এই ব্লগটি সন্ধান করুন

সাকার থেকে নিরাকার ইশ্বরের আবির্ভাব : মানুষকে আরো সহজে বোকা বানানোর কৌশল





প্রতিমা, মূর্তি, সাকার ঈশ্বর বা পৌত্তলিকতায় বিশ্বাস এই ব্যাপারগুলো ইসলাম ও খৃষ্টান ধর্মে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু বাস্তবতা কি বলে? পৃথিবীতে সাতশো কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় পাঁচশো কোটি লোক ধর্মে বিশ্বাসী। এর মধ্যে খৃষ্টান ও মুসলিম ধর্মে বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা প্রায় তিনশো কোটির কাছাকাছি। এরা এই মূর্তি পূজা, প্রতিমা,সাকার ঈশ্বর ও পৌত্তলিকতার সম্পূর্ণ পরিপন্থী চিন্তা হিশেবে পোষণ করে ধর্মীয় কারণে কিন্তু আমারা যদি এই দুই ধর্মের দিকে দৃষ্টি ফেলি তবে দেখতে পাব এদের মধ্যে যথেষ্ট পরিমানে এই ব্যাপারগুলো বিরাজমান।

কোরআনে বেশ কিছু সুরার নামকরণ করা হয়েছে প্যাগান দেব দেবীর নাম অনুসারে। যেমন "তারিকা" নক্ষত্র দেবতার নাম,"নসর" প্রাচীন আরব্য গোষ্ঠীর দেবতার নাম, "শামস" মধ্যপ্রাচের এক জনপ্রিয় সৌর দেবীর নাম। একসময় এই দেব দেবীদের প্রতিমা ছিল, তারা নিয়মিত পূজিত হতো মানুষ দ্বারা যা পরবর্তীতে কোরআনে চলে এসেছে, যা পৌত্তলিকতার জ্বলন্ত উদাহরণ। এতে পরিলক্ষিত হয় মোহাম্মদ নিজেও এই ধরণের সাকার দেব দেবী বা ঈশ্বরে বিশ্বাসী বা প্রভাবিত হতেন, তার মধ্যেও পৌত্তলিকতা বিরজমান ছিল। কাবা শরীফে একসময় ৩৬০ টি মূর্তি ছিল যার বেশীর ভাগ ধ্বংস করা হয়েছিল কিন্তু সব কি হয়েছিল? না হয় নি। কাবায় এখনো কিছু মূর্তি রয়ে গেছে বহাল তবিয়তে, সেই কথা অন্যদিন হবে। কাবা শরীফকে হজের সময় সাত বার প্রদক্ষিণ, পাথরে চুম্বন করা ও সাফা-মারওয়া পাহারের মধ্যবর্তী উপত্যকায় মিনাতে তিনটি স্তম্ভকে শয়তান বানিয়ে সাতটি করে মোট একুশটি পাথর নিক্ষেপ, এগুলো টোটেম প্রথার রূপান্তর মাত্র। শুধু তাই নয় হজের সময় মাথা কামিয়ে ফেলাও এর প্রথার হতে আগত। আর এই টোটেম প্রথাটি সম্পূর্ণ পৌত্তলিক প্রথা, যা থেকে ইসলাম অনেক কিছু ধার করেছে, গ্রহণ করেছে বা প্রচলিত নিয়মকে অব্যহেত রেখেছিল ধর্ম বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজনে। একটু অন্য ভাবে যদি চিন্তা করি তবে বলতে হয় মসজিদের মিলার ও গম্বুজ কি বিশেষ কোন আকার আকৃতির কথা মনে করিয়ে দেয় না? একি কি প্রতিমার মধ্যে ফেলা যায় না? সেগুলো যদি কোন কিছুর প্রতীক হিশেবে বৈধতা দান করা হয় তবে মানুষ্য রূপে মূর্তিতে এতো সমস্যা কেন।

খৃষ্টান ধর্মের দশ আজ্ঞার মধ্যে অন্যতম হল, কোন প্রকার প্রতিমা তৈরি করা ও তাকে ঈশ্বর জ্ঞান করে আরাধনা করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে আমারা কি তার বাস্তবায়ন দেখি? ক্যাথলিকদের গোঁড়া খৃষ্টান বা মূল ধারার খৃষ্টান বলা হয় ( অনেকে অবশ্য এদের খৃষ্টান বলতে নারাজ আবার অনেক ক্যাথোলিক নিজেদের খৃষ্টান বলতে নারাজ) কিন্তু সকল ক্যাথলিক গির্জায় যীশু, মেরি ও জোসেফের মূর্তি থাকে। যারা অন্ধ ভাবে ধর্মের প্রতিটি বানী পালনের কথা বলেন তারা যদি এভাবে দশ আজ্ঞা গির্জাতেই অমান্য করেন তবে সমালোচকদের আক্রোশে পড়াটা স্বাভাবিক। ছোট বেলায় যখন গির্জায় যেতাম তখন ধর্মপ্রাণ খৃষ্টান নারীদের দেখাতাম যীশুর ও মেরির মূর্তির পায়ে চুমু খাচ্ছে। অনেকে মালা পরিয়ে দিচ্ছে, ব্যাপারগুলো ওই টোটাম প্রথার অনুরূপ মাত্র। এই ধরণের কথা বলার জন্য গির্জা থেকে বহিস্কার হতেও দেখেছি। গির্জায় ফাদার মাঝে মাঝেই ঘোষণা দিতেন কেউ যেন মূর্তির পায়ে চুমু না খান কিন্তু ঘোষণা দেওয়ার সময় বা শেষ হওয়ার সাথে সাথে কিছু মানুষ মূর্তির পায়ে চুমু খেতেন। আসলে ধর্ম বিশ্বাস যেখানে অন্ধ সেখানে ফাদারের কথায় কিবা এসে যায়। দেশের বাইরের গির্জাগুলোতে এই অবস্থার ব্যতিক্রম দেখিনি তেমন। প্রতিটি ক্যাথোলিক সহ প্রায় সব গির্জাতে মূর্তির ছড়াছড়ি।

আসলে এই ধরণের ধর্ম এসেছে এক সময়কার পৌত্তলিক ধর্মগুলো থেকে। সেই সময় ঈশ্বর ছিলেন সাকার, তার মূর্তি বা প্রতিমা ছিল সাধারণ ব্যাপার। মানুষ বস্তুগত জিনিস বেশী বিশ্বাস করবে এটা স্বাভাবিক কিন্তু পরবর্তীতে এই ধর্মগুলোতে ঈশ্বরকে নিরাকার হিশেবে দেখানো হয়েছিল মানুষকে আরও সহজ ভাবে ধোঁকা দানের জন্য কিন্তু তারা মানুষের মনের যেই সাকার ঈশ্বর বা দেব দেবী বসে ছিলেন তা সম্পূর্ণ রূপে দূর করতে পারেননি। তাই প্রয়োজনে বা প্রভাবিত হয়ে এই প্রথাগুলো এই ধর্মগুলোতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বেশ কৌশলের সাথে। যা মানুষকে আকৃষ্ট করার আর একটি ধোঁকাবাজি ছিল মাত্র। মানুষও পোকা মাকড়ের মত ধর্মের উজ্জ্বল আগুনে ঝাপ দিয়েছিল মুক্তির আশায়। এক কথা বলতে খৃষ্টান ও ইসলাম এবং পৌত্তলিকতা মূলত পুরনো মদ নতুন বোতলে বাজারজাতকরণ।


লিখেছেনঃ -Shuvo Michael D Costa.



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ