এই ব্লগটি সন্ধান করুন

সমাজ বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ধর্ম উৎপত্তির ব্যখ্যা




পৃথিবীতে বহু ধর্ম প্রচলিত। তার মধ্যে খৃষ্টান, ইসলাম , হিন্দু, ইহুদী , বৌদ্ধ্ এসব প্রধান। অন্য সব ধর্মের চাইতে বৌদ্ধ ধর্মের প্রকৃতি সম্পূর্ন ভিন্ন রকম। অন্য ধর্মগুলো যেখানে তাদের অনুসারীদের নি:শর্ত আনুগত্য ও অন্ধ বিশ্বাস দাবী করে, বৌদ্ধ ধর্ম সেটা করে না। বৌদ্ধ ধর্ম যুক্তির ওপর জোর দেয়।

খৃষ্টান , ইহুদি, ইসলাম, হিন্দু ইত্যাদি ধর্মের মূল কথা কোন এক তথাকথিত সৃষ্টিকর্তা জগৎ সৃষ্টি করে তারপর কোন এক দিন মানুষ সৃষ্টি করে দুনিয়াতে পাঠিয়ে দিয়েছে। তারপর সেই মানুষকে শিক্ষা ও উপদেশ দেয়ার জন্য মাঝে মাঝে সেই সৃষ্টি কর্তা অবতার হয়ে নিজেই অথবা নবী রসুল পাঠিয়ে দেয়। বৌদ্ধ ধর্মে এসব কথা বলে না।

বিষয়টাকে ধর্মীয় বিধি বিধানের দৃষ্টিতে না দেখে সমাজ বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে দেখা যাক। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা ও জীববিজ্ঞানের গবেষণায় দেখা যায় - মানুষ এক সময় অসভ্য জন্তু রূপে বন বাদাড়ে শিকার করে জীবন যাপন করত আর গুহার মধ্যে রাত্রি যাপন করত। সেসময়কার যে সব নিদর্শন পাওয়া গেছে তাতে দেখা যায় না তারা কোন ধর্ম পালন করত বা কোন সৃষ্টি কর্তায় বিশ্বাস করত। আজকে যেমন জীব জন্তু বা বন্য প্রানীরাও কোন ধর্ম পালন করে না বা তারা কোন সৃষ্টি কর্তাকে ডাকে না বা সন্ধান করে না। মানুষ যখনই সভ্য হতে শুরু করল ও চিন্তাভাবনা করতে আরম্ভ করল তখনই সে প্রকৃতির নানা কার্য কারনের জন্য এক একজন দেবতা বা দেবীর কল্পনা করতে লাগল কারন তারা তখন জানত না এসব প্রাকৃতিক ঘটনার আসল কারন কি। যেমন- বৃষ্টি বাদল ও বজ্রপাতের কারন না জানাতে তারা ভাবত এর পিছনে কোন এক দেবতা আছে, সূর্য প্রতিদিন সকালে উঠে সন্ধ্যায় অস্ত যায় - এর কারন না জানাতে মনে করত খোদ সূর্য নিজেই একটা দেবতা - এরকম। অর্থাৎ জগতের সকল ঘটনার জন্যে যে একজন মাত্র সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী সৃষ্টিকর্তা থাকলেই যে চলে তাদের চিন্তার পরিধি সে পরিমান বিস্তৃত ছিল না। আর তাই দেখা যায় প্রাচীন মানব বসতি যে গুলো আবিস্কৃত হয়েছে সব যায়গাতেই বহু দেব দেবী ভিত্তিক ধর্মের অস্তিত্ব দেখা যায়।

সুতরাং বোঝা গেল , কোন সৃষ্টি কর্তা বা দেব দেবতারা নিজে বা নিজেরা স্বয়ং এসে তাদের অস্তিত্ব জানান দিয়ে কোন ধর্ম শিক্ষা দিয়ে যায় নি মানুষকে। মানুষই বরং তাদের চিন্তা ভাবনা দ্বারা তাদেরকে কল্পনা করে অত:পর ধর্ম ও ধর্মীয় কিচ্ছা আকারে চালু করেছে। বহু দেব দেবী ভিত্তিক ধর্মেরও বহু পরে দুনিয়াতে এক ঈশ্বরবাদী ধর্মের আগমন ঘটে। বলাবাহুল্য, সেটা সম্ভব হয় মানুষের কল্পনা শক্তির আরও বেশী বিকাশ হওয়ার পর।

একেশ্বর বাদী ধর্মের ধারনা যখন বিকাশমান পর্যায়ে ছিল তখনই কিছু কিছু প্রতিভাবান ও মেধাবি মানুষ একেশ্বরবাদী ধর্মকে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চেষ্টা করে। এসব লোকরাই পরবর্তীতে নানা রকম নবি রসুল বা অবতার হিসাবে প্রচারিত হতে থাকে যুগের পর যুগ , শতাব্দির পর শতাব্দি। এসবের ফলশ্রুতিতে আজকে দেখা যায় সকল ধর্মেই একজন মাত্র সর্বময় ক্ষমতার সৃষ্টিকর্তাকে স্বীকার করে এক একটা প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে পরিনত হয়েছে। আর বলা বাহুল্য, ধর্ম ,তার সৃষ্টিকর্তা , নবি বা অবতারের যাবতীয় কিচ্ছা কাহিনী মানুষেরই তৈরী, কোন পর্যায়েই এখানে কোন অতি লৌকিকতার স্থান আমরা দেখি না। তবে বৌদ্ধ ধর্মের বিধি বিধান অন্য সব ধর্মের বিধি বিধানের চেয়ে বেশ প্রগতিশীল ও বিপ্লবাত্মক।

বৌদ্ধ ধর্ম কোন তথাকথিত সৃষ্টি কর্তার অস্তিত্বকে স্বীকার করে না। স্বীকার করে না কোন অবতার বা নবীবাদে। বুদ্ধ বলেছেন- কারও কোন কথা বিশ্বাস করো না, যুক্তির কষ্টি পাথরে যাচাই করে তা গ্রহন কর, এমন কি আমি বললেও বিশ্বাস করো না।
http://www.noble-buddhism-beliefs.com/buddha-quotes.html)

সেই ২৫০০ বছর আগের একজন মানুষের পক্ষে এ কথা বলা যে কি মহা বিপ্লবের তা আজকে ঠিক উপলব্ধি করা যাবে না।

গৌতম বুদ্ধের এ বানীর কারন ছিল তার আমলে প্রাচীন ভারতে ধর্মের নামে এত সব গাল গল্প ও কিচ্ছা কাহিনী প্রচলিত ছিল যে তার কোন সীমা পরিসীমা ছিল না। মানুষও অন্ধের মত অনেক সময় এসব বিশ্বাস করত। মানুষের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে যত্র তত্র কিছু কিছু মানুষ নিজেকে অবতার বলে দাবী করত। যার ফলে প্রায়ই ধর্মের বিভিন্ন শাখা উপশাখা নিয়ে মানুষের মধ্যে মারামারি , যুদ্ধ বিগ্রহ , হত্যা এসব লেগেই থাকত। এসব হানাহানির মূল কারন অনুধাবন করেই বুদ্ধ এসব অবতারবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ান ও উক্ত বিপ্লবের বানী প্রচার করতে থাকেন। প্রাচীন ভারতে যখন কিছু কিছু চালাক মানুষ নিজেকে সৃষ্টিকর্তার অবতার বলে দাবী করত , ঠিক সেসময় মধ্যপ্রাচ্যের মিশর , প্যলেস্টাইন এসব অঞ্চলে কিছু কিছু মানুষ নিজেকে প্রেরিত পুরুষ বা নবী রসুল হিসাবে দাবী করতে থাকে। আর তার ফলে সেসব অঞ্চলে গড়ে ওঠে স্বতন্ত্র ধারার ধর্মীয় বিধি বিধান। তফাৎ হলো ভারতীয় হিন্দু সনাতন ধর্মে অবতারের আবির্ভাবের এখনও শেষ হয় নি। বর্তমানেও প্রতি বছর কেউ কেউ নিজেকে অবতার দাবী করে বসে। পক্ষান্তরে মধ্যপ্রাচ্যের আরব ভূমিতে অতিশয় বুদ্ধিমান ও দুরদর্শি মোহাম্মদ নামের এক লোক নিজেকে শেষ নবি দাবী করে নবি বা রসুলবাদের কবর রচনা করেছে। তাই অত:পর সেখানে নবি রসুলের আগমন গত ১৪০০ বছর ধরে বন্ধ আছে।

এ হলো মোটামুটি ভাবে দুনিয়াতে ধর্মীয় বিধি বিধান চালুর সমাজ বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা।

লিখেছেনঃ-জিন্দাপীর।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ