এই ব্লগটি সন্ধান করুন

মহানবী (দঃ) এর চিকিৎসা পদ্ধতি



আমাদের মহানবী সারোয়ারে কায়নাত আহমেদ মোস্তফা মোহাম্মদ মোস্তফা হযরত রাসূলে পা'ক (সাঃ) শুধুমাত্র নবীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন সেই সময়কার আরবের একজন শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক। সাহাবী (রাঃ) দের মধ্যে কেহ অসুস্থ হলে তাঁরা রাসূলুল্লাহ (দঃ) এর নিকট ছুটে আসতেন পরামর্শ নিতে। এবং তিনি নানাবিধ পরামর্শ দিতেন। আল্লাহ্ সুবহানাতাআলা তাঁদেরকে শেফা করতেন (আলহামদুলিল্লাহ)। তাঁর এইসব চিকিৎসা নিয়ে বুখারি শরিফের নবম খন্ডে একটি অধ্যায় রয়েছে। পবিত্র মাহে রামাদানে আমরা সেই চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

রাসূলুল্লাহ (দঃ) বলেন, (হাদিস নং-৫২৭৯, ৯ম খন্ড, বুখারি শরিফ) মুহাম্মদ ইবনু আবদুর রাহীম (রহঃ)ইবনু আব্বাস (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রোগমুক্তি তিনটি জিনিসের মধ্যে নিহিত। শিঙ্গা লাগানোতে, মধু পানে এবং আগুন দিয়ে গরম দাগ দেওয়ার মধ্যে। তবে আমি আমার উম্মতকে আগুন দিয়ে গরম দাগ দিতে নিষেধ করি।

এবং রাসূলুল্লাহ (দঃ) নিজেও অনেকবার শিঙ্গা লাগিয়েছেন।
*৫২৯১ আবূ মামার (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম (রোজা/সিয়াম)রত অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন।
*৫২৯২ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম বাধা অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন।

শিঙ্গা লাগানো হলো গরু বা মহিষের শিং চামড়ার উপর লাগিয়ে জোরে জোরে চুষে দূষিত(?) রক্ত বের করা। এর মাধ্যমে শরীরের ভিতরের সকল রোগ জীবাণু বের করে ফেলা হয়। ঐ সময় ভাবা হতো, এই দূষিত রক্তই সকল রোগের মূল কারণ। আমাদের রাসূলে পাক (দঃ) ও তাই মনে করতেন। ছোট বেলায় আমরাও দেখতাম বেদেনিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে "এই রস খুয়াই, শিঙ্গা লাগাই, দাঁতের-চোখের পোকা খুয়াই" বলে ডাকত। মানুষজন শিঙ্গা লাগাত, দাঁতের চোখের পোকা খুলাইত। যখন আমি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হলাম, তখন বুজতে পারলাম এগুলো সব ভুয়া। কিন্তু আজ আমি লজ্জিত যে এগুলোকে ভুয়া বলেছি, বিশেষ করে শিঙ্গা লাগানোকে ভুয়া বলে। যেখানে রাসূলুল্লাহ (দঃ) নিজেও শিঙ্গা লাগিয়েছিলেন তা কখনো ভুয়া হতে পারেনা। কি গোনাহই না আমি করেছি। আল্লাহ্ আমাকে মাফ করুক।

রাসূলুল্লাহ (দঃ) এর চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে নানা স্থানে গড়ে উঠেছে "হিজামা (শিঙ্গা লাগানো) ক্লিনিক"। কিন্তু মানুষ আল্লাহ্ সুবহানাতাআলার নির্দেশিত পথে চিকিৎসার উপর আস্থা নাই। তাই হিজামা না করিয়ে বিধর্মীদের (ইহুদি নাসারাদের এলোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি) চিকিৎসা পদ্ধতির চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত। হিজামা ক্লিনিক গুলিতে রোগী নাই বললেই চলে। ঈমানের কমজোরির জন্যই মানুষের এত রোগ শোক। বাড়ি বাড়ি ঔষধের হাড়ি। আমরা ছোট বেলায় এত রোগ শোক দেখতাম না। বেশিরভাগ মানুষ আশি একশ বছর বাঁচত, আর এখন পঞ্চাশ ষাট বছরও বাঁচে না। পটল তুলে।

আমার পাশের শহর সিরাজগঞ্জেই আছে একটা হিজামা ক্লিনিক, কিন্তু রোগী নাই। শিঙ্গার আধুনিক ভার্সন ইলেকট্রনিক সাকার দিয়ে দূষিত রক্ত টেনে বের করে দিয়ে আপনাকে সুস্থ সবল করে তুলবে। মনে রাখবেন শিঙ্গা লাগানো সুন্নাত।



আবহাওয়া জনিত কারণে কেউ অসুস্থতা অনুভব করলে আমাদের দ্বীনের নবি, দয়াল নবি, যাঁকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ্ সুবহানাতাআলা এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করতেন না, সেই হুজুরে পা'ক (সাঃ) উটের দুধ ও উটের পেশাব পান করার পরামর্শ দিতেন। এবং তা পান করে রোগীরা সুস্থ হয়ে যেত। এতদসংক্রান্ত একটি হাদিস বুখারি শরিফের অনেক জায়গায় অনেকবার বর্ণিত হয়েছে-
(হাদিস নং- ৫২৮৪, বুখারি শরিফ, ৯ম খন্ড)
মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ), আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত- কতিপয় ব্যাক্তি মদিনায় তাদের প্রতিকুল আবহাওয়া অনুভব করল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের হুকুম দিলেনঃ তারা যেন তাঁর রাখাল অর্থাৎ তার উটগুলোর কাছে গিয়ে থাকে এবং উটের দুধ ও পেশাব পান করে। সুতরাং তারা রাখালের সংগে গিয়ে মিলিত হল এবং উটের দুধ ও পেশাব পান করতে লাগল। অবশেষে তাদের শরীর সুস্থ হলে তারা রাখালটিকে হত্যা করে ফেলল এবং উটগুলো হাকিয়ে নিয়ে যায়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এ সংবাদ পৌছলে তিনি তাদের তালাশে লোক পাঠান। এরপর তাদের ধরে আনা হল। এরপর তিনি তাদের হাত পা কেটে দেন। এবং তাদের চক্ষুগুলো ফূড়ে দেন। কাতাদা (রহঃ) বলেছেনঃ মুহাম্মদ ইবনু আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, এটি হুদুদ (শাস্তির আইন) নাযিল হওয়ার পুর্বকার ঘটনা। )।

রাসূলুল্লাহ (দঃ) বিশ্বাস করতেন এবং বলতেন যে সংক্রামক ব্যাধি বা ছোঁয়াচে রোগ বলে কিছু নেই। এবং এ ব্যাপারে হুজুরে পা'ক (সাঃ) তাঁর যুক্তিও উপস্থাপন করেছেন যা আমার দৃষ্টিতে একশো ভাগ সঠিক বলেই মনে হয়। যদিও বিধর্মী ইহুদি খ্রিষ্টানরা এবং তাদের প্রবর্তিত শিক্ষায় শিক্ষিত ও আস্থাভাজন মুসলমান লোকেরাও তা বিশ্বাস করতে চাইবে না। এবার হাদিস খানা দেখা যাক-
(হাদিস নং- ৫৩০৮, বুখারি শরিফ ৯ম খন্ড) আব্দুল আযীয ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হোকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রোগের কোন সংক্রমন নেই, সফরের কোন কুলক্ষণ নেই, পেঁচার মধ্যেও কোন কুলক্ষণ নেই। তখন জনৈক বেদুঈন বলল ইয়া রাসুলুল্লাহ! তাহলে আমার উটের এ অবস্হা হয় কেন? সে যখন চারণ ভূমিতে থাকে তখন সেগুলো যেন মুক্ত হরিণের পাল। এমন অবস্হায় চর্মরোগা উট এসে সেগুলোর মধ্যে ঢ়ুকে পড়ে এবং এগুলোকেও চর্ম রোগাক্রান্ত করে ফেলে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে প্রথমটিকে চর্ম রোগাক্রান্ত কে করেছে?

তখনতখনকার দিনে শিশুদের আলা জিহ্বা ফুলে গেলে আঙুল দিয়ে চিপে দেওয়া হত। কিন্তু নবী করিম (দঃ) শিশুদের চিকিৎসা বিষয়েও ওয়াকিবহাল ছিলেন এবং এরকম কিছু করতে নিষেধ করেছেন। বরং তিনি এক্ষেত্রে ভারতীয় চন্দন কাঠের ধোঁয়া ব্যবহার করতে বলেছেন-
(হাদিস নং- ৫৩০৪, বুখারি শরিফ ৯ম খন্ড)
আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) উম্মে কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার এক পূত্র সন্তানকে নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট গেলাম। ছেলেটির আলাজিহ্বা ফোলার কারণে আমি তা দাবিয়ে দিয়েছিলাম। তখন তিনি বললেনঃ এ ধরনের রোগ-ব্যাধি দমনে তোমরা নিজেদের সন্তানদের কেন কষ্ট দিয়ে থাক? তোমরা ভারতীয় চন্দন কাঠ ব্যবহার কর। কেননা তাতে সাত রকমের নিরাময় বিদ্যমান। তন্মধ্যে আছে পাজরের ব্যাথা। আলাজিহ্বা ফোলার কারণে এটির ধোয়া নাক দিয়ে টেনে নেয়া যায়। পাজরের ব্যথার রোগীকে তা সেবন করান যায়।

আলা জিহ্বা বা শ্বাসকষ্ট ও পাজরের ব্যাথায় ভারতীয় চন্দন কাঠের ব্যবহার করা নিয়ে অনেকগুলি সহিহ্ হাদিস রয়েছে বুখারি শরিফে।

আর ডায়রিয়ায় কেউ আক্রান্ত হলে আমাদের আখেরি নবি, সাইয়্যেদুল মুরসালিন হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) মধু সেবন করতে পরামর্শ দিয়েছেন। এবং মধুতেই ডায়রিয়া সারবেই এই ব্যাপারে তিনি খুব কনফিডেন্টও ছিলেন, নিজের হাদিসখানি দেখলেই তা বুঝা যায়-
(হাদিস নং- ৫২৮২, বুখারি শরিফ ৯ম খন্ড)
আয়্যাশ ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) আবূ সা’ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললঃ আমার ভাইয়ের পেটে অসুখ হয়েছে। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাকে মধূ পান করাও। এরপর লোকটি দ্বিতীয়বার আসলে তিনি বললেনঃ তাকে মধু পান করাও। সে তৃতীয়বার আসলে তিনি বললেনঃ তাকে মধু পান করাও। এরপর লোকটি পুনরায় এসে বললঃ আমি অনুরূপই করেছি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ সত্য বলেছেন, কিন্তু তোমার ভাইয়ের পেট অসত্য বলছে। তাকে মধু পান করাও। সে তাকে মধু পান করাল। এবার সে আরোগ্য লাভ করল।


হাদিস শরীফের বইগুলো ঘাঁটলে দেখা যায় নবী করিম (সাঃ) প্রচুর অসুখ বা রোগ শোকে ভুগতেন। রোগে ভুগা আল্লাহর কোন পরীক্ষাও না শাস্তিও না যা অনেকেই মনে করে থাকেন। আসলে রোগ হচ্ছে আল্লাহর নিয়ামত, কারণ এর মাধ্যমে আল্লাহ্ সুবহানাতাআলা পাপ মোচন করেন। এবং তিনি সবচেয়ে বেশি ভুগতেন জ্বরে। এইসব কথা শুনে অনেকেই হয়তো আৎকে উঠবেন (বিশেষ করে যাঁরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে মাটির তৈরী আমাদের মত মানুষ বললে খেপে যান এবং মনে করেন তিনি নূর বা আলোর তৈরি), কিন্তু আমি অনুরোধ করবো নীচের হাদিসগুলি পড়ুন (রমজান মাসে হাদিস পড়ার মধ্যে বহুত ফায়দা আছে)-
(বুখারি শরিফ, ৯ম খন্ড, হাদিস নম্বর- ৫২৪৩)
কাবীসা (রহঃ) ও বিশর ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ)- আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চাইতে অধিক রোগ যাতনা ভোগকারী অন্য কাউকে দেখিনি।
(বুখারি শরিফ, ৯ম খন্ড, হাদিস নম্বর- ৫২৪৪)
মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পীড়িত অবস্থায় তাঁর কাছে গেলাম। এ সময় তিনি কঠিন জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আমি বললাম নিশ্চয়ই আপনি কঠিন জ্বরে আক্রান্ত। আমি এও বললাম যে! এটা এ জন্য যে, আপনার জন্য দ্বিগুন সওয়াব রয়েছে। তিনি বলেনঃ হ্যা। যে কোন মুসলিম মুসীবতে আক্রান্ত হয়, তার উপর থেকে গুনাহ সমুহ এভাবে ঝরে যায়, যে ভাবে বৃক্ষ থেকে ঝরে যায় তার পাতাগুলো।

আর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জ্বরের চিকিৎসা হিসাবে শরীরে প্রচুর পরিমাণে পানি ঢালতে বলেছেন, যেটি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানেও বলে। চিন্তা করতে পারেন! চৌদ্দশত বছর আগে যা নবীজী করে গেছেন, আজ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানেও তাই বলছে। সুবহানাল্লা!
(বুখারি শরিফ, ৯ম খন্ড, হাদিস নম্বর- ৫৩১২)
ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) এর সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ জ্বর জাহান্নামের উত্তাপ থেকে সৃষ্টি হয়। কাজেই তা পানির সাহায্যে নিভিয়ে দাও। নাফি (রহঃ) বলেন, আবদুল্লাহ (রাঃ) তখন বলতেন আমাদের উপর থেকে শাস্তিকে হালকা কর।

হুজুরে পা'ক (দঃ) বিশ্বাস করতেন অসুখ বিসুখে ঝাঁড়ফুক করা উচিত এবং নবীজী নিজেও ঝাড়ফুঁক করতেন। এই যুগে অনেকেই ঝাড়ফুঁককে নানাভাবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে যা সরাসরি নবীজীর অপমান। দু'কলম ইংরেজি পড়ে ভাতকে বলে অন্ন। ঝাঁড়ফুক কোন টাউট বাটপারি না, যা আমরা ইহুদি নাসারাদের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ভাবতে থাকি। যে শিক্ষা মূলত ইসলামকে হেয় করার ষড়যন্ত্র। আবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজে অসুস্থ হলে অন্যকে দিয়ে ঝাঁড়ফুক করাতেন। নীচের হাদিসগুলি লক্ষ্য করুন (সবগুলো হাদিস পবিত্র বুখারি শরিফের নবম খন্ডের, পাশে হাদিস নম্বর দেওয়া আছে)--
৫৩২৮ মুহাম্মদ ইবনু খালিদ (রহঃ) উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ঘরে একটি মেয়েকে দেখলেন যে, তার চেহারায় কাসিমা রয়েছে। তখন তিনি বললেনঃ তাকে ঝাড়ফুক করাও, কেননা তার উপর (বদ) নযর লেগেছে। আবদুল্লাহ ইবনু সালিম (রহঃ) এ হাদীস যুবায়দী থেকে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। উকায়ল (রহঃ) বলেছেন, এটি যুহরী (রহঃ) উরওয়া (রহঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন।
৫৩৩০ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবদুর রহমান ইবনুল আসওয়াদের পিতা আসওয়াদ (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন আমি আয়িশা (রাঃ)-কে বিষাক্ত প্রানীর দংশনের কারণে ঝাড়-ফুক গ্রহনের ব্যাপার জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব রকমের বিষাক্ত প্রানীর দংশনে ঝাঁড়ফুক গ্রহনের জন্য অনুমতি দিয়েছেন।
৫৩২৪ ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রোগে ওফাত পান সেই রোগের সময়ে তিনি নিজ দেহে মুআব্বিযাত (সূরা নাস ও ফালাক) পড়ে ফুঁক দিতেন। এরপর যখন রোগ তীব্রে হয়ে গেল, তখন আমি সেগুলো পড়ে ফুঁক দিতাম। আর আমি তাঁর নিজের হাত তাঁর দেহের উপর বুলিয়ে দিতাম। কেননা তাঁর হাতে বরকত ছিল। রাবী বলেনঃ আমি যুহরীকে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি কিভাবে ফুক দিতেন? তিনি বললেন : তিনি তার দুই হাতের উপর ফুক দিতেন, এরপর সেই হস্তদ্বয় দ্বারা আপন মুখমণ্ডল বুলিয়ে নিতেন।
৫৩৩৮ মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) আবূ সাঈদ (রা।)থেকে বর্ণিত যে তাসুলুল্লাহ -এর একদল সাহাবী একবার এক সফরে গমন করেন। অবশেষে তারা আরবের গোত্রসমূহের মধ্যে এক গোত্রের নিকট এসে গোত্রের কাছে মেহমান হতে চান। কিন্তু সে গোত্র তাঁদের করতে অস্বীকার করে। ঘটনাক্রমে সে গোরের সর্দারকে সাপে দংশন করে। তারা তাকে সুস্থ করার জন্য সবরকম চেষ্টা করে, কিন্তু কোন ফল হয় না। তখন তাদের কেউ বললোঃ তোমরা যদি ঐ দলের কাছে যেতে যারা তোমাদের মাঝে এসেছিল। হয়তো তাদের কারও কাছে কোন তদবীর থাকতে পারে। তখন তারা সে দলের কাছে এসে বলল হে দলের লোকেরা! আমাদের সর্দারকে সাপে দংশন করেছে। আমরা তার জন্য সবরকমের চেষ্টা করেছি কিন্তু কোন ফল হয়নি। তোমাদের কারও নিকট কি কোন তদবীর আছে? একজন বললেন হা। আল্লাহর কসম আমি ঝাড়ফুক জানি। তবে আল্লাহর কসম! আমরা তোমাদের নিকট মেহমান হতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমরা আমাদের মেহমানদারী করনি। তাই আমি ততক্ষন পর্যন্ত ঝাড়-ফুক করবো না যতক্ষন না তোমরা আমাদের জন্য মজুরী নির্ধারণ করবে। তখন তারা তাদের একপাল বকরী দিতে সম্মত হল। তারপর সে সাহাবী সেখানে গেলেন এবং আলহামদু লিল্লাহি রাবিবল আলামীন (সূরা ফাতিহা) পড়ে ফুক দিতে থাকলেন। অবশেষে সে ব্যাক্তি এমন সুস্থ হল! যেন বন্ধন থেকে মুক্তি পেল। সে চলাফেরা করতে লাগলো, যেন তার কোন রোগই নেই। রাবী বলেনঃ তখন তারা যে মজুরী ঠিক করেছিল, তা পরিশোধ করলাম। এরপর সাহাবীদের মধ্যে একজন বললেনঃ এগুলো বন্টন করে দাও। এতে যিনি ঝাড়ফূক করেছিলেন তিনি বললেনঃ আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট যেয়ে যতক্ষন না এসব ঘটনা ব্যক্ত করবো এবং তিনি আমাদের কি নির্দেশ দেন তা প্রত্যক্ষ করব, ততক্ষন তোমরা তা বণ্টন করো না। তারপর তাঁরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে ঘটনা ব্যক্ত করলেন। তিনি বললেন তুমি কি করে জানলে যে এর (সূরা ফাতেহা) দ্বারা ঝাঁড়ফুক করা যায়? তোমরা সঠিকই করেছ। তোমরা এগুলো বণ্টন করে নাও এবং সে সঙ্গে আমার জন্য এক ভাগ নির্ধারণ কর।

ঝাঁড়ফুকের জন্য উত্তম হচ্ছে সূরা এখলাস, সূরা না'স, সূরা ফালাক ও সূরা ফাতিহা। এর মধ্যে সূরা ফাতিহার মরতবা অনেক বেশি।
(চলবে)
লিখেছেনঃDr. Dara Chowdhury.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ