেরেছেন; তার (মৃত্যুর) পরে আমরা পাথর ছুঁড়ে মেরেছি।”i
সহি হাদীস সংগ্রহকারক আবু মুসলিমও পাথর-ছুঁড়ে হত্যার আয়াতের কথা বলেছেনঃ
উমর জানানঃ “আল্লাহ মহানবীর কাছে আসমানী কিতাব (কোরান) প্রেরণ করেন এবং সে কিতাবে পাথর ছুঁড়ে হত্যার আয়াত ছিল।” উমর আরও জানানঃ “বিবাহিত নারী-পুরুষরা ব্যভিচারে লিপ্ত হলে এবং তা সাক্ষ্য-প্রমাণেকিংবা গর্ভধারণ বা স্বীকারোক্তি দ্বারা সঠিক প্রতিপন্ন হলে, তাদেরকে পাথর ছুঁড়ে হত্যা আল্লাহর কিতাবে নির্ধারিত দায়িত্ব।” (সহি মুসলিম ১৭:৪১৯৪)
তাহলে আমরা দেখছি, বিবাহিত ও অবিবাহিতদের মাঝে অবৈধ যৌনকর্মের শাস্তি যেহেতু এক হতে পারে না – যা মুসলিমরাও স্বীকার করবে – সে বিবেচনা বা যুক্তির সাথে সঙ্গতি রেখে আল্লাহ ব্যভিচারের ক্ষেত্রে আলাদা আয়াত নাজিল করেছিলেন, যার প্রমাণ আসছে ইসলামের বিভিন্ন সূত্র থেকে। এবং নবী মুহাম্মদের সময় থেকে ইসলামী সমাজে তা প্রয়োগ হয়ে এসেছে। এ সম্পর্কে আমরা আরো প্রমাণ পাই মহানবী কিভাবে ব্যভিচারীদেরকে শাস্তি দিতেন সেসব দৃষ্টান্ত থেকে। আসুন নজর দিই নিম্নোক্ত সহি হাদীসগুলোর দিকেঃ
সহি বুখারী ৪:৫৬:৮২৯:
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর জানানঃ “ইহুদীরা মহানবীর কাছে এসে বলে তাদের গোত্রের এক মহিলা ও পুরুষ অবৈধ যৌনকর্মে লিপ্ত হয়েছে। আল্লাহর নবী তাদেরকে বললেনঃ ‘তোমরা তাউরাতে পাথর ছুঁড়ে হত্যার আয়াত পাওনি?’ তারা উত্তর দেয়ঃ ‘আমরা তাদের অপকর্ম প্রচার করি এবং দোররা মারি।’ আব্দুল্লাহ বিন সালাম জানানঃ ‘(নবী বললেন) তোমরা মিথ্যা বলছ; তাউরাতে পাথর ছুঁড়ে হত্যার আয়াত আছে।’ তারা তাউরাত আনল এবং তাদের একজন পাথর ছুঁড়ে হত্যার আয়াতটি হাত দিয়ে আড়াল করে আগের ও পরের আয়াতগুলো পড়তে লাগল। আব্দুল্লাহ বিন সালাম জানানঃ ‘(নবী বললেন) তোমার হাত সরাও।’ যখন সে হাত সরালো পাথর ছুঁড়ে হত্যার আয়াতটি বেরিয়ে এল। তখন তারা বললঃ ‘মুহাম্মদ সত্য কথা বলেছেন; তাউরাতে পাথর ছুঁড়ে হত্যার আয়াত আছে।’ নবী তখন দোষী দু’জনকে পাথর ছুঁড়ে হত্যার নির্দেশ দিলেন। (আব্দুল্লাহ ইবনে উমর জানানঃ ‘আমি দেখলাম পুরুষটি মহিলাটিকে নিজের শরীর দিয়ে আড়াল করছে নিক্ষিপ্ত পাথর থেকে রক্ষা করতে।’)
সহি মুসলিম ১৭:৪২০৭:
ইমরান বিন হুসেন জানান যে, জুহাইনা গোত্রের এক মহিলা নবীর কাছে আসে এবং সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিল। সে বললঃ আল্লাহর রসুল, আমি অপকর্ম করেছি যার জন্য আমার শাস্তি হওয়া দরকার এবং আমাকে শাস্তি দিন। আল্লাহর নবী মহিলার মালিককে ডেকে বললেনঃ তাকে ভালমত দেখাশুনা কর এবং বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পর তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো। সে কথা মত কাজ করল। তারপর আল্লাহর নবী মহিলার জন্য প্রাপ্য শাস্তি ঘোষণা করলেন। এবং কাপড় দিয়ে তাকে বেঁধে নবী নির্দেশ দিলেন ও তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলা হল।
সহি বুখারী ৪:৫৬:৮২৯:
আবু হুরাইরা জানানঃ বনি আসলামের এক ব্যক্তি নবীর মসজিদে এসে নবীকে বললেনঃ ‘হে আল্লাহর রসুল! আমি অবৈধ যৌনকর্মে লিপ্ত হয়েছি।’ এ কথা শুনে নবী অন্য দিকে মুখ ফিরালেন। এরপর লোকটি নবীর দিকে ফিরে আবারও একই কথার পুনরাবৃত্তি করল। নবী আবারও অন্য দিকে মুখ ফিরালেন। লোকটি নবীর দিকে আবারও মুখ ফিরিয়ে এভাবে চতুর্থবারের মত একই কথার পুনরাবৃত্তি করল। চতুর্থবারের পর নবী তাকে বললঃ ‘তুমি কি পাগল হয়ে গেছ?’ সে জবাব দিলঃ ‘না’। নবী তখন তার সাহাবীদেরকে নির্দেশ দিলেনঃ ‘যাও, ওকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেল।’ লোকটি বিবাহিত ছিল। জাবির বিন আব্দুল্লাহ আল-আনসারী জানানঃ ‘আমি পাথর নিক্ষেপকারীদের একজন ছিলাম। আমরা তাকে মদীনার মুসাল্লাতে (ঈদের নামাজের জায়গা) পাথর ছুঁড়ে হত্যা করি। আমরা তার উপর ধারালো কোণাওয়ালা পাথর ছুঁড়তে থাকলে সে পালাতে চেষ্টা করে, কিন্তু আমরা তাকে আল’হাররাতে ধরে ফেলি এবং পাথর ছুঁড়তে থাকি সে মরে যাওয়া পর্যন্ত।’
সহি মুসলিম ১৭:৪২০৯:
আবু হুরাইরা ও জায়েদ বিন খালিদ আল-জুহানি জানানঃ তারপর আল্লাহর রসুল বললেনঃ ‘বল।’ সে বললঃ ‘আমার ছেলে ঐ ব্যক্তির বাড়িতে চাকর ছিল এবং তার স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছে। আমাকে জানানো হয়েছে যে, (ইসলাম মতে) পাথর ছুঁড়ে হত্যা তার প্রাপ্য শাস্তি। এ অপরাধের বিনিময় হিসাবে আমি ১০০টি ছাগল ও একজন দাসী দিয়েছি। তা এ অপরাধের জন্য যথেষ্ট কিনা জানতে চাইলে ধর্মপণ্ডিতরা আমাকে বলেন যে, আমার ছেলেকে ১০০ দোররা মারতে হবে এবং এক বছরের জন্য নির্বাসনে যেতে হবে। এবং ঐ মহিলাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলতে হবে (যেহেতু সে বিবাহিতা)।’ এরপর আল্লাহর নবী বললেনঃ ‘যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর নামে শপথ করে বলছি, আমি এ ব্যাপারে আল্লাহর কিতাবের ভিত্তিতে রায় দিব। ঐ দাসী ও ছাগলগুলো ফেরত নিতে হবে, এবং তোমার ছেলেকে ১০০ দোররা মেরে ও এক বছরের জন্য নির্বাসনে পাঠিয়ে শাস্তি দিতে হবে। এবং ও অনাইস! সকালে ঐ মহিলার কাছে যাবে এবং সে স্বীকারোক্তি করলে তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলবে।’ সে সকালে মহিলার কাছে গেল এবং সে স্বীকারোক্তি দিল। এরপর আল্লাহর নবী শাস্তি ঘোষণা করলেন এবং তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলা হল।
সহি বুখারী ৪:৫৬:৮২৯:
ইবনে আব্বাস জানান যে, আল্লাহর নবী মাই’জ বিন মালিককে বললেনঃ ‘তোমার সম্পর্কে যা আমার কানে এসেছে তা কি সত্য?’ সে বললঃ ‘আমার সম্পর্কে আপনি কি শুনেছেন?’ নবী বললেনঃ ‘আমি শুনলাম তুমি ওমুকের ক্রীতদাসীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছো।’ সে বললঃ ‘হ্যাঁ’। সে চারবার সেটা স্বীকার করল। নবী তখন তার জন্য শাস্তি ঘোষণা করলেন এবং তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলা হল।
সুতরাং আমরা দেখছি কম করে হলেও চার-চারটি ভিন্ন ঘটনায় নবী মুহাম্মদ ব্যভিচারের অপরাধে পাথর ছুঁড়ে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং নবীর সময় থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত মুসলিম বিশ্বের কোন-না-কোন দেশে তা বহাল থেকেছে। অবৈধ যৌনকর্মের জন্য পাথর ছুঁড়ে হত্যার সুস্পষ্ট বিধান আমরা দেখি ইহুদী ধর্মীয় অনুশাসনে। তাউরাতের নিম্নোক্ত বাণীগুলোতে পাথর ছুঁড়ে হত্যা শাস্তি হিসাবে নির্ধারিত হয়েছেঃ
“যদি কোন পুরুষকে এক মহিলার সাথে শুতে দেখা যায়, যে অন্য স্বামীর সাথে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ..., তাহলে তোমরা তাদের দু’জনকে শহরের মুক্তাঙ্গনে আনবে এবং তাদেরকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলবে...” (ডিউটেরোনোমি ২২:২২-২৪)
তাউরাতের লেবিটিকাস ২০:১০ আয়াতেও ব্যভিচারের জন্য একই শাস্তির বিধান পুনরাবৃত্ত হয়েছে। যদিও ইহুদী সমাজে এ বর্বর শাস্তির সূচনা হয়েছিল বা কার্যকর হয়ে আসছিল, নবী মুহাম্মদের সময়ে (এমনকি যীশু খৃষ্টের সময়েই) ইহুদীরাও এমন বর্বরতা বর্জন করছিল, যার প্রমাণ আমরা দেখি উপরোক্ত এক হাদীসে (সহি বুখারী ৪:৫৬:৮২৯)। অবৈধ যৌনকর্মের জন্য পাথর ছুঁড়ে হত্যার দৃষ্টান্ত সাধারণত পৌত্তলিক সমাজে দেখা যায় নি। বিশেষত মুহাম্মদের সময়কালীন আরব পৌত্তলিক সমাজ অত্যন্ত উদার ছিল যৌন আচরণের বিষয়ে। ইসলাম-পূর্ব আরব সমাজে যৌনকর্মের জন্য পাথর ছুঁড়ে হত্যার ইতিহাস নেই।
কাজেই ইসলামের আগমনের পর যৌন-অপকর্মের জন্য পাথর ছুঁড়ে হত্যা কিভাবে মুসলিম সমাজে ঢুকে পড়তে পারে এবং আজ পর্যন্ত বলবৎ থাকে?
নবী মুহাম্মদ কর্তৃক পাথর ছুঁড়ে হত্যার যেসব দৃষ্টান্ত আমরা দেখেছি, সেখান থেকেই যে ইসলামী সমাজে এ বর্বর শাস্তির সূচনা, সে ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশের কোন অবকাশ থাকে না। আর এটাও অসম্ভব যে, আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া মহানবী এমন একটা শাস্তি কার্যকর করবেন – বিশেষত তিনি যখন অবিবাহিত ছেলেমেয়েদের মাঝে যৌনকর্মের জন্য শাস্তি ১০০ দোররা মারাকার্যকর করেছিলেন আল্লাহর অনুমোদন অনুসারে (সুরা ২৪:২-৩)। কাজেই এ ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ থাকে না যে, আল্লাহ আসলেই ব্যভিচারের জন্য আর-রজম বা পাথর ছুঁড়ে হত্যার আয়াত নাজিল করেছিলেন, যার দলিল ঘটনাক্রমে হারিয়ে যায় সম্ভবত ছাগলে খেয়ে ফেলার কারণে। খলীফা উসমানের আমলে যেহেতু কোরান সংকলিত করা হয়েছিল আল্লাহর আয়াতের বিদ্যমান দলিলের ভিত্তিতে, কাজেই আর-রজমের আয়াতটির দলিল ছাগলে খেয়ে ফেলার কারণে কোরানে সংকলিত হতে পারে নি। কিন্তু কোরানই যেহেতু বহু আয়াতে মুসলিমদেরকে বলেছে, “আমাকে ও আমার রসুলকে অনুসরণ কর” (কোরান ৩:৩২; ৪:১৩,৫৯,৬৯; ৫:৯২; ৮:১,২০,৪৬...) – সে সূত্রে নবীর দৃষ্টান্তের অনুকরণে ব্যভিচারের শাস্তি পাথর ছুঁড়ে হত্যা ইসলামী সমাজে বলবৎ রয়ে গেছে। অন্য কথায়ঃ ইসলামে ব্যভিচারের শাস্তি পাথর ছুঁড়ে হত্যা নিঃসন্দেহে স্বর্গীয়ভাবে নির্ধারিত।
আজও সৌদি আরব, ইরান, সুদান ও তালেবানাধীন আফগানিস্তানে ইসলামবাদী ব্যভিচারের শাস্তি পাথর ছুঁড়ে হত্যা। পশ্চিমা উপনিবেশিক শাসন মুসলিম বিশ্বে এলে পাথর ছুঁড়ে হত্যার মত বর্বর শাস্তি দমন করা হয়। পশ্চিমা উপনিবেশিক শাসন পরবর্তী অনেক মুসলিম রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষ আইন গ্রহণ করে এবং পাথর ছুঁড়ে হত্যার মত বর্বর শাস্তি বর্জিত হয়। তথাপি এরূপ কোন কোন রাষ্ট্রে ইসলামী পণ্ডিত ও মোল্লা-মাওলানারা অনেক ক্ষেত্রে ব্যভিচারে দোষীদেরকে পাথর ছুঁড়ে হত্যা স্থানীয়ভাবে কার্যকর করে। তুর্কি, নাইজেরিয়া ও পাকিস্তান থেকে পাথর ছুঁড়ে হত্যার খবর এসেছে সম্প্রতিকালে।
২০০৪ সালে ঝিলা ইযাদি নামের ১৩ বছরের এক ইরানি মেয়ে তার ১৫ বছর বয়স্ক ভাইয়ের দ্বারা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে তাকে পাথর ছুঁড়ে হত্যার রায় দেওয়া হয়। আরেক ঘটনায় ফাতিমা নামের ৩৩ বছরের এক মহিলা তার মেয়েকে স্বামী-কর্তৃক (অর্থাৎ বাপ-কর্তৃক) ধর্ষণ থেকে রক্ষা করতে গিয়ে স্বামীকে মেরে ফেলে এবং সে দায়ে ফাতিমাকে পাথর ছুঁড়ে হত্যার রায় দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিকভাবে প্রচারকৃত আরেক ঘটনায় নাইজেরিয়ায় আমিনা লাওয়াল নামের ৩৫ বছরের এক মহিলাকে ২০০২ সালের মার্চ মাসে পাথর ছুঁড়ে হত্যার শাস্তি ঘোষণা করা হয়। তার দোষঃ ইয়াহিয়া মুহাম্মদ নামক এক প্রতিবেশী বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে আমিনার সাথে যৌন-সম্পর্ক গড়ে তুলে, যার ফলে সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিল। এ ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠনগুলো আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক প্রচারণা চালায়; ৩০ মিলিয়ন লোক তার জীবন রক্ষার জন্য নাইজেরিয়ার সরকারের উদ্দেশ্যে আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করে। এ আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নাইজেরিয়ার সরকার আমিনা লাওয়ালের জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়।
২০০২ সালে পাকিস্তানে জাফরান বিবি নামের এক মহিলা তার স্বামীর ভাই কর্তৃক ধর্ষিত হওয়ার অভিযোগ করতে পুলিশ কার্যালয়ে গেলে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং তার জন্য পাথর ছুঁড়ে হত্যার শাস্তি ঘোষণা করা হয়। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হলে চাপের মুখে প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফ তার জীবন বাঁচাতে হস্তক্ষেপে বাধ্য হয়। ইসলামের পুণ্যভূমি সৌদি আরবে ব্যভিচার ও অবৈধ যৌনকর্মের জন্য পাথর ছুঁড়ে হত্যা নিত্যকার ঘটনা, কিন্তু গণমাধ্যমের কঠোর নিয়ন্ত্রণের কারণে সে সব ঘটনা প্রচার পায় না।
ব্যভিচারের দোষে পাথর-ছুঁড়ে হত্যা ইহুদী ধর্মের পাশাপাশি ইসলাম ধর্মেও যে বৈধ সে ব্যাপারে এখন আর কারো সন্দেহ থাকার কথা নয়। এবার দেখা যাক খৃষ্টান ধর্ম কি বলে ব্যভিচারের শাস্তির বিষয়ে। এটা মনে রাখতে হবে যে, খৃষ্টানরা বিশ্বাস করেঃ ইহুদী ধর্ম তাদেরই ঈশ্বর দ্বারা প্রেরিত হয়েছিল। তার মানে দাঁড়ায়ঃ ব্যভিচারের জন্য পাথর ছুঁড়ে হত্যার শাস্তি, যা ইহুদী ধর্মীয় বাণীতে নির্ধারিত হয়েছে, তা আপনাআপনিই খৃষ্টান ধর্মে বৈধ হয়ে যায়। তদুপরি যীশু নিজে বলেছেনঃ “মনে কোরো না যে, আমি তাউরাতের আইন নির্মূল করতে এসেছি; আমি সেগুলো নির্মূল করতে আসি নি, এসেছি সেগুলো কার্যকর করতে।
লিখেছেনঃ আলমগীর হুসেন।
অতিথি লেখক।  

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ