এই ব্লগটি সন্ধান করুন

নাস্তিক, উগ্র নাস্তিক, ধর্মবিদ্বেষী, ধর্মবিরোধী



ঈশ্বরে অবিশ্বাসীরা ৪ শ্রেণির; নাস্তিক, উগ্র নাস্তিক, ধর্মবিদ্বেষী, ধর্মবিরোধী; এই শ্রেণিটি সর্বপ্রথম তৈরি করেছিলো আস্তিক-ধার্মিকেরা, যদিও এখন অনেক নাস্তিকেরা তাই মনে করে থাকে। তারা বলে থাকে, নাস্তিক হলে কোনো সমস্যা নেই; কিন্তু তারা মনে করে, ঈশ্বর-ধর্মের সমালোচনা-নিন্দা-ব্যঙ্গ করলে, ঈশ্বর-ধর্মের সমালোচনাকারী-নিন্দাকারী, ব্যঙ্গকারীদের অবশ্যই শাস্তি পাওয়া উচিত। এক্ষেত্রেও আস্তিক-ধার্মিকদের সাথে অনেক নাস্তিকেরা এই কথাগুলো সমর্থন করে। আলোচনা করা যাক; নাস্তিকের সংজ্ঞা, ঈশ্বর-ধর্মের সমালোচনা-নিন্দা-ব্যঙ্গ, আস্তিক-ধার্মিকদের এবং কথিত নাস্তিকদের চিন্তা-চেতনা, মানসিকতা প্রভৃতি-প্রভৃতি নিয়ে।

প্রথমে আসা যাক, নাস্তিকের সংজ্ঞা নিয়ে। নাস্তিকের অর্থ ঈশ্বরে অবিশ্বাসী। নাস্তিক হতে এক সাথে অনেক বই পড়া লাগে। মুক্তচিন্তাধারী হতে হবে, ধর্ম সম্পর্কে জানতে হবে, ধর্মগ্রন্থের বক্তব্যগুলোও জানতে হবে; এর সাথে মহাবিশ্ব সৃষ্টির ইতিহাসসহ বিজ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন বিষয় জানা জরুরি।
উল্লেখ্য, অনেকে বলে থাকে, বাঙলাদেশের নাস্তিকেরা নামে নাস্তিক। অনেক নাস্তিককে দেখা যায়, শুক্রবারে জুম্মার নামাজ পড়তে, রোজা রাখতে, ইদের নামাজ পড়তে; অন্য ধর্মগুলো বিষয়ে এরকমও হতে পারে। এই বিষয়ে বিশ্লেষণ করা যাক।

বাঙলাদেশের আস্তিক-ধার্মিকেরা অধিকাংশই ইসলাম ধর্মাবলম্বী। বাঙলাদেশের আস্তিক-ধার্মিকেরা অত্যন্ত আবেগপ্রবণ, ধর্মপ্রবণ। তাই মুসলমান পরিবারগুলো ধর্মের প্রতি দুর্বল, অন্ধ। যখন মুসলমান পরিবারগুলোতে সন্তান জন্মানোর সাথে-সাথে আজান দিয়ে, পুরুষদের লিঙ্গের চামড়া কর্তন করে সন্তানের অজানতে-অনিচ্ছায়ধর্মের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এছাড়া সন্তানদের মুখে মা-বাবা ডাক শেখানোর পাশাপাশি, ঈশ্বরের ডাকটিও শেখানো হয়। যখন সন্তানদের ৫-৬ বছর বয়স হয়, তখন থেকে তাদেরকে ধর্ম মানানোর জন্য চাপ দেওয়া হয়, ধর্ম না মানলে, তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়। ঐ সন্তানেরা যতদিন পর্যন্ত কর্মজগতে না ঢুকতে পারে, ততদিন পর্যন্ত পরিবার থেকে ধর্ম গিলানোর জন্য চাপ দেওয়া হয়। তাই দেখা যায়, যারা ধর্মীয় বেড়াজাল ভেঙে নাস্তিক হয়, তারা যতদিন পর্যন্ত কর্মজীবনে প্রবেশ না করে, ততদিন পর্যন্ত অনেককে পরিবারের চাপে নিয়মিতভাবে-অনিয়মিতভাবে অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ধর্ম গিলতে হয়। এতে তাদের আদর্শের কোনো ক্ষতি হয় না। বরঞ্চ ঈশ্বরের-ধর্মের দুর্বলতা বাস্তবে প্রমাণ হয়। তাই জোর করে ধর্ম গিলানোর মধ্যে কোনো সার্থকতা-সাফল্যতা নেই।

পরে আসি, উগ্র নাস্তিক বিষয়ে। আস্তিক-ধার্মিকেরা বলে থাকে, উগ্র নাস্তিক আর নাস্তিক এক না। কিন্তু উগ্র নাস্তিক বলে কিছুই নেই। কারণ উগ্র আস্তিকদের মতো নাস্তিকেরা চাপাতি নিয়ে কাউকে হত্যা করতে যায় না, বোমা মারে না, খারাপ কাজ করে না। এগুলো করে আস্তিকেরাই। অনেক নাস্তিকদেরকেও দেখা যায়, আস্তিক-ধার্মিকদের সাথে সমর্থন দিতে, একমত হতে।
এরপরে আসি, ধর্মবিদ্বেষী বিষয়ে। আস্তিক-ধার্মিকেরা, অনেক নাস্তিকেরাও মনে করে, ধর্মবিদ্বেষ অপরাধ-অন্যায়। যারা ধর্মবিদ্বেষী, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। এটি একটু বিশ্লেষণ করা যাক। মানুষের নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, পছন্দ-অপছন্দ, বিশ্বাস-অবিশ্বাস থাকতে পারে। কোনোকিছু পরে যদি কারোর বিদ্বেষ থাকে, সেটি দোষের কিছু নয়। মানুষের যেমন অমানুষের প্রতি বিদ্বেষ থাকে, বাঙলাদেশের অধিকাংশ মানুষের যেমন জামায়াত-শিবির, রাজাকারের প্রতি বিদ্বেষ থাকে, অনেক মুসলমানের যেমন হিন্দুদের প্রতি বিদ্বেষ থাকে, অনেকের যেমন নেতা-নেত্রী-কর্মীদের উপর বিদ্বেষ থাকে। কারণ সবার যে সবকিছু ভালো লাগবে, পছন্দ হবে; এমন কোনো কথা নেই। বিদ্বেষের জন্য কারোর শাস্তি চাওয়া মূর্খের কাজ, ব্যক্তি-স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ।

সর্বশেষ আসি, ধর্মবিরোধী বিষয়ে। আস্তিকেরা-ধার্মিকেরাও মনে করে থাকে, নাস্তিক মানেই ধর্মবিরোধী। ধর্মবিরোধীদের শাস্তিও চাই অনেকে। যেন ধর্মবিরোধী হওয়া তাদের কাছে অন্যায়। নাস্তিকেরা ধর্ম মানে না, তাই তারা ধর্মবিরোধী হতে পারে। কোনো কিছুর বিরোধী হওয়া অন্যায় না। যুক্তিযুক্তি হলে তো কোনো অনায়ের প্রশ্ন আসে না।

অনেক আস্তিক-ধার্মিক-নাস্তিকেরা প্রায়ই বলে থাকে, নাস্তিক হলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ঈশ্বর-ধর্মের সমালোচনা-নিন্দা-ব্যঙ্গ করা দোষের। এই বিষয়েও একটু বিশ্লেষণ করা যাক। নাস্তিকেরা যেহেতু কুপ্রথা, ধর্মীয় কুসংস্কার, ধর্মীয় প্রথাবিরোধী, বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদী; সেহেতু তারা যদি ঈশ্বর-ধর্মের ভুল বের করে, সমালোচনা করে; তবে এটি দোষের কিছু নেই। বরঞ্চ এটি সকলের ব্যক্তি-স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা। এটিতে হস্তক্ষেপ করাও অবশ্যই অপরাধ।

রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, সাহিত্য প্রভৃতি বিষয়ে ব্যঙ্গ যেমন করা যায়, তেমন ঈশ্বর-ধর্ম বিষয়েও ব্যঙ্গ করা যায়। ব্যঙ্গ করা কোনো অন্যায় না, কোনো অপরাধ না। ঠিক তেমনভাবে ঈশ্বর-ধর্মের নিন্দা করাও কোনো অপরাধ না।

অনেক আস্তিক-ধার্মিক-নাস্তিকেরা বলে থাকে, ঈশ্বর-ধর্মের ভুল ধরার আগে, সমালোচনা করার আগে নাস্তিকদের উচিত নিজের পরিবারকে নাস্তিক বানানো। এটিও হাস্যকর কথা। নাস্তিকদের লক্ষ্য কাউকে নাস্তিক বানানো নয়। কুপ্রথার বিরুদ্ধে কথা বলা, ধর্মান্ধ-মৌলবাদ, বিজ্ঞান প্রচার করাই নাস্তিকদের লক্ষ্য।

বাঙলাদেশের অনেক নাস্তিককেও দেখা যায়, মূর্খের মতো অযৌক্তিক কথা সমর্থন করতে। আবার অনেক নাস্তিকেরা কোনো যুক্তি না দিয়ে, নিজের মনগড়া কথা বলে ঈশ্বর-ধর্ম নিয়ে। তারা ঈশ্বরের প্রতি অবিশ্বাসী হলেও তারা প্রকৃত নাস্তিক নয়, তাদের চিন্তা-চেতনা, মানসিকতা নীচু মানের। তারা যেকোনো দাঙ্গা বাঁধাতে পারে। কারণ বাঙলাদেশের অধিকাংশ মুসলমানেরা ধর্মান্ধ। তাই তারা যেকোনো কিছুর ভুল বুঝে, দাঙ্গা তৈরি করতে পারে। এই ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।
বাঙলাদেশের অধিকাংশ মুসলমানেরা বাঙলাদেশের অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম স্বাভাবিকভাবে দেখে না। বরঞ্চ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে অহেতুক ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে, তাদের ধর্ম-দেব-দেবী নিয়ে ঠাট্টা করে। বাঙলাদেশের মুসলমানেরাভাবে, তাদের একমাত্র আদর্শ-অনুভূতি আছে। অন্যদের কোনো আদর্শ-অনুভূতি নেই। বেধর্মীদেরসহ নাস্তিকদের হত্যা করার চেষ্টা করে। হত্যা করে কখনো শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায় না। যার-যার বিশ্বাস-অবিশ্বাসকে গুরুত্ব দেওয়া নৈতিক দায়িত্ব। এই পৃথিবী সকলের।

এখন না জেনে-বুঝে কথা বলা বেশিরভাগেরই অভ্যাস হয়ে গেছে। এই অভ্যাস যেভাবেই হোক পরিত্যাগ করতে হবে। এটিও সবাইকে মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর সবাই মানুষ না; পৃথিবীতে মানুষ, অমানুষ উভয়ই আছে।
সবকিছুর ঊর্ধ্বে মানুষ পরিচয়। মানুষের মানুষ পরিচয়কে সব পরিচয়ের ঊর্ধ্বে ভাবলেই পৃথিবী সুন্দর হবে। সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই!

লিখেছেনঃ Juyel Yasir

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ